নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি অপরাজিতা

১০ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২



আকাশ কে প্রশ্ন করো/ কেন দিগন্তে সে মিশে যায়? নদীকে প্রশ্ন করো/ সাগরে কেন সে হারায়? শুধু প্রশ্ন করো না আমায়/ আমি মরে যাবো লজ্জায়...। এই গানের মতো করেই এক প্রেয়সী তার প্রিয়ের কাছে আবগে মনের কথাগুলো জানাতে চেয়েছে। লজ্জার আবরণে কত না- না বলা অনুভব আর মৌন অনুরণন! তিতলী, ঘরকুনো একটি পড়–য়া মেয়ে। সারাক্ষণ পড়া আর পড়া, পাঠ্যবইগুলোই সে বেশি পড়ে। পাড়ার অন্যান্য মেয়েদের তুলানায় একটু বেশিই চুপচাপ। এই স্বভাবের কারণেই সে আলাদা। সে নিজে নিজেকে যতটা না আলাদা ভাবে, তার চেয়ে যেন বেশিই ভাবে একই পাড়ার জব্বর, কবির আর আরমান। তাদের কাছে মহারহস্যের নাম এই তিতলী। কেন সে অতো চুপ থাকে? কেন এতো পড়ালেখা? কি হতে চায় সে? কাকে বিয়ে করবে? এই প্রশ্নগুলো জ্যামিতিবক্সের কাঁটা কম্পাস আর দূরত্বমার্ক করা স্কেলের সাথে একাকার হয়ে মগজের চারপাশে ঘুরপাক খায়। মাথাটা ঝিম ধরে আসে জব্বরের। কি এক অজানা অচেনা হরমোনের প্রভাবে নীরব স্খলন ঘটে তার ভেতরে ভেতরে।

তিতলীকে নিয়ে কি এক অনৈতিক পরিকল্পনা আঁটে তিনজনে মিলে! অতো কম বয়সে এমন কা- করার জন্য যথেষ্ট সাহস পায় না তারা। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো ব্যবস্থা করার ফন্দি আঁটে। পাড়ার আরেক সমবয়সী একটি মেয়েকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানায়। মেয়েটির সেই বয়স হয়তো হয়নি, তাই ঐ তিন ছেলের কাজের সহযোগী হিসেবে মেয়েটি কাজ করার জন্য রাজি হয়। সুনশান নীরব গলিপথ। হাউজিং সোসাইটির করা বাসাগুলো যেন একেকটা জীবন্ত খাঁচা। এখানে চতুর্পাশে দেয়াল আছে কিন্তু দেয়ালের মাঝে বা বাইরে নিরাপত্তার জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ সমাধানের ভেতরেই সমস্যা। একদিন শেষ বিকেল। নিঃশ্চুপ রাস্তা। কোচিং থেকে বাড়িতে ফিরছিল তিতলী। হঠাৎ সামনের মোড়ের কাছে কোন এক মেয়ের চিৎকার কানে এলো। -অ্যাই ছাড়, কি করছিস? কি কথা ছিল? তারপর মুখে কাপড় দিয়ে চাপা দিলে যেমন কণ্ঠ হঠাৎ করে- ভলিউম কমিয়ে ইক্যুয়ালাইজার নিচের দিকে টেনে আনলে যেমন শোনায় ঠিক তেমন শোনা যাচ্ছিল। চাপা স্বরে আঁৎকে উঠলো তিতলী। কি করবে? সামনে এগোবে, না কি পেছনের ফাঁকা নিরাপদ পথে পা বাড়াবে?

সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ও কম। কি করা যায়? কাউকে সেল ফোনে কল করবে? অথবা সিনেমার নায়িকাদের মতো বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করবে? না, সিদ্ধান্ত নেয় তিতলী। এগিয়ে যায় সামনে চিৎকারের উৎসস্থলে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। মাজহারুল ইসলামের কণ্ঠে রেডিওতে শোনা সেই আহ্বান- হ্যাঁ ভাই আসিতেছে লেডি নাম্বার ওয়ান এর মতো করে ইয়া ঢিসুম, ঢুসুম শব্দে চোখ বন্ধ করে মারতে থাকে তিতলী। এই ধরনের প্রতি আক্রমণ জীবনে এটাই প্রথম। একদম প্রথম। এমন সাহস করাটাও এই প্রথম। কিভাবে হলো এটা সে জানে না। তবে চোখ খুলে যা দেখতে পায় তা হলো- কালপ্রিটগুলো আর আশেপাশে নেই। তাদেরই সঙ্গী মেয়েটি মীরজাফরদের হাত থেকে বেঁচে চোখ চড়কগাছ! যাকে নষ্ট করার জন্য এতো পরিকল্পনা, সেই মেয়েটিই কি না তাকে বাঁচাতে এভাবে এগিয়ে এলো? জ্ঞানের আলো যেমন যত খুশি বেশি ছড়ালেও শেষ নেই ঠিক তেমনি যেন এই প্রতিবাদের তীক্ষè ফলার ধারও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ঐ পাড়ায়। প্রতিটি নারী, বালিকা, কিশোরী হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। একবার, কিশোরী বেলায়, হাজেরা তার বাড়ি থেকে সন্ধ্যে বেলায় কি এক প্রয়োজনে পাশের চাচার বাড়িতে যায়। চাচা বেশ দরিদ্র ছিলেন। টাকা পয়সা হাতে রাখতে পারতেন না। বিভিন্ন রকমের নেশা ছিল তার। একচেটিয়া ভাল একটা ব্যবসা থাকা সত্ত্বেও তা আর ধরে রাখতে পারেননি। প্রায়ই চাচীকে মারধর করতেন। অগ্নিমূর্তি চাচাকে কি সব বলতে শুনলো সে। আর, দা হাতে চাচীকে মারতে উদ্যত। চাচা তো বাবার মতোই শ্রদ্ধার, কিন্তু চাচার এই পাশবিক আচরণের প্রতিবিম্ব দেখে তার বড্ড দুঃখ হলো। চাচাকে থামাতে যেয়ে থমকে গেল সে, যদি তার উপরও দা নিয়ে তেড়ে আসে?

যেকোন কিছুতে নেতৃত্বটা সবসময়ই নিতে হয় নিজেকেই। কেউ তা হাত বাড়িয়ে বা অনুরোধ করে দিয়ে দেয় না। নিজে থেকে শুরু করলেই তা মুহূর্তেই উদাহরণ হয়, একে একে দলে লোক বাড়তে থাকে। চলে আলোচনা, হওয়া যায় অনুসরনীয়, অনুকরণীয়। হাজেরা এই ভাবনাটিকে কাজে লাগায়। পেছন দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে তার চাচীকে ফিস ফিস করে পরামর্শ দেয়- চাচী তুমি কা-নারীর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছো কেন? প্রত্তুত্তর করো। হুংকার দিয়ে এগিয়ে যাও। দেখবে বাঘ লেজ গুটিয়ে বিড়ালের মতো আচরণ করছে। এমনটা করতে চাচ্ছিল না তার চাচী। হঠাৎ তা-ই করলো। নায়ক মান্নার মতো কণ্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো- অ্যাই, দেখেছিস এটা কি? আমিও দেবো মেরে হা হা আমি পাগল হয়ে গেছি। আয় দেখি কে কতো পারে? আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে চাচা এমন এক দৌড় দিয়েছিল, আর সাতদিনের মধ্যে এই বাড়ি মুখো হয়নি। চাচা বাড়িতে খবর পাঠিয়ে পরখ করে দেখেছে চাচীকে ভর করা জীন তাকে ছেড়ে চলে গেছে কি না? নারী প্রতিবাদ করলেই বা পুরুষের মতো আচরণ করলেই জীন বা ভূত বা পরী ধরেছে বলে মনে হয়। অথচ এই ঘটনাগুলো হয়তো খুব কম কিন্তু দিবালোকের মতো বাস্তব। নীলার প্রতিদিন অফিসে যেতে পথের ধারে ফুটপাতে বসে বাদাম বিক্রি করেন এক প্রৌঢ়া নারী, আরেকজন সব্জী বিক্রি করেন। বয়সের ভারে একদম জবুথবু অবস্থা। এটা দেখে মনে হবে এমন কিন্তু বাস্তবটা অন্যরকম। সারাটা দিন একজন সোমত্ত পুরুষের চেয়েও বেশি পরিশ্রম করেন এই মহীয়সী দু’জন নারী। নীলা প্রায়ই তাদের কাছ থেকে বাদাম আর সব্জী কেনেন। কথা হয় মাঝে মাঝে। এভাবেই গল্প শোনা। হ্যাঁ গল্পের মতোই মনে হয়। তবে তাসংগ্রামের গল্প। না হারার গল্প। যে স্বামী যৌবনে তাদের রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করে ঘরে তুলেছিল, সে-ই কি না শেষ সময়ে অন্য কারো প্রেম নদীর তীরে সাম্পান ভিড়িয়েছে।

এই দু’জনের গল্প একই রকম প্রায়। প্রথমে দিগি¦দিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছিলেন, কি করবেন? কিভাবে বাকি জীবনটা কাটবে? হাজারো প্রশ্ন মাথার চারপাশে, ভেতরে, বাইরে ঘুরছিল। একদিন এই তিতলী, হাজেরা আর নীলার মতো প্রত্যয়ী মেয়েদের অনুপ্রেরণায় আর সাহসী কথকতায় মুখ ফিরিয়ে বিজয়ীনীর বেশে লেডি নাম্বার ওয়ান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। নিজের আড়ষ্ট জীবনকে এখন মুক্ত মনে হয়। নিজের ব্যবসা নিজে বুঝে নিয়ে পূঁজি খাটিয়ে ঠিক-ঠাক উপার্জন করে যাচ্ছেন। প্রথম প্রথম হিসাব নিকাশে ভুল হতো। ক্রেতারাও ঠকাতো বিভিন্ন রকমের ছল করে। এখন ক্যালকুলেটরে হাত চলে, অক্ষরগুলোও অতি পরিচিত আপন। মালামাল কেনা থেকে শুরু করে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা, বাজার চাহিদা, হালনাগাদ মূল্য স্তর, নগদ আগমন নির্গমন, সর্বসাকূল্যে লাভ বা লোকসান সব, সব এখন স্ফটিকের মতো পরিষ্কার। অ্যাকাডেমিকভাবে শিক্ষিত ফাইন্যান্সে এমবিএ পাশ করা ছাত্রছাত্রীরাও রীতিমতো ভিমড়ি খেয়ে যাবেন তার, তাদের এই ব্যবস্যা বিশ্লেষণ দেখে। এই বয়সে এই নারীদ্বয় এখন প্রতিষ্ঠিত। ঘরে রঙ্গীন দূরদর্শন, ঢাকা শহরের অদূরে কেনা জমি, সেই জমিতে নিজের টাকায় তৈরী করা একচালা পাকা বাড়ি। দেয়ালে মনোহারী রঙ। সোফা, আলমারি, আলনা। জানালায় ঝালর দেয়া পর্দা আর দ্বিপলা স্বপ্ন ওড়না দিয়ে মোড়ানো। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।

পাঠক, ঘটনাগুলোতে সফলতা এসেছে ছায়াছবির মতো। ঘটনার শেষাংশে প্রাপ্তির প্রশান্তিতে ঢেঁকুর তুলছেন হয়তো। এতো সহজ বোধকরি সবকিছু নয়। যেকোন কিছুতে কাঠ খড় পোড়ানোর ব্যাপার থাকে। থাকে প্রচ্ছন্ন প্রত্যক্ষ সাধনা ও একনিষ্টতা। প্রতিটি নারীর জন্যই এই গল্পগুলো অনুপ্রেরণা হতে বাধ্য।

তুমি থাকো অবিচল
সচল চলমানতায়,
তুমি অগ্নি বহ্নি অম্বর
সীমাহীনতায়।

তুমি স্পষ্ট, নও একাকী
তুমি- তুমি, বিনয়ী, বিশিষ্ট;
তুমি মুক্তি উদারতায়
অনন্যা, সাফল্যে পরিশিষ্ট।

লেখক : এস জে রতন,
প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.