নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাথরে ফুল ফোটাবো

২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৭:৪৬

আমি পাথরে ফুল ফোটাবো/

শুধু ভালবাসা দিয়ে/

আমি সাগরের ঢেউ থামাবো/

শুধু ভালবাসা দিয়ে...।



তমালের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে পড়াকালীন এন্ড্রুকিশোরের গাওয়া সিনেমার এই গানটি তুমুল জনপ্রিয় তখন। রেডিওটা টিউন করার সাথে সাথেই যেন অনিবার্য একটা গান হয়ে গিয়েছিল এটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বরণের এক কনসার্টে আইয়ুব বাচ্চুর লাইভ পরিবেশনার আগে তমালের গাওয়া এই গানটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হট কেক হয়ে গেল। রসিকতা কি সিরিয়াস যেকোন বিষয়ই হোক না কেন গুন গুন করে গাইতেই হবে আমি পাথরে ফুল ফোটাবো...।



এই গানের সূত্র ধরে সত্যি সত্যি প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করলো বন্ধু বান্ধবীরা। একসাথে অনেকজন মিলে জটলা আর আড্ডা দেয়ার বদলে দু’জন দু’জন করে আলাদা থাকতেই যেন পছন্দ শুরু করলো একেকটা জুটি। তমাল যাকে মনে মনে ভেবে গানটি গেয়েছিল সে-ও লাপাত্তা হয়ে শর্টকাটে আরেকজনের প্রেমে মজে গেল। ধীরে ধীরে ভাললাগা থেকে ভালবাসা তারপর প্রেম এগুলো কোনকিছুরই পাত্তা দিল না। পাত্তা দিলে হয়তো কবি নজরুলের মতো কবিতা আর গান শুনে শুনে তমালের প্রেমেই পড়তে হতো অপরাজিতাকে।



আর তমালও বুক ফুলিয়ে নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানটি গাইতে পারতো আরেকটি অনুষ্ঠানে- বাসবেই ভাল আমায় বাসবেই ভাল/সুপুরুষ নই যদিও/ও আমি সুপুরুষ নই যদিও রঙটাও কালো...। না হয়নি, তবে হয়েছে অন্য বেলায় এসে। সে কথা না হয় পরে হবে। এবার আসি বিশ্লেষণে- সত্যি কি পাথরে ফুল ফোটানো যায়? না কি পাথরে এমনি এমনিই ফুল ফুটে যায়? না কি আদৌ ফোটে না? কথাটা রূপক। তবে সবই সম্ভব! অন্যভাবে কিন্তু একই ভাবার্থে সমার্থক। পাড়ার বাসেত নামে এক আদুভাই নাছোড় বান্দা পড়ালেখা চালিয়েই যাচ্ছিল। বার বার একই ক্লাসে তাকে ফেল করে করে থাকতে হলেও, হাল ছাড়লো না। কোনভাবে যদি পাশ অন্তত করা যায়! তার বন্ধুরা চাকরী-বাকরী সংসার সন্তান নিয়ে মধ্য বয়স ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আর তার কেবল মাস্টার্স শেষ হলো।



সবগুলো অ্যাকাডেমিক রেজাল্টেই তৃতীয়শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে মাস্টার্স করেছে, এটাই যেন তার বড় কথা। ব্যাপারটা এরকম- কুস্তি করতে গিয়ে লাত্থি, গুঁতো, কামড়, ছ্যাঁচা, ক্যাচা যাই খাই না কেন যাতাযাতিতে নিচে পড়ে কুট্টুস করে একটা কামড় তো দিতে পেরেছি প্রতিপক্ষকে! আহ্ এটাই বড় সফলতা। কথাগুলো একটু তীর্যকাত্মক বা ঋণাত্মক মনে হলেও এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি এইভাবে যে, নিবিষ্ট মনে সাধনা করলে- পাথরে ফুল ফোটানো কেন, পাথরও নেই ফুলও নেই এমন কিছুতেও অবিস্মরণীয় কিছু ঘটানো সম্ভব।



পাঠক আবদুল্লাহ বাংলা ছবিটি দেখেছেন কিনা? নায়ক দিলদার এই ছবিতে কেমন করে নায়িকা নুতনের মন জয় করে নেয়। ছবিটা দেখে না থাকলে ডিভিডি কিনে এই লেখা পড়া বাদ রেখে আগে ছবিটি দেখে ফেলুন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কায়মনো হয়ে সততার সাথে সাধনা করলে সেই সাধনায় সিদ্ধি আসবেই। আসতেই হবে। পৃথিবীতে যত কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গবেষক, ধর্মগুরু, বিজ্ঞানী ছিলেন, আছেন, তারা সবাই একেকজন সাধক। যার সাধনা যতো গভীর তার সিদ্ধিও ততো পাক্কা।



তৌহিদ, খুব গুণবান একজন মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে সবে বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন। সৃজনশীল এমন কোন কর্মকা- নেই যেখানে তার সফল পদচারণা দুরূহ ছিল। কিন্তু মনে তার বাসনা একটাই ছিল তা হচ্ছে- বিসিএস এর প্রশাসন ক্যাডারে সে চাকরী নেবে। সর্বশেষ পঞ্চমবারের মতো ভাইভাবোর্ডে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের বলে এসেছিল আমি এই নিয়ে পাঁচবার ভাইভাতে অংশগ্রহণ করছি- আমার পরীক্ষার ফলাফল করুণা করে নয় যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রকাশ করবেন এটাই প্রত্যাশা করছি। চারবার ব্যর্থ হবার পর পঞ্চমবারে সত্যি সে সবার সেরা হয়ে সকল পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে এখন সে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরী করছে।



অনেক কষ্ট করে এদিক সেদিক খুঁজে খুঁজে তমালের বাসাটা চিনতে পেরেছে ডাক পিয়ন। বাসাটা কি সত্যি বিদঘুঁটে কোন জায়গায় ছিল? এক সময় ছিল, ঠিকমতো চেনা না থাকলে- পুরান ঢাকাতে একবার কোনভাবে ঢুকে গেলেন তো গেল, অলি গলি, চিপা চাপা এমনভাবে ছিল যে দুনিয়াটা যে গোলগাল সেখানেই গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললে যেন বোঝা যেত। আর মানুষগুলোর ভাষাই-বা যেন কেমন ছিল, চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলতো আর কোন বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে- এক জন বলতো এই দিকে যান গা তো আরেক জন বলতো ফালাইয়া আইচেন তো। মাগার শব্দ শুনতে শুনতে পগার পার হবার জোগাড় হতো। সেই পুরান ঢাকাও এখন সিস্টেমাইজড্ হয়ে গেছে অথচ কিনা হাউজিং এর পরিপাটি রাস্তা আর সিরিয়াল করে নম্বর দেয়া বাসাগুলো থেকে একটা বাসা খুঁজে পেতে তার এতো কষ্ট হলো!



-জান বারাইয়া গেছেগা, ম্যাম বকশিশ দ্যান। আহ কি চিঠি যে নিয়ে এসেছে ডান পিয়ন, আল্লাহই জানেন। তারপরও ম্যাম সাহেবা বকশিশ দিয়ে দিলেন। তমাল অফিস থেকে না ফেরা পর্যন্ত চিঠিটি অক্ষত রাখলেন তার স্ত্রী। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরলে তমালকে খামটি হাতে তুলে দেয় কথা। -এটা কি? -চিঠি, তাও বুঝতে পারছো না বিস্ময় নিয়ে বলল কথা। -না মানে এই যুগেও বাসায় চিঠি আসে? কবে যে বাসায় শেষ চিঠি পেয়েছি মনে নেই। তবে অফিসগুলোতে নিতান্ত প্রয়োজনেই এখনো চিঠির লেনাদেনাটা অবশিষ্ট আছে। সেটাও অচিরেই শেষ হয়ে যাবে। চিঠি প্রেরণ আর পৌঁছানো নিয়ে যে কতো কাহিনী আছে!



কথাগুলো বলতে বলতে খাম খুলতে থাকে তমাল। অফিসের কাজ বাগিয়ে নিতে নাছোড় বান্দা ব্যক্তিগত ঠিকানায় স্পেশাল রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। একটা স্মার্ট বিনোদন অফারের ব্যাপারে লেখা ও টিকেট রয়েছে। কিন্তু গতকালই তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ডাক পিয়ন একটা দিন আগে আসলেও হয়তো একটা কিছু হতো। কথাকে বিষয়টি বললে পিয়নকে বকশিশ দেবার কথা জানালো। -তুমি ওকে আবার বকশিশও দিয়েছো। ওর সামনে চিঠিটা খুলতে, তারপর ওর কাছ থেকে দেরি হবার জন্য জরিমানা নিতে পারতে। -তা কি করে করবো? যেভাবে বলল তাতে মনে হলো কতো কষ্ট হয়েছে তার, তাই টাকাটা না দিয়ে পারলাম না। একেবারে নাছোড় বান্দা হয়ে চাইলো।



অফিসে রানা নামের সাবঅর্ডিনেট ম্যানাজারটি সব সময় অফিস লেইট আর ছুটি নেবার বায়না খোঁজে। বিভিন্ন রকম আর ধরনের কত নাটক যে বানাতে সিদ্ধ হস্ত তা আর এই ছোট্ট লেখায় না নাই-বা ব্যক্ত করলাম। এরা পারেও। এরা পারে, পারতেই থাকে। কেন জানেন? ঐ যে পাথরে ফুল ফোটানোর মতো অবস্থা।



দুনিয়া জুড়ে মার্কেটিং-এর জয় জয়কার। বেশি দিন বাকি নেই যখন কাফন দাফনও স্পন্সর করে দেখানো হবে। কে জানে মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যায়োজনটি গোপনে স্পন্সর করে দেখানো হয়েছে কি না? মানুষ সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাবে এটাই তো হবার কথা ছিল। না ছোড় বান্দা হবে- ভাল কিছু করার স্বার্থে। সত্যিকার অর্থেই পাথরে ফুল ফোটানোর চেষ্টা করবে। পাথরে অর্থহীন টাকা ফোটানোর জন্য নয়।



স্বভাবজাত সৃজনশীল বিখ্যাত মানুষগুলোর অধিকাংশই স্ব স্ব কাজে সততা রেখে অনুকরণীয়-অনুসরণীয় হয়েছেন। অর্থ সেখানে নিতান্তই গৌণ থেকেছে। কথার ফুলঝুরি আর মিথ্যের বেসাতী দিয়ে মানুষকে বোকা আর চোখে সাময়িক রঙীন ধাঁধাঁ লাগিয়ে হয়তো পাথরে ফুল ফোটানো যায় কিন্তু সেই ফুলে জীবন থাকে না। গন্ধহীন, স্থায়ী-প্রাকৃতিক বর্ণহীন সেই ফুল অন্তরের দ্যোতনাকে বোঝে না, প্রেমের উদ্বেলনকে ছোঁয় না। সেখানে থাকে ভংঙ্গুরতা, কৃত্রিমতা আর প্রেমহীন প্রেমময়তা।



এস জে রতন

কথাশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী



---

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.