নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় বাড়ি। সিলেটের এমসি কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছি। শখ হিসেবে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করছি। রক্তের গ্রুপ- \'ও\' পজেটিভ (একজন নিয়মিত রক্তদাতা)।

শহিদুল ইসলাম সাজু

বর্ণ এবং শব্দের খেলায় মাঝে মাঝে কিছু লিখার ব্যর্থপ্রয়াস চালাই। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে একনিষ্ঠ পাঠক ও শ্রোতা হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করি।

শহিদুল ইসলাম সাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক পা নেই, তবুও স্বপ্নপূরণের দিকে পথচলা!

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৭

ছোটবেলায় প্রথম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে পায়ের মধ্যে টিউমার ধরা পড়লে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় হারাতে হয় একটি পা। সে থেকেই এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলাফেরা করতে হয় তাকে। তবুও থেমে নেই রাজিব দেবনাথ। তখন থেকেই শুরু হয় তার এক পায়ের সংগ্রাম। প্রবল ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধীকতাকে হার মানিয়ে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজিব দেবনাথ। ইতিমধ্যে সে সুনাগঞ্জের কাটাখালী বাজারস্থ মিতালী পাবলিক হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৩.৫৬ গ্রেড পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীণ হয়েছে।

রাজিব দেবনাথ বর্তমানে সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার চুন্ড্রীপুর গ্রামে। রাজিবের বাবা বৃদ্ধ প্রভাত দেবনাথ একজন অবৈধ দুবাই প্রবাসী। বর্তমানে সে বিয়ানীবাজার পৌরসভারস্থ নয়াগ্রামের শিশির বাবুর বাড়িতে লজিং নিয়ে থাকছে। বিনিময়ে শিশির বাবুর ছোট ছোট মেয়েদেরে পড়াশোনার দায়িত্বও পালন করতে হয় তাকে। প্রতিদিন লজিং বাড়ি থেকে এক-দেড় কিমি পথ এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে কলেজে যাতায়াত করে সে। কিন্তু পারিবারিক টানাপোড়েনে এবং অর্থাভাবে সেই পড়াশোনাও এখন প্রায় বন্ধের পথে। রাজিব কলেজে এইচএসসি প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিলেও এখনো দ্বাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হতে পারেনি। আদৌ ভর্তি হতে পারবে কি না এ নিয়ে দুটানায় রয়েছে সে।

এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখার খরচ মামা বহন করলেও এখন দুয়েকটা টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাতে হয় তাকে। অর্থাভাবে দ্বাদশ শ্রেণীতে এখনো ভর্তি হতে এবং সবকটি বই কিনতে পারে নি সে। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে কি না বলতে পারছে না সে।

প্রতিবন্ধী রাজিব দেবনাথ জানায়, ‘২০১৬ সালে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য সিলেট বিভাগের ৫টি কলেজে আবেদন করলে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাই। এক বন্ধুর সহায়তায় বিয়ানীবাজার আসলে পৌরশহরের পন্ডিতপাড়া মন্দিরে থাকার সুযোগ পাই। মন্দিরের দিনরাত মানুষের আনাগোনায় আমার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে এক কাকার সহায়তায় শিশির বাবুর বাড়িতে লজিং নিয়ে থাকার সুযোগ পাই। শিশির বাবু এবং উনার স্ত্রী আমাকে সন্তানতূল্য স্নেহ করেন, খেয়াল রাখেন।‘

পরিবারের চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তার পরেই রাজিব। ছোট ভাই অর্থাভাবে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এখন দর্জির কাজ শিখছে। আর ছোট বোন এখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। তার বৃদ্ধ বাবা মাস তিনেক পর পর যতটুকু পারেন পরিবারের জন্য টাকা পাঠিয়ে দেন তিনি। কিন্তুই তাতেই পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায়। লেখাপড়া ভালো করলেও টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় অনেক বই কিনে দিতে পারছেন না বলে আফসোস করেন রাজিবের মা দিপালী রাণী নাথ।

রাজিব পূর্বে নিয়মিত ক্লাস করতে পারতো না, শুধু গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস এবং পরীক্ষায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতো। বর্তমানে সে পৌরশহরের লজিং থাকার সুবাধে প্রতিদিন ক্লাস করার জন্য নানা ঝামেলা পেরিয়ে ছুটে আসার চেষ্ঠা করে। কলেজ জীবনে রাজিবের বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার চেষ্টা করে সহপাঠী হানিফ ও মুবাশশির।

রাজিবের বন্ধু মুবাশশির আলম জানায়, ‘ছেলেটির মধ্যে রয়েছে পড়ালেখার প্রতি অদম্য ইচ্ছা। পড়ালেখার প্রতি রাজিব খুবই মনোযোগী। বিয়ানীবাজারে লজিং থাকার সুবাধে প্রতিদিন নয়াগ্রাম থেকে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে অনেক কষ্ট করে কলেজে আসা–যাওয়া করে। এখন থেকে সে নিয়মিত ক্লাস করে, যেখানে অনেক ছাত্রই প্রতিদিন ক্লাস করে না।’

রাজিবকে সাথে নিয়ে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ’র সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহযোগীতার ব্যবস্থা রয়েছে। সে যদি আমাদের কাছে আর্থিক সহায়তা ও বিনা খরচে অধ্যয়নের জন্য লিখিত আবেদন করে তাহলে আমরা তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারি।‘

তবে রাজিব নিজেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়া ভাবতে রাজি নয়। সে আর দশজনের মতোই সব কাজ করতে পছন্দ করে। অদম্য মনোবল তার মধ্যে। তার মনোবলের কাছে হার মেনেছে পঙ্গুত্ব। ভবিষ্যতে লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো চাকুরি করে তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চায় বলেও জানায় রাজিব।

যখন অন্যদের খেলতে দেখ, তখন কি তোমার আফসোস হয়- এমন প্রশ্নের জবাবটা রাজিবের মুখেই শোনা যাক, ‘তা কেন লাগবে? আমি তো সব কাজ করতে পারি। আমি এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে হাটতে পারি, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি করতে পারি, সাঁতার কাটতে পারি। আমি সবই করতে পারি। শারীরিক অক্ষমতার জন্য যে কাজ করতে পারি না, সেটি মনের জোরেই করে ফেলি।’

বলেই একগাল হাসি দিল। তার ঐ হাসিতেই ফুটে ওঠে সংগ্রামী রাজি্বের মানসিক দৃঢ়তা!

ভাল থাকুক এ সমাজের হাজারো রাজিব। তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো হোক সত্যি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: মানুষের ইচ্ছা শক্তি হল বড় শক্তি !!



ভালো লিখেছেন ।

শুভ কামনা রইলো ।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৫৭

শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.