নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিদ্ধান্তহীনতা ও নিজেকে অন্যতে সমর্পণ

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫১

ওয়েটিং বে তে গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছে রমিজ সাহেব। এভাবেই প্রায় প্রতিদিন অপেক্ষা করেন। কখনো খুব কম সময়ের মধ্যেই গাড়ি পেয়ে যান, আবার কখনো কখনো অনেক সময় পর। এইটুকু কাজেই তার মাথায় প্রচন্ড অস্বস্তি অনুভূত হয়। প্রায়শই ভাবেন, কেন তার বাবা মা অথবা সে নিজেই প্রচুর সম্পদের মালিক হলেন না, যাতে সে একটা গাড়িই কিনতে পারেন! চোখের সামনেই দেখেন কতজনে বিকল্পভাবে অনায়াসেই অফিসে যাবার সে পথটুকু চলে যাচ্ছেন। রিক্সায়, সিএনজিতে বা হেঁটে গেলেও অফিস সময়ের মধ্যেই উপস্থিত হতে পারেন। তারপরও শুধু- কি করবেন, কোনটা করলে ভাল হয়, পায়ের গোঁড়ালিতে ব্যথা বাড়বে কি না, অল্প টাকার পথে গুরুচন্ডালি সময় ব্যয় হবে কি না, পিপাসা লাগবে কি না, বেশি ঘেমে যাবেন কি না, জুতাটা বেশি ক্ষয়ে যাবে কি না, ফুটপাতে হাঁটতে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করবেন কি না, কারো ধাক্কা লাগবে কি লাগবে না, কোন গাড়ি ফুটপাতে উঠে জীবনহানী ঘটাবে কি না ইত্যাদি ভাবনা করতে করতে ওয়েটিং বে তে বসে বসে সময় বয়ে যায়। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন যেন লক্ষ্য হাসিল করতে পারেন না।

হালিম সাহেব মার্কেটে গেলে প্রায় সবকেনাকাটাতেই দামের সাথে পণ্যের গুণাগুণ গুলিয়ে ফেলেন। অবশেষে প্রায় বেশিরভাগ সময়েই তুলনামূলক অপছন্দনীয় জিনিস নিয়েই বাসায় ফেরেন। কখনো মনে হয়- দোকানী যা বলছেন তাই হয়তো ঠিক, আবার না, আবার পণ্যটি নিজে দেখে পরখ করার সময় মনে হয় এটাই তো ভাল, কিন্তু পাশের একজন ক্রেতার মন্তব্যে আবার মনে হয় না উনি যেটা বলেছেন সেটাই তো ঠিক। শার্ট কিনতে গেলে মনে হয় আহা সব ঠিক ছিল বোতামের রঙটা অমন না হলে কেনা যেতো। কখনো সাইজ, কখনো, সূতার বুনন সব কিছুতেই একটা অস্থিরতা, অসম্পূর্ণতা যেন থেকে যায়। এই যখন অবস্থা তখন একদরের ব্র্যান্ডের দোকানগুলো থেকে পণ্য কিনতে দামের ক্ষেত্রে তার ভাবনা না থাকলেও, রঙ, সাইজ, অন্যান্য এক্সেসরিজে তার যথেষ্ট এলার্জি থাকে। অবশেষে যেটা কেনেন, তা একরকম অস্বস্তি আর অপছন্দ নিয়েই দিনের পর দিন ব্যবহার করে থাকেন।

রাজিব বেশ গোছালো মানুষ। অফিসের সব কাজ গুছিয়ে গুছিয়ে করেন। কিন্তু তার এই গোছানো স্বভাব তার চোখে সুখকর নয়। দায়িত্বে থাকা কাজগুলো তাকে বার বার করতে হয়। বার বার ভাবেন, বার বার লেখেন, বার বার কাটেন। সামান্য একটি লাইন লিখতে গেলেও কতবার যে এডিট করেন তার শেষ নেই। এই ব্যাপারগুলোতে তার অধস্তনেরা রীতিমতো মহাবিরক্ত। কিছু তৈলমর্দনকারী কর্মীরা তার এই সিদ্ধান্তহীনতাকে ভাল চোখে দেখেন। তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে বেশি বেশি এডিটে ব্যস্ত রাখার ফন্দি আঁটেন। সেই সুযোগে এই কর্মীরা স্ব স্ব টেবিলে অবসর যাপন করেন। তৈল নিক্ষেপ করে যদি বসকেই ব্যস্ত রাখা যায় তবে মন্দ কি? রাজিব সাহেবের এই বারোয়ারি সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তার সংসারেও এর প্রভাব পড়েছে। বউ সাহেবা যা যা কিনতে দেন তা কিনতে গেলেই তার অস্থিরতা বেড়ে যায়। কোনকিছুই নিজের সুখ নিয়ে কিনতে পারেন না। দু’জন মিলে কোন পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলও তার মহাসমস্যা অনুভূত হয়। কোন সিন্ধান্তই তার মনঃপুত হয় না কখনো।

অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে বের হয়েছেন কলিম সাহেব। সাথে নববধূ। নিজের গাড়িটা কয়েকদিন আগেই কিনেছেন। কেনার সময় থেকেই গাড়িটা তার পছন্দ না। মাঝপথে যাত্রা বিরতি নিয়েছেন, এখন মনে হচ্ছে এই গাড়িটায় ভ্রমণ না করে ওয়াটার বাসে আসতে পারতেন, বা ট্রেনে বা বিমানে। কোনটাতে কি সুবিধা অসুবিধা তা নিয়ে তার প্রায় মাথা ব্যথাই শুরু হয়ে গেল। কিছু খেতে মাঝ পথে দাঁড়ানো, নববধূকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে দিলেন কি খাবেন। কিন্তু কলিম সাহেবের ভেতরটা খচখচ করছে, কি খেলে কি হবে। এ এক অদ্ভুত অস্থিরতা। বার্গার খাবেন, নাকি প্যাডিস, না রাইস, না প্লেইন, না কি রুটি, না সবজি নাকি ঝোল দিয়ে মাছ। নববধূ অস্থির হয়ে উঠলেন এহেন আচরণে। অবশেষে দু’জন আলাদা আলাদা ডিশ খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করলেন। ততক্ষণে কলিম সাহেবের ক্ষেদোক্তি- ওহ্ তোমার পছন্দটাই বোধকরি ঠিক ছিল।

ইনডিসিশন সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে থাকেন। এরা কখনো জীবনের শুরু থেকেই, অর্থাৎ যখন থেকে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শেখেন –তখন থেকেই এমন দুর্বিষহ যন্ত্রণায় ভুগে থাকেন। কেউ কেউ আবার কোন দুর্ঘটনা থেকে, কেউ অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি বা পতন থেকে, কেউ কাউকে অনুসরণ করতে দেখে ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এমনটা করে থাকেন। পৃথিবীতে প্রতিটা কাজেরই কার্য-কারণ রয়েছে। ভাল-মন্দ, পছন্দের ব্যতিক্রম, স্বাদের ভিন্নতা, অপকার-উপকারের বিভিন্নতা, বৈচিত্রের গ্রহণযোগ্যতা, কত কি না রয়েছে। চিন্তা, অভিজ্ঞতা, পরিসংখ্যান, ফলাফল বিবেচনা, বিচার বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোই হচ্ছে স্বাভাবিকতা। অনেক বিশ্লেষণ করে যেমন সঠিক সমাধানে পৌঁছা যায়, কখনো তা মুখ থুবড়েও পড়তে পারে। কখনো খুব সাধারণভাবে ক্ষণিক চিন্তার বিপরীতেও ভাল ফলাফল পাওয়া যেতে পারে, আবার এর বিপরীত ঘটে যাওয়াটাও অবান্তর কিছু নয়। যতটুকু সম্ভব সময় ও লক্ষ্য ঠিক রেখে ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা করে যাওয়া উচিৎ, কিন্তু সেই চেষ্টা যেন এমন দুর্বিষহ না হয় যাতে সবক্ষেত্রেই আপনাকে সিদ্ধান্তহীন, অস্থির মনের একজন মানুষে পরিণত করে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.