নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলিয়েনের কবলে জ্বীন (একটি রম্য ছোটগল্প)

০৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬




রহিমুদ্দির নতুন বউ খুব রূপসী।বছরের পর বছর পিল পিল করে মেয়ে জন্ম দেয়ায় আগের বউয়ের উপর ক্ষেপে গিয়ে রহিমুদ্দির সুদূর গ্রাম থেকে এক চালচুলোহীন জেলের মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে।মেয়ের যে বিয়েতে মত ছিলনা তা কি সে বুঝেনি?কিন্ত টাকা ঢেলে বাপের মন জয় করতে পারলে মেয়ে ঘরে আনতে কতক্ষন?

মেয়ে বিয়ের আগে ঘাড় ত্যাড়ামী করলেও বিয়ের পর পোষমানা গাভীর মত শান্ত হয়ে গেছে।কে জানে হয়ত মনের মানুষকে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই বুঝেই সে হাল ছেড়ে দিয়ে শোকে দুঃখে কাতর হয়ে নেতিয়ে পড়েছে।এদিকে মাস পেরোতেই লক্ষী মেয়ের মত পোয়াতি হয়ে যাওয়ায় রহিমুদ্দির মনে আনন্দের ফোয়ার ছুটছে।একেতে কচি বয়স তারপর নয়া পোয়াতি, বউয়ের দেহে রূপ যেন আর ধরে না।লাল শাড়ির ঘোমটা দিয়ে সন্ধ্যেবেলা উঠোনে বেরোলে মনেহয় যেন পূর্ণিমার চাঁদ উঠোনে নেমেছে।

এই রূপে মোহিত হয়েই বুঝি জ্বীনের বাদশার খাশ উজির পরাক্রমশালী ক্বেহেরমান রহিমুদ্দির বউয়ের প্রেমে পাগলপারা হয়ে উঠেছে।এই অঞ্চল দিয়ে মাসে দুচার বার ভ্রমণ সে সব সময়েই করে।গোল বাধল মাস দুয়েক আগে, যখন ভর সন্ধ্যেবেলা মেঘের মত এলোচুলে রহিমুদ্দির বউ পুকুর ঘাটে নাইতে নেমেছিল।ঝড়ের গতিতে ভ্রমনরত ক্বেহেরমানের নজর সেইদিনইই রহিমুদ্দির বউয়ের উপর পরে।তারপর থেকে রহিমুদ্দির বাড়ির উঠানের কোনে ঝাঁকড়া তেঁতুল গাছে সে অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছে।

তার এই ইশক এর কথা কোহেকাফ নগরীর কারো জানতে বাকি নেই।তার এক হাজার আটান্নজন বিবি তার উপর খুবই নারাজ।বিশেষ করে বড় বিবি মেহেরজান প্রতিদিন দুইবেলা ঝগড়া করে।বাদশাহ ও সেদিন সবার সামনে ঠাট্টা করতে ছাড়েননি।

সভার মন্ত্রী তাকে আড়ালে ডেকে বলেছে ইনসান বিবি থাকা খারাপ কিছু নয় হে।আমাদের বাপ দাদাদের আমলে দুচার দশ জন ইনসান বিবি সবারই থাকতে।তবে কিনা আজকাল ইনসানগুলো কেমন খবিশ টাইপের হয়ে গেছে,তেমন আলাভোলা আর নাই।ভয়ও পায় না, আসরও ঠিকমত হয়না।হবেই বা কিভাবে?আর কি কেউ চাঁদ উঠলে বাইরে বেরোয়, না জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে?এলোচুলে ভর দুপুর বা সন্ধ্যে বেলা পুকুরঘাটে আসেই বা কয়জন? রাতদিন ওই চলন্ত ছবি ভরা বাক্সের সামনে বসে থাকে।এছাড়াও আছে আরেক ছোট বাক্স মাঝে মাঝে যেটা ট্যাঁ ট্যাঁ করে আওয়াজ করে ওঠে আর ইনসানগুলো সেটা কানে ধরে বকবক করতে করতে দিনদুনিয়া সব ভুলে যায়।আবার যদি কোনোভাবে টের পেয়েছে সবকিছুতে জ্বীনের হাত আছে তবেই পীর ফকির ধরে জব্দ করে দেয়ার পায়তারা করে।আবার একদল নালায়েক ইনসান আছে যারা অদ্ভুত লেবাস পরে তিন ঠ্যাং ওয়ালা যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হয়ে যায় যা থেকে আসমানের বিজলীর মত রোশনি বের হয়।ওরে বাবা!সে বড় ভয়ানক জিনিস। একবার সেই রোশনি গায়ে পড়লে টানা সাতানব্বই দিন বদহজম নিশ্চিত,তাছাড়া চোখের মধ্যেও বিজলী চমকাবে অন্তত সাঁইত্রিশ দিন।তাই বলছি যাই কর এই সকল বিপদ থেকে দূরে থেক।


তবে ক্বেহেরমান বরাবরই সাবধান থেকেছে এসব ব্যাপারে।আসর করার ও চেষ্টা করেনি যদিও সেটাই হত মেয়েকে বশ করার সহজ উপায়।তার মতে আসর টাসর করা নিম্নজাতের খবিশ জ্বীনের কাজ,তার মত খান্দানি বংশের লোককে এসব মানায় না।সে শুধু কাকের বেশে দিনের বেলা গাছে বসে থাকা,কালো বিড়াল সেজে বউয়ের পাতের ঝুটোকাটা খাওয়া বা কালো ভ্রমর সেজে গুনগুন গান গেয়ে বেড়ানো এসবই করেছে এতদিন।

সেদিন আকাশে বিশাল এক পূর্নিমার চাঁদ উঠলো।সেই সাথে বইতে লাগল ঝিরিঝিরি বাতাস।ক্বেহেরমান এই কয়েকমাস সুযোগের অপেক্ষায় ছিল কিন্ত বউকে কখনোই একা পাওয়া যায় না, রাতে প্রকৃতির ডাকে গেলে রহিমুদ্দি বিড়ি ধরিয়ে সাথে যায়।রহিমুদ্দি ব্যাবসার কাজে বাইরে গেলে এক বিধবা বুড়ি তাকে পাহারা দেয়।বুড়ির গায়ে অন্তত পঞ্চাশটা তাবিজ, ক্বেহেরমান কাছে ভিড়তেই পারে না। সেদিনও কালো বিড়াল সেজে সে উঠোনের এককোনায় বসে ছিল।মাঝরাত পেরোতেই রহিমুদ্দির বউ ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলো।চোখে তার গভীর ঘুমের রেশ,পেটে আটমাসের সন্তান তাই শরীরটাও ভারী হয়েছে অনেকটা।সেদিন আর রহিমুদ্দির সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না,জ্বরের ঘোরে ঘুমাচ্ছে বলেই হয়ত আজ বউ তাকে ডাকেনি।আশেপাশে ভাল করে দেখে নিয়ে বউটি পায়খানা থেকে বেরোনোমাত্রই সে বশীকরণ মন্ত্র দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।তারপরই টুক করে তাকে তুলে নিয়ে শুন্যে ভেসে পড়ে কারন এ ঘটনার কোন সাক্ষী থাকুক এটা চায় না। এজন্যেই তো তার এত দিনের অপেক্ষা!

চাঁদের আলোয় ক্বেহেরমান রহিমুদ্দির বউকে নিয়ে অনেকদূর ভেসে যায়।মনের আনন্দে সে গুনগুন করে একটা গজল ও ধরেছিল এমন সময় আকাশে ঠিক তার সামনে একটা আলোর ঝলকানি দেখা যায়।চমকে উঠে ক্বেহেরমান দেখে বড় একটা ভাসমান থালার মত জিনিসের উপর একটি বিদঘুটে প্রানী দাঁড়িয়ে আছে।কিলবিলে প্রানীটির রঙ মেহেরজানের ওড়নার মত গোলাপি।প্রানীটি তার দিকে বিদঘুটে একটা অস্ত্র তাক করে বলে ওঠে- সাবধান হও হে অমানব সন্তান! হাতের মানবীটিকে একপাশে রাখিয়া সরিয়া দাঁড়াও।

ব্যাপার দেখে ক্বেহেরমান প্রথমে ভড়কে গেলেও রহিমুদ্দির বউ এর কথা আসাতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল-তুমি কে হে নালায়েক? কোন সাহসে আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছ?সাথে যাকে নিয়ে যাচ্ছি সে আমার হবু বেগম। কেন তাকে শূন্যে রেখে দেব?ইনসান জাতের যে শূন্যে ভাসার ক্ষমতা নেই তা তুমি জাননা?
প্রানীঃ তুমি কি বলিতেছ অবার্চীন অমানব তা আমার বোধগম্য হইতেছে না।বেগম আবার কি ধরনের প্রাণী?আমার অনুবাদ যন্ত্রে এ শব্দের কোনো অর্থ নেই।মূল কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে আমার সময় লাগিবে দুই হাজার তিনশত সাত দশমিক দুই তিন পিকো সেকেন্ড।ততক্ষনে নমুনা একহাজার তেইশ কে আমি তোমার কবল থেকে উদ্ধার করিব।

একথা বলেই প্রানীটি তার বিদঘুটে যন্ত্রের সুইস টিপে দেয়।সেখান থেকে জ্যোৎস্নাময় নীল আলোর রশ্মি এসে ক্বেহেরমানের হাত থেকে পাঁজাকোলা করে ধরে রাখা রহিমুদ্দিনের বউকে আলতো করে তুলে নেয়।প্রানীটি যন্ত্রটি ঘুরিয়ে বউটিকে নিরাপদ দূরত্বে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখে এবং যন্ত্রটি ভাসমান যানের সাথে আটকে ফেলে। ব্যাপার দেখে ক্বেহেরমানের মুখে কিছুক্ষন কথা সরে না।তারপর সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে-###কি বাকোয়াস করছিস নালায়েক!!! কিসের নমুনা? কিসের একহাজার তেইশ? আমার বেগম করবো বলে এই জেনানার উপর আমি একশ বিরাশী দিবস রজনী নজর রেখেছি, বিড়াল সেজে ঝুঁটোকাটা পর্যন্ত খেয়েছি আর তুই তোর ওই কিলবিলে ঠ্যাং নিয়ে এসে দাবি করছিস এই জেনানা তোর নমুনা?

প্রানীঃ আমাদের গ্রহ অতীত কালে অতি উৎপাদনশীল ছিল। কিন্ত গত কয়েক শতাব্দীকাল ধরে খাদ্য উতপাদন বাড়ানো যাইতেছিল না। তাই জনসংখ্যাও বৃদ্ধি করা যাইতেছিল না।এদিকে পার্শ্ববর্তী গ্রহের জনসংখ্যা পিলপিল করে বাড়িয়াই চলিয়াছে। আমাদের নক্ষত্রের দুই হাজার তিনশত একান্নটি গ্রহের অনেকগুলোই তাহারা দখল করিয়া ফেলিয়াছে।তাহারা আমাদের শত্রু! তাই আমাদের বিজ্ঞানীগন হইরান হইয়া খাদ্য উতপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাইতেছিল। এক দশক আগে এক বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেন নবজাতক প্রানীর কান্নার শব্দে ফসলের উতপাদন দ্বিগুণ বাড়িয়া যায়।

সমস্যা হচ্ছে আমাদের নবজাতকেরা কান্নাকাটি করেনা।সেই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর থেকে আমরা নক্ষত্রপুঞ্জের বিভিন্ন গ্রহ থেকে নানা প্রানীর নবজাতক ধরিয়া পরীক্ষা করিয়াছি।আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই গ্রহের মানব সন্তানের কান্নার সাথে তুলনা করার মত কিছুই নেই।এমন কান্না এই জগতের কেহ কাঁদিতে পারেনা।তাছাড়া একবার শুরু হলে তাহা সহজে থামিতেও চায় না। এই কান্নার প্রভাবে আমাদের ফসলের উতপাদন দশগুন বাড়িয়াছে। এজন্যেই আমি এই সন্তানসম্ভবা মানব রমনীকে লইয়া যাইতেছি।

ক্বেহেরমান অবাক হয়ে এই প্রানীটির কথা শুনছিল।এই পর্যন্ত শুনেই সে অধৈর্য হয়ে বলে উঠল -সে যাই হোক তাই বলে কি জেনানা শুদ্ধই নিয়ে যেতে হবে!এই দুনিয়ায় ইনসান জাতের মধ্যে কি নবজাতকের অভাব?চারিদিকে গিজগিজ করছে।সেখান থেকেই একটা তুলে নিয়ে যাও না হে নালায়েক প্রাণী! আমার বেগম করব বলে এতদিন যাকে নজর দিয়ে রেখেছি তুমি কিছুতেই তাকে নিয়ে যেতে পারবে না।

প্রানীঃ আমার অনুবাদক যন্ত্রে মূল কম্পিউটার থেকে বেগম কথাটির অর্থ চলিয়া আসিয়াছে। এর অর্থ হচ্ছে 'বিবাহ নামক প্রক্রিয়ার দ্বারা বিনামূল্যে ক্রয়কৃত ক্রীতদাসী। যাহারা আজীবন রন্ধন, সেবা যত্ন,সন্তান পালনসহ গৃহের সকল কাজ করিয়া থাকে।কিন্ত তার বদলে কোনো পারিশ্রমিক পাইয়া থাকে না। তাহারা লাথি-গুঁতো, চপোটাঘাত,প্রহার এবং গঞ্জনা খাইয়া বাঁচিয়া থাকে এবং যে গৃহে জীবন অতিবাহিত করে সে গৃহের অধিকার পায় না।তাই তাহাদের তালাক নামক প্রক্রিয়ার দ্বারা খেদাইয়া দিলে তাহারা পথে বসিয়া যায়'।বেগম এর সমার্থক শব্দ হইতেছে 'কলুর বলদ'। যার অর্থ হইতেছে 'এক প্রকারের চতুষ্পদ প্রানী যাহার ভারবাহী কিন্ত ফলভোগী নয়। তোমাকে আমি কোনোভাবেই এই অপূর্ব নমুনাটির সাথে এমন ভয়ানক কান্ড ঘটাইয়া উহাকে নষ্ট করিতে দেব না।কোনো ভাবেই তুমি তাহাকে বেগম করিতে পারিবেনা।

ক্বেহেরমানঃ খামোশ নালায়েক! কোনোভাবেই তুই আমার কবল হতে এই জেনানাকে নিয়ে যেতে পারবি না তার আগেই তুই চিরতরে ধংস হয়ে যাবি!!! হাঃ হাঃ হাঃ

এই কথা বলেই ক্বেহেরমান ভয়ানক তান্ডব শুরু করে দিল। কখনো তাল গাছের মত বড় হয় কখনো এক আঙুল পরিমান ছোট। কখনো লাল হয়, কখনো নীল,কখনো কুচকুচে কালো।কখন মস্ত বাঘের রূপ ধরে, কখনো অজগর সাপের।তাতে কাজ না হলে সে তার সবচেয়ে ভয়ানক চেহারা ধরে চারিদিকে দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করল। তার ভয়াল চেহারা দেখে আকাশের পাখিরা পালিয়ে গেল,পানির মাছেরা থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। কিন্ত সেই আজব প্রানী একটুও ভয় পেল না।

শেষে রেগেমেগে যখন ক্বেহেরমান গনগনে গরম আগুনের গোলা তার দিকে ছুড়ে দেয়ার চেষ্টা করল তখন সে ছোট একফুট লম্বা লাঠির মত অস্ত্র বের করে সুইচ টিপে দিল,সেখান থেকে নীলচে আলোর একটি স্তম্ভ তাকে ঘিরে ফেলল আর মূহুর্তেই ক্বেহেরমান তার আগুনের গোলা সহ জমাট বরফে পরিনত হলো।আর একটি সুইচ টিপতেই জমাট বরফের আকার ছোট হতে হতে প্রায় একটা চকলেটের আকার ধারন করল এবং নীল আলোসহ তা অস্ত্রের মধ্য ঢুকে গেল।

অদ্ভুত মহাজাগতিক প্রানীটি ধীরেসুস্থে আর একটি বোতাম চেপে ধরল আর টুক করে ছোট একটা বোতল খসে প্রানীটির হাতে। বোতলের মধ্যে ক্বেহেরমানের জমাট আকৃতি হঠাত করেই স্বাভাবিক হয়ে গেল,কিন্ত তার আকার তখন বড় জোর এক ইঞ্চি,তাই সে কেমন যেন ভেবাচেকা খেয়ে বোতলের মেঝেতে বসে রইল।

প্রানীঃ হে অমানব সন্তান তুমি এতক্ষন ধরিয়া যে বিচিত্র নৃত্য পরিবেশন করিলে তাহা বড়ই উপভোগ্য,তবে কিনা আগুনের গোলা লইয়া লোফালুফি করাটা উচিত নহে কারন ক্ষেত্র বিশেষে তাহা বড়ই বিপদজনক হইতে পারে,বিশেষ করিয়া নমুনা এক হাজার তেইশের জন্য।এমন একটি উতকৃষ্ট নমুনা ক্ষতিগ্রস্ত যাহাতে না করিতে পার সেইজন্যে তোমাকে এই বোতলে ভরিয়া দিলাম।
ক্বেহেরমান এই কথা শুনেই বোতলের মধ্যে তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল-তারপর বাজখাঁই গলায় চিৎকার শুরু করল।

ক্বেহেরমানঃ বেতমিজ,বেআক্কেল, বেশরম, নালায়েক!!! তোর কতবড় হিম্মত আমাকে এই ছোট্ট বোতলে ভরেছিস?আমি ক্বেহেরমান! কোহেকাফ নগরের উজির! আমাকে দেখলে জ্বীন- ইনসান, পশুপাখি থরথর করে কেপে উঠে আর তুই আমাকে বেইজ্জত করার ষড়যন্ত্র করছিস!! এখনি আমি এই বোতল ভেঙে বের হয়ে তোকে কতল করে আমার হবু বেগমকে ছিনিয়ে নেব।

প্রানীঃ তুমি বৃথাই আস্ফালন করিতেছ।এই বোতল সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি, সব ধরনের পদার্থ এবং শক্তিকে ভেতরে আটকে রাখতে পারে।তোমার আগুনের গোলা এর কিছুই করিতে পারিবে না বরং তা প্রতিফলন করিয়া তোমাকেই ভষ্ম করিয়া দেবে।

একথা বলতে বলতে প্রানীটি ভাসমান যানটির একটা সুইচ টিপে ধরা মাত্রই একটি সরু দন্ডের মাথায় ছোট একটি রকেট উঠে আসল।সে সেই রকেটের মাঝামাঝি একটি খাঁজের মধ্যে বোতলটি রেখে সে বলল---

প্রানীঃ হে অমানব সন্তান, তুমি যদিও ভীষণ বদমেজাজি তথাপি তোমার নৃত্য ও অন্যান্য প্রতিভা দেখিয়া আমি অতিশয় মুগ্ধ হইয়াছি।তাই তোমাকে এই যানে করিয়া আমাদের গ্রহে মহা কমান্ডারের নিকট উপহার স্বরূপ পাঠাইয়া দেব।ওখানে বিনোদন কেন্দ্রে তুমি তোমার প্রতিভা প্রদর্শন করিতে পারিবে।আমাদের বিজ্ঞানীগন তোমার তর্জন গর্জনের তরঙ্গ দিয়ে কোনো নতুন ফসল ফলানো যায় কিনা পরীক্ষা করিয়া দেখিবেন।

এই বলে প্রানীটি রকেটের গায়ে একটি সুইচ টিপে দেয়, সাথে সাথে নীলচে আলোর ঝলক দিয়ে রকেটটি শুন্যে ভেসে পরে,সেই সাথে বিচিত্র ভাষায় কাউন্টডাউন শুরু হয়।বোতলে আটকা পরা ক্বেহেরমান ভয়ানক চেঁচামেচি শুরু করে।প্রানীটি বলে - ওহে বাপু এবার তোমার গর্জন থামাও! আমি এখনি বোতলের শব্দের ফিল্টার বন্ধ করিয়া দেব।তখন তোমার গর্জন প্রতিফলিত হইয়া তোমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিয়া পর্দা বিদীর্ণ করিয়া দেবে ফলে তুমি বধির হইয়া যাবে।

কাউন্টডাউন শেষ হতেই ছোট্ট রকেটটি আলোর দশগুন গতিতে মহাআকাশে ছুটে যায়,চোখের পলকেই সেটি পরাক্রমশালী ক্বেহেরমানকে নিয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যেতে থাকে।

মহাজাগতিক প্রানীটি এবার রহিমুদ্দীর বউকে নিয়ে কাছের দ্বীপে নেমে আসে।গ্রহের ফসল উন্নয়ন ল্যাবরেটরিতে খবর পাঠানো হয়েছে, নমুনা একহাজার তেইশকে বিপুল মহাকাশের পথ ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় লাইফসাপোর্ট সহ মেডিকেল যান পাঠানো হয়েছে যা এসে পৌঁছাতে লাগবে।ততক্ষন নমুনাকে এই গ্রহটির লবনাক্ত জলাশয়ে সংরক্ষন করার নির্দেশ এসেছে তাই প্রানীটি রহিমুদ্দির বউকে সাগরের পানিতে ভাসিয়ে রেখে নিজের কিলবিলে পা দিয়ে ধরে থাকে পাছে নমুনাটি ঢেউয়ে ভেসে যায়।

এদিকে রাতের অন্ধকার হালকা হতে শুরু করেছে।পশ্চিমাকাশে ভোরের আভা।মহেশখালী দ্বীপের নতুন বাসিন্দা আব্দুল মিরাজ,জাল কাঁধে নিয়ে মাছ ধরা ট্রলারে যাওয়ার পথে পানিতে কিছু ভেসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখতে পায়।লালপেড়ে হলুদ শাড়ি পড়া একটি নারীর লাশ তীর থেকে একটু দূরে পানিতে ভেসে আছে আর তাকে জড়িয়ে ধরে ভাসছে বেশ বড় একটি অক্টোপাস!! যে ককয় মাস সাগরে থেকেছে তাতে এইসব প্রানী তার পরিচিত যদিও এতবড় অক্টোপাস সে আগে দেখেনি।দয়ালু মিরাজের মনে নারীটির জন্য মায়া জেগে ওঠে।এমনিতেই সে সাহসী, তারপর মনের দুঃখে আত্মীয়পরিজন ছেড়ে সদ্য এই দ্বীপে একলা ঘর বেধেছে,তাই কোনো পিছুটান নেই।
সে অনুমান করে সাগরের এই রাক্ষুসে প্রানীটিই নারীটিকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে,তারপর সুযোগ বুঝে গলাধঃকরণ করবে।

মিরাজ এরপর অসীম ক্রোধে প্রাণীটির উপর জাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সমুদ্রের পানিতে শরীর ডুবিয়ে আর সকালের মিষ্টি হাওয়া পেয়ে মহাজাগতিক প্রাণীটির হয়তো একটু তন্দ্রামত এসে গিয়েছিল তাই সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিরাজ তাকে জালে বন্দি করে ফেলে। তারপর হাতের লাঠি দিয়ে দমাদম পেটাতে থাকে সবকিছু এত দ্রুত দ্রুত ঘটে যায় যে প্রাণীটি তার অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র টাও বের করতে পারেনা। মন মতো পিটিয়ে প্রানীটিকে আধমরা করে মিরাজ জালসহ দূরে ছুড়ে ফেলে দেয।তারপর় নারীটিকে পাঁজাকোলা করে তীরে তুলে নিয়ে আসে।আনতে গিয়েই সে বুঝতে পারে এটা লাশ নয়,ধীর লয়ে হলেও শ্বাস বইছে,শরীরও পুরোপুরি ঠান্ডা নয়।

এদিকে আকাশ বেশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে চারিদিক।এবার নারীর মুখের দিকে তাকিয়ে মিরাজ চমকে ওঠে! আরে এযে তার প্রাণপ্রিয় প্রিয়তমা রোশনী!কি তাজ্জব ব্যাপার!তার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছিল দূর গ্রামের আধবুড়া রহিমুদ্দির সাথে।মনের দুঃখে সেই কারনেই না সে এই বিজন মহেশখালীতে এসে আস্তানা গেড়েছে। মিরাজ মনে মনে ভাবে বাহ! এর মাঝেই দেখি সে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছে। এমন সময় রহিমুদ্দির বউয়ের জ্ঞান ফিরে আসে।সে উঠে বসে হতবাক হয়ে যায়! এ কোথায় এসেছে সে!চোখের সামনে মিরাজ কে দেখে তার বিশ্বাস হতে চায় না।তারপর সবকিছু মনে পড়তেই মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে থাকে।মিরাজ পরম মমতায় দুহাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরে নরম গলায় বলে ---কি হইল সোনাপাখি?আমার লগে কথা কইবা না?

রোশনীঃ কি হইব কথা কইয়া? আমারে থুইয়া দেশান্তরী হইলা।তোমার পাষাণ দিল টার মইধ্য এট্টু দুখ দরদ হইল না! বাপজানে অই বুইড়া খাটাইসটার লগে আমার বিয়া দিল।কত আশায় থাকলাম তুমি আসবা,আমারে লইয়া যাইবা।তুমি আসলা না, শুনলাম কই জানি চইলা গেছ।

মিরাজঃ আমি তো গেছিলাম তোমার বাপজানের কাছে,তোমার লগে বিয়ার কথা কইতে।হেই তো কইল তুমি অই পয়সায়ালা বুড়াটারে বিয়া করবার লাইগা এক পায়ে খাড়া।তোমার মা, বুইন ও তো হেই কথাই কইল।

রোশনীঃ হেরা তো কইবই,গাদা গাদা টাকা দিয়া ঐ বুইড়া জালিম বেবাকটিরে কিইন্না লইছে।তুমি তো আমারে একবার জিগাইলেই পারতা।বিয়া কি আমি করব না আমার বাপজানে করব? তাছাড়া সেইদিন আল্লাহরে সাক্ষী কইরা কবুল করার পর থাইকা তোমারেই তো স্বোয়ামী বইলা মাইন্না লইছি।ওই বুড়ারে কুনোদিন স্বোয়ামী বইলা মানি নাই।

মিরাজ আসন্ন প্রসবা রোশনীকে ভাল করে দেখে,মনের সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে রোশনীর হাত দুটো ধরে ব্যাকুল হয়ে বলে--- সোনাপাখি আমার বড় ভুল হইয়া গেছে! এখন সব ভুইলা যাও,আমারে বিয়া কর। আমার ঘর ভাঙা হইলেও অন্তরে তোমার জন্য দরদের অভাব নাই। আর তোমার সন্তানরে আমি আমার সন্তান মনে কইরাই মানুষ করব।

খুশি আর লজ্জায় আরক্ত রোশনী মুখটা নিচু করে বলে ওঠে--- এই সন্তান তো তোমারই! সব কথা কি ভুইলা গেছ?

আনন্দে দিশাহারা মিরাজ বলে ওঠেঃ সত্যি সোনাপাখি? আহ! আমার যে কি খুশি লাগতাছে।চল ঘরে চল।আইজই কাজি সাহাবরে ডাইকা বিয়ার ব্যবস্থা করতাছি।

আসন্ন সুখি জীবনের আশা আর আনন্দে মত্ত দুজন তরুণ- তরুণী ধীর পায়ে গৃহের দিকে হাটতে থাকে। ওদিকে দূরে জালে জড়ানো আধা চেতন মহাজাগতিক প্রানীটি ভাবতে থাকে মানবজাতি বড়ই কঠিন জিনিস।এভাবে আর নমুনা সংগ্রহ করা উচিত হবে না বরং চুক্তি সাপেক্ষে কিছু করা যায় কিনা গ্রহে ফিরে তা নিয়ে আলোচনা করে দেখা যেতে পারে।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৬

ভুয়া মফিজ বলেছেন: এটা ছোটগল্প? নাকি এটাও রম্য করলেন? যাইহোক, পড়ে আনন্দ পেয়েছি, এটাই বড় কথা!
দারুন লিখেছেন।

০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: গল্পের আকারের ব্যপারে গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুসরন করার চেষ্টা করছিলাম,এই আর কি।

মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৪

রেযা খান বলেছেন: প্রেমে পড়েছি

০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: তাই?
শুনে আনন্দিত হলাম।
প্রেম অক্ষয় হোক।☺

৩| ০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৫

নূর আলম হিরণ বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০১

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভিন গ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসল কিভাবে?

০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ঐ যে থালার মত একটা জিনিস! সেটাতেই তো আসল--

৫| ০৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: বেশ বালো।

০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০৫

সুমন কর বলেছেন: আরো একটু ছোট হলে মন্দ হতো না !! ;)

০৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৩০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: কেন যে ছোট করে লিখতে পারিনা আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।

৭| ০৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: লেখাটা বড় হয়ে গেছে।

০৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৪

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: তারপরেও যে কষ্ট করে পড়ে কষ্ট করে মন্তব্য করেছেন সে জন্য ধন্যবাদ।

৮| ০৮ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬

মুফীদ হাসান বলেছেন: বেগম শব্দটির অর্থ পড়তে গিয়ে আমার হাসি চলে আসছে! তবে দূঃখ ও লেগেছে। গল্পটা আসাধারন।

০৮ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৯

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: সত্যি বলতে গল্পটি লেখার সময়টুকু আমি অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।
অনেকদিন পর একটা পোস্ট দিলাম। সবার জন্য ভিন্ন ধরনের ভাষা এবং ডায়ালগ চয়নের জন্য ভাবতে হয়েছে বেশ।
গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমি সত্যি আনন্দিত।

৯| ০৮ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: মজা লাগল পড়ে ,চালিয়ে যান

০৯ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০১

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
ছাত্রজীবনে চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল।এখন এমন এক ব্যস্ত জীবনে প্রবেশ করেছি যে সময় করাই কঠিন।তবে লিখতে ভাললাগে। :)

১০| ০৯ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪

জাতির বোঝা বলেছেন: মজা লাগলো।

০৯ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: শুনেই আনন্দ লাগছে।

১১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০৬

নীল আকাশ বলেছেন: গল্প, থীম এবং ভাষা সবগুলিই ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।

১২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: মজা পেলাম :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.