নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুমান ও প্রমাণ

তাবরিযি

ভাবনা যাচাই করি

তাবরিযি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাহিদা আছে, সুযোগ কাজে লাগান, দেশের উপকার করুন

২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৩

অনেক সময় দেখবেন খুব ছোট্ট একটু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে একটা গোটা যন্ত্র নষ্ট হয়ে পরে থাকে। সামান্য একটা যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারনে অকেজো হয়ে পরে থাকে ইয়া বড় মেশিন। সেই সামান্য যন্ত্রাংশটি আবার সহজলভ্য হয় না। বহু খুজাখুজির পর যদিবা পাওয়া যায় তবে দেখা যায় যে এমন দাম যে পুনর্বিবেচনা করতে হয় সারানোর চেয়ে নতুন মেশিন কিনাই বেশি ভাল হবে নাকি! এমনটা যে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনাদির সাথে হয় তা নয়। হরহামেশাই ঘরয়া যন্ত্রপাতির সাথেও হয়। চেয়ারের পায়া, ওয়াশিং মেশিনের দরজা, হেয়ার ড্রায়ারের মাথা ইত্যাদি ভেঙ্গে যায়। এগুলো একদিকে যেমন অর্থের অপচয় ঘটায় অন্যদিকে আবর্জনা সৃষ্টি করে পরিবেশ নষ্ট করে। এই সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে সহজলভ্য 3d প্রিন্টিং। একটি উদাহরণ

3D প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক কাজকে সহজ আর ব্যাপক সাশ্রয়ী করে তুলতে পারে। চিন্তা করুন, কাস্টমাইজড প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি পর্যন্ত - সবকিছু দ্রুত আর কম খরচে তৈরি করা সম্ভব। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ, কারণ তারা কম বিনিয়োগে নতুন আইডিয়া পরোখ করে দেখতে পারবে। এমনকি শিক্ষাক্ষেত্রেও 3D প্রিন্টিং মডেল তৈরি করে শিক্ষার্থীদের আরও বাস্তবসম্মত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব। দৈন্দিন জীবনে এর উপকারের একটি নমুনা এই ভিডিওতে দেখতে পারেন। বাংলাদেশের জন্য এটা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নেরও একটা বড় হাতিয়ার হতে পারে।

কৃষি ও চিকিৎসা খাতে এর ব্যবহার আরও বিস্তৃত। বাংলাদেশে কৃষি প্রযুক্তির দাম কৃষক বান্ধব নয়। ভিয়েতনামি এই যন্ত্রগুলো রিপেয়ার করাও অনেক জটিল ও ব্যায়বহুল শুধুমাত্র যন্ত্রাংশর অপ্রাপ্যতার কারনে। কৃষিতে 3D প্রিন্টিংয়ের সাহায্যে সস্তায় উন্নত মানের সেচ যন্ত্রাংশ, বীজ রোপণের সরঞ্জাম এবং কাস্টমাইজড যন্ত্রাংশ তৈরি করা সহজ হবে। অন্যদিকে, চিকিৎসা খাতে সাশ্রয়ী মূল্যে সার্জিকাল যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করা সম্ভব। এটি মানুষের জীবনমান উন্নত করার একটি বড় মাধ্যম হতে পারে।

তবে, বাংলাদেশের 3D প্রিন্টারের দাম সত্যিই হতাশাজনক। সবচেয়ে সস্তা যেটা খুঁজে পেলাম, সেটা ৩০,০০০ টাকার, কিন্তু এত ছোট আর নিম্নমানের যে কোনো ব্যবহারিক কাজেই লাগে না। ভালো মানের একটা প্রিন্টার কেনার কথা ভাবলে ১ লাখ টাকার নিচে কিছু পাওয়াই যায় না। এই দামের কারণে ছোট ব্যবসা, কৃষি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার কার্যত অসম্ভব।

তারপরও বাজারে 3D প্রিন্টারের চাহিদা স্পষ্ট। ফেসবুকে কয়েক ডজন সেলার এবং কিছু ইলেকট্রনিকস ও কম্পিউটার শপ এই পণ্য বিক্রি করছে, যা প্রমাণ করে যে প্রযুক্তিপ্রেমী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। এখন দরকার কেবল সাশ্রয়ী ও মানসম্মত পণ্য বাজারে আনা। আর এখানেই লুকিয়ে আছে বিশাল সম্ভাবনা—দেশি 3D প্রিন্টার প্রস্তুতকারকের। যদি দেশেই কম খরচে ভালো মানের 3D প্রিন্টার তৈরি করা যায়, তবে বাজারে এর চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করলে খরচও কমবে এবং আরও বেশি মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারবে। প্রস্তুতকারকরা বড় মার্কেটিং বাজেট ছাড়াই সাফল্য পেতে পারে। তারা শুধুমাত্র ওই ফেসবুক ভিত্তিক সেলারদের স্টকে পণ্য সরবরাহ করলেই নিজেদের মার্কেটিং খরচ কমিয়ে ফেলতে পারবে। এই সেলারদের ইতিমধ্যেই ক্রেতার সাথে যোগাযোগ এবং বিক্রির অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা শুধু পন্যটি তাদের পেজে বাকি পণ্যের ন্যায় বিক্রির জন্য উপস্থাপন করবে। কাস্টোমার অর্ডার করলেই কেবল তারা প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে পন্যটি নিয়ে ডেলিভারি দিবে।

দেশি 3D প্রিন্টার প্রস্তুত করতে আমার মতে প্রস্তুতকারকদের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে:
১. প্রযুক্তির নির্বাচন: জনপ্রিয় FDM প্রযুক্তি দিয়ে শুরু করা সহজ এবং সাশ্রয়ী।
২. উপাদান নির্বাচন: সাশ্রয়ী কিন্তু টেকসই উপকরণ যেমন অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম, স্টেপার মোটর এবং উচ্চ তাপ সহ্যশীল নোজল ব্যবহার করা।
৩. ডিজাইন: সহজে ব্যবহারযোগ্য, রিপেয়ারযোগ্য, কমপ্যাক্ট এবং বহনযোগ্য ডিজাইন নিশ্চিত করা।
৪. ফার্মওয়্যার ও সফটওয়্যার: ওপেন সোর্স ফার্মওয়্যার (যেমন Marlin) এবং বাংলা ইন্টারফেস সমৃদ্ধ কাস্টমাইজড সফটওয়্যার ব্যবহার।
৫. কাঁচামাল সমর্থন: PLA, ABS, এবং PETG এর মতো সুলভ ফিলামেন্টের সাথে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা।
৬. মূল্য: উৎপাদন খরচ কমিয়ে এমন মূল্য নির্ধারণ করা, যা ৫০,০০০ টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব।
৭. টেস্টিং: বাজারে ছাড়ার আগে প্রতিটি প্রিন্টার বিভিন্ন পরিবেশে টেস্ট করা।
৮. কাস্টোমার সাপোর্ট: সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় এটি। এটিই দেশি প্রস্তুতকারকদের বিদেশিদের থেকে আলাদা করবে।

দেশি উদ্যোক্তারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে। দেশের অর্থনীতি ব্যাপক লাভবান হবে এবং মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। প্রতিটি পাঠকের প্রতি অনুরধ থাকবে আপনার পরিচিত ইইই বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী বা পেশাদার ব্যক্তিকে এই ব্যবসার আইডিয়াটি বিবেচনা করে দেখতে বলবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.