![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্ণ এবং শব্দের খেলায় মাঝে মাঝে কিছু লিখার ব্যর্থপ্রয়াস চালাই। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে একনিষ্ঠ পাঠক ও শ্রোতা হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করি।
কিশোর বয়সে পরিণত বিজ্ঞানীদের মতো যন্ত্র উদ্ভাবন করে এলাকা হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন আবু রায়হান। তার প্রতিবেশি ও সহপাঠীরা বিজ্ঞানী রায়হান বলে ডাকেন। রায়হানও এসব ডাকে বিরক্ত না হয়ে সাড়া দেন। এলাকার গন্ডি পেরিয়ে রায়হান এখন জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী। শীঘ্রই ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় বিভাগ সেরাদের সাথে সেও অংশ নেবে। অথচ অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর পরিবারের কারণে প্রতিযোগিতার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এখনো প্রস্তুতই করতে পারেনি রায়হান। অমিত সম্ভাবনার দুয়ারে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়িয়েছে পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা!
বিজ্ঞানের নতুন আবিস্কারের নেশায় দিনের অর্ধেক সময় ব্যয় করলেও সে লেখাপড়া করছে মানবিক বিভাগে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেণি শিক্ষার্থী আবু রায়হান। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা মোল্লাপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও রীনা বেগম দম্পতির দ্বিতীয় পুত্র।
আবু রায়হান ৩৯তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে বিয়ানীবাজার উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। জলঢুপ বিজ্ঞান ক্লাবের হয়ে উপজেলা প্রতিযোগিতা সে অংশ নিয়েছিলো। একই প্রতিযোগিতায় জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে সেরা হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এলাকায় বিজ্ঞানী বলে পরিচিত এ কিশোর রায়হান। তার শোবার ঘরে যন্ত্রপাতির সাথে নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্র যেমন আছে তেমনি আছে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে পাওয়া সনদ ও পদকগুলো। অথচ রায়হানের সাথে প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়া (উপজেলা ও জেলা) দলগুলো জাতীয় পর্যায়ে যেতে পারেনি!
কিশোর রায়হানের চিন্তা পুরো বিশ্বকে নিরাপদ রাখতে সময় উপযোগী প্রযুক্তি আবিস্কার করা। আগামী বিশ্ব জ্বালানি সংকটে পড়বে বলেই সে জ্বালানি (তরল ও গ্যাস) ছাড়া যন্ত্র আবিস্কার করতে চায়। বলা চলে এই কিশোর বয়সে সে অনেকটা সফল হয়েছে। ক্ষুদ্র আকারে জ্বালানিবিহীন নয়টি যন্ত্র আবিস্কার করে পরিচিত মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে সে। তার আবিস্কারগুলো মানুষের কল্যাণে সহজতর জীবনযাপনের জন্য উপযোগী হবে বলে বিশ্বাস করে রায়হান।
রায়হানের সাথে আলাপকালে সে জানায়- ঘর্ষণ শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপনন যন্ত্র, সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানির পাম্প, ফায়ার সার্ভিস ও জরুরী প্রয়োজনে তার উদ্ভাবিত ড্রোন সংক্রিয়ভাবে কাজ করে। দুর্গম অঞ্চলে চলবে চার চাকার গাড়ি, বিশাল এলাকা আলোকিত করবে রায়হানের উদ্ভাবিত লেজার লাইট। তার উদ্ভাবিত এসব যন্ত্র স্বচল থাকবে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে।
নয় বছর বয়সে যন্ত্রপাতির দিকে রায়হানের ঝোঁক দেখে প্রথমে তাঁর পিতা-মাতাও আতংকিত ছিলেন। কখন কি অঘটন ঘটে যায়! কিন্তু তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রায়হান কোকাকোলা ও পেপসির বোতল কেটে তাতে ছোট্ট মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করে হেলিকপ্টার তৈরী করে ফেলে। হেলিকপ্টারটি স্বচল হলেও প্রথম পর্যায়ে এটি ওড়াতে পারেনি সে। নয় বারের চেষ্টায় বাড়ির উঠোনে হেলিকপ্টার উড়িয়ে বাবা হাবিবুর রহমান ও মা রীনা বেগমকে বিষ্ময় উপহার দেয় কিশোর রায়হান।
আবু রায়হান জানায়, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় টিভিতে হেলিকপ্টার দেখে তার মনে কৌতুহল জাগে। এর কয়েকদিন পর বারইগ্রামের একটি বিয়ের সেন্টারে হেলিকপ্টারে করে বর আসলে প্রথমবারের মতো স্বচক্ষে হেলিকপ্টার দেখে। এরপর শুরু করে হেলিকপ্টার তৈরী। পেপসি ও কোকাকোলার প্লাস্টিক বোতল দিয়ে বডি এবং টিন দিয়ে পাখনা তৈরী করে। ছোট্ট প্লাস্টিকের টুকরো কেটে লেজের ব্লেড তৈরী করে ছোট মোটর জুড়ে দেয়। মোটরটি একটি ব্যাটারির সাথে যুক্ত করে।
রায়হান বলে, আমার ড্রোনটি চলবে জ্বালানি ছাড়া। এটি আগুন নিয়ন্ত্রণে সংক্রিয়ভাবে কাজ করবে এবং এর সাথে সেন্সর যুক্ত থাকায় হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে। এছাড়া মোবাইল ট্রাকের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ, ঔষধ বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সয়ংক্রিয়ভাবে বহন করতে পারবে। তার উদ্ভাবিত ঘর্ষণ বিদ্যুৎ যন্ত্রটি ২ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকা ও দ্বীপ অঞ্চলে এ যন্ত্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ খুব কাজে দেবে। চার চাকার মোটরযানে চারটি মোটর সংযুক্ত থাকবে। এটি খুব শক্তিশালী। সেনাবাহিনীসহ দেশের দুর্গম এলাকায় মানুষ ও পণ্য পরিবহনে এ যান কাজে লাগবে। যানটি চলবে সৌরশক্তি দিয়ে। আক্ষেপ করে রায়হান বলে, বর্তমানে যে অবস্থায় যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো দিয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সাফল্য নিয়ে আসা কঠিন। আমি এসব যন্ত্রপাতির আরও উন্নয়ন করতে চাই। এতে লাখ খানেক টাকা প্রয়োজন। বেশ কয়েকটি মোটর, হালকা ওজনের শক্তিশালী ব্যাটারি, সৌরশক্তির প্যানেলসহ অনেক কিছু লাগবে। আব্বুর কাছে এতো টাকা নেই। অসহায় হাসি মুখে টেনে রায়হান বলে, যদি কেউ এগিয়ে আসেন- চির কৃতঞ্জ থাকবো।
একপর্যায়ে কথা হয় এ কিশোর বিজ্ঞানীর মা-বাবার সাথে। রায়হানের পিতা চিত্র শিল্পী (হাবিব আর্ট) হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের তার, মোটর নিয়ে ৮/৯ বছর বয়স থেকে পড়ে থাকতো রায়হান। কখন কি হয়ে যায় এই আশংকা থেকে এসব হাতে না নিতে বকাঝকা করতাম। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর তার এদিকে ঝোঁক দেখে কিছুই বলিনী। শুধু লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছি। মা রীনা বেগম বলেন, পুরো ঘর খুটিনাটি যন্ত্র, তার, সার্কিটে ভরে রেখেছে। পড়ার টেবিল, বিছানায় উপর নীচে লোহালক্ষড়ে ঠাসা। পড়ার বই ঘরে এক কোনায় রেখে এসব যন্ত্র নিয়ে সারাদিন তার ব্যস্ততা। অথচ এক সময় তাকে নিয়ে খুব ভয়ে ছিলাম। সারাদিন চোখে চোখে রাখতাম- তারপরও চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদ্যুতের তারের সাথে মোটর সংযোগ দিয়ে ফ্যান বানিয়ে চালাতো। একদিন দেখি হেলিকপ্টার বানিয়ে ফেলেছে। উঠোনে উড়িয়ে আমাদের দেখিয়ে বলে আর যেন তাকে বারণ না করি।
আমার পরিচিতজন ও রায়হানের শিক্ষক চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ কথা প্রসঙ্গে বলেন, লেখাপড়া সে খুব অমনোযোগী। তবে ছাত্রদের কাছ থেকে তার আবিস্কারের গল্প শুনে দেখার আগ্রহ দেখালে সে কয়েকটি যন্ত্র স্বচল করে দেখায়। এরপর নতুন কোন যন্ত্র উদ্ভাবনের পূর্বে আমার কাছে আসতো। প্রয়োজনমতো তাকে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি উৎসাহ প্রদান করেছি।
পরে লতিফ স্যারের কাছে জানতে পারলাম জলঢুপ বিজ্ঞান ক্লাবের কথা। যথারীতি আগ্রহ থেকেই সেখানে যাওয়া হলো। সেখানকার বিজ্ঞান ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক মুছব্বির আলী বলেন, কিশোর রায়হান একটি বিষ্ময়ের নাম। সরকার তার পৃষ্ঠপোশকতায় এগিয়ে আসলে সে দেশের জন্য অমূল্য সম্পদ হবে। তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
বিস্ময়কর এ কিশোর তাঁর স্বপ্নগুলোকে নিয়ে আকাশ ছুঁতে চায়। সে চায় তাঁর শোবার ঘরের স্বপ্নগুলোকে বহির্জগতের বাস্তবরূপ দিতে। কিন্তু তাঁর মধ্যে একটাই দুশ্চিন্তা এখন কাজ করছে- অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাই কি তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সম্ভবনাময় এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে?
১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩
শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৬
সাইন বোর্ড বলেছেন: তার জন্য শুভ কামনা রইল ।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯
শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪২
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: আমাদের মৌলভীবাজারেও একজন বিজ্ঞান মেলায় সিলেট বিভাগ পর্যায়ে প্রথম হয়েছিলো। সে কতদূর এগিয়েছে?! জানা দরকার।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪
শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: না ভাই। ওর ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। আপনি বরং মৌলভীবাজারের কারো সাথে যোগাযোগ করুন।
৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: সরকারের উচিত তাকে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: কেন্দ্র সরকারের স্থানীয় সরকারের উচিত থাকে সহযোগিতা করা।
৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৫
রাকু হাসান বলেছেন:
বুকভরা ভালোবাসা রায়হানের জন্য । ভালো সংবাদের পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৬
শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
৬| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০৩
উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: সবকিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু জ্বালানীবিহীন যন্ত্রের আবিস্কার শুনেই আর বিশ্বাস ধরে রাখতে পারলাম না। এত কিছু আবিস্কার করলো কিন্তু শক্তির নিত্যতা সুত্রের মতো বেসিক জিনিসটাই সে বোঝে না কেমনে কি? থার্মোডিনামিক্স তো বাদই দিলাম
৭| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪৮
শহিদুল ইসলাম সাজু বলেছেন: পোস্টের মধ্যখানে জ্বালানীবিহীন আবিষ্কারের বিকল্প হিসেবে ঘর্ষন শক্তি বিদ্যুৎ উপাদন ও সৌর শক্তিকে কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে- যা আপনি হয়তো খেয়াল করেননি। পরিশেষে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৮| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৩৭
উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: তা ঘষাঘষি কি বল প্রয়োগ ছাড়া হবে? ঘর্ষনের যে পাঁচটা সুত্র আছে তার প্রথমটাতেই বলের কথা আছে। এখন বল কি হাওয়া থেকে উড়ে আসবে? আপনি ক্লাশ সেভেনে ফিজিক্স পড়েননি বা নকল করছেন তাই বলে এই নয় যে পদার্থবিজ্ঞানের একটা মৌলিক প্রতিষ্ঠিত সুত্র পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর যেই পোলা ক্লাস সেভেনের পদার্থবিজ্ঞানের এই সুত্রটিও বোঝেনি জানি না সে কোথা থেকে কেমনে বিজ্ঞানী হয়।
নেট থেকে ডিজাইন নামিয়ে চা জোড়া দিলেই আপনাদের মতো কাউয়া সাংবাদিকরা যে বিজ্ঞানী নাম দিয়ে বসেন এই অশিক্ষিত চিন্তা থেকেআপনাদের কবে মুক্তি হবে, ২০১৮ সালে এই প্রশ্ন করতেও লজ্জা লাগে
৯| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৫৪
সুমন কর বলেছেন: সব বাঁধা দূর করে অনেক অনেক সামনে এগিয়ে যাক......শুভকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৮
শায়মা বলেছেন: অনেক অনেক শুভকামনা তার জন্য!