নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক পকেটে রুমাল এক পকেটে টিস্যু

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:২৫

“এক পকটেে রুমাল এক পকটেে টস্যিু”
(আসলে শুধু থলে নয় পকটেরে বড়িালও ইস্যু)

হঠাৎ শীতল জলের ফোঁটা। আঁৎকে উঠলো মিশা। অনভিপ্রেত কিছু নয় তো? আজকাল যে হারে পেট্রোল বোমা আর গুলি ছোঁড়া হচ্ছে তাতে করে বোঝা মুশকিল কখন কি কার ওপর এসে পড়ে। আর নির্মম যন্ত্রণা বা মৃত্যু সহ্য করতে হয়। এতকিছু ভাবার আগেই স্বয়ংক্রীয়ভাবে হাত চলে গেল কোটের বাঁ পাশের কাঁধে। না, তরল কিছু মনে হলো তবে যন্ত্রণাদায়ক নয় শীতল আরামপ্রদ। কাঁধ ঘুরিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো মিশা, তার আগেই হাত চলে এলো চোখ আর নাকের কাছে। সাদা আর বিশ্রি গন্ধ। বুঝতে বাকি রইলো না যে ওটা কাকের কাজ।

এক সময় ঢাকাই সিনেমার একটা গান বেশ জনপ্রিয় ছিল- রুমাল দিলে ঝগড়া হয়, চিঠি দিলে বন্ধু হয়, ফুল দিলে কি হয় বলো না। তখন বয়সটা কম ছিল ফাহিমের তাই শুধু গানের এই লাইনটুকুর ফুল অংশটিই বেশি পছন্দ হতো। এখন সময় গড়িয়েছে তাই গানের কথার রুমাল অংশটুকু এখন ভাল লাগে তার। রুমালের উপকারিতার কথা ভাবতে ভাবতে রীতিমতো অফিস, বাসে, ঘরে, বাজারে, দোকানে, আড্ডায় রুমালের উপকারিতা নিয়ে বিস্তর লেকচার দেয়া শুরু করেছে সে। পাঠক হয়তো ভাবছেন রুমালের ভাবনা থেকে কোন এক মহান রাজনীতিক গামছাকে তার দলীয় মার্কা করে নিয়েছেন। হ্যাঁ ঠিক তাই। কিছু ভাবনা কোন না কোনভাবে মিলে মিশে যেতে পারে। অন্তঃমিল থাকলে থাকতেও পারে। ভাল কিছুতে মিল থাকলে দোষের কিছু নেই।

ওয়াশরুম থেকে ফিরে কৃষ্ণা তার টাওয়েলটা খুঁজতে থাকে। নাই। মেজাজ গরম হয়ে গেল। -একটা কিছু যদি হাতের কাছে থাকে। আমার সবকিছু ভাল লাগে ভাল কথা কিন্তু শেষ পর্যন্ত রুমালটাও নিতে হবে? ওফ্ প্রাইভেসি বলে আর বাকি কিছু থাকলো না। সামাণ্য রুমাল নিয়ে বাতচিৎ করা ঠিক না বুঝেও আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো -ভাইরে একবিঘা জমি তো আর চাইনি। ছোট্ট একটা সাধারণ রুমালই তো! বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের একটি কক্ষে কৃষ্ণার সাথে আরেকটি মেয়ে থাকে। সে সারাক্ষণ এমন ব্যস্ত থাকে যে কোন সময়ই তাকে কক্ষে পাওয়া যায় না গভীর রাত ছাড়া। অনেকটা ছেলেদের মতো চলাচল তার। কোনদিনও থ্রিপিসে তাকে দেখা যায়নি। প্যান্ট-শার্ট-পাঞ্জাবি তার প্রতিদিনের কমন পোশাক। মধ্যরাতে কক্ষের দরজা খুলে দিতে গিয়ে প্রায়ই ছেলে ভেবে ভয় পায় কৃষ্ণা। রুমালটা ছোট্ট ভ্যানিটি ব্যাগে রাখলেও ছেলেদের মতো পকেটে রাখতে পারলে বেশ খুশি হতো কৃষ্ণা। হঠাৎ বাথরুমে একটা অযাচিত অবস্থায় থাকা বিব্রতকর রুমাল চোখে পড়লো তার। কি যেন মাখা।
তমাল তো সেই ছোটবেলা থেকেই রুমাল ব্যবহারে অভ্যস্ত। রুমাল দিয়ে ঘাম মোছা, ঝালমুড়ি বা হোটেলে কোন কিছু খাবার পর রুমালটাই একমাত্র অবলম্বন হয়। সকালে ইচ্ছে হলো না বাসার খাবার খেতে। অফিসের সময়টা এতো সংকীর্ণ যে কোনভাবেই যেন সেই সময়কে ম্যানেজ করা যায় না, তবুও ম্যানেজ করতে হয়। আগে অফিসের কাছে যাওয়া যাক তারপর সকালের নাশতা। তা-ই হয়; তবে মাঝে মাঝেই না খেয়ে অফিস শুরু হয়। তারপর অফিস অ্যাসিস্ট্যান্টের বেটেস্টি এককাপ চা। চা পান করে মুখ মোছার জন্য রুমাল বের করে তমাল। কখনো কখনো পরিবেশ প্রতিবেশের কারণে রুমাল বের করাটা যেন বেমানান, ব্যাকডেটেড্। তাই টিস্যু বের করতে হয়। তবে খান্দান দেখানোর চেয়ে ওয়াশরুমের কাজ সারার পর রুমালের চেয়ে টিস্যুটাকেই বেশি ব্যবহার করে সে। প্যান্টের ব্যাকপকেট দু’টো এই রুমাল আর টিস্যু রেখেই লোড করে রাখে। ডান পকেটে রুমাল আর বাম পকেটে টিস্যু, বেশ ভাল লাগে তার।
পাঁচ টাকার ঝালহীন মুড়ি নিয়ে তমালের মেয়ে সাকি সাবধানে এগোয় বাউন্ডারি দেয়া দেয়ালের ফাঁক গলিয়ে। এক বুড়ো ঠিকমতো হাঁটতেই পারছিল না। ত্যাড়াব্যাঁকা হয়ে সামনে যাচ্ছিল। ঝপাৎ করে সামনে থেকে তার বাঁ হাতটা ঠিক ঝালহীন মুড়ির ঠোঙ্গার উপরে আছড়ে পড়লো। পাগলা নদীর ঢেউয়ের মতো ছলাৎ করে এক খাবলা হলুদ মুড়ি পড়ে গেল ধূলোয়। চিৎকার করে উঠলো সাকি। সাকির বাবা পেছনেই ছিল। লোকটির হাতে হয়তো হলুদ মুড়ির তরকারীর তরল বা রঙ লেগে থাকতে পারে; তাই সাঁই করে বাম পকেটে হাত ঢুকিয়ে টিস্যু বের করে আনলো বৃদ্ধ লেকাটাকে দেবার জন্য। আচানক এমন সেবা পেয়ে বেশ খুশি দেখালো তাকে।

রবিনের কাছে রুমাল বেশ পছন্দের জিনিস। পকেটে আর কিছু না থাক, একটা রুমাল তার থাকবেই। যেখানেই যাক সে পছন্দসই রুমাল তার চাই-ই। রুমালের বেশ কালেকশন আছে তার। কিন্তু সমস্যা হলো, যখনই রুমাল ব্যবহার করতে যায় তখনই মনে পড়ে রুমালটা পরিবর্তন করা উচিৎ বা ধোয়া উচিৎ। এতো রুমাল থাকতে একটা রুমালই কেন যে বার বার ব্যবহার করতে হয় তাকে, তা সে বোঝে না। একটা ব্যবহার করার পর কত মাস পরে যে আরেকটা পরিবর্তিত হয়ে পকেটে আসে তার কোন হদিস নেই। কিন্তু টিস্যুর বেলায় অবশ্য তা হয় না। পকেটে হাত দিলেই ফ্রেশ, মচমচে, ঝকঝকে টিস্যু। ব্যবহার করতেও ভাল লাগে আবার অন্যকে দিতেও ইচ্ছে করে। অনেকেই ব্যাকপকেটে মানিব্যাগ রাখেন, রবিনও রাখতেন, এখন রাখেন না। ভিড় আর ঠেলাঠেলির মধ্যে কখন যে পকেট ফাঁকা হয় তা বোঝাই যায় না। অযথাই টেনশানে থাকতে হয় সারাক্ষণ। কি দরকার, নিজের খেয়ে অতো টেনশানে থাকার। বাঁ পাশের সামনের পকেটে রাখো, ব্যাস্ হয়ে গেল। পকেটমার এতো রিস্ক নিয়ে সামনে হাত দিয়ে চোখের নিচ থেকে কাজটি সারার মতো বেকুবপনা করবে না নিশ্চয়ই ।

এমন যদি হতো ঘুনে ধরা এই সমাজটাকে রুমাল বা টিস্যু দিয়ে মুছে জঞ্জাল মুক্ত করা যেতো, তবে কতই না ভাল হতো। শুদ্ধ আর সত্যটাই প্রতিষ্ঠিত হতো। উ™£ান্ততা আর মোহতা বিদায় নিতো চিরদিনের মতো আর বিরাজ করতো শান্তি অনাবিল; মর্ত্য থেকে স্বর্গ হতো একই পথ। কোন পার্থক্যই থাকতো না এ দু’য়ের মাঝে।

-এস জে রতন
কথাশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ ও উন্নয়নকর্মী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.