![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৮+ জোটীয় (১৮×২=) ৩৬ ঘন্টা হরতালের ১ম ঘন্টা। ভোরবেলা এলার্ম বাজার আগেই মোবাইলে রিং। আরামের ঘুমটা হারাম করে দিল! শোয়া অবস্থাতেই ফোনটা রিসিভ করলাম। আরে..! আমেরিকা থেকে ছোট্টবেলার দোস্তের ফোন! কত্ত দিন পরে..! অতি আবেগে ভুলেই গিয়েছিলাম পাশে বউ ঘুমাচ্ছে, এত জোরে কথা বলা ঠিক হচ্ছে না। বউ কি বলে যেন একটা ঝাড়ি মারল, খেয়াল করিনি। দোস্তের সাথে কথা সংক্ষেপ করে যেই ফোনটা কাটলাম...মাথার মধ্যে একটা শব্দ স্ট্রাইক করতে লাগল...“দামড়া”! কি বিষয়, বউকি আমাকে ‘দামড়া’ বলে ঝাড়ি দিল নাকি? হতেই পারে না...
: এই, তুমি কি আমাকে দামড়া বলেছ?
- (কোন জবাব নাই)
: শুনছ...তুমি আমাকে দামড়া বলেছ?
- না, বলি নাই। দয়া করে এবার হাম্বা হাম্বা বন্ধ কর, আমি একটু ঘুমাই!
: (মেজাজ খারাপ করে উঠে গিয়ে) ওয়েত্তরি...সাতসকালে কোন অলক্ষনে প্যাঁচার মুখ দেখে দিনটা শুরু হল, আল্লাহ মালুম।
- (ঘুমে থেকে) আমাকে প্যাঁচা বলছ?
: না তোমাকে নয়। তোমাকে বললে তো পেঁচীই বলতাম....
জানের মায়া ত্যাগ করে হরতালের মধ্যে অফিসে যেতে হবে, তার উপর বউয়ের গালি...মেজাজ খুব খিটখিটে। পিচ্ছিটারে রেডী করে স্কুলে দিয়ে আসতে গেলাম ৭টার দিকে। স্কুলের গেইটে ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম, “বাই..পাপা”। পিচ্ছি গড়গড় করে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে পেছনে না তাকিয়েই চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া বলতে লাগল, “তুমি আমার পাপা না, তুমি রাজাকার। রাতে কেএফসিতে নিয়ে যাও নাই...খালি বল হরতাল, হরতাল....যাওয়া যাবে না”। হায় হায়....বউ কইল দামড়া, ছেলে কয় আমি তার বাবা না..রাজাকার! এসব কি হচ্ছে আজ? পিচ্ছিটা একবারের জন্যও পেছনে তাকাইল না, সোজা ক্লাশে। এহহহহ...এই পুচকিও আজকাল দেখি মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা ভাব দেখায়...
বাসায় ফিরে অফিসের জন্য রেডী হলাম। কিন্তু এই মেজাজে বের হতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মাথার মধ্যে ‘দামড়া, রাজাকার, হরতাল’ এইগুলান কিলবিল করছে। ধ্যাত...নাইবা গেলাম অফিসে। ড্রইং রুমে টিভিটা অন করে বসে পড়লাম, লাইভ ভাংচুর দেখব বলে। মোবাইলে ফেইসবুকও ঘাটাঘাটি করা হল অনেক্ষণ। প্রায় ঘন্টা খানেক পর মোবাইলে বউয়ের ফোন...
- (ঘুম জড়ানো কন্ঠে) অফিসে পৌঁছছো, ঠিকমতো? সমস্যা হয় নি তো?
: উমমম..এ্যা..হ্যাঁ হ্যাঁ পোঁছছি। একদম সমস্যা হয় নি!! তুমি ঘুমাও...
হা হা...ঘুমরাণীর ধারণা আমি এখন অফিসে! টের পায় নি, ভালোই হল। ঘুম থেকে উঠে বেড রুম থেকে শুধু ড্রইং রুমে আসুক....হা-ম্বা কইয়া এমন এক চিল্লানি দিমু...বুঝবে, দামড়া কারে কয়! মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে...ভালো একটা সারপ্রাইজও দেয়া যাবে! ঠিক তখনই আবার বউয়ের ফোন..ক্ষিপ্ত কন্ঠ...
- এই, তুমি কি আমার টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজেছিলা? আমার ব্রাশ ভেজা কেন??
: (হইছে কাম! রাগের মাথায় আরও কি কি না করে রেখেছি...কিন্তু সামাল দিই কিভাবে?) কি? আমি তোমার ব্রাশ দিয়ে....ছিঃ...ওয়াক, ওয়াক!
- (ক্ষিপ্ত গলায়) মানে??
: মানে, দেশে কি বউয়ের অভাব পড়ছে যে, তোমার ব্রাশ দিয়ে আমাকে দাঁত মাজতে হবে?
- কি?? চোরের মার বড় গলা?
: দেখ, আমি পুরুষ মানুষ। তুমি বড় জোড় আমাকে জিয়ার সাথে তুলনা করতে পার, খালেদা জিয়ার সাথে নয়..
- আমি এখন ব্রাশ করব কি দিয়ে?
: কেন? তোমার ব্রাশ ভেজা হলে আমার টা নিশ্চয় শুকনো-ই পাবা, ওইটা দিয়ে করে ফেল....শোধবোধ হয়ে যাবে..
- ওয়াক, ওয়াক! খেচ্ছর কোনানকার..দাঁড়াও, বাসায় আইয়া লও খালি... (ফোন কেটে দিল)
ইতিমধ্যে বাথরুমে...ঠুস, ঠাস ভাংচুরের আওয়াজ শুরু হয়ে গেছে। খাইছে রে...ড্রইং রুমে বসে থাকা মোটেও নিরাপদ নয়! সারপ্রাইজের খেতা পুড়ি...নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আস্তে করে কেটে পড়লাম। বাসার সামনে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি...কিন্তু আবার আজরাইল বউয়ের ফোন....
: কি বিষয়? তুমি কোথায়?
- অ..অফিসে.স...
: তাইলে বাসার সামনে তোমার মত কারে দেখা যাইতেছে..!!
- (আহহা...উপর থেকে জানালা দিয়া কট। তারপরও শেষ চেষ্টা করে দেখি) কি কও? আমার মত?? তোমার চোখে চশমা আছে তো??
: দেখি, চশমাটা লাগিয়ে নিই...!
- (দৌড় দিয়া পাশের মুদি দোকানে ঢুকে) দেখা যায়?
: আরে...কই গেল? এইখানটাইতো ছিল!
- যত্তসব! আন্তাজে কারে কি মনে কর, আল্লাই জানে। এমনেই সকালে ছেলে কইল, আমি তার বাবা না!!
: কি???
- বাসায় কেউ গেলে...চশমা ছাড়া দরজা খুইল না। রাখলাম, বাই....
মুদিদোকানীরে কইলাম, “তিন ডজন ভালো টুথব্রাশ দাও”। দোকানদার ইতস্ততঃ করে ৩টা টুথব্রাশ এনে হাতে দিল। আবার মেজাজ খারাপ, “এই মিয়া, তিন ডজন মানে বুঝো? তিন ডজন মানে ৩৬, ৩৬টা..!” দোকনদার থতমত খেয়ে বলল, “স্যার, ৩৬টা ব্রাশ দিয়ে কি করবেন?” কইলাম, “তোমার এত বুঝার কাম নাই! ১৮ দল ৩৬ ঘন্টা হরতাল দেয় কেন, বুঝো?” মনে মনে কইলাম, ১ বউ সমান ১৮ জন মহিলা, প্রত্যেকের ২টা করে ৩৬টা-ই লাগবে......
পাক্কা ৩৬টা টুথব্রাশ হাতে লইয়া বাসায় ঢুকে.........হা-ম্বা............
©somewhere in net ltd.