নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়ামন বড় নিঃসঙ্গ কাটে অনাথ রাত্রীযাপন

কবিতা তুমি বুকে মাংশ গোলাপ নিয়ে শুয়ে থাকো,আমি হাত ভরে পান করি জ্যোৎস্না

সোমহেপি

আমি কিছুই না।বুদবুদ।

সোমহেপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কেবল দাদির কথা মনে পড়ে যায়।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৮

সন্ধ্যার সাঝবাতি জ্বলবার ঠিক পূর্বমুহূর্তে একঝাক পাখি দক্ষিণের অরণ্য থেকে চিৎকার করতে করতে এদিকে এলো।আমি খবর পাই আমার দাদি আর নেই।আমার দাদি ভীষণ সৎ আর কৃপণ ছিলেন।আমার মহাপরাক্রমশীলা দাদির তখন বয়স ছয়, পুতুলের বিয়ে ফেলে দাদার বউ হয়ে এলেন।দাদি বলেন- বিয়ের তিনবছর পর আমি সাবালিকা হই'।



আমার সাথে দাদির এরকম কথাছিলোনা।কথা ছিলো দাদি আমাকে তার সময় সম্পর্কে বলবেন আমি খাতায় টুকে রাখব।কথা ছিলো আরো অনেক কিছুর।দাদি কথা রাখেনি।আমার জানা হয়নি দাদিকে ছোটবেলা থেকে তার কাছের কিছুলোক মাস্টর নামে ডাকতে। কিন্ত্ত কেন ডাকতেন সে কথাটা-জানা হয়নি।আর জানা হবেনা।



দাদি মারা যাবেন বয়স হলে যেমনটা সবাই বুঝতে পারেন।বাবাকে বলে রাখলেন তুই আমার কাফনের কাপড় কিনে দিবি ঘরের ধান বেচে।রফিক কে না করবি তার টাকায় ঘুষ থাকতে পারে।আমি ঘুষের টাকার কাপড় পড়ে কবরে যেতে চাইনা।



নতুন চাকরি ।অফিসের ম্যানেজারের কাছ থেকে ছুটি নিতে হবে।দরখাস্ত ।

-কি ব্যপার আপনি না কিছুদিন আগে দুই দিনের ছুটি নিলেন?আবার ছুটি আপনি জানেন প্রবিশান পিরিয়ডে কোন ছুটি দেয়া যায়না?

- স্যার আমার দাদি মারা গেছেন।

(কিছুক্ষণ চুপ)

-আচ্ছা মরার উপর তো কিছু বলার নাই।যান কালকে চলে আসবেন।

নতুন চাকরি।বেতনও পাইনি।এর মধ্যে কতগুলো শুক্রবার কেটেছে আমার কর্মস্থল আর রাজাদের শহরে যাতায়াতে।শরীরটাও বেশ ক্লান্ত।অথচ আমাকে মৃত্যু দেখতে হচ্ছে একের পর এক।স্বজনদের বাড়িতে বুঝি এবার যমদূতের নিয়মিত যাতায়াত হবে?দেখতে হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে মানুষের আদিখ্যেতা।

কোন রকমে বাসটি ধরি।বাসে উঠেই ভাবতে থাকি কয়টায় পৌঁছুবে ।দেরি হলে দাদিকে শেষ দেখাটা হবেনা।আমার রাস্তা ফুরায় না। মাঝপথে গাড়ি নষ্ট ।হঠাৎ ব্র্যাক।হেলপার ডেকে বলে গাড়ির চাকা পাংচার । সারাতে সময় লাগবে আধঘন্টা।দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকি।আমি যখন গোকর্ণঘাট গিয়ে পৌঁছি তখন বিকাল চারটা।

বেলা পড়ে এলো পড়ে এলো।শেষ লঞ্চটা একটুর জন্য মিস হলো না।বর্ষাকাল এই মেঘ তো এই রৌদ্র।অফিত ফেরত লোকদের ঠাসাঠাসি ।তারা সকলে বাসায় ফিরবে।স্কুল শিক্ষক,শিক্ষিকা,কেরানী।প্রাইমারী স্কুলগুলোতে আজকাল ছেলেদের ঠাঁই নেই।কেননা বাচ্চা মানুষ করার কাজ পুরুষের মানায় না।

বর্ষায় তিতাস নতুন রঙে রাঙানো।নদীর মূলস্রোতধারা চোখ কোটর থেকে বের করে দেখেও দিশা পাই না। ।প্লাবিত বিল আর নদী মিলেমিশে একাকার।মাইল মাইল দূর থেকে ছুটে আসে একেকটা ঢেউ। এসে লঞ্চে ঝাপটি দেয় । শিশু আর মহিলাদের হৈ চৈ।একবার এধার তো আরেকবার ওধার।



আমি এসব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিই কিছুটা ইচ্ছে করেই।দূরে সূর্যটা অস্তমিত হবে।কেমন একটা কোমল আলো।লাল ।ছোট ছোট নৌকা ভাসছে।পানকৌড়ি একটা খুঁটির উপর বসে আছে,ঠিক সূর্যটা বরাবর।বাতাসে খুঁটিটি এধার ওধার করলে তাকে দেখা যায়।তির্য়ক আলো আছড়ে পড়ে জলের প্লাবন জুড়ে।আলো আর জলে মিশে জালোকার।এই দৃশ্যটা ঠিক যেন পটে আঁকা।এমন দৃশ্য আমি দেখতে চাইনা।এটা আমকে মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়।কেন?....জানিনা।



আমি বরং আকাশের মেঘ দেখি।কুণ্ডলী পাকানো মেঘ।কোথাও মেঘের পাহাড় ।শাদা। আকাশে কে খেলে আনবিক খেলা ।আমার ভয় লাগে। দখিনের দিকে দেখি শুভ্র অন্ধকার ধেয়ে আসে।সবদিক ঘোলা করে নামে ঝড়ো বৃষ্টি ।আমার কেবল লালপুরের কথা মনে পড়ে যায়।ডেকে মেয়েদের তুমুল চিৎকার। তারপর চিৎকার শুনিনা ।কেবল বাতাসের ঝাপটা।বৃষ্টির শব্দ সব শব্দকে গ্রাস করে নেয়।আমি শুনতেও চাইনা।বয়স্ক মহিলাদের চিৎকার খুব বেসুরো।আমি বরং বৃষ্ট শুনি ,শুনি দমকা বাতাসের গান।হাত দিয়ে ছুঁই ।জানলা সব লাগানো।আমি বাইরে বেরিয়ে আসি।চারদিকে কিছুই দেখা যায় না।কেবল ধোয়াসা।কেবল শাদা কাফনের রং।আমি আমার দাদির কবর খুঁজি ।

অজান্তে লঞ্চটা পাকে পড়ে ডুবে যায় ।উষ্ণ জলের স্পর্শে শরীর শিহরিত।তারপর জলে শুধু যুদ্ধ।মেরে বেঁচে থাকার যুদ্ধ।

কে কাকে ডুবিয়ে নেবে প্রথমবার বেঁচে উঠার দম।

চারদিকে শাড়ির আঁচল।জল ছাড়াও মানুষের যে বাতাসের প্রতি কত বড় তৃষ্ণা টের পাই তখন।তবু আমি জলই পান করি।বেঁচে থাকার তাগিদে আমাকে চুবিয়ে ডুবাতে থাকে জীবনমুখী মানুষ ।অকাব্যিক মৃত্যু ঝেকে ধরে ।আমি মারা যেতে থাকি।





বেঁচে উঠে দেখি, আমি বাড়ীর দরোজায় কড়া নাড়ছি।একজন মরাবাড়ির মত বাড়িটি্ও মৃত পড়ে আছে।শুধু জেগে আছে আমার বউ।ছেলে পুলেরা।তারা জানে তাদের বাবা বাড়ি আসবে।মৃত্যু তাদের বাবাকে কাছে পাবার আনন্দ থেকে বিতাড়িত করতে পারলোনা।সারারাত দু'জন দুপাশে তারা তাদের বাবাকে ঘিরে রেখেছে।তাদের মা'কে একটুও ভাগ দিলো না।

সকালে যাদের সাথে দেখা হলো তারা আমাকে গুরুত্বহীন ভেবেছে ।ভেবেছে অচেনা আগন্তুক।কেউ কথাটি বললো না।

আবার ফিরে আসতে হবে ।পরের দিন আপিস কামাই দিলে চলবে না।পথে পথেই দু'টা দিন।আবার যেতে হবে সুদীর্ঘ ভ্রমণে কিছুদিন পরে।

আমি ক্লান্ত।



এতসব ভেবে আমি যাইনি দাদির শেষকৃত্যে।তবুও আমি স্মৃতির চাষবাস বন্ধ রাখতে পারিনা।আমাকে তাড়া করে।আমি ফেরারীর মত লুকোতে থাকি।এক প্রকোষ্ঠ থেকে অন্য প্রকোষ্ঠে তবুও বারবার ধরা পড়ি।





আমাকে রাজাদের নগরে যেতে হবে ওখানে বাস করে আমার পেয়ারের সব লোক।তাদের কাছে আমার ঠাঁই নেই কেননা আমি দাদির শেষকৃত্যে যাইনি।

সারারাত ট্রেনের কামড়ায় বসে বসে ক্লান্ত। নগরে পা রেখে ভাবি 'কোথায় উঠব?' অনেক কষ্টে এক বন্ধুর মুখটি মনে পড়ে।আমি সেখানেই নিজেকে নিরাপদ ভেবে তাকে ফোন দিই।

'হ্যালো -আমি এসেছি আমাকে নিয়ে যা তোর খুঁপড়িতে'



সকাল বেলা ।যেসকালে শহর মৃতের মত ঘুমায়।

নর্দমার উপর দশতলা দালান।তার নিচে বিষাক্ত আলকাতরার স্রোত । দশতলার উপর টিন দিয়ে ঘেরা টিনের ছাপড়া মানুষের লোভের বসতঘর -'আরো টাকা চাই'

বন্ধু আমাকে হাতমুখ ধুতে বলে।আমি তাতে কান না দিয়ে কেবল শহর দেখি।তাপে শরীরের মাংশ খসে পড়ার জোগাড়।এক বিন্দু বাতাস ধরতে চাই।চারদিকে তাকাই কেবল দেয়াল চোখে পড়ে। কোথাও পাতা নড়ে না।গা খালি ।লুঙ্গিটি খুলে আমি কাঁধে ঝুলাই।লজ্জার শহরে আমি দিগম্বর।চোখ খুলে শহর দেখি।আমার কেবল দাদির কথা মনে পড়ে যায়।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৪

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: আমার দাদির কথা মনে করায়া দিলেন।

এই নারীর জন্য আমি কিছু করতে পারলে জীবনটা ধন্য মনে করতাম। পারলে কলিজাটা বের করে আমাকে দিয়ে দিতো। :(( :(( আমার চোখে সত্যি পানি এসে গেলো।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৭

সোমহেপি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৯

রেজোওয়ানা বলেছেন: তুমি এত চমৎকার লেখ!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৮

সোমহেপি বলেছেন: /:)

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৪৩

জেমস বন্ড বলেছেন: :(( :(( :((

আমার দাদি আমাকে এবং আমার বড় আপুকে খুব আদর করতেন । আমি গ্রামে গেলে দাদির গায়ের সাথে লেগে থাকতাম , তার শরিরের একটা ঘ্রান আমি আজো অনুভব করি এবং সেটা এখন আবার পেলাম ।

আমার মনে আছে দাদি মারা যাওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর আমাকে জানানো হয়েছিল , আমি খবরটি ফোনে পেয়ে হেসে ফেলেছিলাম । দিস ইজ রিয়েলি ফানি । শুনেছি হটাত অতি শোকে মানুষ পাগল হয় বা পাথর হয়ে যায় ।

লেখায় প্লাস , আর মন খারাপের লেখা লিখবেন না , সবাইকেই হাসাতে চাই , দুক্ষুগুলো মনে পড়লে খারাপ লাগে :( :(

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৯

সোমহেপি বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০০

হাসান মাহবুব বলেছেন: স্রেফ একটা স্মৃতিকথা বা শ্রদ্ধাঞ্জলি না, এই লেখাটা তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৮

সোমহেপি বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৭

সোমহেপি বলেছেন: অ.টঃ হাসান ভাই আমারো কোন ল্যাপটপ নাই ;)

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১৩

শায়মা বলেছেন: এত মন খারাপ হয়ে যায় ভাইয়া!!


তোমাকে কেউ পছন্দ করেনা বলেছো কেনো???

আমার ধারণা তোমাকে অনেক অনেক মানুষ মানে সব্বাই ভালোবাসে!:)

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩১

সোমহেপি বলেছেন: আরে ধুর এমনেই কইছি তোমার ওই পোষ্টের শিরোনামটা পড়ে।আজকে এ সম্পর্কিত কিছু কথা বলছিলাম।আমার এক সহকর্মীর সাথে ।সে খুব ধর্মভীরু এবং ভালো ছেলে। যা বুঝে যেমন বুঝে সৎ ভাবে প্রকাশ করে।তো সেসব কথায় তোমার পোষ্টের সাথে সম্পকিত কিছু কথাও ছিলো আমি তোমার পোষ্ট এখনো পড়ি নাই। তবে পড়বোই ।

৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩১

মিঠেল রোদ বলেছেন: দাদা দাদি কাউকেই দেখার সৌভাগ্য হয়নি।তাদের ভালবাসা আদর কেমন হয় তাও জানিনা।তারপরও বলব এই লেখায় এক দাদিকে ছাড়িয়ে যেন মাটি ও মানুষের গল্প ঊঠে এসেছে।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৪

সোমহেপি বলেছেন: সকালের মিঠারোদ এখন আর ভালো লাগে না।অন্ধকারকেই বেশি ভালোবাসি আমি।


ধন্যবাদ মিঠেল রোদ

৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৫

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: ভাই - বাস নস্ট হওয়া, লঞ্চ ডুবে যাওয়া ব্যাপারগুলোর কারণে একটা প্রশ্ন মাথায় খেলছে - লেখাটা কি গল্প না রিয়েল?

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬

সোমহেপি বলেছেন: এতসব ভেবে আমি যাইনি দাদির শেষকৃত্যে




মিশেল।

ধন্যবাদ

৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২৫

নক্ষত্রচারী বলেছেন: স্মৃতিগুলো বেঁচে থাক নক্ষত্রের মত ।

আমার দাদী খুবই অসুস্থ । একটু দোয়া করবেন ওনার জন্য ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬

সোমহেপি বলেছেন: আপনার দাদির জন্য শুভকামনা।

৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩১

রোমেন রুমি বলেছেন: পরিবার-বন্ধন অথবা ভালবাসা যেটুকুই এই জিবনে পাওয়া হল তা ওই দাদুর (দাদি) কাছ থেকেই ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৮

সোমহেপি বলেছেন: দেখতে গিয়েছিলি ?

১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৩

নস্টালজিক বলেছেন: অকাব্যিক মৃত্যু!



খুব ভালো লিখসো!




ভালো থেকো, সোম!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৯

সোমহেপি বলেছেন: ধন্যবাদ

রানা ভাই

১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: দাদি মারা যাবেন বয়স হলে যেমনটা সবাই বুঝতে পারেন। বাবাকে বলে রাখলেন তুই আমার কাফনের কাপড় কিনে দিবি ঘরের ধান বেচে। রফিক কে না করবি তার টাকায় ঘুষ থাকতে পারে। আমি ঘুষের টাকার কাপড় পড়ে কবরে যেতে চাইনা। ... আপনার এ কথাগুলো অন্য কোথাও পড়েছিলাম, মনে পড়ে, কিন্তু স্থান মনে পড়ে না।

মর্মস্পর্শী লেখা। খুব সৃজনশীল। আপনার জন্য এ নতুন কিছু নয়, বরাবরের মতোই ক্লাসিক।

মাঝখানের ইল্যুশন খুব চমৎকার হয়েছে।

আমার দাদি ভীষণ সৎ আর কৃপণ ছিলেন। দাদির অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্ত্ব সম্পন্ন চরিত্রের পরিচয় পাই। আমার মহাপরাক্রমশীলা দাদির তখন বয়স ছয়, পুতুলের বিয়ে ফেলে দাদার বউ হয়ে এলেন। দাদি বলেন- বিয়ের তিনবছর পর আমি সাবালিকা হই'।

দাদির শেষকৃত্যে না থাকতে পারার বেদনা পাঠকের মনেও সঞ্চারিত হচ্ছে। দাদিরা এতো প্রিয় থাকে নাতিদের কাছে। আমি আমার দাদির কলজের টুকরো ছিলাম। দাদিকে ছাড়া আমি কিছুই বুঝতাম না। আমার দাদির মৃত্যু হয় দীর্ঘদিন দুরারোগ্য রোগে ভুগবার পর। বাবার সাথে তখন আমি ফরিদপুরে। লঞ্চে যাতায়াত করি। চাষাবাদ ও ফসল তুলবার সময়ে আমার নানা ওখানে গিয়ে দাদির অসুখের কথা জানালে বাবা ও আমি দাদিকে দেখতে আসি.... সাতদিন বাড়িতে ছিলাম। দাদির শরীর একেবারে পঁচে গেছে। শরীরে কিরা ধরেছে। দুর্গন্ধে তার কাছে যাওয়া যায় না। আমি যার কলজের টুকরো ছিলাম, সেই দাদিকে আমি একবারের জন্যও দেখতে গেলাম না তার ঘরে, আর বাড়িভর্তি একটা মানুষও আমাকে দাদির ঘরে নিয়ে বললো না- এই দেখো- তোমার পরানের পরান। আমার বয়স তখন ৬ কি ৭ বা ৮ বছর। এ কথা মনে পড়লে খুব কষ্ট পাই। আমরা ফরিদপুরে ফিরে যাই। যেদিন ফিরে যাই দাদি সেদিনই মারা গিয়েছিল।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৫

সোমহেপি বলেছেন: খলিল ভাই ,প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি দেরিতে জবাব দেবার জন্য।

আমার কাকা কিছুদিন আগে মারা যান।ওনার কিছুদন পর দাদি।কাকার মৃত্যুটাকে নিয়ে কোনরকম সাহিত্য করার চেষ্টা করিনি।জীবন যেমন হয় তেমনটাই তুলে দিয়েছিলাম এই পোষ্টে

Click This Link

যেটা লেখার সময় আমি পাগলের মত কাঁদছিলাম...
আমরা চোখ বুজলেই টের পাই আমাদের ভেতরটা কত ফাকা কতটা শূণ্য ,মিথ্যে পূর্ণতায় ভরে আছে।বড় কষ্ট লাগে একান্ত নিজস্ব ভণ্ডামীর কাছে।

ভাল থাকবেন
আপনার দাদির জন্যও কল্যাণ কামনা করছি।

১২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: দাদির রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ তাঁকে বেহেশ্‌ত নসিব করুন। আপনার মনেরও শান্তি কামনা করছি।

১৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২৫

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: আমার দাদী, দাদীবাড়ি নিয়ে গত ঈদে একটা লেখা লিখেছিলাম। দাদী অনেকদিন ধরেই ভীষণ অসুস্থ, এখন তাঁর কষ্ট সীমা ছাড়িয়েছে। কিন্তু এমনই এক পরিস্থিতিতে আছি যে একবারের জন্য তাঁকে চোখের দেখা দেখতে যেতে পারছি না।

আপনার দাদীর জন্য দোয়া রইল। যেখানেই আছেন ভাল থাকুন তিনি।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৫

সোমহেপি বলেছেন: পড়তে হবে তাহলে।

এবার সামনের ঈদে চলে যান সময় করে।

১৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৩

রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: নিজেকে আমার অনেক আনলাকি মনে হয়,তার মধ্যে একটা হল দাদা দাদীর আদর পাইনি।জন্মের আগেই তারা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।
শুনেছি আমার দাদীর সাথে আমার বেশি কিছু মিল আছে,আব্বু আমাকে ছোট আম্মু ডাকতো,আর মাঝেমাঝেই বলত দাদীর সাথে মিলের ব্যাপারটা।আমার ধারণা দাদীকে অনেক ভালবাসত বলেই আমার মাঝে তার ছায়া খুঁজে পেত।

" দেখতে হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে মানুষের আদিখ্যেতা। " এই ব্যাপারটা মিলে গেল।মৃত্যুর পরে কিছু মানুষের অতি আবেগ,আনুষ্ঠানিকতা আমি ঠিক সহ্য করতে পারিনা,ভাল লাগেনা,আদিখ্যেতা মনে হয় তাই এসব থেকে দূরে থাকি।এজন্য অনেকেই বিরক্ত আমার উপর আমি জানি,বুঝি কিন্তু কিছুই বলিনা কারণ যে বুঝতে চায়না তাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।
কাল আমার নানির প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী ছিল আমি সেখানে যাইনি,আমি জানি এ নিয়ে তারা কথা বল্বে।সারা বছর ভুলে থেকে কেবল বিশেষ কয়টা দিনে তসবিহ হাতে বসে থাকা,জায়নামাজে বসে থাকা,কবর জেয়ারত করা আমার মন থেকে আসেনা তাই আমি করিনা।দিন তারিখ হিসেব করে আমি শোক প্রকাশ করতে পারিনা,দোয়া করতে পারিনা,সেটা যখন ভেতর থেকে আসে তখনই করি কেবল, তাই অনেকের কাছে আমি মানুষটা সুবিধার না :)
কাল যখন নানির অনেক কিছু মনে পড়ছিল তখন কেবল আমার বন্ধু ডাইরীটাকে জানিয়েছি,কারণ আমার রিলেটিভরা আমাকে কখনও বুঝেনা,তাদের আনুষ্ঠানিকতা যেমন আমার কাছে আদিখ্যেতা মনে হয় ঠিক তেমন আমার এরকম চিন্তা,আচরণও তাদের কাছে আদিখ্যেতা মনে হয়।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ভাইয়ার দাদির মত আমার নানিও অনেক কষ্ট পেয়ে রোগে ভুগে মারা গেছেন।
আপনার দাদি পরপারে ভাল থাকুন,আমাদের সবার যারা না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন তাদের সবাই যেন সেখানে ভাল থাকে।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৯

সোমহেপি বলেছেন: যারা বুঝে না তাদেরকে বুঝাতে হবে।

বুঝাবুঝিতে ফাঁক রাখা চলবে না।

ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.