নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুলটাকে মরতে দেব না

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩


শহুরে জীবন, বাবা মায়ের চাকরি, স্কুল, কোচিং এসব ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াই হয়না। রিমি তো মহাখুশি, এবার বৃহস্পতিবারে ১৬ই ডিসেম্বর পড়ায় তিনদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে তারা। সবুজ লাউয়ের ডগা, সীমের মাচার পুরোনো কঞ্চি, মাটি চাপা পড়া হলদেটে ঘাস, ক্ষেতের আল, হলুদ শরষে ফুল সবকিছু নিজের হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাড়ি ফিরেছে। একটা অটোরিক্সা করে যাচ্ছিল তারা। পথে যেতে যেতে অটোরিক্সা থেকে নেমে নেমে ছোট্ট মেয়েটি তার স্বাধীনতাকে স্পর্শ করে দেখেছে। বাবা মা-ও তার সাথে সঙ্গ দিয়েছে। অনেকগুলো ছবিও তুলেছে মোবাইল ক্যামেরায়। আহা দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে যেন বুক ফুলিয়ে মাতৃভূমিকে আদর করে দিচ্ছে সে, আবার তার আদরও নিচ্ছে। নির্মল বাতাস, পাখির কূজন, দূরের মাঠে রাখালের পল্লীগীতি গান, বাঁশির সুর- যেন এ এক অন্য বাংলাদেশ। শহুরে ব্যস্ততার বাইরে গ্রামের এই চিরচেনা চিত্র যেন এক পশলা বহু প্রত্যাশার বৃষ্টি হয়ে ধরা দিল রিমির কাছে। প্রশ্ন করল বাবাকে- বাবা, স্বাধীনতা মানে কি? স্বাধীন হবার পর আবার বিজয়ের দরকার হয়? –হ্যাঁ, তোমাকে যদি একটা বড় বাড়িতে আটকে রেখে সব সুবিধা দিয়ে বলা হয়, এখানে থাকো, খাও, সময় কাটাও। এগুলো পাওয়ার পরও তোমার বাইরে বের হবার, মুক্ত হয়ে নিজের মতো চলার যে আকুতি মনের মধ্যে আকুলি বিকুলি করে- সেটাই হচ্ছে স্বাধীনতার বিজয়। এই বিজয়ের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়। আমরা সেই মূল্যের বিনিময়ে স্বাধীনতা আর বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছি।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। রিমির পরীক্ষার ফল বের হয়েছে। পরের ক্লাসের সেশন ফি, বই, ভর্তির জন্য অনেকগুলো টাকা প্রয়োজন। জামা জুতা, ইউনিফর্ম আরো কত কি? শহরে থাকতে, পড়াশোনা করতে, খাবার কেনা, রান্না, উৎসব, সামাজিকতা, আত্মীয়তা- এগুলো ম্যানেজ করতে করতে বাবা মা’কে সবসময়ই গলদ ঘর্ম হতে হয়। পাশ করার পরও পরবর্তি শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেবার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে একবার রিমির বাবা বেশ প্রতিবাদী হয়ে কথা বলেছিল। তখন বাবার যেন লজ্জায় মাথা কাটা যাবার জোগাড়। কেউ কেউ বলল, আপনি কেন বলতে যেয়ে ছোটলোকি করলেন? কত জনে কত কথা বলল, সান্ত্বনা দিল কিন্তু কেউ সমস্বরে প্রতিবাদ করল না। সবারই যখন একই সমস্যা তখন কেন অন্যেরা একবাক্যে এর প্রতিবাদ করলেন না, বুঝতে পারলেন না রিমির বাবা।

এখন তো ভ্রমণের পঞ্চম দিন আগে থেকেই ট্রেনের টিকেট অগ্রীম কেনা যায়। আগে এমন ছিল যে, ট্রেন ছাড়ার একঘন্টা আগে থেকে টিকেট কেনা যেতো। এখন, তখন, যে সময়ের কথাই আনা যাক না কেন, ট্রেনে যাবার জন্য স্টেশনে কয়েক ঘন্টা আগে এসে টিকেট কিনে নিজে ট্রেন ভ্রমণ করার ব্যাপারটা বাস্তবে কল্পনাও করা যায় না। রিমির বাবা রায়হান বরাবরই প্রতিবাদী কণ্ঠের একজন মানুষ। সিলেটে যাবেন। পারাবত ট্রেনের টিকেট কাটতে এসে যথারীতি ব্ল্যাকারদের কাছ থেকেই টিকেট কিনতে হলো। এটা নতুন নয়। এটাই করত হয়। কিন্তু যতবারই এই রকম হয়েছে ততবারই তিনি স্টেশন মাস্টারকে বক্তৃতা শুনিয়ে এসেছেন। কোন লাভ খুব একটা হয়নি। লোকজন বলেছে- ভাই এটাই নিয়ম। কয়েকটা টাকা বেশি দিয়ে টিকেট কিনলে এমন কি ক্ষতি?

বায়রার সদস্যপদ নবায়ন করতে কাকরাইলের বৈদেশিক কল্যাণ অফিসে গেছেন রায়হান। চেষ্টাটা ছিল কি করে কোন ঘুষ বা উপরি টাকা না খরচ করে কাজটা করানো যায়। অনেক দিন ঘোরাঘুরির পর এ কক্ষ ও কক্ষ করার পর সর্বশেষ মহাপরিচালকের কক্ষে যেয়ে বিস্তর এক ভাষণ প্রদান করলেন। এতোদিনের যাতায়াত আর চেষ্টা প্রায় ভেস্তে যেতে বসল। পরিচালক মহোদয় রায়হানের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য তাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটা ইনভেস্টিগেশন টীম গঠন করে তাদেরকে নির্দেশ দিলেন। নির্ধারিত দিনে অফিস পরিদর্শনের পর একশটিরও বেশি অবজারভেশন দিলেন। রিপোর্টে লিখলেন- শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষে সদস্যপদ নবায়ন করা যাবে। শর্তগুলো নিয়ে অফিসের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন রায়হান। সবকিছুর উত্তর প্রস্তুত করে রিপোর্ট দাখিল করলেন। রিপোর্ট পড়ে আরো প্রায় দশটির মতো নতুন শর্ত দিলো বৈদেশিক কল্যাণ অফিস। সেগুলো সদস্যপদ প্রাপ্তির পর মেনে চলতে হবে। এরপর সদস্যপদ পাওয়ার পালা। মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে আপাতত মুক্তি মিললেও অফিসারদের কাছ থেকে মুক্তি মিলছিলই না। এই টেবিল, ঐ টেবিল, এই অফিসার, ঐ অফিসার করে করে অবস্থা খারাপ। জুতা ক্ষয়ে গেল, প্রতিদিন দুপুরের খাবার খেতে দেরি হওয়ায় পেটে গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা নিয়মিতভাবে শুরু হলো। অবশেষে ওরাই শেষবারের মতো আবারো উপদেশ দিল- ভাই এতো অবজারভেশন, শর্ত আর ভাষণ দিয়ে সময় নষ্ট না করে কিছু মালপানি ছাড়েন সব ঠিক হয়ে যাবে। হ্যাঁ সবই ঠিক হলো, কিন্তু ততক্ষণে পকেটের উপর চাপটা ঠিকই গেলো। চোখের চশমা ঠিক করতে করতে এক বুড়ো তিরষ্কার করে বললেন- সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি?

হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখনও অভিমানে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেননি। তাঁরা বলেন- সনদ নিয়ে প্রমাণ করতে হবে আমরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম? এলাকার মানুষ, ইতিহাস আলোচনায় এখনো যাদের মুখে মুখে এই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, তা এখন হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক। সুবিধাজনক রাজনীতিতে নাম বা সংশ্লিষ্টতা না থাকলে মুক্তিযোদ্ধারা এখন রাজাকার হয়ে যাচ্ছেন রাতারাতি। পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা- বীরউত্তর, বীরপ্রতিক, সেক্টর কমান্ডারদেরকেও করছি বিতর্কিত। উপরোক্ত ঘটনাগুলো শুধু পাঠকের ভাবোদয়ের জন্য তুলে ধরা হলো। এই ঘটনাগুলোর সাথে সবার জীবনেই কোন না কোনভাবে পরিচয় রয়েছে। সবাই আমরা সবই বুঝি, সবই জানি, তবে কেন এই চুপ করে থাকা? এর জন্যই কি ৭১ এ যুদ্ধ হয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধের একটা আদর্শ ছিল। সেই আদর্শ আজ কোথায়? অনেক গর্ব করেই বলতে শোনা যেত যে, আমি মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এখন অনেক বীর যোদ্ধাগণই চুপ করে আছেন। লজ্জায়, ঘৃণায় আর ইতিহাস বিকৃতির চাপাকলে অনেকেই শীতনিদ্রায় আছেন।

আজ মহান বিজয় দিবস। আমাদের আনন্দের শেষ নেই। এই আনন্দের মাঝেও দেশের দুষ্টক্ষতগুলোর চিত্র বার বার চোখের সামনে উপহাসের মতো জ্বলজ্বল করে ধরা দেয়। কে যেন আঙ্গুল দিয়ে জানিয়ে দেয় তোমাদের এখনও সময় আছে- দুর্নীতি, ঘুষ, স্বেচ্ছাচারিতা, বেলাল্লাপনা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসাম্প্রদায়িকতা, অনৈতিক-অবৈধ বাণিজ্য, চোরাচালান, টেন্ডারবাজি, চাপাবাজি, অযাচিত শিক্ষা ব্যবসা, দুদকের অক্ষমতা, সুযোগের অপব্যবহার, ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন, সীমান্ত অস্থিরতা, সার্বভৌমত্বহীনতা, সংস্কৃতি পাচার ও সংস্কৃতির স্খলন, অর্থপাচার, গুম, খুন, সাজানো অভিযান, ক্রসফায়ার, স্বাধীনতা হরণ, বিচারহীনতা, ধর্মহীনতা, বাকস্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য পথ বের করতে হবে। তবেই আজকের এই বিজয়ের আনন্দ সবচেয়ে আনন্দের হবে। মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি / মোরা একটি মুখের হাসির জন্য যুদ্ধ করি। এই গানের রেশ ধরেই বলতে চাই- আমরা ফুলটাকে মরতে দেব না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.