| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জুলাই সনদ, গণভোট ও নির্বাচনের বাস্তবতা
আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা সমঝোতায় আসতে পারেনি। এসব প্রশ্নে এখন সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। নিজেরা আলোচনা করে মতৈক্যে আসার চেষ্টা যে দলগুলো করবে না বা করতে পারবে না, এ ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার তারপরও দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল সম্ভবত কৌশলগত কারণে। সরকার এখন অন্তত বলতে পারবে যে তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসার সুযোগ দিয়েছিল। আর রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেরা এই ‘সুযোগ’ নেয়নি সম্ভবত কৌশলগত বিবেচনা থেকেই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনের আগেই একটি ‘বিজয়’ পেতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো। এর ওপর ভর করেই তারা নির্বাচনের মাঠে নামে। নব্বইয়ের পরের ইতিহাস বলে—যারা ক্ষমতায় আসে, তারা সাধারণত সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায় না; আর বিরোধীরা আন্দোলন করে সেটি আদায় করে নেয়। ২০১৪ থেকে ২০২৪—এই দশ বছর অবশ্য অন্যরকম। কর্তৃত্ববাদ থেকে ফ্যাসিবাদে গড়ানো এক শাসনব্যবস্থা পুরো নির্বাচনী কাঠামোকেই ধ্বংস করেছিল।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেই শাসনের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু পতনের পর রাজনীতি যেমন শূন্যতায় পড়েছে, তেমনি একটি বড় প্রশ্নও তৈরি হয়েছে—দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কি বাংলাদেশে কোনো টেকসই রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব?
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে এখন যে তিনটি দল—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—প্রধান ভূমিকায় আছে, তাদের অবস্থান ও বিরোধই আজ রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করেছে। বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট; জামায়াত চায় নির্বাচনের আগে; এনসিপি চায় যত দ্রুত সম্ভব—তবে তাদের দাবি মূলত জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন।
সরকার এখন সেই অচলাবস্থা থেকে বেরোনোর পথ খুঁজছে।
কিন্তু বাস্তব প্রশ্ন হলো—দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে সরকার বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ, কিন্তু দলটি এই দেশের রাজনৈতিক জীবনে অগ্রাহ্য করার মতো নয়। আন্তর্জাতিক মহলেও এই প্রশ্নটি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে—
->>“বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক রূপান্তর অসম্পূর্ণ থাকবে।”
(—ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতি, অক্টোবর ২০২৫)
আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি বাদ দিলে নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, অন্তত আন্তর্জাতিক মহলে। এমনকি দেশের মধ্যেও একটা বড় জনগোষ্ঠী—যারা হয়তো আজ সক্রিয় আওয়ামী সমর্থক নয়—তাদের কাছেও নির্বাচনটি একপেশে বলে প্রতীয়মান হবে। তাই রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকলেও তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এখনো গণতন্ত্রের সমীকরণে একটি প্রধান ভ্যারিয়েবল।
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যা
* জুলাই সনদের আত্মাকে রক্ষা করবে,
* অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে,
* এবং রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির পথে আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কেও একটি বাস্তবসম্মত কাঠামো দেবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন বাস্তবসম্মত নয়—এতে নির্বাচনের প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যৌক্তিক পথ হতে পারে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন, যেখানে বিএনপি তার অবস্থানকে বিজয় হিসেবে দেখবে, আর জামায়াত ও এনসিপি তাদের দাবির আংশিক বাস্তবায়নে সন্তুষ্ট থাকবে।
কিন্তু যত কৌশলই নেওয়া হোক, একটি বিষয় স্পষ্ট—
আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে বাদ রেখে কোনো নির্বাচন বা সংবিধান সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী বা গ্রহণযোগ্য হবে না।
আন্তর্জাতিক মহল ও দেশের সাধারণ ভোটার উভয়েই চায় এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, যেখানে অতীতের দায় স্বীকার করে সবাই নতুন করে শুরু করতে পারে।
অতএব, সরকারের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়;
দায়িত্ব হলো আওয়ামী লীগসহ সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও টেকসই গণতান্ত্রিক ভিত্তি—স্থাপন করা।
সেটাই হবে প্রকৃত জুলাই বিজয়ের পূর্ণতা।