নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তমনা, সকল রকমের সংস্কার মুক্ত, আমি ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধতা আমাকে কখনো গ্রাস করে নিতে পারেনি।আমি সুস্থ্য চিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমার শক্তি আমার আবেগ আবার সে আবেগ-ই আমার বিশেষ দুর্বলতা। নেহায়েত সখের বশে এক আধটু কাব্য চর্চা করি, এই আর কি। প্রিয় বিষয় সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, সংগীত, দর্শন, দেশ ভ্রমন আর গোয়েন্দা সিরিজের বই পড়া।ভীষণ ভোজন রসিক আমি। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে কিন্তু ঢাকা শহরেই লেখা পড়া আর বেড়ে উঠা। আমার জীবনের গল্প তাই আর দশ জনের মতো খুবই সাদামাটা।
জমজম পানি হয়েও অন্য সব পানি থেকে আলাদা, আমাদের আঁকা ﷺ মানুষ হয়েও অন্য সব মানুষ থেকে আলাদা।
জমজমের পানি কিন্তু পানিই। তবুও দুনিয়ার কোন পানি এর সমতুল্য নয়। যে বলবে এ পানি তো অন্য সব পানির মতোই। সে নিঃসন্দেহে অজ্ঞ। আল্লাহ্ পাকের এ বিশেষ নিয়ামত সম্পর্কে বেখেয়াল। আর সত্য বিমুখ। কোন মুসলমান কেন, সমস্ত অমুসলিম গবেষক এবং সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে একমত যে এ পানিতে এমন বিশেষ উপাদান রয়েছে যার ফলে জমজম পানি হয়েও অন্য সব পানি থেকে আলাদা।
দুনিয়ার সব পানি কিছুদিন একস্থানে রেখে দিলে ময়লা জমে, দুর্গন্ধ হয়, শেওলা পড়ে। কিন্তু এ পানি আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এবং মা হাজেরা আলাইহিস সালামের প্রতি এবং এরপর সমস্ত মানবজাতির প্রতি এমন এক বিশেষ নিয়ামত যে, তা যুগ যুগ ধরে একস্থানে রেখে দেবার পরও এর রঙ, গন্ধ এবং স্বাদে কোনই পরিবর্তন হয় না। সুবহানআল্লাহ্!
পানি হয়েও জমজম পানি যেমন অন্য সব পাই থেকে আলাদা, আমাদের আঁকা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ মানুষ হয়েও পৃথিবীর সমস্ত মানুষ থেকে আলাদা। আল্লাহু আকবার! তিনি মানবীয় সুরতে আবির্ভূত হয়েও অন্য কোন মানুষের মতো ছিলেন না। না দেখতে, না রুপে, না গায়ের গন্ধে। এ নিয়ে অজস্র হাদীস (সহীহ অবশ্যই!) দেয়া যায়। সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের আক্বীদা হলো, আমরা তাঁর মতো এমন কোন মানব আর দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহি আনহু থেকে গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটি আমরা সবাই জানি। আঁকা হযরত ﷺ এর গা থেকে এমন সুগন্ধ আসতো যা পৃথিবীর কোন সুগন্ধি এমনকি মেস্ক আম্বর থেকেও আসতো না। তিনি যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন সে রাস্তা তাঁর নূরানি দেহ মুবারকের সৌম্য সুগন্ধে ভরপুর হয়ে যেত। যে কেউ গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারতো যে এ রাস্তা দিয়ে তিনি হেঁটে গিয়েছেন। তাঁর নুরানি চেহারা মুবারকের আলোতে পবিত্র ক্বাবাঘর আলোকিত হয়ে যেতো। তিনি হাসি দিলে রাতের অন্ধকার দূর হয়ে এমন আলো বিচ্ছুরিত হতো যে সে বিচ্ছুরণে তাঁর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্রদ্বয় অন্ধকারে হেঁটে চলে যেতে পারতেন। তাঁর চেহারা মুবারক থেকে এমন নুরানি আভা বিচ্ছুরিত হতো যে সে আভাতে এশার পর অন্ধকারে মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহি আনহা তাঁর হারানো সুঁই খুঁজে পেতেন। মা আয়েশা একবার বলেছিলেন, দুনিয়ার সূর্য উঠে ভোরে আর সন্ধায় তা অস্ত যায়, আর আমার সূর্য উঠে সন্ধার পর এবং তা সমস্ত রজনী আলো দেয়।
হাসান বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী আমরা সবাই জানি। তিনি ১২০ বছর হায়াত পেয়েছিলেন। ৬০ বছর মুশরিক হিসেবে এবং ৬০ বছর সাহাবি হিসেবে। তিনি ছিলেন আরবের এক প্রখ্যাত কবি। তাঁর কাব্য প্রতিভা আর শব্দচয়ন এমন ছিল যে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন রাজা-বাদশাহের দরবারে কাব্য মজলিসে ডাক পেতেন। মদিনার মুশরিক আর ইহুদীরা পরিকল্পনা করে তাঁকে ঠিক করেছিলো আমাদের আঁকা ﷺ এর পথে দাঁড়িয়ে কবিতা দিয়ে তাঁকে আঘাত করার। সে সময়ে কাব্য চর্চার মাধ্যমে এক গোত্র অন্য গোত্রকে যে আঘাত দিতো তা ছিল তরবারির আঘাত থেকেও শানিত আর অপমানজনক। আরবের অনেক মুশরিক কবিই সাহাবা আর আঁকা ﷺ কে অপমানজনক শব্দবাণে আহত করেছিলেন। আর এ কারণে আমাদের নবী ﷺ হযরত সাবিত বিন হাসানকে মিম্বরে উঠিয়ে দিয়ে (ঈমান আনার পর) মুশরিকদের কাব্যাপমানের জবাব দেবার আদেশ দিয়েছিলেন। হযরত জিব্রাইল আঃ তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।
যে বিন সাবিতকে আল্লাহর নবীকে কাব্য ও ছন্দে অপমান করার জন্য কাফেরগণ ঠিক করেছিলো, সে হাসান বিন সাবিতই সেই মহামানব, মানবরূপী নূরে মুজাসসাম ﷺ এর নুরানি চেহারা মুবারক দেখে কেবল বিস্মিতই হননি। নিজের চোখ আর আর দৃষ্টি দগ্ধ হবার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর মুখ থেকে গালির বদলে বের হয়ে এলো সেই মানবরূপী বিশ্বরহমতের শান ও মানে সৌম্য ও সুবিবেচিত প্রশংসাবাণী। তিনি বলে গেয়ে উঠলেনঃ
"তাঁর নূরানি ঝলক যখন ফুলকে উঠে সমুজ্জ্বলে
ভয়ে আমি লুকিয়ে নিলাম চক্ষু আমার তালু তলে
শংকা হল দৃষ্টি আমার নিভিয়ে দেবে সেই সে জ্যোতিঃ
ভীত আমি অক্ষমতায় দৃষ্টি দিতে তাঁহার প্রতি।" সুবহান আল্লাহ! (এই অধমের কাব্যানুবাদ)
মিম্বরে দাঁড়িয়ে তিনি যে দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন তার একাংশ নিচে উদ্ধৃত করা হলঃ
"ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সমস্ত দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনার এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছানুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন, যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাযের জন্য “আসহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আযান দেয়। আল্লাহ তা’আলা আপন নামের অংশ দিয়ে আপনার নাম রেখেছেন- আপনাকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে। আরশের অধিপতির নাম হল ‘মাহমুদ’ এবং আপনার নাম হল ‘মুহাম্মদ’ (ﷺ)।" [দিওয়ানে হাসান]
কাজেই মুসলমান! আগে ঈমান ও আক্বীদা ঠিক করুণ। না হলে কুরআনের আয়াত "বলুন, আমি তোমাদের মতোই মানুষ!" পড়ে হেদায়ত প্রাপ্তির বদলে ঈমানহারা হয়ে কবরে যাবেন। তিনি আমাদের মতোই মানুষ এ আক্বীদা ছিল কাফের ও মুশরিকদের। কোন মুমিন এ ধারণা পোষণ করলে আর ঈমান থাকবে না। জমজম যেমন পানি হয়েও অন্য সব পানি থেকে আলাদা, তিনি মানুষ হয়েও অন্য সব মানুষ থেকে আলাদা। ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.