নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত ও হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহঃ
মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত কি?
আরবী শব্দ সুলুক থেকে মাসলাক শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ হচ্ছে অনুসৃত মত বা পথ। যিনি বা যারা কোন নিদৃষ্ট মতাদর্শ অনুসরণ করে থাকেন তাকে/তাদেরকে সালেক বলা হয়ে থাকে।
মাসলাক একটা ব্যাপক অর্থ বোধক শব্দ। এর দ্বারা জীবনাচরণ সম্পর্কে কোন ব্যক্তি বিশেষের সার্বিক দৃষ্টি ভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। তাই মাসলাক বলতে ধর্ম-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি ইত্যাদি জীবন ঘনিষ্ঠ নানা বিষয়ে কোন মানুষের বিশ্বাস ও মতাদর্শকে নির্দেশ করে এবং সেটা তার জীবনাচরণে প্রতিফলিত হয়। কাজেই মাসলাক কথাটা খুবই identical ।সেহেতু এটা একটা সুনিদৃষ্ট পরিচয় বাহী বা পরিচিতি জ্ঞাপন করে।
তাই মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত শব্দের সরলী কৃত অর্থ দাড়াচ্ছে - আ'লা হাদ্বরাত (রহঃ) কতৃক প্রচলিত ও অনুসৃত মত বা পথ। বড় পীর হযরত গাউসে পাক (রহঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ কসীদায়ে গাউসিয়া শরীফে এ সুলুক শব্দ ব্যবহার করেছেন। কসীদায়ে গাউসিয়া শরীফে তিনি লিখেছেন,
“কাযা ইবনুর রিফায়ী কানা মিন্নী, ফাইয়াসলুকু ফী তারীকী ওয়াসতিগালী”
অর্থাৎ - ইবনু রেফায়ী ভক্তি ভরে, মোর দলেতে গেলেন ভীড়ে
মোর তরীকা মেনে নিয়ে, চলেন তিনি আমার পথে ।।
মাসলাকে আলা হযরত কি তা ভালভাবে বুঝতে হলে সবার আগে আলা হযরত (রহঃ) এর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রকে জানতে হবে। তবেই খুব সহজে মাসলাকে আলা হযরতের স্বরূপ ও মর্ম অনুধাবন করা যাবে।
আলা হযরত এর পরিচিতি – আলা হযরত(রহঃ) ইমামে আহলে সুন্নত আল্লামা আহমদ রেযা খান বেরলভী রহঃ ছিলেন প্রকৃতই বিস্ময়কর এক যুগশ্রেষ্ট প্রতিভা। বিংশ শতকের সর্বশ্রেষ্ট ইসলামী চিন্তা নায়ক ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ)। যিনি প্রায় সহস্রাধিক ইসলামী পুস্তক প্রণয়ন করেছেন, জ্ঞান বিজ্ঞানের অর্ধ শতাধিক বিষয়ে যিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ, এমনকি তাঁর চরম বিরুদ্ধবাদীরা পর্যন্ত এ মহান কালজয়ী মহা পুরুষের গভীর জ্ঞান, বিদ্যাবত্তা ও সুবিবেচনার সমুহ প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন । মহা নবীর পবিত্র জীবন চরিত ও আকাঈদ বিষয়ে তাঁর লিখিত পুস্তকের সংখ্যা ৬৩ টি। বাতিল মতবাদের খন্ডনে তিনি প্রণয়ণ করে গেছেন ৪০০’র বেশী প্রামাণ্য কিতাব। কানজুল ঈমান নামে তাঁর লিখিত আল কুরআনের তাফসীর সারা বিশ্বে সমাদৃত। তাঁর প্রণীত “ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া” গ্রন্থটি হানাফি ফিকাহ শাস্ত্রের সংহিতা হিসাবে সুধী মহলে স্বীকৃত। ৩০ খন্ডে সমাপ্ত সুবিশাল এ কিতাবের পৃষ্টা সংখ্যা ২১৬৫৬ এবং আলোচ্য ফতোয়ার সংখ্যা ৬৮৪৭ টা এবং এতে অধ্যায় রয়েছে ২০৬ টি। আলা হযরত (রহঃ) এর একনিষ্ট জ্ঞান চর্চা এবং ইসলামের খেদমতে তাঁর বহুমূখী প্রচেষ্টা ও অবদান কে অকুন্ঠ স্বীকৃতি দিয়ে সমসাময়িক জ্ঞানী-গুণী বিদগ্ধজনেরা তাঁকে একবাক্যে “যুগের আবু হানিফা” অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন।
ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে আলা হযরত (রহঃ) ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের একনিষ্ট অনুসারী, মাযহাবগত দিক থেকে হানাফী আর তরীকা হিসেবে তাঁর সূত্র ছিল কাদেরিয়া তরীকার সাথে সম্পর্কিত। ভারতের মারাহারা শরীফের বিখ্যাত অলী, খান্দানে কাদেরিয়ার গৌরব হযরত আলে রাসুল (রহঃ) ছিলেন তাঁর পীর ও মুর্শিদ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন পূর্ণ মাত্রায় সুন্নতের অনুসরণকারী। আহলে বায়ত, সাহাবায়ে কিরাম ও আওলাদে রাসুলগণের প্রতি তাঁর ভক্তি শ্রদ্ধা ছিল প্রবাদ তুল্য। আলা হযরত (রহঃ) ছিলেন নূর নবীজীর একজন অদ্বিতীয় আশেক। তিনি বলতেন, “আমার ক্বলবকে দুই টুকরা করলে তার একভাগে আল্লাহ্ ও অন্যভাগে মুহাম্মদ লেখা দেখতে পাবে”। সকল কাজে নবী প্রেমকে ধারণ করে জীবন পরিচালনা করাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এতদ উদ্দেশ্যে তিনি নিজের নামের আগে আবদুল মুস্তাফা শব্দটি সংযোজন করেন। এটা তাঁকে বিশ্ববাসীর কাছে নবী প্রেমের মুর্ত প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সর্বোপরি আলা হযরতের (রহঃ) লিখিত নাত সম্ভার “হাদায়েকে বখশিশ” কাব্য গ্রন্থখানা তাঁর নিরঙ্কুশ নবী প্রেমের অতি উজ্জল দৃষ্টান্ত।
আলা হযরতের রহঃ সংস্কার সমূহ ঃ বিংশ শতকের নব্য আবিস্কৃত বাতিল ফিরকাসমূহ যখন তাদের চমকদার মিঠে বুলির ধূম্রজাল বিছিয়ে সাধারণ মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমান গ্রাস করে নিচ্ছিল, এমনি এক ঘোরতর সংকটময় মুহুর্তে আলা হযরত রহঃ সাধারন মুসলমানদের জন্য তাদের দ্বীন-ঈমান রক্ষাকারী ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভুত হন।
তিনি ছিলেন প্রকৃতই একজন মুজাদ্দিদ। আরব-আযমের জ্ঞানী-গুণী সমাজের সবাই নির্দ্বিধায় তাঁকে এ স্বীকৃতি দিয়েছেন। এখানে তাঁর কয়েকটা সংস্কার এর কথা এখানে তুলে ধরা প্রাসংগিক হবে বলে ম্নে করি। যেমন –
১। ফরজ পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ – মুসলমান সমাজের বড় একটা অংশকে ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নত ছেড়ে দিয়ে নফল ও মুস্তাহাব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আলা হযরত রহঃ এর বিরূদ্ধে দৃঢ় আবস্থান নেন এবং সকলকে আগে ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নত এর উপর আমল করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মতে ফরজ আমল ছেড়ে দিয়ে নফল ও মুস্তাহাব নিয়ে ব্যস্ত থাকাটা বোকামী এবং দ্বীনের সাথে উপহাস করার শামিল।
২। শরীয়তবিহীন তরিকত মূল্যহীন - অনেককে দেখা যায় শরীয়ত ছেড়ে দিয়ে শুধু তরিকত নিয়ে পড়ে থাকে। আবার অনেকে তরিকতের গুরুত্ব অস্বীকার করে শুধুমাত্র শরীয়তকেই প্রধান্য দিয়ে থাকে। আলা হযরত রহঃ এদের উভয় পক্ষকেই বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর মতে শরীয়ত ও তরিকত উভয়টিই সমান ভাবে গুরুত্ব পূর্ণ। এদের একটি অপরটির পরিপূরক। শরীয়তের বিধানবলী পরিপূর্ণভাবে পালন করেই তরিকতের পথে অগ্রসর হতে হয়।শরীয়ত ছাড়া তরিকত মূল্যহীন। আর তরিকত ছাড়া শরীয়ত ফল বিহীন বৃক্ষের মত।
৩। উরস ও ফাতেহা - উরস ও ফাতেহা বৈধ ও পূণ্যময় আমল হওয়া সত্বেও ভারতীয় উপমাহদেশের বিভিন্ন দরবার সমূহে নাচ-গান-মেলা-জুয়ার আসর ইত্যাদি ফাসেকী ও বিদাতী কার্যকলাপ অনুষ্টিত হয়ে থাকে। তিনি মু্লমানদের এ সকল গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার পরামর্শ দেন। কারন এসব ফাসেকী ও বিদাতী কার্যকলাপ দ্বারা সুন্নী মুসলমানদের বদনাম হয়ে থাকে।
৪। পটকা বাজী ও নাচ গান -বিবাহ-শাদী এবং শবে বরাতের মত পুণ্য ও বরকতময় অনুষ্ঠান গুলিতে পটকা বাজী ও নাচ গান হয়ে থাকে। আলা হযরত এ সকল শয়তানী আমল হিসেবে আখ্যায়িত করে এসব কর্মকান্ডকে নিষিদ্ধ তথা হারাম ঘোষণা করেন।
৫। বেপর্দা মহিলাদেরকে তিরস্কার- বেপর্দা বর্তমান যুগের মহিলাদেরকে বেপর্দা হয়ে মসজিদ-মাজার ও পীরের খানকায় যাতায়াত করতে দেখা যায়। এগুলো কে তিনি ধর্মের নামে গোমরাহী হিসেবে আখ্যায়িত করে মহিলাদের এসব কর্মকান্ডকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
৬। সামা ও কাওয়ালী - সামা ও কাওয়ালী আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রেমে মানুষের মনকে সিক্ত করে। কিন্তু কিছু মন্দ লোকের কারনে এ পবিত্র আমলটাও কলুষিত হয়ে পড়েছে। তারা এতে তব্লা,গীটার হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাদ্য যন্ত্র সংযোজন করে এবং অশ্লীল অঙ্গ ভঙ্গি করে নর্তন কুর্দন করে থাকে। অনেক সময় মহিলারাও এতে যোগ দেয়। ফলে সামা তার পবিত্রতা ও ভাব গাম্ভীর্য হারিয়ে ফেলে। আলা হযরতের রহঃ মুসলমানদেরকে এ ধরণের অনুষ্ঠানে যেতে বারণ করেছেন।
৭। তাজিমী সিজদার নিন্দা- সারা ভারত বর্ষের বিভিন্ন সুন্নী দরবারে বহুল প্রচলিত কূপ্রথা তাজিমী সিজদার নিন্দা করে এটার অবসান কল্পে তিনি “আয যুবদাতুয যাকীয়্যাহ ফি তাহরীমে সুজুদুত তাহীয়্যাহ” নামে একখানা প্রামাণ্য পুস্তিকা রচনা করেন।
বাংলাদেশে আলা হযরত (রহঃ) চর্চা
বাংলাদেশে আলা হযরত (রহঃ) চর্চার পথিকৃত ব্যক্তিত্ব হলেন সৈয়্যদুল আওলিয়া হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহঃ)। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এদেশবাসী আলা হযরত (রহঃ) এর জীবন ও মতাদর্শের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ লাভ করে। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহঃ) ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত প্রতিটা মাদ্রাসা-মসজিদ ও খানকাহ শরীফে মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত খুব কঠোর ভাবে অনুসরণ করা হয়। আঞ্জুমান নিয়ন্ত্রিত প্রতিটা মাদ্রাসার প্রভাতকালীন ছাত্র সমাবেশে প্রতিদিন আলা হযরতের (রহঃ) বিখ্যাত নাত “সবছে আউলা ও আলা হামারা নবী” উচ্চ কন্ঠে গীত হয়। তরীকতের মুবারাক মাহফিল গুলোতেও প্রত্যহ ধ্বনিত হয় আ'লা হাদ্বরাত (রহঃ) এর নাতিয়া কালাম। মিলাদ মাহফিলের শেষেও আলা হযরতের (রহঃ) বিখ্যাত কসীদায়ে সালাম বা “মুস্তাফা জানে রহমত পে লাখো সালাম” গুঞ্জরিত হয় প্রতিনিয়ত।
মুরশীদে বরহক হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহঃ) আলা হযরত সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। এ প্রসংঙ্গে এক বাণীতে তিনি বলেছেন, “আলা হযরত রহঃ এর গূনকীর্তন করার যোগ্য ভাষা অধম খুঁজে পাচ্ছি না। বাতিল ফিরকা সমূহ আম্বিয়ায়ে কেরাম ও অলী-আল্লাহ্র শানে কটুক্তি আর তাঁদের বিধ্বংসী ঘৃণিত মতাদর্শ নিয়ে যখন তুফানের আকৃতি ধারণ করে ধেয়ে আসছিল ঠিক সে মুহুর্তে আলা হযরত রহঃ তাঁর বিস্ময়কর ক্ষুরধার লিখনির মাধ্যমে কিশতীয়ে নূহ এর মত রাসুলের উম্মতদেরকে স্বীয় বুকে টেনে নিয়ে রহমতে দো আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়ার প্রস্রবণ থেকে সুধা পান করান। তিনি আরো বলেন, “তাঁর নাতিয়া কালাম শুনলে ঈমান তাজা হয়ে যায়। ভাববার বিষয় হল, যে ব্যক্তির জবান থেকে এত সুগভীর নবী প্রেমে ভরা পংক্তি বের হয়, না জানি তাঁর অন্তের কিরূপ অবস্থা বিরাজ করছিল?” সূত্র - পয়গামাতে ইয়াওমে রেযা, লাহোর, পাকিস্তান।
আ'লা হাদ্বরাত রহঃ এর মতাদর্শকে এদেশ বাসীর কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তুলেছেন হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহঃ। তিনি ও তাঁর অনুসারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রতিটা মাদ্রাসা – মসজিদ – খানকা’ সমূহ আলা হযরতের প্রবর্তিত মতাদর্শ ও রীতিনীতির পূর্নাংগ অনুসরণ করেই
পরিচালিত হয়। ১৯৫৪ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রামের ষোল শহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন কালে হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহঃ উপস্থিত সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “ইস জামেয়া কি বুনিয়াদ মাসলাকে আলা হা্যরাত পর দি যাতা হ্যায়” অর্থাৎ - “এ জামেয়ার ভিত্তি আলা হযরতের অনুসৃ্ত মতাদর্শের উপর দেয়া গেল”। আঞ্জুমানের সহযোগী সংগঠন “গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ” দেশে-বিদেশে মাসলাকে আলা হযরাত এর চর্চা ও প্রচার প্রসারে একনিষ্ঠ ভাবে নিবেদিত। শাহানশাহে সিরিকোটি (রহঃ) এর দেখাদেখি বাংলাদেশের অনেক দরবার ও তাঁদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান মাসলাকে আলা হযরাত চর্চায় নিয়োজিত হয়েছেন। যেমন – বায়তুস শরফ,আঞ্জুমানে আশেকানে মুস্তাফা, শাহপুর দরবার শরীফ কুমিল্লা, গাছতলা দরবার শরীফ, চাঁদপুর, আল্লামা নুরূল ইসলাম হাশেমী সাহেব,চট্টগ্রাম, মাওলানা আবু সুফীয়ান আল কাদেরী, চট্টগ্রাম, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মগবাজার রেল গেট, হাইকোর্ট মাজার,ঢাকা, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়ার কৃতি ছাত্র মাওলানা আবদুল মান্নান সাহেব আলা হযরতের (রহঃ) লিখিত আল কুরআনের তাফসীর “কানজুল ঈমান” এর বাংলা অনুবাদ করেছেন। আলা হযরত (রহঃ) চর্চায় ব্যাপক অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট সাবেক ছাত্রনেতা মাওলানা আবদুল মান্নান সাহেব পাকিস্তানের ইদারাহ –ই –তাহকীকাত ইমাম আহমদ রেযা ইন্টারন্যাশনাল, করাচী থেকে স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত একমাত্র সুণ্ণী ছাত্র সংগঠন “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা” মাসলাকে আলা হযরাত চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ছাত্রসেনার প্রতিষ্ঠা লগ্নেও ছিল হজরতুল আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ রহঃ এর অকুণ্ঠ সমর্থন। ছাত্রসেনার রচিত সেনা সংগীতেও আলা হযরাত (রহঃ) কে নিয়ে দুটি চরণ রয়েছে।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়ার আরেক কৃতি ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগ থেকে আলা হযরাত (রহঃ) কাব্য নিয়ে পি এইচ ডি পর্যায়ে গবেষণা করছেন । এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলা হযরাত (রহঃ) কে নিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। প্রসঙ্গত আমেরিকা, মিশর, ইরাক, ভারত, পাকিস্তান সহ বিশ্বের প্রায় ৩ ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলা হযরাত (রহঃ) কে নিয়ে অনুরূপ গবেষণা চলছে।
আলা হযরতের দরবার শরীফের বেশ কয়েক জন খলীফাও বাংলাদেশে বর্তমান রয়েছেন। বাংলাদেশে উদাহরণ, প্রিন্সিপাল এম এ জলিল রা., আবু সুফিয়ান আল ক্বাদরী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। এছাড়া আলা হযরত চর্চাকে মূখ্য উদ্দেশ্য করে দেশ ব্যাপী গড়ে উঠেছে ২০টির ও অধিক সংস্থা-সংগঠন।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানদের দুরবস্থা ও আলা হযরতের প্রাসংগিকতা
যুগ যুগ ধরে পবিত্র আত্মা সাহাবায়ে কেরামের দ্বারা প্রবর্তিত ইসলামের প্রকৃত চিন্তা-চেতনার অনুসরণ ও সংরক্ষণকারী একমাত্র জান্নাতী কাফেলা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত” হিসেবে পরিচিত। বিগত দেড় হাযার শতাব্দী ধরে সারা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দ্বারা গৃহীত ও আচরিত সহীহ আকীদা ভিত্তিক জীবন ধারা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত”। পবিত্র এ জান্নাতি জীবন ধারা তখন ওহাবী/লামাযহাবি/দেওবন্দি/খারেজি/কাদিয়ানি/আহলে হাদীস/ সালাফী/তাবলীগি ইত্যাকার নব্য আবিস্কৃত শত বাতিল মত ও পথের বহুমুখী আক্রমণে কোনঠাসা।
হাটাজারী মাদ্রাসা ও তার মোহতামীম মুফতি ফয়জুল্লার নবী-অলী বিদ্বেষী অপপ্রচার ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছিল সারা চট্টগ্রামের সূন্নী জনতাকে। ১৯৫০ সালে বাঁশখালীর শেখের খিল এলাকায় এক মুরীদের অনুরোধে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৈয়্যদুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি’র (রহঃ) অর্জিত তিক্ত অভিজ্ঞতা বাতিল ফিরকা সমূহের দিগন্ত বিস্তারী ঈমান বিধ্বংসী ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের প্রমাণও দিয়ে দিল হাতে-নাতে। ঐ মুহূর্তেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলার নিরীহ সাধারণ মানুষের ঈমান বিধ্বংসী এসব ষড়যন্ত্র ও নীল নকশার উচিত জবাব দিতে হবে। রুখে দিতে হবে তাদের নবী-অলী বিদ্বেষী অপপ্রচারের এ অশুভ প্রবাহকে। সবার সামনে উম্মোচন করে দিতে হবে ধর্মের লেবাসধারী অপপ্রচার ও অপকর্মের হোতাদের আসল চেহারা। দিনের আলোয় নিয়ে আসতে হবে এসব নিশাচর ধর্ম ব্যবসায়ী বহুরূপী বাতিল ফিরকা সমুহের জঘণ্য ও ঘৃণিত রূপ । তবেই দৃশ্যমান হবে সত্যের চির জাগ্রত রূপ। আর তখনি মানুষ অতি সহজে খুঁজে নিতে পারবে সত্যের চির উজ্জল নির্মল নির্ভরতার চিরন্তন ঠিকানা। তিনি বুঝতে পারলেন, অসত্যের এ গাঢ় অমানিশা ভেদ করে সুণ্ণীয়তের মহিমায় উজ্জল সুর্যোদয় রাঙ্গানো সুপ্রভাত আনতে হলে সবার আগে দূর করতে হবে অশিক্ষা। মানুষের মধ্যে জ্বালাতে হবে সঠিক ইসলামী চিন্তা চেতনা ভিত্তিক শিক্ষার আলো। সৃষ্টি করতে হবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের শিক্ষা–দীক্ষা ও চেতনা সম্পন্ন এক দল আশেকে রাসুলের বিপ্লবী জানিসার বাহিনী। আর এ উদ্দেশ্য সফল করতে হলে প্রয়োজন হবে এমন একটা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে ইসলাম ধর্মের মূল ধারা তথা আহলে সুন্নত ওয়াল অনুসারী মত ও পথের সঠিক ধারনা ও সে অনুযায়ী ট্রেনিং দেয়া হবে। এখান থেকে সুযোগ্য আলেম হিসেবে তৈরী হয়ে তারা ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশ ব্যাপী। আর সমুচিত জবাব দিবে নবী-অলী বিদ্বেষী বাতিল ফিরকার অপপ্রচারের। খুলে দেবে ওসব বক ধার্মিক, লেবাসধারী তথাকথিত আলেমদের মুখোশ আর মানুষ পরিচিত হতে পারবে সত্যিকার ইসলামী মূল্যবোধ ও চিন্তা চেতনার সাথে। তাই নিজ মুরীদান ও ভক্তদের কে তিনি নির্দেশ দিলেন, “জামেয়াকি খেদমত কো আপ জুমলা ভাইয়ো! নম্বরে আউয়াল মে রাখখে,বাকী দুনিয়া কী কামও আউর ধান্ধো দুসরে তিসরে নাম্বার মে রাখখে।” “কাম করো, দ্বীন কো বাঁচাও ইসলাম কো বাঁচাও আউর সাচ্চা আলেম তৈয়ার করো। “মুঝসে মুহাব্বাত হ্যায় তো মাদ্রাসা কো মুহাব্বাত করো। মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো মাদ্রাসা কো দেখো”। এর ফলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আজ এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীনী মারকায ও সুন্নীয়তের কেন্দ্রবিন্দু তথা হৃদস্পন্দনে পরিণত হয়েছে। ইমামে আহলে সুন্নত হযরত শেরে বাংলা রহঃ জামেয়া প্রসঙ্গে সঠিক ভাবেই তাঁর সুবিখ্যাত দিওয়ানে আযীযে (পৃষ্ঠা নং ১৪৬) মন্তব্য করেছেন যে,
“মৌজায়ে নাজির পাড়া আন্দরা ষোলাশহর
নামে উঁ আন্দর জাঁহা রওশন বমানদ চুঁ বদর
আযবরায়ে আহলে সুন্নত মাদ্রাসা করদা বেনা
বাহরে ইছতীছালে ওহাবী গশত তীরে বেখত্বা।।
অর্থাৎ - পূণ্য ভূমি ষোল শহর, নাযির পাড়া মৌজাতে
জগত হল আলোকিত চন্দ্রসম তার দ্যুতিতে।।
আহলে সুন্নতের মতাদর্শে মাদ্রাসার ভিত্তি দিলে,
আশ্রয়স্থল সব নবী প্রেমীর, বিধ্বংসী তীর ওহাবী তরে।।
*সূত্র দিওয়ানে আযীয বাংলা অনুবাদ (পৃষ্ঠা নং ১৪৬)।
সারা বাংলার অশিক্ষিত-অল্প শিক্ষিত সাধারণ জনগণ যখন এসব বাতিল ফিরকার সৃষ্ট মিষ্ট কথার ধূম্রজালে দিশেহারা হয়ে পুচ্ছধারী কাককেই আসল ময়ূর বলে মেনে নিতে বাধ্য হতে চলেছে, এমনি এক সংকট পূর্ণ মুহুর্তে বাঙলার আপামর মুসলমানদের দ্বীন–ঈমান-আকীদা সংরক্ষণের গুরু দায়ীত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে ইশকে রাসুলের ঝান্ডা হাতে বীরদর্পে এগিয়ে এলেন মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের প্রবক্তা সৈয়্যদুল আউলিয়া হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহঃ। বাতিল ফিরকা সমূহের নবী-অলী বিদ্বেষী অপপ্রচারের মুখোশ উম্মোচন করে সাবলীল কণ্ঠে তিনি উচ্চারণ করলেন, “কোন কেহতা হ্যায় রাসুলে পাক সঃ হাযির নাযির নেহি, কোন কাহতা হ্যায় হযরতে গাউসে পাক রহঃ হাযির নাযির নেহি, হামারা হাত পাকড়ো, হাম তুমহে দিখাতেহে কাঁহা রাসুলে কারীম সঃ আউর হযরতে গাউসে পাক রহঃ হাযির হ্যায়”। শুধু কি তাই এরপর তিনি আরও ঘোষণা দিলেন, “নূর নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি পরিপূর্ণ ভালবাসা প্রদর্শন ও তাঁদের একনিষ্ট অনুসরণের নামই ঈমান। তাঁদের প্রতি হিংসা পোষণ বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করাই প্রকৃত পক্ষে গোমরাহী বা পথ ভ্রষ্টতা। তিনি তাঁর মুরীদান ও ভক্তদেরকে ঈমান হরণ কারী এসব নতুন গজিয়ে উঠা বাতিল ফিরকার সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার কঠোর নির্দেশ দিয়ে বল্লেন, “তোমরা তাদের কাছে যাবে না, আর তাদেরকেও তোমাদের কাছে আসতে দেবে না। তোমদের আয়ের একাংশ দিয়ে আমার স্থাপিত এ মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকো।” মুরীদ ও ভক্তদেরকে আশস্ত করে তিনি শোনালেন, “হযরত নুহ আঃ এর বিপদ্গ্রস্থ উম্মতগণ যেমন কিশতীয়ে নূহ এর মধ্যে আরোহণ করে আল্লাহ্র আযাব ও গজব থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছিল, তেমনি আমার এ জামেয়া ও কিশতীয়ে নূহ এর মত তোমাদেরকে সকল আসমানী ও জমিনী বালা-মুসীবত ও বিপদআপদ থেকে রক্ষা করবে” ।
এখানে বিবেচ্য যে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে, যাঁরা আহলে হক্ব, তাঁদের সবাইকে আ'লা হাদ্বরাত আলাইহির রাহমাহ ও তাঁর ঘরানা, মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত অনুসরণ করতে হবে।
কারণ, আ'লা হাদ্বরাত কোন ধর্মপ্রবর্তক নন। যে, তাঁর আগের সব মত বাতিল হয়ে যাবে। আহলে হক্ব এর মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র পর্যায়ের মত পার্থক্য রয়েছে। যেমন, হানাফি-শাফিয়ি-মালিকি-হাম্বলি-বুখারি। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এই সবগুলোকেই সঠিক পথ এর লেন হিসাবে বিবেচনা করে।
আর মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত তো মাযহাবও নয়, শুধু সময়ানুগ সংস্কার মাত্র। আবু দাঊদ শরীফে আছে, প্রতি শতাব্দিতে একজন করে সংস্কারক আসার কথা। সংস্কারক এসে তো একটু নতুন আলো ফেলবেনই, তার মানে এই না যে, ওই সময়ে কেউই আহলে হক্ব ছিলেন না।
এই সংস্কারকের সব সংস্কারকে সরাসরি মেনে নেয়াও বাধ্যতামূলক নয় কোন আহলে হক্বের জন্য। কারণ, সংস্কারকের সংস্কার মূলত ফাতওয়া ভিত্তিক। আর ফাতওয়ায় একই বিষয়ে আপাতঃ অনৈক্যের পাঁচটা মতও আসতে পারে।
আমরা যাঁদের আহলে হক্ব বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, তাঁদের অনেকেই কিন্তু মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের অনুসারী নন। কিন্তু তাই বলে আমরা তাদের ক্বাফির বলি না, বা'তিলও বলি না। বরং ওইসব বড় বড় স্কলারের, আউলিয়ার দেখা পেলে সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁদের হস্তচুম্বন করি।
তাই, আরেকভাবে দেখতে গেলে, কে আ'লা হাদ্বরাতের অনুসরণ করল, আর কে তাঁর দশ হাজার ফাতওয়া গ্রহণ করল, সেটা আমরা মোটেও বিবেচনা করি না।
বরং আমরা বিবেচনা করি, সেই পুরনো, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ, যার মধ্যে মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত সর্বশেষ মাসলাক, সেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্ এর বিপরীত কোন কথা কেউ বলছে কিনা। সেটার আমরা প্রতিবাদ করি।
এই প্রতিবাদের অংশ হিসাবে তাক্বফির করা হয়েছে দেওবন্দ, ওয়াহাবী, মওদুদী ঘরানার উপরে। এ তাক্বফির বিষয়টাও উঠে আসবে, কেন তাদের ক্বাফির বলা হল। যদি আপনার আগ্রহ থাকে।
এদের সবাই মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত। শুধু হারামাইন শরীফাইনে দেয়া সেই ইজাজা অনুসারে আমরা বলতে পারি, বর্তমানে কত সহস্র আ'লা হাদ্বরাতের অনুসারী আলিম যে আফ্রিকা-আরব-ইউরোপ এমনকি আমেরিকায় আছেন, আমরা তাঁদের খোঁজও রাখিনা।
এবার আসুন, অনুসারীর সংখ্যায়-
বাংলাদেশ
অন্তত চার কোটি সরাসরি মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত।
অন্তত আরো তিন কোটি সাঙ্ঘাতিকভাবে মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের সাথে ওঠাবসা, ঘনিষ্ঠতা, যারা আহলে হক্ব।
এমনকি, যাদের সাথে মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের কিছু মতপার্থক্য রয়েছে, সেই ঘরানার মুরিদ সংখ্যাও না হলেও আরো চার কোটি। মত পার্থক্যটাকে আমরা ইজতিহাদি পার্থক্য বলেই ধরি এবং আমরা তাঁদেরও আহলে হক্ব জানি। পারস্পরিক সম্মান রাখি। একসাথে দেখা হলে উচ্ছ্বসিত হই।
ভারত
অন্তত ছ-সাত কোটি মানুষ সরাসরি মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত। আর সমসংখ্যকের চেয়েও বেশি আছেন সুহৃদ।
সরাসরি খাজা গরীব নাওয়াজ রা.'র দরবার, হাদ্বরাত নিজামুদ্দিন আউলিয়ারা.'র দরবার, হাদ্বরাত মুজাদ্দিদে আলফি সানি রা.'র দরবার থেকে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক খিলাফত দেয়া হয়, তার আশিভাগই মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতেরওয়ালীয়ে ক্বামিলদের দেয়া হয়। উদাহরণ, আবদুল করিম সিরাজনগরীমাদ্দাজিল্লুহুল আলী।
পাকিস্তান
জনসংখ্যার অর্ধটা ধরে নিতে পারেন নিশ্চিন্তে।
আফগানিস্তান অনেক কম, কিন্তু একেবারে কম নয়।
ইরাক
ইরাকে এদের সংখ্যা এত বেশি, যে ভাবলে অবাক হবেন। ইরাকের দরবারে গাউসে পাক শাইয়ানলিল্লাহ, সাইয়্যিদি জিলানি রা.'র পবিত্র মাজারের খাদিম, তাঁরই বংশধর, তাঁরই তরিকার অনুসারীরা যত খিলাফত দেন সারা পৃথিবীতে, তার অন্তত ৮০% দেন মাসলাকে আ'লাহাদ্বরাতের অনুসারীদের।
আফ্রিকা
আল আজহার এর ছাত্র দেখুন, কমবেশি অর্ধেকই মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত।
দক্ষিণ আফ্রিকায় লক্ষ অনুসারী আছেন সাইয়্যিদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রা.'র।
সারা উত্তর আফ্রিকায় তরিক্বতপন্থী মানুষের সংখ্যা অকল্পনীয়ভাবে বেশি। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগই মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের বাইরে। কারণ, অনেক আগে থেকেই সেখানে স্ট্রং ইজাজা ও খিলাফত সিস্টেম ছিল। সিস্টেমে এমন কোন করাপশন আসেনি, যে মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতকে খড়গহস্ত হতে হবে।
আজকে লেবানন, সিরিয়া, আরব-আমিরাতে বিশাল সংখ্যক তরিক্বতপন্থী ও হক্বপন্থী। তাদের মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাত। এমনকি তুরষ্কের মত অধার্মিক, ইরানের মত শিয়া দেশেও গোপনে বা প্রকাশ্যে অনেক তরিক্বতপন্থী আছেন যারা আলা হযরতকে অনুসরণ করে থাকেন।
ইন্দো-মালের তরিকতী মুসলিমরা এত স্ট্রং যে, সেখানে মাসলাকে আ'লা হাদ্বরাতের প্রসারের প্রয়োজন নেই। তাদের পথে তারা থাকলে বিভ্রান্তি আসবেনা। আর আমরা ও তারা- এই বিভেদ আহলে হক্ব করে না।
©somewhere in net ltd.