নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://ianamblog.wordpress.com

আই আনাম

বলতে চাই অনেক কিছু কিন্তু কেন যেন বলতে পারি না

আই আনাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের শীতকালের ঢাকা শহর

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৪

তারপর আবার আরেকটা শীতকাল আসে। প্রথমে আমাদের মনে হয় যে এবার বেশি শীত পড়বে না এবং সেজন্য আমরা শীতের কাপড় কেনায় নজর দেই না। এরপর হঠাৎ করে প্রতিবারের মত এবারও আমাদের মনে হয় যে এবারই সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে এবং তখন আমরা শীতের পোশাক কেনা এবং ট্রাঙ্ক থেকে বের করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এভাবে এক সময়ে আমরা লক্ষ্য করি যে আমাদের বাচ্চাদের শীতের পোশাক ছোট হয়ে গিয়েছে এবং ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে মোটামুটি সস্তায় বাচ্চাদের শীতের কাপড় পাওয়া যায়। অফিস থেকে ফেরার পথে আব্দুর রহমান কিংবা সামসুল আলম অথবা রফিকুল ইসলামরা বাচ্চাদের শীতের কাপড় কেনার জন্য ঢাকা কলেজের উল্টা দিকে অথবা বায়তুল মোকারমের সামনে ভিড় করে। তখন তারা দেখে সেনাবাহিনীর উর্দি পরা লোকও বাচ্চাদের সোয়েটার টেনে টেনে দেখে। সামসুল ইসলাম কিংবা সামসুর রহমান অথবা সামসুদ্দিন আহমদ সাহেবরা বাচ্চাদের শীতের কাপড় কিনতে গিয়ে আরও লক্ষ্য করে যে কাপড়ের দাম আগেরবারের চেয়েও বেড়ে গিয়েছে এবং তারা দোকানদারদের জিজ্ঞেস করে, "ঐ মিয়া, কাপড়ের দাম এত চাও ক্যালা?" দোকানদার উল্টা ঝাড়ি দিয়ে বলে," দামে না পোষাইলে নিয়েন না। আপনারে কিনতে কইসে কেডা?" তখন সামসুল আলম অথবা সামসুর রহমান সাহেবরা অসহায় বোধ করেন এবং বেশি দাম দিয়েই বাচ্চাদের জন্য শীতের কাপড় কিনে ফেলেন। ফেরার সময় তারা দেখতে পান যে বেশ কম দামে ফুটপাতে জ্যাকেট অথবা সোয়েটার কিংবা কোট পাওয়া যাচ্ছে। তখন তারা মনের ভেতর তাগিদ অনুভব করেন নিজের জন্য কিছু কিনবার এবং তখন তাদের মনে পড়ে যে তাদের ছেঁড়া-ফাটা মানিব্যাগে খুব বেশি টাকা নেই। তবুও দরদাম করে একটা সোয়েটার কিংবা জ্যাকেট অথবা কোট তারা কিনে ফেলেন এবং হাসিমুখে বাসায় ফেরেন। তাদের কাছে মনে হয় শীত বোধহয় বাইরের চেয়ে ঘরেই বেশি। তাদের বউরা চুলা থেকে গরম পানি নামায় এবং সেই পানি দিয়ে তারা গোসল করে ঢাকা শহরের ধোঁয়া আর ধুলার গন্ধ শরীর থেকে দূর করেন। পরের দিনও তাদেরকে অফিসে যেতে হয় এবং তাদের কাছে ব্যাপারটা খুব কষ্টের হয় কেননা আমরা জানি যে শীতের সকালে সাদা কভার পরানো লাল লেপের ভিতর থেকে বের হওয়া কতটা কষ্টের! আমরা আরও জানি যে শীতকালে চাওয়ালাদের ব্যবসা ভাল হয়। তখন তারা শক্ত টোস্ট বিস্কুট, বেনসন আর লাল চা নিয়ে বের হয় এবং তাদের পরনে থাকে লুঙ্গি আর জ্যাকেট যেই জ্যাকেট আমরা শীতকালের কোরবানির ছাগল নিয়ে ঢাকায় আসা গ্রামের লোকদের গায়ে দেখি। ঢাকা শহরে সেবারই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে কিংবা অনুভূত হয় এবং ভাপা পিঠার ব্যবসা জমজমাট হয়ে পড়ে। দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকা হয়ে ওঠা ভাপা পিঠার অস্থায়ী মৌসুমী দোকান আমরা এখানে-সেখানে দেখি এবং আমাদের সেই পিঠা খেতে ইচ্ছে করে। অতঃপর ইচ্ছে পূরণের জন্য আমরা ভাপা পিঠার দোকানে যাই এবং দেখতে পাই সেখানে চিতই পিঠাও পাওয়া যায় ও তার সাথে ভর্তা ফ্রি। আমরা তখন চিতই পিঠা হাতে নিয়ে কচকচ করে খাই এবং দোকানি খালার বাসা থেকে বানিয়ে আনা শুটকি কিংবা ধনেপাতার ভর্তা পিঠার সাথে লাগিয়ে নেই। আমরা ইচ্ছামত ভর্তা খাই কেননা ভর্তার জন্য আমাদের কোন টাকা দিতে হয় না। ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার পরে আমাদের অনেক ঝাল লাগে এবং আমরা খালাকে বলি, "আই খালা, ভর্তায় এত ঝাল দেও ক্যালা?" আমা তখন পাশের টং দোকান থেকে বিনা পয়সা অথবা এক টাকা গ্লাস ফিল্টার পানি খাই এবং আমাদের বেশ আরাম লাগে। তখন আমাদের মনে পড়ে যে আমরা পিঠার দোকানে এসেছিলাম ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য। আমরা হাত দিয়ে দিয়ে গরম ভাপা পিঠা খুঁজে বের করি এবং খাই। তখন আমাদের জিহ্বা পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় এবং আমরা বলি, "আই খালা, পিঠা এত গরম ক্যালা?" পরে আসা ক্রেতা আগে থেকে আমাদের হাত লাগানো পিঠা তুলে নেয় এবং খালাকে বলে "আই খালা, পিঠা এত ঠাণ্ডা ক্যালা?" পিঠার খাওয়ার সময়ে আমরা দেখতে পাই যে কিছুদূরে সিদ্ধ ডিমওয়ালা বসে আছে এবং সেখানে হাঁস ও মুরগির ডিমের দাম সমান। আমরা সেখান থেকে হাঁসের ডিম খাই এবং খাওয়ার পর শুনি এর দাম ১০ টাকা। তখন আমরা বলি," ঐ মিয়া ডিমের দাম কমার পরও তোমার এখানে দাম ১০ টাকা ক্যালা? ৮ টাকা রাখ" আমরা কেউ কেউ ৮ টাকা দিয়ে হাঁটা ধরি এবং কেউ পুরা ১০ টাকাই দিই। তখন আমরা মনে মনে বলি, "ধুর, শালারা দাম বেশি রাখে।" ফেরার সময়ে আমরা আরও দেখি সামসুল আলম, মোস্তফা কামাল কিংবা লুৎফর রহমান সাহেবরা হাতে কমলা অথবা আঙ্গুর নিয়ে বাসায় যাচ্ছে। আমাদেরও কমলা কিংবা আপেল অথবা আঙ্গুর কিনতে ইচ্ছএ করে কিন্তু আমাদের ছেঁড়া-ফাটা মানিব্যাগে ফল কেনার টাকা থাকে না। তখন আমাদের মনে হয়,"আপেল-কমলার দাম এত বেশি ক্যালা?" বাসায় ফিরে সামসুল হক, লুৎফর রহমান, কাজি আলাউদ্দিন অথবা মুস্তাফিজুর রহমান সাহেবরা খেয়াল করেন যে আঙ্গুরের প্যাকেটের তলার কাগজ অনেক মোটা আর ভারী। তখন তারা বলে ওঠেন," সব শালা বাটপার হয়ে গ্যাসে গা।" তারপরও এক কেজির নামে ৯০০ গ্রাম কিনে আনা আঙ্গুর বউ-বাচ্চাদের নিয়ে খেতে সামসুল হক, রফিকুল ইসলাম অথবা মুস্তাফিজুর রহমান সাহেবদের ভালই লাগে যদিও ওষুধ দিকে পাকানো এসব ফল খাওয়ার পর তার বাচ্চাদের ঠোঁটের কোণা চুলকায়। ঠোঁটের কোণা চুলকানো বাচ্চারা বিকেল বেলা খেলতে নামে এবং আমরা দেখি যে শীতকাল বলে তারা ব্যাডমিন্টন খেলছে। সন্ধ্যার পর কোন বাসা বা মেইন লাইন অথবা চোরাই লাইন থেকে তার এনে ফ্লাড লাইট জ্বালানো হয় এবং চাঁদার টাকায় কোর্ট কাটা হয়। আমরা প্রতিবারের মত দেখি যে অপেক্ষাকৃত ছোট বাচ্চারা খামোকা রেকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং তাদের বড় ভাইদের খেলা কখনই শেষ হয় না ফলে তারা খেলার সুযোগও পায় না। ব্যাডমিন্টন খেলার সময়ে আমরা দেখি যে ঢাকা শহরের ব্যস্ত শহর দিয়ে চান মিয়া কিংবা রুস্তম আলি অথবা আব্দুল জলিলরা আদা চা নিয়ে রাস্তায় ফেরি করে বেড়ায় এবং মুস্তাফিজুর রহমান, কামালউদ্দিন অথবা সামসুল আলম সাহেবরা সেই চা পরম তৃপ্তি নিয়ে সুড়ুৎ করে টান দিয়ে খায়। মুস্তাফিজুর রহমান, কামালউদ্দিন অথবা সামসুল আলম সাহেবরা চলে যাওয়ার পরে তাদের ছেলেরা যাদের নাম বাবু, কামরুল কিংবা বাপ্পী তারা চান মিয়া কিংবা রুস্তম আলী অথবা মোঃ হানিফদের কাছ থেকে বেনসন বা গোল্ড লিফ কিনে টান দেয় এবং খক খক করে কাশে। তখন আমরা আরও দেখি যে মোঃ শাহজাহান, হযরত আলি কিংবা আব্দুল মান্নান মিয়ারা রিকশা থামায় শেখ কিংবা স্টার খায় এবং শক্ত টোস্ট বিস্কুট চাবায়। সিগারেটে টান দেয়ার সময় আমরা দেখি যে তাদেরকে সুখী সুখী লাগছে। রিকশা দাঁড় করিয়ে শেখ কিংবা স্টার অথবা নাসির গোল্ড খাওয়ার সময় পুলিশ এসে তাদের রিকশায় বাড়ি দেয় এবং তারা কোন মতে সিগারেটের দাম দিয়ে রিকশা নিয়ে টান দেয়। তখন আমাদের নজরে আসে যে মুস্তাফিজুর রহমান, সামসুল আলম কিংবা সামসুর রহমান সাহেবরা রিকশা ডাক দেয় এবং জিগাতলা কিংবা মিরপুর অথবা আজিমপুর যেতে চায়। রিকশা ভাড়া শুনে তারা লোকাল বাসের দিকে আগায় এবং তাদের মনে হয় যে রাস্তার ভাপা পিঠাগুলা বোধহয় খারাপ না। তখন তারা ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য আগায় কিন্তু পিঠার দোকানে চিতই পিঠা আর শুটকি ভর্তা দেখে তাদের লোভ হয় এবং তারা শুটকি ভর্তা দিয়ে কচ কচ করে চিতই পিঠা খায় ও তাদের ঝাল লাগে। তখন তারা পিঠাওয়ালি খালাকে বলে যে, "ভর্তায় এত ঝাল দাও ক্যালা?" পাশের চায়ের দোকান থেকে বিনা পয়সায় পানি খেয়ে তারা ঝাল কমায় এবং আরাম পায়। তখন আমরা দেখি যে মুস্তাফিজুর রহমান, গাজী আলাউদ্দিন কিংবা মোঃ ফজলুর রহমান অথবা আবুল কালাম আজাদ সাহেবদের হাতে কাগজের প্যাকেটে বাচ্চাদের শীতের পোশাক। তখন আমাদের মনে হয় যে, শীতের কাপড়ের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে এবং এবার শীত আগেরবারের চেয়ে বেশি পড়েছে। কিন্তু শীতের কাপড় কিনতে কিনতে আবারও শীত কমে যায় এবং আমরা দেখি যে আস্তে আস্তে পিঠাওয়ালা সিদ্ধ ডিমওয়ালা এবং রাস্তার মধ্যে চাঁদার টাকায় কোর্ট কাটা ছেলেপেলেরা আর নাই। এরপর হঠাৎ একদিন আমরা তাদের সবাইকে দেখতে পাই এবং আমাদের মনে হয় যে বোধহয় শীতকাল এসেছে এবং গতবারের চেয়ে শীত বেশি পড়েছে। আমরা শীতের কাপড় কিনতে ঢাকা কলেজের উল্টা দিকে অথবা বায়তুল মোকারমের সামনে যাই এবং দেখি যে শীতের কাপড়ের দাম অনেক বেশি। তখন আমাদের মন খারাপ হয় এবং আমরা দু-তিন দোকান দেখে কাপড় কিনি কেননা আমরা শীতে কষ্ট পেতে চাই না। তিন বছর আগে নীলক্ষেত কিংবা ইসলামপুর থেকে বানানো কোট আমরা কয়েকটা দিন পরতে পারি এবং সেই কোট পরে অফিস থেকে ফেরার পথে আমরা রাস্তার পাশ থেকে সিদ্ধ ডিম খেতে যাই এবং ডিমওয়ালার ডিম ছেলা দেখে অবাক ও মুগ্ধ হই। ডিম ছেলার পর সুতা দিয়ে যখন ডিমওয়ালা ডিম কাটে তখন আমরা সাদা ডিমের মধ্যে লাল অথবা হলুদ কুসুম দেখতে পাই। আমরা গরম ডিম খাই এবং আমাদের ভাল লাগে এবং আমরা আরও দেখি যে পাড়ার ছেলেরা চাঁদার টাকা দিয়ে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট কাটে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৩৭

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: হু হু হু কি ঠান্ডা :|| :|| :|| :||

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.