নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুদ্ধতার মানচিত্র

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩


জীবনের প্রথম বিসিএস ক্যাডারের মৌখিক পরীক্ষা। হাবিব লম্বায়, গড়নে, সৌন্দর্য্যে খারাপ না। মেধা তো আছেই। না হলে এতোগুলো ধাপ পার হয়ে কি করে মৌখিক পর্যন্ত আসেন? বোর্ডে ঢুকেই দেখেন আট নয় জন বসে আছেন। সবারই বয়স পৌঢ়ের কাছাকাছি। বোঝাই যাচ্ছে কি সিরিয়াস রকমের পরীক্ষায় পরীক্ষিত হতে হবে তাকে! সালাম দিয়ে টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারের কাছে দাঁড়ালেন। পরীক্ষকদের একজন জিজ্ঞেস করলেন- কি নাম আপনার? - রুবাইয়াৎ কল্লোল হাবিব। -তিনজনের নাম একাই নিয়ে নিলেন? -না, মানে, বাবা মা পছন্দ করে রেখেছেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরেকজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন- আচ্ছা, এই তিন নামের অর্থ কি? -রুবাইয়াৎ শব্দের অর্থ রত্ন পাথর, কল্লোল মানে ছোট্ট পাখির মিষ্টি কলরব আর। - থাক, আর বলতে হবে না, বলুন তো লগারিদমের জনক কোন ঘটনা থেকে তার মেথডের ভাবনা ভেবেছিলেন? প্রশ্নগুলো এমনভাবে করা হচ্ছিল যেন- একদল ভদ্রজন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হাবিবকে ব্রাশ ফায়ার করছিলেন। অস্ত্রের গুলিগুলো বুকে, কাঁধে, পেটে, বগলে, মাথায়, পিঠে পেতে নিচ্ছিলেন আর কোনোটা বুমেরাং হয়ে ফিরে যাচ্ছিল আবার কোনোটা ছিঁড়ে-ফুঁড়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। সে এক ভীষণ যন্ত্রণা। অবশেষে যন্ত্রণার অবসান হলো। ভাইভা শেষ হলো। এইভাবে পাঁচবার। তারপর এনজিওতে জব হলো। চাপা বেদনা ভরা, চোখে জল নিয়ে ছলছল চেয়ে থাকা- যদি কিছু হয়? যতই পদবী বড় হয় ততই বিনয় আর সততার দৃষ্টান্ত হতে হয়। বেশি বেশি বিনয় আর সততাও কখনো কখনো পরাধীনতা হতে শেখায়। এভাবেই চলছে হাবিবের জীবন সংসার।

সময় থাকলে বাসে না উঠে ফুটপাতে একা একা পথ চলতেই ভাল লাগে রবিনের। মাত্রই বিবিএ শেষ করে এমবিএ’র নতুন সেমিস্টারে ভর্তি হয়েছে। কিছুদিন হলো একটি মেয়ের সাথে তার পথে দেখা হচ্ছে। ফুটপাতে হাঁটতে যেয়েই এই ঘটনা। অনেকদিন মুখোমুখি হয়েছে রবিন। প্রতিদিন নতুন নতুন পোশাক পরার ব্যাপারটিই যেন আলাদা ছিল। আর বাকি যেন সবই একই রকম, সেই মিটি মিটি হাসি, উদাসীনতা, বাঁকা চোখে তাকানো। একই রকম। মাঝে মাঝে মনে হতো, প্রতিদিন একটা দিনেই আটকে নেই তো? যেদিন একই পোশাকে তাকে দেখা যেতো- সেদিন ঘড়িতে বার বার চোখ রাখতে হতো। কে জানে সত্যি সত্যি হয়তো সময়টা দাঁড়িয়েই গেছে। অথবা স্বপ্ন। একদিন দু’জনেই আনমনে হাঁটতে যেয়ে কিঞ্চিৎ ধাক্কা লেগে যায়, হাত থেকে রবিনের নোট খাতা পড়ে গেলে তা তুলে দেয় মেয়েটি। ধন্যবাদ জানাতে যেয়ে- ওকে, ইটস্ ওকে। আপনি? –হ্যাঁ আমি, সামনের কোচিং সেন্টারে এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং করতে যাই। -আপনি? -আমি আইবিএ থেকে বিবিএ শেষ করলাম। এখন মোটামুটি ফ্রী। তবে ডিজিটাল সফট্ওয়্যারের উপর একটা কোর্স করছি। অবসরটা বেকার না থেকে কাজে লাগানো আর কি। মনের অজান্তেই মনের ভেতরে দোলা দিতে লাগলো প্রেম ভাবনা। তারপর হঠাৎ করেই সে নেই। এই পথে আর কখনো দেখা গেল না। অযথাই মনটা ভেঙ্গে চুরমার হলো। স্মার্ট প্রেম না হলে তথ্য প্রবাহের এই যুগে যা হয়, তাই হলো। পাশের বাড়িতে প্রিয়জন থাকলেও আইনি অভিযান ছাড়া তাকে খুঁজে বের করা বিড়ম্বনা ছাড়া আর কি!

মনে পড়ে যেদিন প্রথম বেতন পেয়েছিলেন, সেই বেতনের টাকা আর বাসায় নিয়ে আসা হলো না। সহকর্মীরা যেভাবে ধরলো না খাইয়ে আর পারা গেল না। ওরা চেটেপুটে খেলো আর হাবিব চেয়ে চেয়ে দেখলো। আহা অন্যের টাকায় ইচ্ছেমতো খাওয়াতে কি যে মজা। ভাল লাগলো এই ভেবে যে ভদ্র ঐ মানুষগুলো হয়তো এভাবে করে অনেকদিন খায়নি। খাক, একটু মন ভরে খাক। প্রথম বেতনের টাকায় কি খাবে কি করবে তা নিয়ে তার বউ আগে থেকেই বড় একটা পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু হাবিব শূন্য হাতে বাসায় ফিরে এলে বউয়ের সে কি রাগ, তা না হয় এই বর্ণনায় নাই বা এলো। পরে কর্জ নিয়ে বউয়ের সেই বায়না মেটাতে হয়েছিল। যাক, মোট কথা টাকা খসলোই, আটকানো গেল না। টাকা আটকানো যায় না, নিজে নিজে আটকে না গেলে।

ফেইসবুকে চ্যাট হচ্ছে। ফেইসবুককে প্রায়ই মনে হয়- এটা একটা ফেইকবুক। সব কিছু নিশ্চিত হতে হতেও যেন ফসকে যায়। এমন কিছু কথপোকথন হয় যা দেখে শেষান্তে বোঝা যায় এটা ফেইক চ্যাট হয়েছে। সব শেষ। এভাবেই ফেইক চ্যোট করতে করতে রবিন সত্যিকার ভাবেই প্রেমে মজে যায় কোন এক নারীর নামধারী এফবি আইডির। ‘মৌ মৌনতা’- এই আইডিটা পাঠক কখনো খুঁজে পেয়েছেন কি না, তা পাঠকই বলবেন। তবে এটা সেই আইডি যা ঝড় তুফান তুলে রবিনকে দোলাচ্ছে, ভাসাচ্ছে, ডোবাচ্ছে, ভেঙ্গে চুরমার করছে আবার গড়ছে। রবিন বিষয়টাকে এমন বাস্তবতার সাথে মিশিয়েছে যে এখন আর ফিরে যাবার উপায় নেই তার। দিন ক্ষণ ঠিক। দেখা হবে প্রেমিকার সাথে। এফবি’র সফটওয়্যার প্রেমিকা। চ্যাট বন্ধু। সব ঠিক আছে। ধানমন্ডি লেকের কাছে দেখা হবে। বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশের মোজাইকের বেঁদিতে এই প্রথম তাদের মুখোমুখি দেখা ও কথা হবে। নীল রঙের শাড়ী পরে লেকের দিকে তাকিয়ে বসে অপেক্ষায় থাকবে মৌ মৌনতা। রবিন আসবে সাদা রঙের শার্টে। এতো দিনের পরিচয়, চ্যাটে এমন কিছু নেই যার বর্ণনা দু’জন দু’জনের সাথে করেননি। মাঝে মাঝে মনে হতো- তাদের সাথে বুঝি দেখিদেখিও হয়েছে।

অপেক্ষা। নীল শাড়ীতে পেছনে দীঘল কেশ বিছিয়ে সত্যি একজন অপেক্ষা করছে। বয়স আনুমানিক ১৯ বা ২০ বছর। রবিন বিশ্বাস করতে পারছিল না। আবার বিশ্বাস না করারই বা কি আছে। রবিন কি করবে, দৌড়ে তার কাছে যাবে? না কি ধীরে ধীরে যাবে? না কি- এতো কিছু ভাবার কি আছে? কাছে গেলেই তো হলো। ভাবনার মধ্যেই আচমকা সিকিউরিটির কয়েকজন লোক এসে রবিনকে থামিয়ে দিলো। টেনে হিঁচড়ে পুলিশের নীল রঙের গাড়িতে উঠিয়ে নিলো। -ভাই কি হয়েছে? আমি কি করেছি? একজন কর্কশ কণ্ঠে বলল- কোন কথা নয়, একদম চুপ থাক। পিকআপের মেটে পর্দায় ঢেকে গেল নীলাঞ্জনা মৌ মৌনতা। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যখন আলো ফুটলো তখন হাসপাতালের বিছানায় স্মৃতিহীন রবিন- নির্বাক পড়ে আছে যেন। ঘটনাটা এমন নাও ঘটতে পারতো। কিন্তু এমনই হলো, কিছু করার ছিল না। এরপর দীর্ঘ কাহিনি। সুস্থ হবার পর আবারো ফেইসবুকে সার্ফিং। তাকে খুঁজে ফেরা। সেই মৌ মৌনতাকে। এই নামে কাউকেই পাওয়া গেল না। অনেক গবেষণার পর এসএমএস সেটিং এ যেয়ে পুরোনো সব এসএমএস লগ বের করে এসএমএস এর ডায়ালগ দেখে বোঝা গেল ঐ আইডি থেকে তাকে ব্লক করে রাখা হয়েছে। বন্ধুরা বলল ইদানীং এমন ধরনের কিছু ক্রাইম হচ্ছে যেখানে ছেলেটিকে বড়লোক ভেবে নারী সেজে ব্ল্যাকমেইল করে ছেলেটির সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। তার উল্টোটা হলে হাসপাতাল, অজ্ঞান করানো তারপর যা হবার তাই। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার এমন কৌশলে যে রবিন জড়িয়ে যাবে, তা কখনো ভাবতে পারেনি। তবে ভাবতে হবে, পাঠককেও ভাবাতে হবে। তবে এখনো মৌ এর সেই চমকপ্রদ মায়াময় চ্যাট ম্যাসেজগুলো রবিনকে ভাবায়, ভাবতে ভাল লাগায়।

সমাজের এই ধরনের বহু ঘটনার প্রবাহগুলোকে কখনো আমরা সাজিয়ে ভাবি না। এলোমেলো করে ভাবি। বিশ্বাসটা স্বর্গ থেকে আসে, তাই বিশ্বাস করি। বার বার শিক্ষা পাবার পরও আমরা ভুল করি, ভুলে পড়ি। চলুন শুদ্ধটা চর্চা করি, নির্ভুলের কাছাকাছি থাকতে শুদ্ধতার মানচিত্র এঁকে রাখি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: দুর্দান্ত কিছু ঘটনা পড়লাম বাস্তবতার সমান্তরালে!

ভাল লাগা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.