নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নতুনভাবে নিজের চিন্তার শক্তি আর ভাবনার বিশ্লেষণ করার সামর্থ অর্জনের জায়গা হল ব্লগ। বিচিত্র ভাবনারাশির আলোয় নিজেকে আলোড়িত আর আলোকিত করার উদ্দেশেই আমরা ব্লগে আসি। অবসর সময়টাকে ভালোভাবে কাটানোর জন্য এর চেয়ে মোক্ষম উপায় আর নেই। তদুপরি বিনোদন এখানে উপরি পাওনা

এস এম ইসমাঈল

মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।

এস এম ইসমাঈল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাশওয়ানী বংশ ধারার উজ্জল জ্যোতি – হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্‌ সিরিকোটি রহঃ

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬

মাশওয়ানী বংশ ধারার উজ্জল জ্যোতি – হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্‌ সিরিকোটি রহঃ
শাহ্‌জাহান মোহাম্মদ ইসমাঈল
চির তরুণ হোসায়নী শোণিত ধারা চিরদিনই বিপ্লবী ও জালিম শাহীর তখতে তাউস উৎপাটনকারী, ইসলামের নব জীবনদানকারী সঞ্জীবনী সুধা । বিংশ শতকের মহান দার্শনিক, ইসলামী রেনেসাঁর স্বপ্ন দ্রষ্টা, সূফী কবি ডঃ আল্লামা ইকবাল (রহঃ) ঈমাম হোসায়ন রাদিআল্লাহু আনহুর পবিত্র রক্তের এ স্বভাবজাত চিরন্তন গুণাবলীর উচ্ছসিত প্রশংসায় গেয়ে উঠেন,
“হাম ভুল নেহি ছেকতে সা-দাত কি কুরবানী;
দরবারে ইয়াজিদি মে উয়হ বাত ছুনাতে হে”
অনুবাদঃ আমরা কভূ ভুলতে নারি, নবী বংশের কুরবানী,
ইয়াজিদের দরবারে তাঁরা নির্ভয়ে শোনান সত্য বাণী।।”
মাশওয়ানী কাদের বলা হয়? সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নিবিষ্ট চিত্ত থেকে জীবন উৎসর্গকারী চির গৌরবময় মহান হোসায়নী বংশ ধারার একটা শাখা “মাশওয়ানী বংশ” নামে ইতিহাসে পরিচিতি পেয়েছে। এটা আসলে ফাতেমী সৈয়্যদ বংশেরই বহমান একটা পবিত্র ধারা। নূর নবীজীর প্রিয়তমা কন্যা সৈয়্যদা ফাতিমাতুয যাহ্‌রা রাদি আল্লাহুতায়ালা আনহার মাধ্যমে বিকশিত নবী বংশের অন্যতম মূলধারা হিসেবে এটাকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কারণ বংশলতিকা বিশ্লেষণে এঁদের রক্ত সম্পর্কের সূত্রটি হযরত ঈমাম জয়নুল আবেদিনের (রহঃ) এর মাধ্যমে হযরত ঈমাম হোসায়ন রাদি আল্লাহু আনহু’র সাথে মিলিত হতে দেখা যায়। মাশওয়ানী সৈয়্যদ বংশীয়গণ প্রধানতঃ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বসবাসকারী এক বিরাট জনগোষ্টি। মাশওয়ানী সৈয়্যদদের মাতৃভাষা পশতু। পশতুভাষী বলে অনেকে এঁদেরকে পশতুনও বলে থাকেন। মাশওয়ানীদের পূর্ব পুরুষগণ সুদূর ইরাকের আউস নগরী থেকে হিজরত করে এসেছিলেন বলে জানা যায়। পারস্য ও আফগানিস্তান হয়ে অবশেষে তাঁরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশে থিতু হন। মাশওয়ানী সৈয়্যদ বংশীয়দের বেশ কয়টা ঊপ-গোত্রও রয়েছে। এগুলোকে ‘খিল” বলা হয়ে থাকে। যেমন – শাহানশাহ্‌ এ – সিরিকোট রহঃ এর ২৮ তম পূর্ব সূরি হযরত সৈয়্যদ হোসাইন শাহ্‌ রহঃ থেকে উৎসারিত মাশওয়ানী সৈয়্যদদের শাখাটির নাম “হোসাইন খিল”। এছাড়া অন্যান্য মাশওয়ানীদের ঊপ-গোত্র বা খিল গুলোর মধ্যে – বাজি খিল, লোদিন,মাটকানি, রোঘানী, কাযীয়ুনি,গরীব, ইউসুফ খিল , মুসা খিল, আদম খিল, সাখার, হাসান খিল (সিন্ধু), আযাদ খিল, গানজিয়া,মারজান খিল, ভাতাল, আমানি খিল, জানি খিল, রাহাতি, সেন খিল, দোয়ারা খিল, মিয়া খিল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মাশওয়ানী একটা পশতু শব্দ। এর অর্থ দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ। মাশওয়ানীদের পূর্ব পুরুষ হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ রহঃ আফগানিস্তানে এসে স্থানীয় কাকড়ী সর্দারের এক সুশীলা কন্যাকে বিবাহ করেন। তাঁর নব বধু সন্তান সম্ভবা আর হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ রহঃ একটা বহু প্রতিক্ষীত দাওয়াতের প্রত্যাশায় অপেক্ষারত।এমনি মধুর ক্ষণে তাঁর স্ত্রীর গর্ভে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। আনন্দ লহরীতে ভাসমান দম্পতি সদ্য জন্ম নেয়া পুত্র রত্নের আদুরে নাম রাখেন ‘হযরত সৈয়্যদ মাসুদ আহমদ মাশওয়ানী’। হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ রহঃ এর মাথায় লম্বা বাবরি চুল ছিল বিধায় তাঁকে সবাই গিছুদারাজ নামেই চিনতো।তিনি একাদশ শতকে জীবিত ছিলেন। আনুমানিক ৪২১ হিজরি/১০৩১ খৃঃ তাঁর ওফাত হয়। সে হিসেবে তিনি বড় পীর গাউসুল আযম হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী রহঃ (জন্ম -৪৭১ হিজরি/১০৭৭ খৃঃ) এর পূর্ব সূরী এক বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বও বটে। একজন বিশিষ্ট সূফী সাধক ও পশতুন মরমী কবি হিসেবে ভারত বর্ষে তাঁর সবিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। ইতিহাসে অনুরূপ আরও দু’জন গিছু দরাজ এর নাম পাওয়া যায়। যেমন- (১। সৈয়্যদ মুহাম্মদ গিছুদারাজ রহঃ –ষোড়শ শতকের বিখ্যাত মরমী সাধক ও কবি, ২), সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ রহঃ চতুর্দশ শতকের বিশিষ্ট সূফী সাধক ও বীর মুজাহিদ; ইনি সিলেট বিজয়ী হযরত শাহ্‌ জালাল রহঃ এর সঙ্গী ছিলেন। এক কাফির জমিদারের বিরুদ্ধে জিহাদে শহীদ হন। তিতাস নদী দিয়ে তাঁর ভাসমান রক্তাক্ত মস্তক থেকে পবিত্র কলেমায়ে তৈয়্যবা উচ্চারিত হতে দেখে একদল জেলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তাঁর রক্তাক্ত ছিন্ন মস্তক কবরস্থ করেন। আজও আখাউড়ার খড়ম পুরে তাঁর মাযার রয়েছে। তাঁর দেহের বাকি অংশ হবিগঞ্জে সমাহিত করা হয়েছে বলে জানা যায়।) চেনার সুবিধার্থে প্রথমোক্ত জন হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ রহঃ কে ঐতিহাসিকগণ গিছুদারাজ আউয়াল নামে অভিহিত করেছেন।)
প্রধান প্রধান মাশওয়ানী জনপদ সমূহ - মাশওয়ানী অধ্যুষিত প্রধান জন বসতি গুলোর মধ্যে গাযী তহসীলের অন্তর্গত সিরিকোট অন্যতম। এই সিরিকোটের জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাযার (২০০৫ এর গণনানুযায়ী)। এতে বসতি স্থাপনকারী জনগণের মধ্যে প্রায় ৫০ হাযার হচ্ছেন মাশওয়ানী সৈয়্যদ।ইরাক থেকে ইরান ও আফগানিস্তান হয়ে এঁদের পূর্বপুরুষেরা বর্তমান পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খান এলাকার দমন উপত্যকায় বসতি স্থাপন করেন।পরে এরা কুহে সোলায়মানী ও মারদান এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েন। মাশওয়ানীদেরকে প্রধানতঃ সিরিকোট ও এর পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুদওয়ালীয়া, হরিপুর জেলার কুন্ডী, তহসীল গাযী, এবং সোয়াবী জেলার তোর ডেহরী অঞ্চলে বেশী দেখা যায়। পেশওয়ার ও কোয়েটা এবং বেলুচিস্তান প্রদেশেও কিছু সংখ্যক মাশওয়ানী পরিবার বসবাস করেন।সিরিকোট গ্রামের আশেপাশে অর্থাৎ গংগর উপত্যকায় প্রায় শতাধিক মাশওয়ানী সৈয়্যদ পরিবার যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। অত্র এলাকায় মাশওয়ানী সৈয়্যদগন খুবই সম্মানিত। মাশওয়ানী সৈয়্যদগণ খুবই অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত সম্প্রদায় হিসেবে সারা পাকিস্তান জুড়ে পরম শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসনে সমাসীন।
মাশওয়ানীদের গৌরবময় অতীত ইতিহাসঃ সৈয়্যদজাদা হিসেবে সমাজের সর্বক্ষেত্রে মাশওয়ানীদের মর্যাদা ও সম্মান প্রশ্নাতীত। মাশওয়ানী সৈয়্যদদের রয়েছে গৌরবময় অতীত ইতিহাস। এরা সাহসী, পরিশ্রমী, স্বাধীনচেতা ও ধর্মভীরু প্রকৃতির।প্রবল প্রতাপান্বিত মোগল সম্রাটেরা এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য “উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নীতি” নামে একটা বিশেষ বিভাগও চালু করেছিল। বেনিয়া বৃটিশরাও এদের দমনের জন্য এখানে একটা সুশিক্ষিত ঘোরসওয়ার বাহিনী নিয়োগ করেছিল। অত্যাচারী শিখ ও দুর্দান্ত প্রতাপ বৃটিশ অগ্রাভিযানের বিরুদ্ধে এরা অন্যান্য পশতুন গোত্রগুলির সাথে মিলে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। শিখদের সাথে বীরদর্পে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া সলীম শাহ মাশওয়ানী আজো পশতুন জতীয় বীরের মর্যাদায় অভিসিক্ত।এ অঞ্চলের বিখ্যাত ও প্রাচীন সূফী কবি হলেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদরাজ (রহঃ)। যিনি মাশওয়ানী সৈয়্যদদের পূর্ব পুরুষরূপে বিবেচিত। এছাড়া বিখ্যাত পশতু কবি খোশহাল খান খটক ফার্সী ভাষায়ও কাব্য রচনা করে যশস্বী হয়েছেন।
সমাজ-সংস্কৃতিঃ পশতুনরা সাহসী, পরিশ্রমী, শান্তি প্রিয়, স্বাধীনচেতা ও ধর্মভীরু প্রকৃতির। অতিথি পরায়ণতা এদের বিশেষ গুন। শতাব্দী প্রাচীন গোত্রীয় শাসন ব্যবস্থা আজো এখানে প্রচলিত। প্রাচীন আফগান সমাজ ব্যবস্থার সাথে পশতুনদের যথেষ্ঠ মিল রয়েছে। গোত্রীয় সংহতি ও গোত্রীয় মানবতাবোধ এদের প্রধান সামাজিক বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় ভাষায় পঞ্চায়েতকে ‘জিরগা’ বলা হয়ে থাকে। গোত্রীয় সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে বাধ্য সকল পশতুন সদস্য।এরা নারীদেরকে সবিশেষ সম্মানের চোখে দেখে থাকে। এদের মধ্যে আন্তঃ গোত্রীয় বিবাহ প্রথা বহুল প্রচলিত। পশতু ভাষা প্রায় ১৪০০ বছরের প্রাচীন এবং বর্তমানে পাকিস্তানে পশতু ভাষী জন সংখ্যা ২ কোটির অধিক।

উপজীবিকাঃ পশতুনভাষী মাশওয়ানীদের শারীরীক গঠন মজবুত ও পেশীবহুল হওয়ায় এরা খুবই সাহসী, পরিশ্রমী। দুনিয়ার যে কোন উন্নত জাতির সাথে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য রাখে পশতুন জনগণ। সামরিক বাহিনীতে এরা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে বৃটিশ সেনাবাহিনীর গৌরব বৃদ্ধি করেছিল। বর্তমান পাকিস্তানী পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীতেএরা বিশেষ সম্পদ হিসেবে সততা ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিচ্ছে। কৃষিকাজ ও পশুপালন পাহাড়ী পশতুনদের প্রধান পেশা। এরা মহিষ ও ভেড়া পালন করে থাকে। এককালে এদের প্রধান যানবাহন ছিল ঘোড়া ও খচ্চর। ঘোড়ার চালিত দুই চাকার টাঙ্গা আজো অনেক গরীব পশতুনদের প্রধান বাহন ও জীবিকার ঊৎস। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ও উন্নত যোগাযোগ সুবিধার ফলে আজকাল অনেকেই ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

সিরিকোট অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাসঃ সিরিকোট গ্রামের আদি নাম সেতালু,এটি কোহে গংগর অর্থাৎ গংগর উপত্যকায় অবস্থিত। সিরিকোট শব্দের অর্থ - পর্বত শীর্ষ। সিরিকোট গ্রামটি আক্ষরিক অর্থেই পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত। সমতলভূমি থেকে এটার উচ্চতা প্রায় ২০০০ মিটার।দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত বিধায় এখানকার গণমানুষের জীবন যাত্রায় মিশে আছে বৈরী প্রকৃতির সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করে টিকে থাকার প্রানান্ত প্রয়াস। বর্তমানে এটি সৈয়্যদবাদ শরীফ নামে বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আশেপাশের এলাকা সমূহে চরম ভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করলেও, সিরিকোট গ্রামটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত হবার কারনে এখানকার আবহাওয়া বেশ শীতল, আরামপ্রদ ও স্বাস্থ্যকর। মাশওয়ানী সৈয়্যদগণ এখানকার প্রধান বাসিন্দা। মূর্তিপুজক আদিবাসী পশতুনদের মাঝে ইসলাম প্রচারের মহান ব্রত নিয়ে সর্বপ্রথম দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন মারুফ কাপুর শাহ্, যিনি নবী বংশের ২৪ তম ধারার বাহক ছিলেন। তাঁকে “ফাতেহে সিরিকোট” (সিরিকোট বিজয়ী) নামে ইতিহাসে অভিহিত করা হয়েছে।

দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত হলেও বর্তমানে সিরিকোট গ্রামটিতে আধুনিক জীবনযাত্রার সকল সুযোগ সুবিধাদি বিদ্যমান।এসকল সর্বাধুনিক সু্যোগ সুবিধার পিছেন রয়েছে শাহানশাহে সিরিকোট হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্‌ (রহঃ) এবং তাঁর আওলাদ ও মূরীদানদের অবদান। যেমন- সমতল ভূমি থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাযার ফুট উপরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সিরিকোট দরবার শরীফে যাতায়াতের জন্য আগে তেমন কোন সু ব্যবস্থা ছিল না। আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী পথে বিপদ সংকুল পথে গাধা বা ঘোড়াই ছিল এক মাত্র যানবাহন। আর এক প্রকার দু’চাকার অশ্ব চালিত বাহন ছিল, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হত টাঙ্গা।আবার তাও ছিল ব্যায়বহুল। ছিলনা কোন সুপেয় পানীয় জলের সংস্থান। ২-৩ কিলো মিটার নীচের কূপ থেকে বহু কষ্টে জোগাড় করা হত পানি। আর সেটা দিয়েই চলত নাওয়া-খাওয়া সবকিছু। ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগ, না টেলি যোগাযোগের ব্যবস্থা, না ছিল কোন পাকা সড়ক পথ, এমনকি ছিলনা অতি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার কোন সুযোগ। ১৯৫৬ সালে তাঁর নাতি মাত্র ১৪ বছর বয়সী কিশোর সাহেবজাদা হযরত সৈয়দ তাহের শাহ্‌ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী কে দেখা যেত প্রখর সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে ঘর্মাক্ত ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহে পাহাড়ী কূপ থেকে প্রয়োজনীয় পানীয় জল সংগ্রহ করে আনতে। দাদা হুযুর কিবলার চট্টগ্রামের মুরীদানদের সৌজন্যে পানীয় জলের সমস্যার সুরাহা হয়। বসানো হয় পানির পাম্প ও সরবরাহ লাইন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের অস্থায়ী প্রেসিডেণ্ট থাকাকালীন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং দাদা হুযুর কিবলার বিশেষ ভক্ত জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরি ৫০ হাযার টাকার রাষ্ট্রীয় অনুদান দিয়ে হরিপুর থেকে সিরিকোটগামী সড়ক পথ সংস্কারের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তাঁর কনিষ্ট পৌত্র পীরে বাঙ্গাল হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্‌ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মূখ্য মন্ত্রী থাকাকালীন সীমান্ত প্রদেশের প্রত্যেক গ্রামে রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় জলের ব্যবস্থা করা হয়। বিদ্যুতের আলোকে ঝলমল করে উঠে প্রত্যন্ত অঞ্চল। ফলে এক সময়ের আজানা-অচেনা, অজ্ঞাত-অখ্যাত প্রত্যন্ত গ্রাম সিরিকোট এখন গড়ে উঠেছে এক আধুনিক নগরী রূপে। এখানে রয়েছে সরকারী কম্যুনিটি হাসপাতাল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়-কলেজ, বাজার, ডাকঘর। বিদ্যুত ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা ছাড়াও এখানে রয়েছে উন্নত ডাক-টেলিযোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রশাসনিক স্থাপনাসমুহ। নিকটবর্তী জেলা শহর হরিপুর, এবোটাবাদ ও প্রাদেশিক রাজধানী পেশওয়ার ছাড়াও লাহোর, রাওয়ালপিণ্ডী ও কেন্দ্রীয় রাজধানী ইসলামাবাদের সাথে হরিপুরের মাধ্যমে সিরিকোটের রয়েছে সুবিধাজনক বাস সংযোগ। উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালের ১৫ই এপ্রিল, ২ কোটি পশতুন জন গোষ্টির প্রাণের দাবী একটা স্বতন্ত্র ‘খাইবার পাখতুন খাওয়া’ প্রদেশ স্থাপনে কান্ডারীর ভূমিকা পালন করেছেন হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্‌ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। এলাকার কৃতজ্ঞচিত্ত জনগণ পরম শ্রদ্ধা ও মমতায় প্রিয় মানুষটির নামে এ গ্রামের নাম দিয়েছে “সৈয়্যদাবাদ শরীফ”। কয়েক মাইল দূর থেকে দৃশ্যমান সিরিকোট দরবার শরীফের সুদৃশ্য সবুজ গম্বুজ শোভিত, নান্দনিক কারুকার্য খচিত সুউচ্চ মিনারা আগত ভক্ত- মুরীদান-জিয়রতকারীদের হৃদয়কে বেহেশতি প্রশান্তিতে ভরে দেয় ।

শাহানশাহে সিরিকোট (রহঃ) এর বংশধারা পরিচিতি
আমাদের দাদাপীর হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্‌ সিরিকোটি (রহঃ) হলেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ (রহঃ) এর পবিত্র বংশধারার ২৬ তম অধঃস্তন বংশধর। সিরিকোট অঞ্চলে ইসলামের ঝান্ডা বহনকারী সৈয়্যদ গফুর শাহ্‌ ওরফে মারুফ কাপুর শাহ্‌ রহঃ হলেন হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ (রহঃ) এর পরবর্তী দ্বাদশ সংখ্যক অধঃস্তন ব্যক্তিত্ব। আর শাহানশাহে সিরিকোট (রহঃ) এর পিতা হযরত সৈয়্যদ সদর শাহ্‌ (রহঃ) হলেন হযরত সৈয়দ আহমদ গিছুদারাজ (রহঃ) এর পবিত্র শোণিত ধারার ২৫ তম প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী। বংশগত শাজারা শরীফ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, শাহানশাহে সিরিকোট হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্‌ (রহঃ) পবিত্র নবী বংশের ৩৮তম আওলাদ। আর হযরত সৈয়্যদ আহমদ গিছুদারাজ (রহঃ) হচ্ছেন এ নবী বংশের দ্বাদশ ধারাটির বাহক।

দরবারের ব্যবস্থাপনাঃ
ঐতিহ্যবাহী সিরিকোট দরবার শরীফের সার্বিক ব্যবস্থাপনার গুরু দায়ীত্ব এখানকার সাহেবজাদা হুযুরগণ অত্যন্ত সুচারুভাবে আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। আগত মুরীদান, ভক্ত-মেহমানদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, নানা রকম সু্যোগ সুবিধার দিকে সদা সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বর্তমান সাহেবজাদা হুযুরদের। দরবার শরীফের ব্যবস্থাপনায় এখানে পরিচালিত হচ্ছে একটা জামে মসজিদ, লঙ্গর খানা ও তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসা।
হে মহান আল্লাহ্ পাক!! মদীনার সৌরভ, কাদেরীয়া তরীকার গৌরব, স্বর্গীয় প্রেম-সুধাকামী রসিক সুজনের আত্মার প্রশান্তিদায়ক আবে কাওসাররূপ অনন্ত ধারার উৎসস্থল, ইলমে মারিফাত পিয়াসীদের মিলন মেলা পবিত্র এ দরবার শরীফকে কিয়ামত পর্যন্ত আবাদ রাখুন!! আ-মী-ন!!


তথ্য সূচী – ১ ।শাজরা শরীফ ঃ প্রকাশক – আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সূণ্ণীয়া, চট্টগ্রাম।
২। মাসিক তরজুমান (বিভিন্ন সংখ্যা ) ঃ প্রকাশক – আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সূণ্ণীয়া, চট্টগ্রাম।
৩। বাগে ছিরিকোটি ঃ প্রকাশক –আল্লামা তৈয়্যবিয়া সোসাইটি,চট্টগ্রাম, বাংলা দেশ।
৪। পাকিস্তান ঃ দেশ ও কৃষ্টি – প্রকাশক –ইষ্ট পাকিস্তান স্কুল টেক্সট বুক বোর্ড।








মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হে মহান আল্লাহ্ পাক!! মদীনার সৌরভ, কাদেরীয়া তরীকার গৌরব, স্বর্গীয় প্রেমসুধায় আগ্রহী রসিকজনের কেন্দ্রবিন্দু ও ইলমে মারিফাত পিয়াসীদের মিলন মেলা পবিত্র এ দরবার শরীফকে কিয়ামত পর্যন্ত আবাদ রাখুন। আ-মী-ন।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯

এস এম ইসমাঈল বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩

এস এম ইসমাঈল বলেছেন: মুরশীদ আমার আওলাদে রাসুল
মুরশীদ আমার সিরিকোটের বাগানের ফুল
একবার তাঁরে দেখলে ওরে মন না ভরে
বারে বারে দেখতে তাঁরে আমার শুধু ইচ্ছা করে।।
মুরশীদ আমার আওলাদে রাসুল
মুরশীদ আমার কাদেরী বাগানের ফুল
দেখলে তাঁরে দূর হয়ে যায় মনের যত ব্যাথা
কেমনে আমি ভুলি ওরে দয়াল মুরশীদের কথা??
মুরশীদ আমার সিরিকোটের বাগানের ফুল
মুরশীদ আমার আওলাদে রাসুল
মুরশীদ আমার কাদেরী বাগানের ফুল
এতে নাই কোন ভুল।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.