নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওয়াচে থাকা ব্লগার। অন্যের অনেক ভার পোস্ট পড়েও মন্তব্য করতে পারছি না। এমনকি আমার লেখাও প্রথম পাতায় প্রকাশ হচ্ছে না। প্রথম পাতায় সুযোগ পেতে হলে ভাল লেখা দিতে হবে। অনেক কস্ট করে এই পোস্ট দিলাম। যদি সাড়া না পাই কিংবা প্রথম পাতায় ঠাই না হয় তাহলে চরম হতাশ হব। আর ভাল লেখার মান জানতে হবে আমাকে।
রেড ইন্ডিয়ান বলে আমরা যাদের চিনি তাদের নেটিভ আমেরিকান বলাই শ্রেয়। ইওরোপিয়দের দখলদারির পূর্বে নেটিভ আমেরিকানদের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে বসবাস করত। তাদের বেশিরভাগ জাতিগোষ্ঠী এখন প্রায় বিলুপ্ত এবং ইতিহাসের আড়ালে চলে গেলেও দুটি শক্তিশালী ও মেধাবী জাতি তাদের শৌর্য বীর্যের কথা আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়। তারা হল প্রাচীন ইনকা ও মায়া সভ্যতার রূপকার।
তো কোথায় ছিল ইনকাদের রাজ্য?
পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। এরপর আন্দেজ পর্বতমালার পুবমুখি বিস্তার। পেরু নামে একটি দেশ। এই পেরুর পুবেই কুজকো নগর। এসবই আন্দেজ পর্বতমালার মধ্যে। যে আন্দেজ পর্বতমালাটির বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে ২,৫০০ মাইল!
সেই কুজকো নগর ঘিরেই সূত্রপাত হয়েছিল কুজকো রাজ্যের (কিংডম অভ কুজকো) যা পরে হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম পরাক্রমশালী ইনকা সাম্রাজ্য। ইনকা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিল পেরু, বলিভিয়া, উত্তর আর্জেন্টিনা, চিলি ও ইকিউডোরে।
কি ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করত ইনকারা?
ইনকা ট্রেইল
এত বিশাল সাম্রাজ্য সড়ক পথে যোগাযোগ রক্ষা করত ইনকারা। এই উদ্দেশ্যে ইনকারা নির্মান করেছিল বিস্ময়কর সড়ক; যাকে বলে, ‘ইনকা ট্রেইল’। কৃৎকৌশলের দিক থেকে যা ছিল সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর।
মনোরম উপত্যকা ও দুর্গম গিরির ভিতর দিয়ে চলে গেছে ইনকা ট্রেইল। আজও ধ্বংসাবশেষ দেখে চেনা যায়। মূল ২টি পথ ছিল- উত্তর-দক্ষিণে .. কোনও কোনও পথ ১৬০০০ ফুট উপরে। ৪০, ০০০ কিলোমিটার।
সামরিক ও বেসামরিক উভয়শ্রেনির লোকই চলাচল করত। আর চলত লামা ক্যারাভান। সাধারণ লোকের সে পথে চলতে হলে ইনকা সম্রাটের অনুমতি লাগত। পথের মাঝে ছিল সেতু। সেতুতে টোলব্যবস্থা ছিল । ইনকা সাম্রাজ্য নেটিভ আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সাম্রাজ্য ছিল। মায়া জাতি অপেক্ষাকৃত ছোট্ট পরিসরে বসবাস করলেও তাদের গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক প্রভাব তাদেরকে তখনকার সবচেয়ে উঁচুদরের জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের আজও স্মরণ করিয়ে দেয়। মায়াদের সংস্কৃতি এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে তারা প্রাচীন মিশরীয়দের মত পিরামিড ও দেবমুর্তি নির্মাণ করতে জানত, তারা হায়ারোগ্লিফিকস লিখন পদ্ধতি গণিত ও জোত্যির্বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিল। মায়া জাতির ঐতিহ্য প্রায় দু'হাজার বছরের ঐতিহ্য।
ইনকা শাসকরা ছিলেন অভিজাত রাজকীয় বংশের। সম্রাটকে বলা হত ইনকা। পরে অবশ্য সভ্যতার নামই হয়ে যায় ইনকা। সম্রাটের অন্য নাম সাপা ইনকা। সাম্রাজ্য পরিচালনতা করত রাজকীয় পরামর্শসভা। পুরোহিত প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সেনাপতির সমন্বয়েই গড়ে উঠত রাজকীয় পরামর্শসভা। এরা সর্ম্পকে আত্মীয়। সম্রাটগন বিয়ে করতেন আপন বোনকে। পুত্রগনের মধ্যে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করতেন। সাধারণত বড় ছেলেই সম্রাট হত। ইনকা অভিজাতদেরও কাউন্সিল ছিল। তারা সাম্রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করত। সমস্যা হলে সম্রাট প্রধান পুরোহিত এর যিনি সাধারনত সম্রাটের আত্বীয় ছিলেন। এই চাচা কি ...অন্যকেউ ...যুদ্ধ পরিকল্পনায় সেনাপতিরা। সেনাপতিও বন্ধু কি আত্মীয়ই হত সম্রাটের । ইনকা যোদ্ধারা অন্য নগর আক্রমন করে জয় করলেও স্থানীয় শাসনকর্তাকে হত্যা করত না যদি সে শাসনকর্তা ইনকা আইন মেনে চলত, বিদ্রোহ না করত, কর দিত আর শষ্য ভান্ডার মজুদ রাখত। ইনকাদের কর ব্যবহা ছিল কঠোর। মেয়েদের নির্দিস্ট পরিমানে কাপড় বুনতে হত। পুরুষেরা কাজ করত সৈন্যবিভাগে কি খনিতে। জনগনও কর দিতে হত। হাতে পয়সা না থাকলে রাষ্ট্রীয় কাজ করে শোধ করে দিত। কিংবা সুতা পোষাক তৈরি করে বিক্রি করে কর দিত। জনগনকে শষ্যের একাংশ রাখতে হত সংরক্ষণের জন্য। খাদ্যশষ্য মজুদের কলাকৌশল রপ্ত করেছিল বলেই ইনকা সভ্যতা নাকি অত উন্নত স্তরে পৌঁছেছিল-ঐতিহাসিকদের এই মত। সাম্রাজ্যজুড়ে ছিল স্টোরহাউজ। ৩ থেকে ৭ সাত বছরের খাদ্যশষ্য মজুত থাকত সেখানে। মাংসও শুকিয়ে নোনা করে রাখত।
চাষবাস হত উপত্যকায় আর পাহাড়ের ঢালে। ইনকাদের প্রধান খাদ্যই ছিল আলু ও ভূট্টা। আগেই বলেছি আমি মানবসভ্যতায় আলু ইনকাদের অবদান। আলু আর ভুট্টা ছাড়া খেত ওল। নীল শ্যওলাও নাকি খেত । কাঁচা। চাষ করত মরিচ । মাংসের মধ্যে খেত গিনিপিগ ও লামার মাংস। । সামুদ্রিক মাছও খেত। সাম্রাজ্যের পশ্চিমে প্রশান্ত সাগর। আর বিখ্যাত হ্রদ টিটিকাকা। ভূট্টা পিষে এক ধরনের পানীয় তৈরি করে খেত ইনকারা। পানীয়ের নাম: চিচা। পেরুতে এটি এখনো জনপ্রিয়। এই সময়ের পেরুভিয়ান শিশু মুখে আদিবাসী আদিবাসী ছাপ রয়েছে ....
ইনকা ড্রেস।
মানতাস।
ইনকারা পোশাক তৈরি করত লামার উল দিয়ে। সুতির কাপড়ও পড়ত। অভিজাতরা ধাতু ঝুলিয়ে রাখত। মেয়েরা একধরনের শাল পরত-নাম মানতাস। নারীপুরুষ উভয়ই পরত স্যান্ডেল।
সাধারন ইনকাদের বাড়িগুলো হত ছোট। সবাই একসঙ্গে থাকত। যৌথপরিবার আর কি। বাড়ি তৈরি করত পাথর ও মাটির ইট দিয়ে ... আর মেশাত ঘাসকাদা। ধনীরা অবশ্য বড়সরো পাথরের সুন্দর প্রাসাদে বাস করত। তাই তো হয়! এরাই ছিল উপত্যকার জমির মালিক।
বিয়েটাও ইনকাদের ভারি অদ্ভূত। ২০ বছরের আগেই ছেলেদের মেয়ে চয়েস করতে হত। নইলে তার জন্যই মেয়ে দেখত গার্জেনরা। কোনও কোনও মেয়েকে ছোট থাকতেই বাগদত্তা হতে হত।বিয়ের দিন বর কনের হাত ধরে চন্দন বিনিময় করত। এরপর ভোজ। নতুন দম্পতিকে অন্যরাই ঘরদোর তুলে দেয় । যতক্ষন না তারা নিজের পায়ে না দাড়াচ্ছে ।
বহুদেবতায় বিশ্বাসী ছিল ইনকারা। ভিরাকোকা ছিলেন প্রধান দেবতা। তিনিই ছিলেন ইনকাদের স্রষ্টা। আরেকজন দেবতার নাম ছিল ইনতি। ইনি ছিলেন সূর্যদেব। ইনকাদের বলা হয়: "সূর্যের সন্তান।" ইনকা শব্দটি এসেছে এই ইন্তি শব্দ থেকেই। ইনকারা সূর্যপূজক বলেই উচুঁ পাহাড়ের ওপর তৈরি করত পাথরের মঞ্চ। ইনতিহুয়াটানা। ইন্তি শব্দটা লক্ষ করুন।
সূর্যমন্দির ইনতিহুয়াটানা
এভাবেই মেয়েদের পাঠানো হত সম্রাটের কাছ
ইনকারা ছিল ধর্মপ্রাণ। তারা ভাবত যেকোনও মুহূর্তেই অমঙ্গল হতে পারে। কাজেই পুরোহিতদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন ছিল ইনকা সমাজে। ইনকা সমাজে নারীপুরোহিতও ছিল। মেয়েরা ঋতুমতী হলে নারীপুরোহিতরা চুল আচড়ানো উৎসব করত। মেয়েটি তখন নতুন নাম নিত। সবচে সুন্দরী মেয়েটিকে পাঠানো হত কুজকোতে। মেয়েটি রাজকন্যা বা সম্রাটের স্ত্রী হবে!
ইনকা সাম্রাজ্য 'কেচুয়া' নামক নেটিভ আমেরিকানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় তিনশ' বছর ধরে রাজত্ব করে গেছে। ইনকা মূলত রহস্যময় সাম্রাজ্য। তাদের কোন লিখিত তথ্য আজ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি বলে তাদের সম্বন্ধে আর্কেওলজিক্যাল নিদর্শন থেকে অনুমান করা হয়। তাদের স্থাপত্যশৈলী আধুনিক মানুষকে ততটাই বিস্মিত করে যেমনটা করে মিশরের পিরামিড নির্মানশৈলী। কেচুয়া জাতির শাসকদের মর্যাদা দেবতাতুল্য বলে তাদেরকে ইনকা বলা হত। সূর্যদেবকে তারা ইনতি বলে ডাকত এবং সেই নামের প্রতিনিধিত্ব করত ইনকা শাসকগণ। ইনকা সাম্রাজ্য একসময় বিস্তৃত ছিল বর্তমান পেরুর কুসকো ভ্যালি থেকে উত্তরে ইকোয়েডর এবং সুদূর দক্ষিণে বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা পর্যন্ত। পেরুর কুসকো ভ্যালিকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হচ্ছে বর্তমান প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানকে ভিত্তি করে। ইনকাদের সবচেয়ে স্টেট অব দ্য আর্ট নিদর্শন যা আজ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছে তা হল মাচু পিচু - সমতল থেকে প্রায় একহাজার আটশ ফুট উপরে এক দুর্গ শহর। ইনকাসাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। সাম্রাজ্যের সময়কাল ১২০০ থেকে ১৫৩৩। ১৫৩৩ সালেই তো স্প্যানিশ লুটেরারা এল ... ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম মানকো কাপাক। তিনি ও তার বংশধরের সময়েই ইনকা জাতি রচেছিল দক্ষিণ আমেরিকার বিস্ময়কর সভ্যতা। ইনকারা ওদের রাজ্যকে বলত তাহুয়ানতিনসুইউ। মানে চতুস্কোন ভূমি।
ইনকাদের নির্মাণশৈলী খুবই নিখুঁত এবং সাদামাটা। মিশরীয় ফিরাউনদের মত তাদের সম্রাটগণও ডেমিগড মর্যাদার অধিকারী ছিল। ক্ষমতাধর ইনকা সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় স্প্যনিয় দখলদারিদের আক্রমণে ১৫৩২ সালে এবং অনেক পরে তাদের ধ্বংসস্তুপ থেকে ইতিহাসের পাতায় তুলে আনেন একজন উত্তর আমেরিকান এক্সপ্লোরার হায়ারযাম বিংগাম (Hiram Bingham)। ১৯১১ সালে হায়ারযাম বিংগাম তার ব্যক্তিগত ভ্রমন অনুসন্ধিৎসা থেকে চলতে চলতে মাচু পিচু দূর্গ নগরী - ইনকাদের শেষ আশ্চর্য নিদর্শন - আবিস্কার করেন। যখন তিনি প্রথম সে জায়গা খুঁজে পান তখন তিনি অনুমান করতে পারেননি যে তিনি একটা মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু তার সহজাত অনুসন্ধিৎসা তাকে আবার সেখানে ফিরে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে পেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিকদের সহায়তায় তিনি ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া এই সভ্যতাকে আবিস্কার করেন।
ইনকা সভ্যতার আলোচনায় স্প্যানিশ Conquistadores ফ্রানসিসকো পিজারোর নাম অনিবার্য। লোকটার জন্ম ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের ত্র“জিললোতে। গরিব ঘরেই জন্ম। লিখতে পড়তেও শিখেনি। না শিখুক! তাই বলে এত খারাপ মানুষ হয়। বিশ্বের খারাপ মানুষের তালিকা করলে প্রথম দশে থাকবে! যাক। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে স্পেন ত্যাগ করে। হিসপানিওয়ালা (বর্তমানকালে হাইতি ও ডোমেনিকান রিপাবলিক) দ্বীপে বাস করে। এরপর ১৫০৯ সালে কলোম্বিয়া অভিযানে অংশ নেয় আলোনসো দ্য ওদেজার অধীনে। এরপর নানা ঘটনার পর লোকটা পৌঁছে পানামা। এখানেই সে প্রথম দক্ষিণের স্বর্ণসমৃদ্ধ ভূখন্ডের কথা জানতে পারে। ১৫২০ তে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পরপর দুটো অভিযান চালায়। এ সময় সে ইনকাদের দেখতে পায় । যাদের অনেকে পরনে সোনার অলঙ্কার। সে লোভার্ত বোধ করে। পিজারো ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র করে। জাহাজ ভর্তি করে সোনাদানা, লামা ও স্থানীয় ইনকা বন্দি করে নিয়ে স্পেনে ফিরে আসে পিজারো। স্পেনের রাজা তখন পঞ্চম চার্লস। পিজারো স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্লস কে সব খুলে বলে এবং পেরু জয় করে পেরুর শাসক হওয়ার অনুমতি চায়। অনুমতি মিলল। রাজা পঞ্চম চার্লস বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে অনুদানও দিলেন।
পিজারো সৈন্যসামন্ত যোগার করে ১৫৩২ পেরু ফিরে আসে। ১৭৭ জন সৈন্য ও ৬২টি ঘোড়া নিয়ে পুবের কাজামারকা শহরে যাত্রা করেন। কেননা, ইনকা সম্রাট তখন আটাহুয়ালপা। তিনি ছিলেন কাজামারকা শহরে। ইনকা সম্রাট আটাহুয়ালপা জানলেও স্বাধীনভাবে ঘোরার অনুমতি দেন। সম্ভবত তিনি পিজারো ঈশ্বর ভেবেছিল। সূর্যের সন্তান। যা হোক। ১৫৩২ সালের ১৫ নভেম্বর পিজারো শহরে পৌঁছে। সে খোলা চত্তরে আটাহুয়ালপা ও ইনকা অভিজাতদের ভোজে নিমন্ত্রন করে। পরের দিন অর্থাৎ ১৬ তারিখ। প্রায় নিরস্ত্র আটাহুয়ালপা ও ইনকা অভিজাতদের এলেন। স্পেনিয়রা পিজারোর নির্দেশে বর্শা, তরোয়াল, ক্রশবো ও অ্যারাবেক্স নিয়ে বিস্মিত অতিথিদের ঘিরে ফেলে। তারপর. আধ ঘন্টার ভিতর সবাইকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে!
Conquistadores শব্দটা স্প্যানিশ: শব্দটির অর্থ, বিজেতা। সেই স্প্যানিশ বিজেতারা ষোড়শ শতকে সমগ্র দক্ষিন আমেরিকায় তান্ডব চালিয়েছিল কেবলমাত্র অগ্রসর প্রাযুক্তিক রণকৌশলের কৃপায়। আধুনিক ঐতিহাসিকগন তথ্যটি অস্বীকার করেন। তাদের মতে আধুনিক অস্ত্র নয় মাত্র ২০০ জনেরও কম সৈন্য দ্বারা ৬০ লক্ষ ইনকা অধ্যুষিত ইনকা সাম্রাজ্যের পরাজয়ের কারণ পিজারো নেতৃত্ব। দৃঢ়তা ও সৌভাগ্য! কেননা, স্পেনিয় বিজেতাদের হাতে ছিল মাত্র ২০টি ক্রশবো। বর্শা ও তরোয়াল। মাত্র তিনজনের হাতে ছিল আরকিউবাস। (বন্দুকই বলা যায়)। অপরপক্ষে ইনকাদের প্রধান অস্ত্র ছিল তীরধনুক।
আরকিউবাস
ক্রশবো
ইনকা তীরধনুক
যাক। পিজারো সম্রাট আটাহুয়ালপাকে জীবিত রাখে। উদ্দেশ্য? মুক্তিপন আদায়।
সম্রাট আটাহুয়ালপা জীবনের বিনিময়ে এক বড় ঘর ভর্তি স্বর্ণ আর দুটো ছোট ছোট ঘর ভর্তি রুপা দিতে রাজি হলেন। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিজাতরা এসে সেসব ঘর সোনাদানায় পূর্ন করল।সে সম্পদের পরিমান নাকি আজকের দিনে ১০০ মিলিয়ন। আমি তখন লিখেছিলাম: দক্ষিন আমেরিকাজুড়ে তারা সংগঠিত করে অবাধ লুন্ঠন- সে লুন্ঠনকৃত মালামালের পরিমান এতই অধিক পরিমানে ছিল যে- ইউরোপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই নাকি গিয়েছিল বদলে! সে অপরিমেয় ধনসম্পদ ছিল ইনকাদের ... ২৯ আগস্ট ১৫৩৩। সম্পদ পেয়ে পিজারো সম্রাট আটাহুয়ালপা কে খুন করে! পিজারো এরপর পেরুর আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী কুজকো করতলগত করে। কেউই বাধা দেয়নি। পিজারো কুজকো লুন্ঠন শেষে ইনকাদের দাসে পরিনত করে। ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে লিমা নামে নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করে পিজারো। সেখান থেকেই পেরু শাসন করে। লিমা শহরের প্রতিষ্ঠা করে। এর পর স্পেনিয়দের মধ্য শুরু হয় তীব্র বিরোধ ও অর্ন্তদ্বন্দ । এরই পরিনামে ১৫৪১ খ্রিস্টাব্দে পিজারো ৬৬ বছর বয়েসে লিমায় নিজ প্রাসাদে খুন হয়।
মাচু পিচু দূর্গ নগরী (ইনকাদের অন্যতম প্রধান আস্তানা)
মাচু পিচু দূর্গ নগরী মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত ছিল বলে তা একসময় হারিয়ে যায় মানুষের মন থেকে। সুবিস্তৃত ইনকা সাম্রাজ্য কয়েকজন ইনকা সম্রাটের অধীন ছিল। তারা হলেন টুপাক, ওয়াইনা কাপাক ও পাচাকুটেক। আবিস্কৃত প্রাচীন মাচু পিচু নগরী যা বর্তমানে পেরুর আন্ডিজ পর্বতমালায় অবস্থিত তা মূলত পাচাকুটেক সম্রাটের দূর্গ ও শীতকালিন নগরী ছিল বলে অনুমান করা হয়। আন্ডিজ হিমালয়, আল্পস্ ও রকির মত দক্ষিণ আমেরিকার পর্বতমালা (mountain range)।
ইনকা সভ্যতা সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত যা কিছু জানা গেছে তার সবটুকুই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা। তাই মাচু পিচু নগরী এখনও এক রহস্যময় নগরী। ইনকাদের কোন লিখিত দলিলাদি পাওয়া যায়নি। তারা তাদের ধনসম্পদের হিসেব রাখত মূলত এক সারি দড়িতে গিট পাকিয়ে। এই এক সারি দড়ির প্রান্তগুলো আবার একটা দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এগুলোকে কিপু বলা হত। এভাবে গণনা করার জন্য দড়ির বিভিন্ন গিটের বিভিন্ন অর্থ ছিল বলে মনে করা হত যার অর্থ ইনকা জাতির সাথেই হারিয়ে গেছে। একটা গিট থেকে অপর গিটের দূরত্ব এবং দড়ির রঙ ভিন্ন অর্থবোধক ছিল বলে অনুমান করা হয়।
ইনকা ভাল নির্মাতা গোষ্ঠী ছিল। দূর্গ ও শহরের পাশাপাশি তারা প্রায় ১৪ হাজার মাইল রাস্তা নির্মাণ করেছিল পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে। তাদের স্থাপত্যশৈলীও অসাধারণ। মিশরীয়দের মত আজও কেউ বলতে পারে না তারা কীভাবে পাথর কেটে কেটে দেয়াল নির্মাণ করেছিল যা ভূমিকম্প সুরক্ষিত। দেয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে পাথর কাটতে গিয়ে তারা আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি এত সুবিশাল পাথর এত উঁচুতে তোলার জন্যই বা তারা কী পন্থা ব্যবহার করেছে তাও এক রহস্য। পাথর নিখুঁতভাবে কেটে একের পর এক গেঁথে দেয়া হয়েছে কোনরকম মর্টারমিক্স তথা সিমেন্ট বা মাটি বা চুনের সহায়তা ছাড়াই। সম্পূর্ণ নির্মাণ প্রক্রিয়া তাই কিছু বিশেষজ্ঞের অনুমানভিত্তিক তত্ত্ব ছাড়া এক রহস্যই রয়ে গেছে।
ইনকাদের স্মৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রহস্য হয়ে থাকার কারণ তাদের অধিক পরিমানে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ব্যবহার।
স্প্যানীয় দখলদাররা নেটিভ আমেরিকানদের আক্রমণ ও তাদের দেশ দখল করার কারণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের লোভ। সেজন্য মনে করা হয় ইনকাদের স্বর্ণ ও রৌপ্যের ঐতিহ্যই তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। একই কারণে তাদের বিভিন্ন নিদর্শন স্প্যানীয়দের দ্বারা লুট হয়ে যাওয়া ও সেগুলোর স্বর্ণ ও রৌপ্য গলিয়ে ফেলার কারণে ইনকাদের সম্বন্ধে অনুমান করা আরও দূরূহ হয়ে পড়ে।
স্বর্ণের প্রতি ইনকাদের আগ্রহের আরেকটি কারণ ছিল তারা স্বর্ণকে সূর্য দেবের প্রতীক ভাবত। তাদের মন্দিরগুলোতে তাই স্বর্ণের ব্যাপক ব্যবহার ছিল।
ইনকারা ছিল আদ্যপান্ত রোম্যানটিক যারা বিশ্বাস করত রুপা হল চাঁদের কান্না আর স্বর্ণ হল সূর্যের ঘাম ...
পিজারোর আগমনের কিছু আগে থেকেই এই পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের অশনি সংকেত বেজে ওঠে যখন নিকটবর্তী প্যারাগুয়ে থেকে চিরিউয়ানো গোষ্ঠীর সৈন্যরা পর্তুগীজ দখলদার আলিক্সো গার্সিয়াকে নিয়ে প্রথম তাদের আক্রমণ করে আনুমানিক ১৫২৫ সালের দিকে। সেই আক্রমণ তারা প্রতিহত করেছিল তখন। তখন থেকে স্প্যানিশ সৈনিকদের দ্বারা সিফিলিস, বসন্ত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
সম্রাট টপা
মহামতি সম্রাট টপা ইনকা শাসন করেছেন ১৪৯৩ সাল পর্যন্ত। তার পরে সিংহাসনে আসীন হন তার উত্তরসূরী সম্রাট ওয়াইনা কাপাক যিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে বেশ মনযোগী ছিলেন। এর কিছুকালের মধ্যে ওয়াইনা কাপাক এবং তার নিয়োজিত উত্তরাধিকার মারা যান অজানা কারণে। ধারনা করা হয় ইওরোপীয়দের আমদানীকৃত কোন সংক্রামক ব্যধিতে তাদের মৃত্যু হয়। ওয়াইনা কাপাকের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে উয়াসকার ও আতাউয়ালপা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এবং ১৫৩২ সালে আতাউয়ালপা জয়ী হয়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়। তাদের নিজেদের অন্তর্কলহের কারণে তারা ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
ইনকা সম্রাট পরাজিত হবার পর থেকেই সেখানে বস্তুত স্প্যানীয় শাসন শুরু হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে স্প্যানীয়রা তাদের উপর জোর জুলুম সহ ইনকা সভ্যতার বড় বড় স্থাপত্য, মন্দির ও বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়। ইনকা সভ্যতার নিদর্শনসমূহ যা মূলত মূল্যবান ধাতুতে গড়া ছিল তা তারা গলিয়ে ফেলে স্বর্ণ-রৌপ্যের লোভে।
বাঙলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা
ইওরোপীয়দের দখলদারীর প্রায় একইরকম সংস্কৃতি লক্ষ করা যায় এখানেও। বাঙলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত ও হত্যা করার পর ইংরেজরাও যেমন পুতুল শাসক দিয়ে দেশ চালানোর মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে তেমনি ফ্রান্সিসকো পিজারো ইনকা সাম্রাজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় আছে এমনটা দেখাতে আতাউয়ালপাকে হত্যা করার পর তার আরেক ভাই মানকো কাপাককে সিংহাসনে বসায়। ইতিমধ্যে লুটেরা স্প্যানিশদের মধ্যে স্বর্ণরৌপ্যের ভাগাভাগি নিয়ে হাঙ্গামা বাধে। মানকো তাদের এই হানাহানির সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ভিলকা বাম্বায় আশ্রয় নেয় এবং নতুন রাজধানী পত্তন করে।
ভিলকা বাম্বা
সেখান থেকে মানকো স্প্যানিশ রেজিমের বিরুদ্ধে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করত। এভাবে কয়েক দশক স্প্যানীয়দের সাথে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করার পর প্রায় চল্লিশ বছর পর ১৫৭২ সালে স্প্যানীয়রা ভিলকা বাম্বার অবস্থান খুজেঁ পায় এবং ভিলকা বাম্বাও তারা ধ্বংস করে দেয়। মানকোর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ইনকা সম্রাট ও তার শহরের পতন ঘটে।
পিজারোর সৈন্যরা ভিলকা বাম্বা ধ্বংস করলেও মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের উপত্যকায় নির্মিত মাচু পিচু তারা খুজেঁ পায়নি। তাই মাচু পিচু অধরা ও অক্ষত থেকে যায়। কিন্তু এর রহস্যের কোন কিনারা হয়নি আজও। হয়তো ইনকাদের অস্তিত্বকে জানান দিতেই এই দূর্গ নগরী অক্ষত রয়ে গিয়েছিল। কারণ পিজারো ভিলকা বাম্বার মন্দির থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ পাথুরে নগরী ধ্বংস করে ফেলেছিল। তারা বেছে বেছে স্থানীয় লোকদের সকল ধর্মীয় তীর্থস্থানকে ধ্বংস করে যেহেতু ইনকা সভ্যতা বহু দেবদেবীর পূজা করত যে ধারনা ইওরোপীয়দের খ্রিস্ট ধর্মের একেশ্বরবাদের সাথে বেমানান ছিল বলে অনেকের অনুমান।
চারশ বছর পর ইনকাদের শেষ রাজধানী ভিলকা বাম্বা নগরীর খোঁজ করতে গিয়ে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রভাষক হায়ারযাম বিংগাম ব্যক্তিগত অনুসন্ধিৎসার এক পর্যায়ে দুর্গম পর্বত শৃঙ্গের সরু উপত্যকায় মাচু পিচু নগরী খুজেঁ পান ১৯১১ সালে। আবিস্কৃত মাচু পিচু মেঘের দেশের নগরী। কী কারণে মাচু পিচু স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বা পরিত্যক্ত হয়েছিল তার কোন সঠিক তথ্য আজও অজানা রয়ে গেছে। ইনকাদের কোন লিখন পদ্ধতি বা লিখিত দলিলাদি পাওয়া না যাওয়া এই রহস্যের অন্যতম কারণ।
মাচু পিচু নগরী
ইনকাদের মাচু পিচু নগরীর অবস্থান পেরুর কুসকো (প্রাচীন ইনকা রাজধানী) শহর থেকে ৫০ মাইল উত্তর পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালার দু'টি সুউচ্চ শৃঙ্গের মধ্যবর্তী সরু উপত্যকায়। কুসকো পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫৭ মাইল পূবে অবস্থিত। মাচু পিচুর অবস্থান নিকটবর্তী নদীবাহিত সমভূমি থেকে প্রায় ১,৮০০ ফুট উপরে - সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ৭,৫০০ ফুট। নিচে প্রবাহমান নদীটি উরুবাম্বা নদী।
পিছনে মাথা উঁচু বিশাল পর্বত শৃঙ্গটি ওয়াইনা পিচু। ধাপে ধাপে বাঁধানো চত্বরগুলো (terraces) পাহাড়ের গায়ে এমনভাবে স্থাপিত যাতে মূল স্থাপনা ধ্বসে না পড়ে। অনেকের মতে এসব বাঁধানো চত্বরে ফসল ফলানো হত যেহেতু বিশেষ কায়দায় এসব বাঁধানো চত্বরের উপরিভাগে কৃষি উপযোগী টপ সয়েল ব্যবহৃত হয়েছে।
মূল স্থাপনা, মন্দির, বেদী ও এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরগুলোর দেয়াল পাথরের নিপূণ কারিগরি নিদর্শন। ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, সকল স্থাপনা চালবিহীন, কারণ সম্ভবত তারা বাঁশ, কাঠ ও ছনের চালা ব্যবহার করত যেগুলো কালের বিবর্তনে এখন নিশ্চিহ্ন। তাদের নির্মাণশৈলী বৈশিষ্টমণ্ডিত। কোনরকম চাকা বা লোহার যন্ত্রপাতি ছাড়া তারা কীভাবে সুবিশাল পাথর কেটে কেটে তা পরপর গেঁথে দিয়েছে তা এক রহস্য। মাচু পিচু নগরী এক মাস্টারপিস। স্থাপত্যবিদ, প্রকৌশলী এবং পাথরের কারিগররা তাদের নিরুপম দক্ষতায় নিপূণভাবে পাথারের এসব স্থাপত্য নির্মাণ করেছিল।
প্রায় আধ মাইল দূরের প্রাকৃতিক পানির উৎস থেকে মাচু পিচু নগরীতে সয়ংক্রিয়ভাবে পানির সাপ্লাই পানি প্রকৌশলীদের অসাধারণ বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় বহন করে।
মাচু পিচু শব্দটি নেটিভ আমেরিকান কেচুয়া (Quechua) জাতির ব্যবহৃত শব্দ যার অর্থ প্রাচীন পর্বত। পেছনে দণ্ডায়মান ওয়াইনা পিচু পর্বত শৃঙ্গ। ওয়াইনা পিচু অর্থ নতুন পর্বত। মাচু পিচুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৫০০ ফুট উচ্চতায়। মেঘের দেশে। অধিকাংশ সময় মাচু পিচু নগরী মেঘের আড়ালে ঢাকা থাকে বলে এমনকি উপর দিয়ে চলাচল করা বৈমানিকদেরও চোখে পড়েনা মাচু পিচু। স্থানটি আবিস্কারের পর থেকে মাচুপিচু সম্বন্ধে এমনসব বিস্ময়কর তথ্য জানা যাচ্ছে যে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন ৭ জুলাই ২০০৭ সালে মাচু পিচুকে আধুনিক সপ্তাশ্চর্যের একটি বলে ঘোষণা দেয়।
মাচু পিচু নগরীটি কোন ধ্বংসাবশেষ নয় বরং একেবারে অব্যয় ও অক্ষত অবস্থায় মেঘমালার দেশের এ নগরী কোন এক অজানা কারণে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। বর্তমান বিশ্বের কাছে ইনকা সভ্যতা বলতে মাচু পিচুর পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। তাই প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক মাচু পিচু দেখতে ছুটে যায় পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫৭ মাইল দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত কুসকো শহরে। কুসকো শহর ছিল প্রাচীন ইনকা রাজধানী। দীর্ঘকাল ধরেই কুসকো ইনকা রাজধানী ছিল। শেষ সম্রাট আটাউয়ালপার রাজধানীও ছিল কুসকো। স্প্যানীয়দের দখলের পরে ১৫৩৯ সাল থেকে ১৫৭২ সাল পর্যন্ত সম্রাট মানকো কোন এক অজানা দুর্গম পার্বত্য রাজধানী ভিলকা বাম্বা থেকে টানা তেত্রিশ বছর ধরে গ্যারিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, এবং ১৫৭২ সালে স্প্যানীয়দের হাতে বন্দী ও নিহত হন । স্প্যানীয়রা মানকোর রাজধানী ভিলকা বাম্বা ধ্বংস করে দেয়। ভিলকা বাম্বার অবস্থান কুসকো শহর থেকে ৮১ মাইল পশ্চিমে গহীন অরন্যে যার বর্তমান নাম এসপিরিতু পাম্পা।
হাইরাম বিংগাম
হায়ারযাম বিংগাম মাচু পিচু আবিস্কারের আগে ১৯০৯ সালে ভিল্কা বাম্বা তথা এসপিরিতু পাম্পা খুঁজে পান। তবে যেহেতু সম্রাট মানকো কাপাকের পতনের সাথে সাথে স্প্যানীয়রা রাজধানী ভিলকা বাম্বা জ্বেলেপুড়ে ছাই করে দেয় তাই বিংগাম রাজধানী বলে ধরে নেননি এসপিরিতু পাম্পাকে। হায়ারযাম বিংগাম তার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখেন এবং ১৯১১ সালে মাচু পিচু আবিস্কার করেন এবং মাচু পিচুকে ভিলকা বম্বা বলে ভুল করেন তিনি।
ভিনসেন্ট লি
১৯৮০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক জিন সেভয় ও ভিনসেন্ট লি ও জন হেমিং এর গবেষণা থেকে অনুমান করা হয় এসপিরিতু পাম্পা ছিল শেষ মুক্তিযোদ্ধা মানকো কাপাকের রাজধানী ভিলকা বাম্বা। মাচু পিচু থেকে এসপিরিতু পাম্পা তথা ভিলকা বাম্বার দূরত্ব আনুমানিক আরও ৫০ মাইল (যাতায়াতের রাস্তার দূরত্ব নয়) পশ্চিমে সুউচ্চ বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত পার্বত্য উপত্যকায়।
কেউ কেউ মনে করেন মাচু পিচু কোন সম্রাটের নিজস্ব এস্টেট ছিল, কারও মতে এটা জেলখানা ছিল বা পবিত্র নারীদের স্যাংচুয়ারি ছিল। মাচু পিচু ছিল জোতির্বৈজ্ঞানিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কেউ বলেন এটা ছিল যুদ্ধের জন্য স্ট্র্যাটেজিক্যালি ইমপর্ট্যান্ট গ্যারিসন যা ব্যবহৃত হত সম্রাটের গোপন রিট্রিট বা পিছু হটে পালিয়ে থাকার জায়গা হিসিবে। এক্ষেত্রে মনে করা হত পরাক্রমশালী সম্রাট পাচাকুটি তার রিট্রিট হিসেবে মাচু পিচু নির্মাণ করেছিলেন আনুমানিক ১৪৫০ সালের দিকে। মহামতি পাচাকুটি ১৪৩৮ সালে ক্ষমতায় আসীন হন। পাচাকুটি ছিলেন ইনকাদের সবচেয়ে পরাক্রমশালী সম্রাট। Quechua জনগণ মনে করত পাচাকুটির জন্ম হয়েছিল ইনকা সাম্রাজ্য শাসন করার জন্য। পাচাকুটি সম্রাট ছিলেন, উপরন্তু জনগণের আধ্যাত্মিক গুরু বা গডফাদারও ছিলেন তিনি।
সময় বদলেছে অনেক কিছুই বদলেছে। এখন কুসকো থেকে ট্রেনে যাওয়া যায় মাচু পিচু। এই টেন লাইনটি পৃথিবীর উচ্চতম ট্রেন লাইন। কুসকোর সান পেদ্রো ট্রেন স্টেশন থেকে (৭০ মাইল) ট্রেনে প্রায় চার ঘন্টার ভ্রমন।
মাচু পিচুর প্রস্তর স্থাপত্য
মাচু পিচু নগরকে বর্ণনা করতে প্রথমত দু’ভাগে ভাগ করে নেয়া যায়। কৃষি প্রান্ত ও নগর প্রান্ত।
মাচুপিচুর মানচিত্র।
নির্মাণশৈলী: অ্যাসলার (ashlar)
মাচু পিচুর বেশির ভাগ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে আয়তকার পাথরের খণ্ড কোন প্রকার চুন, সিমেন্ট বা মাটির গাঁথুনি ছাড়াই পর পর গেঁথে। এভাবে স্বাধীনভাবে পাথর গেঁথে নির্মাণশৈলীকে অ্যাসলার বলে। অ্যাসলার ছাড়াও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে মাচু পিচুতে যা মাটির গাঁথুনি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
অ্যাসলার তৈরিতে ইনকা জনগণ ছিল ওস্তাদ কারিগর। এটা তাদের নির্মাণ শিল্পের বিশেষত্ব। দেয়ালগুলো ভিত্তি থেকে উপরের দিকে কিছুটা সরু হয়ে উঠেছে। ফলে দেয়ালগুলো সোজা খাড়াভাবে তৈরি না হয়ে একটু হেলানোভাবে তৈরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পাথরের ব্লকগুলোর বাইরের দিকটা মসৃণ করা থাকে। ভেতরের দিকটা বেশির ভাগ অমসৃণ হয়। একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথর এমনভাবে খাপ খাওয়ানো হয়েছে যে একটা চিকন ছুরিও দুটো পাথরের মাঝখানে প্রবেশ করানো সম্ভব না।
পেরু খুবই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা স্থাপনাগুলোই বরং ভূমিকম্পে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কোন মর্টার ছাড়া তৈরি পাথরের ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধী। পেরুর কুসকো শহরে ইনকা আমলের কিছু স্থাপনা এখনও টিকে আছে যেগুলো অ্যাসলার ব্যবহার করে তৈরি।
দরজা জানালাগুলো ঘরের ভেতরের দিকে খানিকটা হেলানো। দেয়ালো বাইরের কোনগুলোয় রোমান L অক্ষরের মত কাটা পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। ভেতরের কোনাগুলো ততটা তীক্ষ্ণ নয়। পাথর কাটায় লোহার যন্ত্রপাতি বা পাথর ওঠানামায় দড়ি, চাকা, কপিকলের ব্যবহারের কোন চিহ্ন না পাওয়ায় তাদের নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে রহস্য ঘণীভূত হয়েছে।
মাচু পিচু নগরীতে ১৪০ টি পাথরের স্থাপনা রয়েছে। বাসস্থান, মন্দির, স্যাংচুয়ারি (ধর্মীয় পবিত্র উপকরণ রাখার জন্য), পার্ক ইত্যাদি এসব স্থাপনার অন্তর্গত। একশ'টার মত সিঁড়ি আছে এখানে, যার কোন কোনটা সবগুলো ধাপসহ একটামাত্র গ্র্যানাইট কেটে বানানো। ১৬ টি পানির ঝরণা দিয়ে সম্পূর্ণ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে যেগুলো তৈরি করতে পাথর ছিদ্র করে পানির পথ করতে হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে মাচু পিচুর নগর প্রান্তে তিনটি ভাগ ছিল। সেগুলো হল
১। পবিত্র এলাকা
২। বসতি এলাকা
৩।উচ্চপদস্থ ও পাদ্রীদের এলাকা।
তথ্যসুত্রঃ- ইন্টারনেট (সংকলিত), টেকটিউনস, উইকিপিড়িয়া।
১২ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৩৩
শংখনীল কারাগার বলেছেন: আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
২| ১২ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল পোস্ট।
এত কস্ট করার জন্য আপানকে ধন্যবাদ।
শূভ কামনা
১২ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
শংখনীল কারাগার বলেছেন: কস্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: প্রিয়তেও নিয়া গেলাম।
১২ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
শংখনীল কারাগার বলেছেন: ধন্যবাদ আবার।
৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
সুমন কর বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। সাথে আছি।
১ম লাইক দিয়ে গেলাম।
১২ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২
শংখনীল কারাগার বলেছেন: আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
আপনাদের মতো সিনিয়র ব্লগারদের আমরা অনুসরন করি।
আপনার অনুপ্রেরণা আমার ব্লগিং জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করবেন আশা করি।
আপনার একজন গুনভক্ত আমি। আপনার লেখা আমার অনেক ভাল লাগে।
কিন্তু মন্তব্য করতে পারছি না তাই জেনারেল হলে আগে আপনার পোস্টে মন্তব্য করে আসব।
ভাল থাকুন শূভকামনায়।
৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩
দি সুফি বলেছেন: অনেক বড় পোষ্ট। পরে সময় করে পড়ব।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২৮
শংখনীল কারাগার বলেছেন: নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি আমার ব্লগে আপনাকে পেয়ে।
সবসময় পাশে থাকবেন গুরুজনের মত।
৬| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
দি সুফি বলেছেন: সামু ব্লগে স্বাগতম
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩১
শংখনীল কারাগার বলেছেন: আপনাকেও শঙ্খনীল কারাগারে স্বাগতম।
৭| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৪২
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
সময় নিয়ে পড়তে হবে... পোষ্ট পর্যবেক্ষনে।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
১৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬
শংখনীল কারাগার বলেছেন: আপনাকের প্রতিও শূভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
৮| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ব্যাপক!
১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩
শংখনীল কারাগার বলেছেন: আমার ব্লগটি দেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সবসময় পাশে থাকবেন।
৯| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৯
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
বাহ !
অনেক কিছুই অজানা ছিল, তার মধ্যে একটা হলো: মাচু পিচু ইনকাদের অন্যতম আস্তানা।
চমৎকার পোস্ট, ওয়েল ডান ||
২৩ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০৩
শংখনীল কারাগার বলেছেন: নিজেকে ভাগ্যবাণ মনে করছি।
থ্যাংকস অ্যা লট।
১০| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:২০
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল একটা পোষ্ট! এই ধরনের পোষ্ট তৈরী করা বেশ কষ্টসাধ্য। যদিও ইতিপূর্বে প্রিয় ইমন জুবায়ের ভাই এই নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন সেখান থেকেই ইনকাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি। পোষ্টটি পড়ে দেখতে পারেন এখানে।
০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
শংখনীল কারাগার বলেছেন: ইমন ভাইযের লেখার সাথে দেখি প্রচুর মিল রয়েছে এ লেখার ।
আগে জানলে এ লেখা দিতাম না ।
কেননা ইমন ভাই অনেক শ্রদ্ধেয় একজন লেখক উনাকে আমি শ্রদ্ধা করি।
দোয়া করি তাকে যেন আল্লাহ বেহেশত নসীব করে।
ধন্যবাদ কাভা ইমন ভাইয়ের ব্লগটির সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়ার জন্য।
উনার সব লেখা এক এক করে পড়ে ফেলব।
১১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:২৮
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল একটি পোস্ট। সম্পূর্ণটা পরতে পারলাম না, সময় করে পরতে হবে। পোস্ট প্রিয়তে নিলাম।
কিছুদিন আগে ইনকা সভ্যতা ও মিশরীয় সভ্যতার মধ্যকার মিল নিয়ে ব্লগার কান্ডারি অথর্ব ভাই একটি পোস্ট করেছিলেন। যদি না পরে থাকেন তাহলে পরে দেখতে পারেন।
রহস্যাবৃত যমজ সংস্কৃতি অঘোরে অনুরূপ
তথ্যবহুল এমন চমৎকার একটি লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০৬
শংখনীল কারাগার বলেছেন: আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কান্ডারি অথর্ব এর পোস্টটি আমি পড়েছিলাম কিন্তু আমি ওয়াচে থাকায় মন্তব্য করতে পারি নাই।
উনি খুব ভাল লিখেছিলেন।
ধন্যবাদ প্রবাসী পাঠক। যাই এখন কমেন্টস করে আসি।
১২| ২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:১৭
আনিস৫১ বলেছেন: চমৎকার, লিখে যান
''দিতে পারো একশ' ফানুশ এনে
আজন্ম সলজ্জ সাধ, আকাশে কিছু ফানুশ উড়াই''
শংখনীল কারাগার, হূমায়ুন আহমেদ
০৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
শংখনীল কারাগার বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যে আনিস ভাই।
আপনি লিখেন না কেন?
লিখুন আপনার লেখার আশায় আছি।
১৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭
শের শায়রী বলেছেন: দারুন লেখা। মুগ্ধ পাঠ।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৬
চুক্কা বাঙ্গী বলেছেন: অনেক বড় লেখা। পরে সময় নিয়ে পড়বো। আমাকে অনুসরন করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হ্যাপি ব্লগিং!