নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোহান কুয়াশা

সোহান কুয়াশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়

২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৪৬


মাহির, এই মাহির দরজা খোল।
এই দুপুর বেলায় ঘুমোস নাকি?
আজ না তোর H.S.C রেজাল্ট দেওয়ার কথা। খোঁজ নিয়ে জানা কেমন হল তোর রেজাল্ট।
কি হল,আমার কথা শুনতে পারছিস না?
-কি হইছে মা এতো চেঁচামেচি করছো কেন?
-দেখতো তোর ভাইয়াকে সেই কখন থেকে ডাকতেছি কিন্তু দরজা খুলতেছে না।
-কি বলো! এই দুপুর বেলায় ভাইয়াতো কখনও দরজা বন্ধ করে এতোক্ষণ থাকার কথা না।
-তোর বাবাকে একটু ডাকতো।

-বাবা, মাহির ভাইয়া তার রুমের দরজা খুলছে না।
-ভালো করে ডাক দে, খুলবে।
-মা সেই অনেকক্ষণ যাবত ডাকতেছে, ভাইয়ার কোন সাড়াশব্দ নেই,এর আগে কখনও তো এমন হয়নি।
-বলিস কি! চলতো দেখি।

সবাই মিলে অনেক ডাকাডাকি করার পর যখন মাহিরের কোন রকমেই সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, তখন সিদ্ধান্ত হল দরজা ভাঙ্গার।
দরজা ভেঙ্গে ফেলার পর সামনের দৃশ্য দেখে মা একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। ফ্যানের পাখার সাথে ঝুলছে তার আদরের ছেলেটা। বাবার চোখ নিমিষেই যেন আবছা হয়ে গেল। ছোট বোনটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো,তার চোখের সামনে ঝুলে থাকা লাশটা তার ভাইয়ার এটা সে কোনভাবেই মানতে পারছে না।

মাহিরের লাশ বাহিরের ঘরে আনা হয়েছে। আত্মহত্যার খবর পেয়ে সবাই দেখতে আসছে। পুরো বাড়ি কান্না আর প্রলাপে ভরে কেমন যেন শোকের ছায়ায় আটকে গেছে।

ক্লাসের সব থেকে বেশি নাম্বার পাওয়া বন্ধুটার চোখের এককোণে পানি জমে গেছে। ছোট বেলার প্রিয় বন্ধুকে এইভাবে হারানোর কষ্টটা কাউকে সে বুঝাতে পারছে না।

পাশের বাসার যে আন্টি বিগত সব পরীক্ষার রেজাল্টের পর মাহিরের মায়ের কাছে মাহিরের রেজাল্ট জানতে চাইতো আর তার নিজের ছেলের সাথে তুলনা করে বলতো, "আমার ছেলের রেজাল্ট মাহিরের থেকে তো অনেক ভালো। বুঝলেন ভাবী, মাহিরকে পড়ালেখা একটু ভালো করে করতে বলুন।"
পাশের বাসার সেই আন্টিও আজ এসে চুপ হয়ে আছে। তাকে আজ আর বলতে শুনা যাচ্ছে না,"ভাবী আপনার ছেলের রেজাল্ট কি?"

মাহিরের মাথার পাশে মা বসে থেকে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অঝরে চোখের পানি ফেলছে আর বলছে, "মাহির,তুই আমাদের ছেড়ে এভাবে কেন চলে গেলি বাবা? আমার কথা,তোর বাবার কথা একটা বারও ভাবলিনা।
জানিস, তুই যখন আমার পেটে ছিল তখন গভীর রাতে আমার পেটে লাথি দিতি,আমি তখন ব্যথায় ঘুমাতে পারতাম না। আমার হাঁটাচলা করতে অনেক কষ্ট হতো। এতো কষ্টের পরেও এটা ভেবে সুখ পেতাম যে, আমার মধ্যে আরেকটা জীবন বড় হচ্ছে, আমার নিজের রক্ত-মাংসে গড়া নতুন এক জীবন।
তুই যেদিন জন্ম নিলি সেইদিনের কষ্টের মুহুর্ত আজও মনে পড়লে শরীরে কাঁটা দেয়। ঐদিন এতো কষ্টের পরেও যখন প্রথম তোর মুখ দেখলাম তখন সব কষ্ট যেন নিমিষেই ভুলে গেলাম।
তোর যখন অসুখ হতো,রাত জেগে তোর পাশে বসে তোর সেবা করতাম,আর তোর বাবা ব্যস্ত হয়ে পড়তো কি করলে তোর অসুখ ভালো হবে। আমাকে তোর বাবা সবসময় বলতো দেখো আমাদের ছেলেটার যেন কোন কষ্ট না হয়, আমার সাধ্যমত ওর চাহিদা পূরণ করবো।
আজ তুই আমাদের ছেড়ে এইভাবে কেন চলে গেলি বাবা!"

ছোট বোনটা বাবার পাশে বসে আছে। এইটুকু বয়সে প্রিয় ভাইয়াকে হারানোর কষ্ট সে সহ্য করতে পারছেনা।
বাবা তাকে হয়তো শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যেখানে বাবারই কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে সেখানে কোন শক্তি দিয়ে মা,মেয়েকে সে শান্ত করবে।

দরজার কড়ানাড়া শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো মাহিরের। চারপাশ ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো আসলে এতোক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিল। দরজার খুলে মায়ের মুখটি দেখেই মা কে জরিয়ে ধরে বললো,"তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা"
-মা বললো,"ঘুম থেকে উঠে কি হল তোর"
-কিছুনা মা,এমনি। আমি একটু বারান্দায় গেলাম।

মাহির আশেপাশের সবকিছু ভালো করে তাকিয়ে দেখছে, পৃথিবী কতো সুন্দর। এতো সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে এইভাবে চলে যাওয়ার কোন মানে হয়না।
আজ মাহিরের সত্যিই H.S.C রেজাল্ট দিবে। মাহির ঠিক করেছে রেজাল্ট যেমনি হোক,সে কখনই আত্মহত্যার মত এমন জঘন্য কাজের চিন্তাও করবে না। কারন আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান হতে পারেনা,
আত্মহত্যা প্রিয় মানুষদের বাকি জীবন কষ্টে ভাসিয়ে দেয়।

© [ লেখাঃ Sohan Kuasha ]
১৯-জুলাই-২০১৮

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৩

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:১৬

সোহান কুয়াশা বলেছেন: গল্পটার শেষ অংশে আছে বড় আকর্ষণ, তাই শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখবেন।
আশা করি ভালো লাগবে...

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৯

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: খুব ভয় করছে।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:০৮

সোহান কুয়াশা বলেছেন: কেন ভয় করছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.