![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের জীবনে ধর্মীয় ও সামাজিক সব দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ইসলামে বিয়েকে বলা হয়েছে ঈমানের অর্ধেক। অর্থাাৎ বিয়ের মাধ্যমেই ঈমানের পূর্ণতা পায়। সেটি পুরুষ হোক বা নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। এ কথার আরও প্রমাণ পাওয়া যায় রাসুল (স.) জীবনী থেকে। কারণ তিনি আল্লাহর হুকুমে নিজে ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন এবং তার বিয়ের পরই আল্লাহ তাকে নব্যুয়্যাত দান করেছেন। বিয়ের আগে আল্লাহ তাকে নব্যুয়াত দেননি।
তাছাড়া বিয়ে মানব জীবনের অন্যতম চাহিদাও বটে। এ কারণে নারী-পুরুষ যখন বিয়ের উপযুক্ত হয় তখন তাদের জন্য বিয়েকে ফরজ করেছে ইসলাম। বিয়ে যে কেবল শারীরিক চাহিদা বা ঈমাণ পূর্ণ করে তাই নয়, নারী-পুরুষের ব্যক্তিত্বেরও বিকাশ ঘটায়। বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সব কিছুর প্রতি একটি দায়ীত্বশীল মনোভাব তৈরি যায় অর্থাৎ সমাজে গ্রহযোগ্যতা বাড়ে। বিয়ে দেরিতে হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে বাস্তববাদিতা, দায়িত্বশীলতা ও পরিপক্কতারও মারাত্মক অভাব পরিলক্ষিত হয়। রেস্পন্সিবিলিটি একটি ছেলেকে যেমন সত্যিকার ‘পুরুষ’ হিসেবে তৈরি করে তেমনি একটি মেয়েকেও সত্যিকার মেয়ে হিসেবে তৈরি করে। তার চিন্তা-চেতনায় ও আচার আচরণেও তা ফুটে ওঠে। কথায়ও বলে, A man is not MAN until he takes the responsibilities of others.
এজন্য সময়মতো বিয়ে করাকে ইসলাম অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আর যেসব নারী-পুরুষ বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার পরও তা করেন না তাদেরকে ইসলামে শয়তানের দলভূক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সম্পর্কিত একটি হাদিস যেটি হজরত আবু জর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আক্কাফ (রা.) কে বললেন, হে আক্কাফ! তোমার কি স্ত্রী আছে? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার কি সম্পদ ও স্বচ্ছলতা আছে? সে বললো, আমার সম্পদ ও স্বচ্ছলতা আছে। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি এখনও শয়তানের ভাইদের দলভূক্ত। যদি তুমি খ্রিস্টান হতে তবে তাদের রাহেব (ধর্ম গুরু) হতে। নিঃসন্দেহে বিয়ে করা ইসলামের রীতি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি যে (উপযুক্ত হওয়ার পরও) অবিবাহিত। তোমরা কি শয়তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাও। শয়তানের কাছে নারী হলো অস্ত্র। সবাই নারী সংক্রান্ত ফেৎনায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা বিয়ে করেছে তারা নারীর ফেৎনা থেকে পবিত্র। তারপর বললেন, আক্কাফ! তোমার ধ্বংস হোক। তুমি বিয়ে করো নতুবা তুমি পশ্চাৎপদ মানুষের মধ্যে থেকে যাবে। (মুসনাদে আহমদ, জমউল ফাওয়ায়েদ, ইমদাদুল ফাতওয়া খ- ২, পৃষ্ঠা ২৫৯।)
এ হাদিস অনুাযায়ী অবিবাহিত স্বাবলম্বী পুরুষকে পশ্চাৎপদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে আমাদের সমাজে এমনটাই দেখা যায়। স্বাবলম্বী পুরুষরাও অনেক সময় সঠিক সময়ে বিয়ে না করার কারণে যৌবনের ক্যু তাড়নায় লিপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে। যদিও তারা স্বাবলম্বী হওয়া বলতে অনেক সময় অঢেল টাকা পয়সা, বিশাল ক্যারিয়ারিস্ট হওয়াকে বুঝায়। ফলে রিজিকের চিন্তা সম্পূর্ণ নিজেদের উপর চাপিয়ে নিয়ে অনাকাঙ্খিতভাবে শিরক করার মতো গোনাহ করে ফেলছে। সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে। যে সমাজের চারদিকে ব্যাভিচারের নানা উপকরণ ছড়িয়ে রয়েছে হাতের নাগালই সে সমাজে যুবসমাজ ব্যভিচার বা বিবাহ বহির্ভূত পাপাচালে লিপ্ত হবে এটিতো স্বাভাবিক ব্যাপার। ফলে তারা নিকৃষ্ট সব কাজে জড়িয়ে পড়তেও দ্বিধা করছে না। তাছাড়া যে সমাজে বিয়েকে কঠিন করা হয় সেখানে ব্যাভিচার বা অবৈধ যৌনাচার বেড়ে যাবে এটিই খুবই স্বাভাবিক।
এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, অভিভাবকমহল সকলেই সমান ভাবে দায়ী। আমাদের সমাজে অধিকাংশ পিতা-মাতা তাদের ছেলে-মেয়েদের প্রাপ্ত বয়স হলেও বিয়ে দিতে ভিষণভাবে অনাগ্রহী। এর প্রধান কারণ আল্লাহর উপর আস্থাহীন তথাকথিত পুঁজিবাদি ও ভোগবাদি ধ্যানধারণা। ফলে তরুণ ছেলে-মেয়েদের স্ট্যাব্লিশমেন্টের নামে বসে বসে বুড়ো হয়ে জীবনী শক্তি হারাতে হচ্ছে। তাছাড়া সমাজের বেশিরভাগ পরিবারগুলোর প্রতিটি মা-বাবাই কম বেশি জানেন যে তাদের ছেলে-মেয়েরা বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক অর্থাৎ প্রেম করছে। এমনকি অনেক ছেলে-মেয়ে যারা বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড এর সম্পর্ক থেকে আর একটু এগিয়ে বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেও দ্বিধাবোধ করছে না।
অথচ এত সব কিছু জানার পরও বাবা-মায়েরা কিছুটা লোক দেখানো কনসার্ন বা উদ্বিগ্ন হলেও বাস্তবে এই সিস্টেমের কাছেই মাথা পেতে নিচ্ছেন। অথচ এর টেকসই কোনো সমাধান কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি চেষ্টাও করছেন না।
অনেক অভিভাবক রয়েছে যাদের পরিবারের সামর্থ আছে ছেলের ভরোণ-পোষনের পাশাপাশি উপযুক্ত বয়সে বা ছেলেদের মধ্যে বিয়ের প্রয়োজন আছে এমনটি অনুভুত হলে তাকে বিয়ে দিয়ে আর একটি মেয়ের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নেবার। অথচ তা না করে ছেলেটির বিয়ের প্রয়োজনকে অস্বীকার করে তাকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ব্যাভিচার বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের দিকে। এ ক্ষেত্রে অজুহাত দেয়া হচ্ছে ছেলে এখোনো বেকার; এখোনো স্ট্যাব্লিশ হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি।
একইভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই ভাবনা। মেয়ের বয়স এখন মাত্র ২১ কি ২২। এখনতো সে অনেক ছোটো..!! তাছাড়া অন্তত্ অনার্স-মাস্টার্সটা কমপ্লিট না হলে কি চলে..?? স্ট্যাটাস বলে কথা..!! এমনটি যারা ভাবেন, তদের উদ্দেশে বলবো আপনি যাদের ছোটো ভাবছেন, আপনি কি জনেন? এই বয়সে আপনার ছেলে বা মেয়ে কতোটি প্রেম করেছে? বা এই মূহুর্তে কততম প্রেম করছে? কতজনকে সে বউ বা হ্যাজবেন্ট ভেবে স্বপ্নে বিভোর থেকে রাতে কাটিয়েছে? যারা এই বয়েস ৪-৫ প্রেম করতে পারে তারা বিয়ে করতে পারবে না বা এখনো ম্যাচিউরড হয় নি, এমন চিন্তা আপনাদের মাথায় আসে কিভাবে? তাছাড়া বিয়ে করলে পড়ালেখা হবে না বা ব্যাঘাত ঘটবে এমটি যারা ভাবেন তাদেরকেও বলি, তাই যদি হয় তাহলে ছেলে-মেয়েরা এতোগুলো প্রেম করে কিভাবে পড়ালেখা করছে? বরং এতেতো তাদের মানষিক চাপ আরও বেশি থাকে। কারণ সব সময় তাদের এই চিন্তা করতে হয়, কেউ দেখলো কি না; এই বুঝি ধরা খেয়ে গেলাম, জানতে পারলে আব্বু আম্মুর বকুনি; সমাজের কে কি ভাবে? এমন নানান টেনশন তাদের সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। তাছাড়া দিন-রাত ফোন কথা বলে সময় নষ্ট; দুজনের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটিতো লেগেই থাকে। এর পাশাপাশি রয়েছে পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি জনিত দ্বন্দ। অনাকাঙ্খিত মান-অভিমান; ভুল-বোঝাবুঝি ও তার পর একসময় ব্রেকআপ। খুব কম সংখ্যকেরই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়। ফলে যা হচ্ছে তা হলো: নারী-পুরুষ পরস্পরের মাঝে একটি বিশ্বাসহীন, সম্মানহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রজন্ম গড়ে উঠছে; বেড়ে যাচ্ছে অনাচার(ব্যাভিচার)। ধীরে ধীরে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিয়ের প্রতি একটি অনিহা তৈরি হচ্ছে। অথচ বিয়ের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হলেও মানবিক চাহিদাতো আর কমে যায় না। ফলে আশ্চর্য হলেও সত্য লিভটুগেদারকেই নিরাপদ পন্থা হিসেবে বেছে নিচ্ছে অনেকেই।
অথচ আমাদের রাষ্ট্রীয় যে সিস্টেম তাতে একটি ছেলে বা মেয়েকে অনার্স-মাস্টার্স, পিএসডি ইত্যাদি শেষ করে তথাকথিত স্ট্যাব্লিশ হতে গেলে তার বয়স হবে কম হলেও ৩২-৩৫। অর্থাৎ তার জীবনি শক্তি প্রায় শেষের দিকে। জীবণের সবচেয়ে উপভোগ্য সময়, সব চেয়ে এনার্জিটিক সময় তাকে ব্যায় করতে হয়েছে নানা ক্যুচিন্তার দোলাচলে। তৈরি হচ্ছে মনস্তাত্বিক বৈকল্য। ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে তারুন্য। খুব কম সংখ্যকই পারছে এই আধুনিক জাহিলিয়াতের মোকাবেলায় নিজেকে পবিত্র রাখতে। কারণ যে সমাজে নাটক-ছিনেমা, গল্প-উপন্যাসে, রেডিও-টিভি-বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনে সারাক্ষণ মানুষকে যৌন উত্তেজনামূলক সুড়সুড়ি দেওয়া হয়। যে সমাজে পর্ণছবি বাজারের আলু-পটলের মতো বিক্রি হয়; যে সমাজে ইন্টারনেটের বদৌলতে পর্ণগ্রাফীকে মাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমে সহজলভ্য করে দেওয়া হয়। অপরদিকে সহজাত চাহিদা পুরণের বৈধ সব পথ বন্দ করে দেওয়া হয়, সেখানে পরিস্থিতি কেমন রুপ ধারণ করতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা এখনও টের পাননি, একটু অপেক্ষা করুন। আমাকে আর বুঝিয়ে দিতে হবে না। আপনিই টের পাবেন হাড়ে হাড়ে। আপনার কলিজার টুকরা কন্যা, প্রাণপ্রিয় ছেলেই আপনাকে প্র্যাকটিক্যালি দেখিয়ে দেবে। দিন দিন বাড়ছে বিকৃত যৌনাচার। পর্ন আসক্তির কারণে বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষের স্বভাবিক সৃজণশীল চিন্তা। গড়ে উঠছে একটি প্যারালাইস্ট প্রজন্ম। অথচ যথা সময়ে বিয়েই রুখতে পারে ভয়ঙ্কর অবস্থার।
তবে আমি বলছি না যে আমি স্ট্যাব্লিসমেন্টের বিপক্ষে। আমি বলতে চাইছি সত্যকে অস্বিকার করার কারনে সেটি যেন আমাদের জীবনকে মহা সংকটে ফেলে না দেয়। জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম ও শৃঙ্খলাগুলো ভেঙ্গে না পড়ে।
যদি তরুণদের নৈতিক দিক নিয়ে কখনোই তাদের চিন্তা করা লাগতো তবে তরুন বয়সের এই উদ্দামতাকে কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো সহজেই করা সম্ভব হতো। এসময় তারা প্রশিক্ষণ এবং উচ্চতর গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারতো। অথচ অধিকাংশ যুবক-যুবতী এবয়সে ব্যস্ত থাকে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। পশ্চিমা বিশ্ব আজ যে এত বেশি এগিয়ে তার অন্যতম একটি কারণ তারা যুবক-যুবতীদের যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমাদের মত মুসলিম সমাজে যৌন স্বাধীনতা নয় যৌন অধিকারে বিশ্বাসী হতে হবে এবং এই অধিকারকে আরও বেশি সহজ করতে হবে। কারণ বিয়ে মানে যদি একটি আতঙ্ক আর বিভিষিকার নাম হয় তাহলেতো ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করতে ভয় পাবেই। আর তখনই বেড়ে যাবে অনাচার-ব্যাভিচার। তাছাড়া বাধ দিয়ে যেমন পানির স্বাভাবিক স্রোতকে আটকানো যায় না তেমনি বিয়ে সম্পর্কে ভীতি আর আতঙ্ক ছড়িয়ে মানবিক চাহিদাতো আর কমে যায় না। পতিদিন শোনা যাচ্ছে ভয়বহ সব ঘটনা। ডাস্টবিন থেকে নবজাতক উদ্ধার। এক দড়িতে ঝুলে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা। সব খবর পত্রিকার পাতায় স্থান না পেলেও আমরা আমাদের চারপাশের এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। নিজ পরিবার, আত্মিয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী আপনি নিজেই যা আমাকে এর উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না।
ইসলামে ব্যক্তির স্বাবলম্বী ও সক্ষমতার বিভিন্ন ধরণসাপেক্ষে বিয়েকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সক্ষম পুরুষ-নারীকে বিষয়টি গুরুত্বসহ মনে রাখা উচিত।
ওয়াজিব বিয়ে : যখন শারীরিক চাহিদা থাকে। তার এই পরিমাণ সামর্থ থাকে যে প্রতিদিনের খরচ প্রতিদিন উপার্জন করে খেতে পারে বা তার পরিবারের এতোটুকু সামার্থ থকে যে তাদের ভরোণ-পোষনে কোনো সমস্য থাকবে না। তখন বিয়ে করা ওয়াজিব। এ অবস্থায় বিয়ে থেকে বিরত থাকলে গুণাহগার হতে হবে।
অর্থাৎ বলা হচ্ছে না যে, বিয়ে করতে গেলেই তাকে লাখ লাখ টাকার বান্ডেল নিয়ে নামতে হবে; কথিত ওয়ালিমার নাম করে গরু-খাশি মেরে এলাকার সমস্ত লোক ডেকে খাওয়াতে হবে এবং স্বামর্থ থাকুক আর নাই থাকুক লক্ষ লক্ষ টাকার নিচে মোহোরানা না হলে চলবে না।
ফরজ বিয়ে : নূন্যতম সামর্থ থাকার সাথে সাথে যদি শারীরিক চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে ব্যাভিচার বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখন বিয়ে করা ফরজ। ব্যাভিচারের আওতায় যেগুলো পড়ে তা হলো- কুদৃষ্টি, পর্নগ্রাফী আসক্ততা, অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক বা লিভটুগেদার, হস্তমৈথুনের মতো হারাম কাজ ইত্যাদি।
নিষিদ্ধ বিয়ে : যদি কারো আশঙ্কা হয় সে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না। চাই তা দৈহিক হোক বা আর্থিক হোক। তার জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ।
কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয় যে কোনো পুরুষ এতটাই অসামার্থ যে সে একেবারে নিস্বম্বল, অক্ষম। নিজের মাথা গোজারমতো এতটুকু ঠাই নেই তবে এক্ষত্রে তাকে রোজা রাখতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিয়ের ইচ্ছে থাকলেও সক্ষম পুরুষ বিয়ে না করে রোজা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাদিসে। কারণ রোজা দৈহিক কাম উত্তেজনা দূর করে। তবে এ সময় সক্ষমতা অর্জনের জন্য বেশি বেশি কাজ ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
অনেক সক্ষম ও স্বাবলম্বী পুরুষও মনে করেন, বিয়ে করলে স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে পারবে না। সামান্য আয়ে দুজনের সাংসারিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। এ জন্য বিয়ে থেকে দূরে থাকে। এটা আদৌ উচিত নয়। কারণ মুমিনদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﺃَﻧْﻜِﺤُﻮﺍ ﺍﻟْﺄَﻳَﺎﻣَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻛُﻢْ ﻭَﺇِﻣَﺎﺋِﻜُﻢْ
ﺇِﻥْ ﻳَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﻓُﻘَﺮَﺍﺀَ ﻳُﻐْﻨِﻬِﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻪِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﺳِﻊٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ
( 32
অর্থাৎ,তোমাদের মধ্যকার যারা বিবাহবিহীন আছে এবং দাস দাসীদের মধ্যে যারা নেককার তাদের বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তারা অভাবগ্রস্থ থাকে আমি (আল্লাহ্) নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দেব। আর আল্লাহ্ তায়ালা প্রাচুর্যময় ও সবকিছু জানেন।(সুরা নূরঃ ৩২)
রুজির চিন্তা করে যারা বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَٰلِغُ أَمۡرِهِۦۚ قَدۡ جَعَلَ ٱللَّهُ لِكُلِّ شَيۡءٖ قَدۡرٗا ٣ ﴾ [الطلاق : ٢، ٣]
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য সংকট উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ভরসা করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’ {সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩}
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [نوح: ١٠، ١٢]
‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। {সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২}
সুতরাং আমরা কেনো আল্লাহর এতসব অনুগ্রহ পেয়েও তা লুফে নেবো না..??
এ দিকে রাসূল (সা.) বলেছেন, বিবাহিত ব্যক্তিকে আল্লাহ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। আর এ কথাও স্বীকৃত, বিয়ে ব্যক্তির উপার্যন বাড়িয়ে দেয়, কমায় না।
রাসূল সা. বলেছেন, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য, এক. আযাদী চুক্তিবদ্ধ গোলাম অর্থাৎ যে তার রক্তমূল্য আদায় করতে চায়, দুই. পবিত্রতার মানসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি, তিন. আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী।
এ ব্যাপারে রাসুল (সঃ) এর অপর একটি হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ».
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১]
সুতরাং একজন সামর্থবান পুরুষ ও নারীকে অবশ্যই যথা সময়ে বিয়ে করা উচিত। কোনো অজুহাতে এ থেকে বিরত থাকলে দুনিয়ার নানা রকম ফেৎনা ও ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে হবে।
আর যারা ইসলামি আন্দলোন করছেন বা রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রত উদ্দেশ্যে বলবো আগে নিজেদের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করুন; নইলে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলেও আপনার ঐ ইসলাম আপনার জীবনে কোনো কাজে আসবে না।
কারণ আমার দীর্ঘ দিনের পর্যবেক্ষণে এটি দেখেছি ইসলামপন্থী ছেলে-মেয়েরা বিয়ের ব্যাপারে বিভষণ রকম পুঁজিবাদি ও ভোগবাদি মনোভাব পষোণ করে যা বিয়ে সম্পর্কে আল্লাহর দেওয়া ওয়াদার সাথে সম্পূর্ণ বিরোধী। এক্ষেত্রে ইসলামপন্থী মেয়েরা এবং তাদের অভিভাবকেরা আরও বেশি পুঁজিবাদি, ভোগবাদি এবং লোভী।
Co-Admin: Campaign for Timely Marriage
https://www.facebook.com/groups/marriage.early
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯
সফেদ ক্যানভাস বলেছেন: আপনার প্রশ্নে জন্য অত্যন্ত ধন্যবাদ। তাওয়াক্কুল শব্দের অর্থ হলো নির্ভর করা আর ।يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ অর্থ শুধুমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করা....।
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল বিষয়ে লিখেছেন। কিন্তু আমাদের পূজিবাদী আর ভোগবাদী সমাজতো উল্টোটাই চাই!!
সম্প্রতি দেখলাম কোন এক সিরিয়ালে ডায়লগ দিচ্ছে-
ওযাইফ বননে ছে পেহেল
আপনা লাইফ বানানা চাহতিতো এইরটাইপ!!!
মানে কারো ওয়াইফ হবার আগে সে নিজের লাইফ বানাতে চায়!
.....
একজন সামর্থবান পুরুষকে অবশ্যই যথা সময়ে বিয়ে করা উচিত। কোনো অজুহাতে এ থেকে বিরত থাকলে দুনিয়ার নানা রকম ফেৎনা ও ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে হবে। আর যারা ইসলামি আন্দলোন করছেন বা রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রত উদ্দেশ্যে বলবো আগে নিজেদের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করুন; নইলে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলেও আপনার ঐ ইসলাম আপনার জীবনে কোনো কাজে আসবে না। আপনার সারাংশে সহমত।
৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১৫
সফেদ ক্যানভাস বলেছেন: বিদ্রোহী ভৃগু, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আসলে ইসলাম পন্থীদের এরুপ মনভাবের বিষয়ে আমাদের সকলকে প্রতিবাদি ভঙ্গিতে এগিয়ে আসা উচিৎ......
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮
প্রতিবাদী আর যুক্তিবাদি বলেছেন: তাওয়াক্কুল শব্দের মানে কী?