নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।উপরের লাইন দুটো আমার অনেক পছন্দের, যদি আপনার কাঁধেও কাজটি পরে করে দিয়েন ভাই।

সময়ের গ্যাঁড়াকল

সময়য়ের তাড়নায় আজ আমি পড়ে আছি সময়য়ের গ্যাঁড়াকলে।

সময়ের গ্যাঁড়াকল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিত্ত হীন মধ্যবিত্ত

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৬

আমরা মধ্যবিত্ত


আমাদের বাপ জীবনে বিরাট কিছু করতে পারেননি,
৭১ এ যুদ্ধের বাজারে দাদা সম্পত্তির পাহাড় বানিয়ে যাননি।
আমরা থাকি ভাড়া বাসায়। ঢাকায় থাকতে পারা আমাদের জীবনের বড় সার্থকতা।
আপোষ করে বেঁচে থাকতে পারা আমাদের বড় বৈশিষ্ট্য।

আমরা মাসে দশ হাজার টাকা আয় করি, ব্যয় করি বারো হাজার।
তারপরেও কীভাবে দিনের পর দিন আমরা চলছি আর চলছি, সেটা একটা বিরাট রহস্য।
আসল আয়ের কয়েকগুণ বেশি জাঁকজমকের স্বপ্ন দিনের পর দিন দেখে যাই আমরা, বাস্তবে সেটাকে ফলতে না দেখে কষ্ট পাই। মিশি আমরা উচ্চবিত্তদের সাথে, এবং তাল রাখতে গিয়ে খাবি খাই।

আমাদের বাবাদের কাছে প্রতিটি পয়সার হিসেব দিতে হয়, কোথায় খরচ করেছি, কীভাবে করেছি। বাবাদের আমরা ভয় পাই, এবং যাবতীয় অভিযোগ করি মায়েদের কাছে। গৃহবধূ মা, বেচারিরা কোথা থেকে যে টাকা পান, কীভাবে পান - সেটা আমরা জানার চেষ্টা করি না। শুধু শখের কিছু চাইলে কোথা থেকে যেনো টাকা এনে দেন - এটুকু আমরা জানি।


মাসের শেষের তিনদিন আমরা মাছ-মাংস খেতে পাই না, ডিমের ঝোল খাই।
মা লজ্জা চেপে বলেন, "আজকে এই রান্না হয়েছে।" সামান্য খাবারের মধ্যে আমরা অসাধারণ স্বর্গীয় সুখ খুঁজে পাই।


আমরা রিকশায় চড়ি, লোকাল বাসে ঝুলি।
একান্ত দরকার ছাড়া সিএনজিতে আমরা খুব একটা চড়ি না।
কারও প্রাইভেট কারের সামনের সিটে বসতে পারলে নিজেকে আমরা গাড়িটার মালিক বলে মনে করি।


আমাদের প্রেম, ভালোবাসা ইত্যাদি আবেগ সম্পর্কিত ব্যাপার নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামালে চলে না। যারা ঘামায় তারা কেউ ইতিহাস হতে পারেনি, তারা হেরে গিয়েছে। বাবা-মায়েরা তাই আতংকিত থাকেন আমাদের জীবনে প্রেমের গন্ধ পেলে।


আমরা শিল্প ভালোবাসি, সাহিত্যও ভালোবাসি। পরিবারে আমাদের গান-বাজনার চর্চাও থাকে অল্পবিস্তর। তবে সন্তানদের মধ্যে কেউ শিল্পকে পেশা বানাতে চাইলে আমরা বিস্তর আপত্তি জ্ঞাপন করি। আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি আবৃত্ত বাক্য হচ্ছে, "এসব করে পেট চলে না।"


আমাদের সন্তানদের ওপরে আমরা চাপিয়ে দিই জীবনে মেলাতে না পারা যত অপূর্ণ চাওয়া-পাওয়ার হিসেব। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলে ভালো, না হলে দিনের পর দিন আমরা বিসিএস পরীক্ষা দেই। পায়ের তলে শক্ত মাটি খোঁজা আমাদের চিরন্তন অভ্যাস।


আমরা ছেলে-মেয়েদের সরকারী ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে চাই, এর বেশি খরচ করার সাধ্য আমাদের কোনওদিনও ছিলো না। ভাবখানা এমন, আমাদের সংসারে মধ্য-মেধার সন্তান জন্মাতে নেই। যদি ভুলে একটা কুলাঙ্গার জন্ম নিয়েই নেয়, তবে তার ওপরে সব রাগ ঝেড়ে মনে মনে অশ্রুপাত করি, আর বলি, "এর বেশি সামর্থ্য ছিলো না আমাদের।"


ছাত্রজীবনে অনেক আশা নিয়ে প্রবেশ করি আমরা, ভাবি বিরাট কিছু করে ফেলবো। পাশ করে বের হয়ে মামা, চাচাদের খোঁজে দৌড়াই। মিলে গেলে ভালো, না মিললে বেকার বসে থাকতে হয় আর "কিছু একটা হয়ে যাবে" ভাবতে ভাবতে দিন পার করতে হয়।


সন্তানদের বিদেশ পাঠাতে পারলে আমাদের চেয়ে সুখী আর কেউ হয়না। বিদেশ গিয়ে সেই সন্তান যখন আমাদের ভুলে যায়, তখনও আমরা বড় গলা করে বলি, " আমার ছেলে বিদেশ থাকে।"


অবচেতন মনে আমরা ছেলেই চাই, মেয়ে হলেও অবশ্য আপত্তি নেই, তবে তাকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। মেয়েদের পড়ালেখা আমাদের কাছে মূল্য রাখে অবশ্যই, তবে ছেলেদের মতো নয়।


আমরা শান্তিও খুঁজি, পিতৃপ্রদত্ত ধর্মটাকেও রাখতে চাই। আমরা পারতপক্ষে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করতে চাইনা লোকলজ্জার ভয়ে। পরিবারের মধ্যে যে এই কাজটি করে, পারিবারিকভাবে আমরা তার সাথে সম্পর্ক এড়িয়ে চলি।

আসল কথা মধ্যবিত্তদের কোন প্রকার বিত্তই যথেষ্ট পরিমাণে নাই। সে হোক না কেন আর্থিক কিংবা মানসিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.