নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাজামুস জুলকারনাইন রতন

এস েজ রতন

একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, অভিনয়শিল্পী, লেখক, বক্তা, প্রশিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী এবং মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণকারী একটি স্বর্গীয় পৃথিবী উপহারে নিবেদিত আত্মা।

এস েজ রতন › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। ভোতা অনুভূতি, তোতা বুলি ।।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:৫২

বিকেলে বন্ধুদের আড্ডায় ভালই সময় কাটে সবার। মোটামুটি সবাই কোন না কোন ইস্যুতে আলোচনা জমিয়ে তোলেন। এর মধ্যে নীরব বেশ নীরবই থাকে বরাবরের মতো। কোন ইস্যুতেই যেন তার কোন আগ্রহ নেই। সবাই যা বলে, তাতেই হু, হা করে সায় দেয়। তাকে অনেকবারই শুনতে হয়েছে- কি রে কিছু তো বল? নীরব, নীরবই থেকেছে। বোবার নাকি কোন শত্রু নেই। তারপরও নীরবের শত্রুবন্ধুও ছিলো। কিছু না বলার কারণে এক আড্ডায় অমন এক বন্ধুর হাতে কয়েক ঘা জমপেশ খেয়েছিল। দুষ্টু ঐ বন্ধুটি ওকে মারতে মারতে বলছিল- কিছু কছ না ক্যারে? সহ্য হয় না।

নিশা বেশ ভাল মনের একজন মানুষ। বাচ্চাকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্য ভাবিদের সাথে বসে বসে গল্প গুজব করেন। ভাবিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় মাতেন। রান্না-বাড়া, ঘর গোছানো, ফ্যাশন, বেড়ানো, সিনেমা, নাটক, ক্রাইম, প্রেম, সংসার, পরকিয়া, স্বামীর অফিস, স্বামীর চেহারা-ইনকাম, শারীরিক-মানসিক, ব্যক্তিগত বিষয়, আরো কত কি! নিশা শুধু শুনেই যায়। ঠোঁটে ভদ্রোচিত হাসি ঝুলিয়ে রেখে শুধু হাসেন আর মাথা নাড়েন। গল্পবাজরা একে অপরের গল্প করতে করতে আর শোনাতে শোনাতে কখনো কখনো পানসে মনে হয়। তবে একটা প্রশ্ন সবার, নিশা ভাবি কেন কোন কিছু আলোচনা করেন না? শুধু শোনেন, বলেন না। এটা এক দু’জন ভাবির ভাল লাগলো না।

তারা জোর করতে লাগলেন নিশাকে, কিছু বলার জন্য। নিশা বলল- আমার কিছু বলার নেই। আপনাদেরগুলোই তো আমার কথা। আমার আলাদা কিছু নেই। -একি ভাবি! একসাথে দিনের পর দিন বসে বসে গল্প করি, আর আপনি আপনার কিছুই আমাদেরকে জানাবেন না, এটা হয়? নিশা মিষ্টি করে হেসে বলল- না ভাবি তেমন কিছু নেই বলার। -স্পাই হয়ে বসে থাকেন? আমাদের সবকথাগুলো শুনে নিজে মুখ টিপে হাসেন? উপহাস করেন, তাই না ভাবি? ঠিক আছে আপনি আর আমাদের সাথে বসতে পারবেন না। এতোদিন একসাথে গল্পগুজব করলাম, অথচ আমরা কেউ-ই আপনার আপন হতে পারলাম না? ভাবি, কাল থেকে আর আমাদের সাথে আমাদের পাশে বসতে পারবেন না।

অফিসে মুখ বুঁজে কাজ করতে পছন্দ করেন হাবিব সাহেব। নিজের কাজগুলো ঠিকঠাক সম্পন্ন করেন তিনি। বাকপটুতা তার পছন্দ না। খুব একটা গুছিয়ে কথা বলার চেষ্টা নেই তার। মিটিং বা কোন সেমিনারে যতটুকু সম্ভব কথা না বলেই বসে থাকেন। খাবার টেবিলের আলোচনায় বা অফিস পলিটিক্সে তার কোন অংশগ্রহণ নেই। নিপাট ভদ্রলোক। কিন্তু এই চুপথাকা স্বভাবের কারণেই তার চাকরি যায় যায় অবস্থা। অফিসের অনেককিছুরই নীরব সাক্ষি এই হাবিব। কিছু কিছু বিষয়ে তার অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু অনেক কষ্টে কথা চেপে রাখেন। সবার সাথে বা যেদিকে অধিকসংখ্যক মতামত সেদিকেই সায় দিয়ে কোন কথা না বাড়িয়ে গম্ভীর হয়ে থাকেন।

একদিন অফিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাইল উধাও। তড়িৎ মিটিং ডাকা হলো। সবাই যার যার মন্তব্য, কথা, আলোচনায় অংশ নিলেন। কিন্তু হাবিব সাহেব নীরব। যেহেতু তিনি নীরব, তাই তাকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর জন্য সবাই মিলে চাপাচাপি শুরু করলেন। কথা বলতে বলতে হাবিবকেই ঐ ফাইল খুঁজে না পাওয়ার ব্যাপারে দোষারোপ করা শুরু হলো। চাপাস্বভাবের লোক হাবিব। এতোগুলো মুখের কথা হজম করতে না পেরে মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো- হ্যাঁ হ্যাঁ, সবকিছু আমিই জানি! আমারে রিমান্ডে নিলেই সব বেরিয়ে আসবে! অসভ্য, অভদ্র অফিসে আমি কোনভাবেই একমুহূর্তের জন্য আর থাকবো না। সবাই বিস্ময় প্রকাশ করলেন, বললেন- দেখেছেন, তলে তলে তল কলা কে খায়? এই অফিসে ১০ বছর ধরে যত রকমের সমস্যা হয়েছে তার সবকিছুই এই হাবিব সাহেবই জানেন।

চরম রাগে, অপমানে, ক্ষোভে হাবিব পরেরদিন আর অফিসে যাননি। তার পরেরদিন অফিসের এইচআর থেকে মেইলে চিঠি পেলেন। একদিনের মধ্যেই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আর অফিসে বহাল রাখা নিরাপদ নয়। তাই অব্যাহতি পত্র মেইলে পাঠিয়েছে। এইচআর অ্যাসিস্ট্যান্ট, টিভির খবর পাঠিকার মতো কণ্ঠের মেয়েটা সুন্দর করে মিষ্টি স্বরে হাবিবকে কল করে জানালেন- স্যার, অনুগ্রহ করে আপনার মেইলটি খুলে অফিস থেকে দেয়া পত্রটি দেখে নেবেন। ধন্যবাদ স্যার, শুভ কামনা। এমনিতেই হাবিব চুপচাপ স্বভাবের, তার ওপর এমন মেইল পেয়ে স্তব্ধ হয়ে সোফার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে রইলেন।

পাঠক, এ রকম অজস্র ঘটনা রয়েছে আমাদের আনাচে কানাচে। আপনি চুপ থাকবেন, নাকি বেশি বলবেন, নাকি যতটা দরকার ততটাই বলবেন তা কিন্তু আপনার উপরই নির্ভর করছে। আপনার কাছে যে বিষয়টি জানানো উচিৎ বলে মনে করবেন, তা জানাতেই হবে। ভদ্রভাবে, যুক্তি দিয়ে, ভালোকিছুর স্বার্থে নিয়মের মধ্যে থেকে আপনার কণ্ঠস্বরকে জাগাতে হবে। হোক না আপনার বাক্য গঠন একটু এলোমেলো। সাধ্যমতো শব্দ জোড়া দিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে বলার চেষ্টাটুকু করাই যেতে পারে। ধীরে ধীরেই আপনি ভালো বলতে পারবেন। বলতে পারলে অন্তত নিজের কাছে নিজে শান্তি খুঁজে পাবেন যে, আপনি বলেছেন। যেকোন অসঙ্গতি, ভালোলাগা যথাস্থানে জানিয়ে দিন। মানুষ হিসেবে আপনার অবদানের একটুকু হলেও তার সঙ্গী হোন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.