নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চল্ যাবো তোকে নিয়ে

১২ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:০০



মিশা পেছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। সন্ধ্যেটা কখন যে সূর্যকে আড়ালে রেখে রাত্রীর আঁধারকে আলিঙ্গন করিয়েছে বুঝতেই পারেনি মিশা। ধীরে ধীরে ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের গানের আসর বসতে শুরু করেছে। খোদ ঢাকাতেই এমন পরিবেশ ভাবতেই যেন অন্য রকম লাগছে তার। তখনো হাতিরঝিল পরিকল্পিত নৈসর্গিক জলাধার হয়ে ওঠেনি। একান্ত প্রকৃতির মাঝে অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। মনুষ্য সৃষ্ট অদ্ভূদ সমস্যাগুলো যেন চোখের পাতাকে স্পর্শ করে জানান দিচ্ছিল- আমাকে নিয়ে চলো দূরে, ওকে মুক্তি দাও। হঠাৎ চোখদু’টো বেশ ঝলসে উঠলো। দূর থেকে কেউ টর্চের কড়া আলো প্রক্ষেপণ করেছে। বুকটা কেঁপে উঠলো। সন্ধ্যেটা সবসময় ঠিক নিরাপদ নয়। এখনি উঠতে হবে। -অ্যাই কি খবর? কোথায় যাচ্ছিস? মিশা আচমকা প্রশ্ন শুনে বলে উঠলো- কে? তারপর আর কেউ নেই। অগোছালো ডাঙ্গা ধরে বাড্ডার কাছে পৌঁছাতেই একদল যুবক পথ আটকে দিলো মিশার। বয়সে মিশার কাছাকাছি। মিশা অসহায় হয়ে বলল- কি ব্যাপার ভাই, পথ ছাড়েন? ছোট্ট একটা শীতল ধাতব কিছুর আঘাতে বুকের পাশটাতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলো।

ব্যস্ত রাস্তা, বাম হাতের কনুইয়ের ভাঁজে পাশ ব্যাগটার দু’টো হ্যান্ডেল ঝুলিয়ে তড়িৎ বাসে উঠতে যাচ্ছিল তমা। ব্যাগটাতে টান পড়তেই দৃষ্টি ফেরালো ব্যাগের চেইনের দিকে। জিপার বন্ধ দেখে এবং বাসের একটা সীট পেয়ে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। ওড়নাটা ঠিক করে বসতেই ডান হাতে থাকা স্মার্ট ফোনটার স্পর্শহীনতা অনুভূত হলো। বুঝতে বাকি রইল না যে দৃষ্টি আর মনের চৈতন্যকে ধাঁধাঁয় ফেলে সেলফোনটা কব্জা করেছে দুর্বৃত্তজন।

বিশ টাকা লোড করা খুব দরকার, টাকাটা কি করে যে ভাঙ্গাই? কথা শেষ না হতেই সহকর্মী মাসুদ বলল- দেন টাকাটা। তারপর চোখের পলকে যেন উধাও। মুখ ভর্তি ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কানের কাছে শব্দ করে বলে উঠলো-শোনেন ভাই, বুদ্ধি থাকতে শ্বশুর বাড়িতে করে খাওয়া কেন? এই নেন ভাংতি। অ্যাই রিক্সা যাবেন? -হ, যামু। তয় যেইহানে কইবেন, হেই হানেই নামতে অইব। -কি বলেন ভাই? কথার বরখেলাপ করবো কেন? যাক সে কথা, মিরপুর ১০ এ যাবো, মোড়েই নামবো। ৪০ ট্যাহা দিবেন। ভাড়া তো অতো না, ২৫ টাকা পাবেন, যাবেন? কয়েক দফা কষাকষির পর ৩০ টাকায় রিক্সাওয়ালা যেতে রাজি হলেন। ১০ এর মোড়ে নামার পর রাব্বি সাহেব ১০ টাকার চকচকে ৩টি নোট বাড়িয়ে দিলেন রিক্সাওয়ালার দিকে। চোখ দু’টো মস্ত বড় করে একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিক্সাওয়ালা বললেন- আর ১০ট্যাহা কই? -মানে? আপনার সাথে তো ৩০ টাকাতেই মিটমাট হলো। এখন আরো ১০ টাকা চাচ্ছেন কেন? তাচ্ছিল্যের সুরে রিক্সাওয়ালা বললেন- দেহেন রিক্সায় যাওয়ার মুরদ না থাকলে হাইট্টা যাইবেন। ১০ট্যাহা কম দবেন ক্যান? আরো কয়েকজন রিক্সাওয়ালা বিষয়টি জানতে কাছে ঘেষতে থাকলে রাব্বি সাহেব ১০টাকার আরেকটি নোট বের করে রিক্সাওয়ালার হাতে দিয়ে তড়িৎ স্থানত্যাগ করলেন।

নিত্যকার এই ঘটনাগুলো বানানো কোন রঙ্গগল্প বা গালগল্প নয়। জীবন থেকে নেয়া একেকটা দাঁত কিড়মিড় করা অসহায়ত্বের কথকতা। কে কাকে কি করে শিক্ষা দেবে? কে নেবে এই সমস্ত অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার দায়িত্ব। মানুষের ভেতরকার পশুটা খেয়ে দেয়ে দিনে দিনে নাদুস নুদুস হচ্ছে, তা আমরা কেউই টের পাচ্ছি না। প্রাণীচক্রের ভোগের স্তরের মতো ক্ষমতা ও সুযোগ, অসহায়ত্ব ও অসচেতনতার দুষ্টু ফাদে ফেলে ঠকাচ্ছি আমাদের নিজেদেরকে। মাঝে মাঝে তাই ইচ্ছে করে দূরে চলে যেতে, নব প্রজন্মকে সাথে নিয়ে, যেখানে এই অসঙ্গতিগুলো একদমই থাকবে না। নচিকেতা তাই যথার্থই গেয়েছেন- চল্ যাবো তোকে নিয়ে / এই নরকের অনেক দূরে / এই মিথ্যে কথার মেকি শহরের সীমানা ছাড়িয়ে...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.