![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত প্রায় ৯টার কাছাকাছি বাজে। টিপু সুলতান রোড থেকে ধোলাইখালে ঢোকার রাস্তার দু'পাশে ১৮টা ল্যাম্পপোস্টের মাত্র একটা জ্বলছে। জীবনে একবার ছিনতাইয়ের ঘটনায় পড়েছিলাম, যা অবশ্য শান্তিনগরের আলোকিত ইস্টার্ন প্লাস মার্কটের সামনে। তবু ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখলেই মনটা একটু ধুকধুক করে উঠে।
রিক্সাওয়ালা কেমন জানি একটু বাঁ ঘেষা মানুষ, রাস্তায় একটু সমস্যা দেখলে আচমকা লেন বদলায় (আমার দেশের বাম রাজনীতির মতই)। কয়েকবার সতর্ক করার পরও সে এক ঠেলাগাড়ীর মত ধীরে চলা এক যানে প্রায় লাগিয়ে দিচ্ছিল। সারাদিন অফিস করে দিনশেষে বাড়ি ফেরার সময় কোনও ঝামেলা কখনই ভালো লাগবে না। তাছাড়া, আমরা রিক্সায় উঠলে শুধু প্যাসেনজ্ঞার না, রিক্সাওয়ালার সহযোগী হয়ে উঠি। আরেক রিক্সা যদি আমার (!!) রিক্সায় টোকাও দেয়, কিংবা ওভারটেক করতে গিয়ে আমার রিক্সাওয়ালা যদি জাম লাগিয়েও দেয় আমরা সাধারনত আমাদের রিক্সাওয়ালার পক্ষেই সাফাই গাই। গত কিছুদিন হলো এই বদঅভ্যাসটা বদলাতে পেরেছি। লাইন থেকে ছুটে যাওয়ার জন্য রিক্সাওয়ালা উদ্যত হলেই আমি চেষ্টা করি তাকে লাইনে নিয়ে আসতে।
ঐ রাতে রিক্সাওয়ালার এই অদ্ভুত বাম সমস্যায় আমি বেশ সতর্ক হয়ে রাস্তা চলছিলাম। মোড় থেকে গজ ৩০ দূরে থাকতেই দেখলাম একটা হলুদ কামিজ পরা এ্যট্রাকটিভ ফিগারের অধিকারিনী ট্রাকের গা ঘেষে একা একা হেটে চলছে। এই অন্ধকারেও বেশ ফুটে আছে ঐ হলুদ কাপড়। আমি যেখানে ভীত হয়ে পথ চলছি এই রিক্সায়, এই মেয়ে কি বিন্দাস হাটছে টেনশন ছাড়া। বলতে বলতেই দেখলাম ছয়টা ছেলে ট্রাকের সামনে থেকে একে একে বের হয়ে এদিকেই আসছে। মেয়েটা তখনও বেখেয়াল, মাথা একবার নিচে আর একবার একদম উপরে, ঐ অন্ধকারে এতটুূকুই বুঝতে পারলাম। ছেলেগুলো কাছে আসতেই আমার রিক্সাওয়ালার বামপন্থী মনোভাবের আরেকার উদয়।
সজোরে ধাক্কা। মেয়ের হাটুতেই সম্ভবত বারি খেল রিক্সার চাকা। আওয়াজটা শুনেই বুঝলাম, বেশ খারাপ কিছু। তাকিয়ে দেখলাম, মেয়ের মাথা বারি খেয়েছে ট্রাকের সাইডবোর্ডের লোহায়। হাত থেকে মোবাইলটাও পড়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো এক্ষনি মার খাবে আমার রিক্সাওয়ালা। রিক্সাওয়ালাও কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে। মেয়েটাকে সাহায্য করবে নাকি জোরে টান দিয়ে পালাবে, সে-ও বোধহয় বুঝে উঠতে পারে নাই।
প্রথমেই একটা গালি ছুটে আসল, মেয়ের মুখ থেকে না, সামনের দিকে এগিয়ে আসতে ছেলেগুলোর কাছ থেকে। একের পর এক। স্ট্যাম্প হাতে একজন তো প্রায় কাছাকাছি চলেই আসল।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিল ঐ মেয়ে। বাঁ হাতে ফোন ধরে ডান হাতে পায়ের ব্যাথার জায়গায় হাত বুলাচ্ছে, আবার ডান হাতে ফোন ধরে বাঁ হাতে মাথায় হাত বুলাচ্ছে। কিন্তু তবুও মুখে একগাল হাসি আর অন্যমনস্কতা। ঐ মুহূর্তে কারোই বুঝতে বাকি থাকল না, মেয়ে এখন ভালোবাসার আলফা লেভেলে। ছেলেগুলোও লজ্জায় হেসে দিল, একজন আরেকজনকে বলল, "যার জন্য গালি দিলি, তার তো দুনিয়ার খবরই নাই"। আমার রিক্সাও মোরে উঠল, মেয়েটা ট্রাকটা ক্রস করেই বামের গেটে ঢুকে গেল। ছেলেগুলোও তাদের পথে।
০৩ রা মে, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
নাওেয়দ বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মে, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
রুপম হাছান বলেছেন: ভালোবাসলে যে ক্ষমা করা যায়, এটা হয়তো সেরকম কিছু হবে বৈকি! হা হা হা। চরম ভালো লেগেছে লিখাটি। লাইকস।