নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত আলী আকবর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর শাহাদাত)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪

হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ফিরে এসে দেখলেন, তাঁর আঠার বছরের ছেলে হযরত আলী আকবর (রাঃ) যিনি আপাদমস্তক প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিচ্ছবি ছিলেন, তিনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে রইলেন এবং হযরত হুসাইন (রাঃ) কে বললেন, আব্বাজান! আমাকেও বিদায় দিন। আমি চাইনা, আপনার পরে জীবিত থাকতে। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) বললেন, বেটা শোন। তুমিতো মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এরই প্রতিচ্ছবি। তোমাকে যখন কেউ দেখে, দিলের তৃষ্ণা মিটে যায়। তুমিতো আমার নানাজান (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এরই প্রতিচ্ছবি। তোমাকে দেখলেই আমার নানাজান (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর আকৃতি সামনে এসে যায়। তোমাকে যদি আজ বিদায় দিই, আমাদের ঘর থেকে আমার নানাজান সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিচ্ছবি চলে যাবে। বাবা! তুমি যেও না। ওরা আমারই রক্তের পিপাসু। আমার রক্তের দ্বারাই ওদের পিপাসা নিবারন হবে। কিন্তু হযরত আলী আকবর বললেন, আব্বাজান! আমিও ওখানে যেতে চাই যেখানে আমার ভাই কাসেম গেছে, যেখানে আমার চাচাজান গেছেন। আমি কাপুরুষের মত পিছনে পড়ে থাকতে চাই না। আমিও জান্নাতুল ফেরদাউসে গিয়ে নিজের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ব্যাকুল। আমাকেও আপনার হাতে বিদায় দিন। আব্বাজান! আমাকে আপনার হাতে বিদায় দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসে পৌছিয়ে দিন। আমাকে জালিমদের হাতে সোপর্দ করে যাবেন না। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) বাধ্য হয়ে তাঁর আঠার বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বিদায় দিলেন।



হযরত আলী আকবর (রাঃ) রওয়ানা হলেন। আল্লাহ! আল্লাহ! ইনি কে যাচ্ছেন? মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিচ্ছবি যাচ্ছেন। হযরত হুসাইন (রাঃ) এর জানের জান যাচ্ছেন। ইনি আলী আকবর নয়, সরকারে দোআলম হযরত মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর নয়নমনি যাচ্ছেন। ইনি হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর বাগানের ফুলের কলি যাচ্ছেন। আল্লাহ! আল্লাহ! হযরত আলী আকবর যেতে যেতে এটা পড়তে ছিলেন। আনা আলী ইবনুল হুসাইন বিন আলী, নাহনু আহলাল বাইত আওলা বিন নাবী। অর্থঃ আমি আলী আকবর, হুসাইন (রাঃ) এর বেটা, যে হুসাইন (রাঃ) হযরত আলী মর্তুজা (রাঃ) এর বংশধর। আমরাই হলাম আহলে বায়ত, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর সবচেয়ে প্রিয় বংশধর। এ শের পড়তে পড়তে ইমাম আলী আকবর সামনে অগ্রসর হলেন এবং ইয়াজিদী বাহিনীর সামনে গিয়ে বললেন, আমার দিকে লক্ষ্য কর, আমি হুসাইন (রাঃ) এর সন্তান। আলী আকবর আমার নাম। হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর ঘরকে উজাড়কারী । হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাগানের ফুল ও কলি সমূহকে কারবালার উত্তপ্ত বালিতে ছিন্ন-ভিন্ন কারীরা! আমার রক্ত দ্বারাও তোমাদের হাতকে রন্জিত কর, আমার প্রতিও তীর নিক্ষেপ কর। হযরত ইমাম আলী আকবর (রাঃ) বলছেন, জালিমদের সাহস নেই , এ নওজোয়ানের প্রতি তীর নিক্ষেপ করার বা অসি চালানোর । আমর বিন সাআদ নিজ সৈন্যদেরকে বলল হে কাপুরুষ! তোমাদের কি হলো? সত্বর একেও বর্শায় উঠিয়ে নাও। আমি প্রতিশুতি দিচ্ছি, যে সকলের আগে এ নওজোয়ানকে হত্যা করতে পারবে, আমি ওকে মোছিলেরর রাজত্ব প্রদান করব। এমন কোন ব্যক্তি আছে কি? যে মোছিলের শাসক হতে চায়? মোছিলের রাজত্ব পেতে চায়? তারেক বিন শিশূ নামক এক বাহাদুর পালোয়ান ব্যক্তি ছিল। ওর মনে আমরের কথায় প্রভাব সৃষ্টি করল এবং সে আগে বাড়ল, দেখি ভাগ্যে মৌছিলের গভর্ণগীরি আছে কিনা। সে তীর হাতে নিয়ে হযরত আলী আকবর কে লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল। যখনই সে কাছে আসল হযরত ইমাম আলী আকবর ঘোড়াকে ফিরায়ে ওর পিছনে এসে গেলেন এবং এমন জোরে আঘাত হানলেন যে একপলকে ওর মাথাকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। এই দৃশ্য দেখে ওর ছেলে উমর বিন তারেক রাগে প্রজ্জ্বলিত হয়ে তলোয়ার উচু করে এগিয়ে আসল। যখন উভয়ের তলোয়ার একটার সাথে আর একটা আঘাতে ঝনঝনিয়ে উঠল, তখন যারা অবলোকন করেছে তারা দেখছিল , ওর লাশ মাটিতে পরে চটফট করেছে। দ্বিতীয় পুত্র তলহা বিন তারেক সেও বাপ ভাইয়ের খুনের বদলা নেয়ার জন্য অগ্নিশর্মা হয়ে হযরত আলী আকবর (রাঃ) এর উপর ঝাপিয়ে পড়ল । হযরত আলী আকবর (রাঃ) একেও উৎখাত করলেন। ও তিনজনকে হত্যা করার পর হযরত ইমাম আলী আকবর (রাঃ) ঘোড়া ফিরায়ে তার আব্বাজানের খেদমতে হাজির হলেন। হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) দেখলেন, তার কলিজার টুকরা যুদ্ধের ময়দান থেকে আসতেছে। তিনি এগিয়ে আসলেন, এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা কি খবর! হযরত ইমাম আলী আকবর ঘোড়া থেকে অবতরণ করে আব্বাজানের কাছে আরজি পেশ করলেন, আব্বাজন! তৃষ্ণা খুব কষ্ট দিচ্ছে। খুবই তৃষ্ণা অনুভব করছি। যদি এক গ্লাস পানি পাওয়া যায়, তাহলে এদের সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিতে পারব ইনশাল্লাহ । আব্বাজান আমি ওদের তিন বাহাদুরকে হত্যা করে এসেছি, কিন্তু আমার মুখ শুকায়ে গেছে, আমার গলাও শুকায়ে গেছে, আমার নিশ্বাসটাও সহজভাবে আসতেছে না। আমি খুবই কাহিল হযে গেছি। ইমাম হুসাইন (রাঃ) বললেন, প্রিয় বৎস ধৈর্য ধারণ কর। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি জান্নাতুল ফেরদাউসে পৌছে যাবে এবং হাউজে কাউছারের পানি দ্বারা তোমার তৃষ্ণা মিঠাবে। কিন্তু বেটা! তুমি যখন আমার কাছে এসেছ, এসো , হযরত ইমাম হুসাইন রা তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, মুখ খোল। হযরত আলী আকবর (রাঃ) মুখ খুললেন এবং হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) তার শুস্ক জিহবা ওর মুখের ভিতর প্রবেশ করায়ে দিলেন এবং বললেন, আমার জিহবাটা শুষে নাও , হয়তো কিছূটা আরামবোধ করবে। হযরত আলী আকবর তার আব্বার জিব শুষতে লাগলেন। জিব শুষে কিছুটা আরাম বোধ করলেন।



এরপর হযরত ইমাম আলী আকবর (রাঃ) পুনরায় যুদ্ধের ময়দানের দিকে এগিয়ে গেলেন। হযরত ইমাম আলী আকবর যুদ্ধের ময়দানে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি শেরে খোদার দৌহিত্র। তাঁর শিরা-উপশিরায় হযরত আলী মর্তুজা এর রক্ত রয়েছে এবং তার চোখে হযরত আলী মর্তুজা এর শক্তি কাজ করেছে। তিনি আশিজন ইয়াজিদী বাহিনীকে হত্যা করে নিজে আঘাতে জর্জারিত হয়ে ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ার কালে শাহাদাত বরণ করার আগে ডাক দিয়ে বললেন, ওহে আব্বাজান। আমাকে ধরুন, আমাকে নিয়ে যান, আপনার আলী আকবর পড়ে যাচ্ছে। এ আহবান শুনে হযরত ইমাম হুসাইন দৌড়ে গেলেন। তিনি ছেলের কাছে পৌছার আগেই জালিমরা হযরত আলী আকবর এর মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো । জওয়ান ছেলের লাশের পাশে দাড়িয়ে তিনি চোখের পানি ফেলছিলেন এবং অশ্রু সজল নয়নে তার জওয়ান ছেলের লাশকে কাধে উঠায়ে তাবুর পার্শ্বে নিয়ে আসলেন। হযরত আলী আকবর এর এ শাহাদতে প্রত্যেকেই দারুনভাবে আঘাত পেলেন। হযরত সৈয়দা জয়নাব তাবু থেকে বের হয়ে এসে হযরত আলী আকবর এর লাশ দেখে চিৎকার করে বলে উঠলেন, আহা!জালিমরা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিচ্ছবিকেও শেষ করে দিল। এ জালিমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর চিহ্নকেও নিশ্চিহ্ন করে দিল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিচ্ছবিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.