নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐশ্বরিক ইশারা

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪



এক দেশের এক গহীন বনে এক নেকড়ে ছিল। সে একাই সেখানকার বাদশা ছিল। তার মতো বড়, হিংস্র আর শক্তি সামর্থ্যবান কোন প্রাণী সেখানে ছিল না। ছোট ছোট বিভিন্ন প্রাণীদের ধরে আনা শিকার সে একাই গ্রাস করতো। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে শিকার করে তা ভক্ষণ করতে হতো অন্য প্রাণীদের। একটা নেকড়ে কিভাবে কৌশলে আর শক্তিতে অন্য ছোট প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করছে তা প্রায়ই ভাবতো শেয়াল মশাই। কোন একটা বুদ্ধি না বের করলে যেন শেষ রক্ষা আর কারো হচ্ছিল না। একদিন এক রাতে নেকড়েটাকে আচ্ছা মতো খেতে দেয়া হলো। পরিকল্পনা করেই ছোট ছোট সকল প্রাণী এক হয়ে সেরাতে সেই ভোজের আয়োজন করলো। অনেকদিন পর এমন ঠাসা ভোজ পেয়ে নেকড়ে তো গজ ফেরাতেই পারছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই নেকড়ের দু’চোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম এসে নামলো। হালুম করে ডাক দিয়ে গড়িয়ে গেল নরম ধুলায়। কি সে ঘুম। আর কি ভাঙ্গে?

নেকড়ে স্বপ্নে দেখলো- একটা দ্বীপে সে একা। চারপাশে কোন বৃক্ষ নেই, পশু-পক্ষী কিছু নেই। কোন খাবারও নেই। একদঙ্গল শকুন তার চোখ দু’টো খুবলে তোলার জন্য অপেক্ষা করছে। শুকুনগুলোর সাথে পেরে উঠছে না সে। যতবারই তাদেরকে খামচি দেয়ার চেষ্টা করছে ততবারই তারা ডানায় ভর করে উড়ে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। আর যাই হোক, নেকড়ে তো আর উড়তে পারে না। হঠাৎ নেকড়ের চোখ দু’টোতে প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হলো। গগন বিদারী হালুম শব্দে জেগে উঠলো সে। দেখে, সে একটা কর্দমাক্ত জলাশয়ে কাদা মেখে একাকার। কাদা সরিয়ে চোখ দু’টোকে বের করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। চোখেও জ্বালা শুরু হলো, কোথাও একটু পানি পেলে কিছু হতো। রাতের সেই জম্পেশ খাবার পেটে আর নেই। চো চো করছে পেট। কোন মতে গা’টা তুলে যেই দাঁড়াবে অমনি চোরা গর্তে ভুর ভুর করে ডুবে গেল নেকড়ে।

শেয়াল বাবুর কীর্তিতে সকল প্রাণীরা তাকে সাদুবাধ জানাতে বনের মধ্যে সংবর্ধনার আয়োজন করলো। শেয়ালের সাথে বনের বেশ শক্তিশালী, সংখ্যায় বেশি এমন প্রাণীরা এক হলো। শারীরিকভাবে কিছু দুর্বল প্রাণী এক হতে না পেরে, নিজের আহার খোঁজার জন্যই ব্যতিব্যস্ত থাকলো। দুর্বল প্রাণীদের সংগ্রহীত আহার আর তাদেরকে খেয়ে বেশ ভালই সময় কেটে যাচ্ছিল শেয়াল আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের। শেয়ালের নেকড়ে তাড়ানোর পদক্ষেপটি প্রশংসার ছিল কিন্তু কি করে যেন কি হয়ে গেল। শেয়াল পন্ডিতের নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী প্রাণীদলই বনটাকে নিজের মতো করে শাসনে রাখতে শুরু করলো। সবাই মানে, ভয় পায়- এমন একটা অবস্থায় নিরীহ প্রাণীরা বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হতে থাকলো। যে শেয়াল সবার উপকারার্থে পরিকল্পনা বাতলে দিয়ে সবাইকে নেকড়ে থেকে মুক্তি দিয়েছিল সে-ই কি না চোখ উল্টিয়ে নিরীহদের উপর অনাচার করতে থাকলো?

ক্ষমতার পালা বদলে কে যে কখন কি হয়, তা বলা কঠিন। আজ যে নীতি কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে, সে-ই আবার ক্ষমতার মধূর হাঁড়িতে পড়ে নিজের পক্ষে আইনকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ভেতর থেকে নিজেকে শুদ্ধ না করলে বিশুদ্ধ হবার সম্ভাবনা ক্ষীণই হয়। বিশুদ্ধ হবার জন্য প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি দরকার। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা জরুরী। যাই হোক জীবনে, প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবো, ছেঁড়া, তালি দেয়া বসনে দিন পার করবো, তবু নিজের সতততাকে বিসর্জন দেবো না- এই রকম একটা জেদ থাকারও তাগিদ থাকতে হবে। তবেই অনন্য হয়ে ওঠা যাবে। মানুষ ঠিক এর উল্টোটা করে। জেদ করেই টাকা গাড়ি বাড়ি ক্ষমতার মসনদ বানিয়ে ছাড়ে। তারপর তো যা হবার তা-ই হয়। ধরাকে সরা জ্ঞান করতেই হয়। না হলে খাদে পড়ে নিশ্চিহ্ন হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর তা থেকে মুক্তি পেতেই এই অনাচার-অবিচার।

ক্ষুদ্র, লঘু বা গুরু বলে কথা নেই। নৈতিকতা যেখানে বিলিন সেখানে যাচ্ছে তাই-ই হয়। ই্স্যুটা নতুন নয়, অনেক পুরোনো। অনেকে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, আবার অনেকেই পারে না। যারা পারে না তারাই শেষ হয়ে যাওয়ার তালিকাতে পড়ে। দু’কূল রক্ষা করা কঠিন। কেউ কেউ এটা বেশ মুন্সিয়ানার সাথেই পারে। তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক শেখার আছে। চোখ কান খুললেই বুঝতে পারবেন। আমাদের মধ্যে যাদের কিছুই নেই। তাদের একটু মাথা খাটিয়ে চলতে হয় বৈকি। জীব-বৈচিত্র্যের চক্রটা খেয়াল করলেই সব অনুধাবন করা যায় সহজে। জীব-বৈচিত্র্যের মধ্যে শ্রেণীকরণ রয়েছে। আমার মনুষ্য, উন্নত জাতি। আমাদের মধ্যে নেকড়ে আর শেয়ালের উদাহরণ দিয়ে সভ্যতাকে উন্নতির শিখরে নেয়া যাবে না। আমাদের শক্ত বিবেক রয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। নাসিরনগর, সাঁওতাল পল্লী, রহিঙ্গা যে ইস্যুতেই আলোচনা হোক না কেন- কোনভাবেই স্বেচ্ছাচারিতাকে মেনে নেয়া যায় না। যেখানে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়, তা্র বিপক্ষে আমাদের শক্ত প্রতিবাদে মুখর থাকতেই হবে।

যারা অমন ঘৃণ্য কাজের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করছেন- তাদেরকে বলছি, ইতিহাস ঘুরে ফিরেই তৈরী হয়। আজ যাদের উপরে নির্যাতন-অবিচার করা হচ্ছে, সেই একই রকমের অসহায়ত্ব তাদেরকেও কোন না কোনদিন গ্রাস করতে পারে। ঐশ্বরিক ইশারায় রাত দিনে আর দিন রাতে রূপান্তরিত হতে পারে।
---

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৫

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: যারা বোঝার তারা বুঝলেই হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.