নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজস্ব ভাবনা চিন্তা নিয়ে আমার ভার্চুয়াল জগত!

এস.এম. আজাদ রহমান

সংগঠক, অভিনেতা, ব্লগার, স্যোসাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, ডিজাইনার

এস.এম. আজাদ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেনা কর্মকর্তাদের সাবজেলে স্থানান্তর: ন্যায়বিচার, আস্থা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব[

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯

সেনা কর্মকর্তাদের সাবজেলে স্থানান্তর: ন্যায়বিচার, আস্থা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব[



ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে স্থানান্তর—এটি শুধু একটি বিচারিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং বাংলাদেশের সামরিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিসরে নতুন এক বাস্তবতার প্রতিফলন। ১৫ জন কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সাবজেলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র একদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ও আস্থার প্রশ্ন আবারও সামনে এনে দিয়েছে।

বিচার ও নিরাপত্তার সমীকরণ
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাংলাদেশে এক ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের বিচারের দাবি জনমানসে বহুদিনের। তবে এ বার যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরা সবাই সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা—কেউ অবসরে, কেউ চাকরিতে। এ কারণে মামলাটি শুধু আইনি নয়, নিরাপত্তা কাঠামোরও একটি সংবেদনশীল পরিসর তৈরি করেছে।

ট্রাইব্যুনাল থেকে সাবজেলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে কারা কর্তৃপক্ষ “নিরাপত্তার কারণে যৌক্তিক” বলেছে। সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সাবজেল থাকলে নিরাপত্তা, নজরদারি ও পরিচালনা—সব কিছু সেনা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক তাৎপর্য অগ্রাহ্য করা যায় না: এটি সেনাবাহিনীর ভেতরে ও বাইরে উভয় মহলে এক ধরনের দ্বিধা ও প্রশ্ন তৈরি করেছে—এই বিচারের সীমা কোথায়?

আইন ও সেনা প্রশাসনের সীমারেখা
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী সাধারণত নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে শৃঙ্খলাজনিত অপরাধের বিচার করে থাকে। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের আওতায় পড়ায় এটি এখন বেসামরিক বিচারিক কর্তৃপক্ষের হাতে। এখানে সেনা কর্মকর্তা ও বেসামরিক বিচারব্যবস্থার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ক্ষমতার সমন্বয় প্রয়োজন—যা এখন পরীক্ষার মুখে।

আইনগতভাবে সাবজেল ঘোষণা কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অতীতে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট মামলাতেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই মামলাগুলোর বিশেষত্ব হলো—অভিযুক্ত সবাই একসময়ের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের সদস্য। তাঁদের বিচারের পদ্ধতি ও আচরণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক আস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজনীতির ছায়া ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সামরিক বাহিনী সব সময়ই একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে শাসন, নীতি প্রণয়ন ও ক্ষমতার ভারসাম্যে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শুরু হওয়া মানেই শুধু আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং রাষ্ট্রক্ষমতার অন্তর্গত এক স্পর্শকাতর অক্ষের নড়াচড়া।

এ ধরনের বিচার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, এটি আইনের শাসনের বিজয়, কেউ বলছেন রাজনৈতিক হিসাবের অংশ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে—এই প্রক্রিয়া সেনাবাহিনীর মনোবল ও জনআস্থাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? সেনাবাহিনী যদি মনে করে যে তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, তাহলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার ওপর তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ন্যায়বিচার বনাম স্থিতিশীলতা
একটি রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রাখা। একদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচার জনগণের নৈতিক প্রত্যাশা পূরণ করে, অন্যদিকে এটি সেনাবাহিনী বা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বিভাজন তৈরি করতে পারে। রাষ্ট্রের জন্য এই দুইয়ের মধ্যে সঠিক পথ খুঁজে নেওয়াই এখন চ্যালেঞ্জ।

ইতিহাস বলছে, বিচার যদি আস্থাহীনতার মধ্যে পরিচালিত হয়, তবে তা উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বিচার যদি স্বচ্ছ, প্রমাণনির্ভর ও নিরপেক্ষ হয়, তবে সেটি দীর্ঘমেয়াদে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুটোই মজবুত করে।

ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা ও জনমানসের প্রত্যাশা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার করে আসছে। তবে এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন ও বিতর্কও রয়েছে। এবার যেহেতু সেনা কর্মকর্তারা অভিযুক্ত, তাই ট্রাইব্যুনালের ওপর আস্থার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আদালতকে শুধু ন্যায়বিচার করতে হবে না, বরং তা করতে হবে এমনভাবে—যাতে ন্যায়বিচার হচ্ছে বলেও সবাই বিশ্বাস করতে পারে।

জনমানসের আরেকটি প্রত্যাশা হলো, এই প্রক্রিয়ায় যেন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশোধ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য না থাকে। কেননা রাষ্ট্রযন্ত্রের এক অংশ যদি মনে করে, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, তবে ভবিষ্যতে সেই একই যন্ত্রের ভেতর থেকেই অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। ইতিহাসে বহু উদাহরণ আছে—যখন বিচারের নামে অন্যায় হলে তা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনে।

উপসংহার: বিচার, শৃঙ্খলা ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন
সেনা কর্মকর্তাদের সাবজেলে স্থানান্তর বিচারপ্রক্রিয়ার অংশ হলেও, এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব এখনই অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশে আইন ও শৃঙ্খলা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে জনআস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এখন সেই বাহিনীর ভেতরকার সদস্যরা যদি রাষ্ট্রের আদালতে অভিযুক্ত হন, তবে তা শুধু আইন নয়, আস্থা ও দায়িত্ববোধেরও পরীক্ষা।

রাষ্ট্রকে এখন এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের পথে হাঁটতে হবে—যেখানে ন্যায়বিচার হবে, কিন্তু সেই ন্যায়বিচার যেন কোনো পক্ষকে শত্রুতে পরিণত না করে। কারণ ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত লক্ষ্য প্রতিশোধ নয়, বরং আস্থা পুনর্গঠন।
আর আস্থাই হচ্ছে সেই মাটি, যার ওপর একটি সেনাবাহিনী ও একটি জাতির ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে থাকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৪

কামাল১৮ বলেছেন: বিচার হবে অনেকের।পনের জন দিয়ে টেষ্ট।সেনা কর্মকর্তাদের বিচার সেনা আইনে হবার কথা।এখানে তারা ন্যায় বিচার পাবে না।বিচারের নামে প্রহসন হবে।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৩২

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভবিষ্যৎ কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.