নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বানসুরি স্পেশাল

বাঁশী আর বউ এই নিয়ে সংসার

বানসুরি

কামকাজ নাই বাঁশী বাজাই আর খাই

বানসুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাগরকন্যা হাতিয়াঃ চলনা ঘুরে আসি

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১

ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ। ভিক্টোরিয়া কলেজের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু 'ওপেল' প্রস্তুত, আমার সাথে হাতিয়া যাবে। উদ্দেশ্য একাধিকঃ জীবনে প্রথম নদী ভ্রমণের এ্যাডভেঞ্চার, দ্বীপাঞ্চলের মানুষের জীবন চরিতের সাথে পরিচিতি এবং আমার মত প্রিয় বন্ধুর বাড়ীতে বেড়ানো।



নোয়খালীর চরজব্বর ঘাট হতে ইঞ্জিন চালিত নৌকোয় চড়ে বসলাম দুই বন্ধু, অন্যান্য যাত্রীর সাথে। মেঘনা পাড়ি দিয়ে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। বর্ষাকাল, নদী একটু উত্তাল। কিলো-দশেক পথ যেতে না যেতেই ওপেল বমি করল তিন-চার বার। কোন ব্যাপার না; প্রথম নদী ভ্রমণে একটু আধটু হতেই পারে। শান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলাম বন্ধুকে। ক্রমেই মেঘনার ঢেউ বড় হতে থাকল। ওপেল-এর চোখমুখ স্থির! ঢেউ আরও বড় হতে লাগল। নৌকা বড় ধরণের রোলিং করা শুরু করল।



হঠাৎ ওপেল চিৎ হয়ে গলা ফাটানো চিৎকার…"ও আল্লারে, ও আল্লা, তুই কই…তুই কইরে আল্লা…আয়রে আল্লা, আমারে বাঁচা।" তাড়াতাড়ি কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে নৌকোর মাঝখানটায় নিয়ে আসলাম। ওপেল-এর চোখ বন্ধ, হাতপা ছোড়াছোড়ি, ক্রমশ জোরে অনর্গল বলে যাচ্ছে….."আল্লারে, তুই কইরে, আয়, আয় আল্লা, আমারে….।" নারী-পুরুষ সবাই তারে শান্ত্বনা দেয়ায় লিপ্ত। এক বৃদ্ধা এগিয়ে এসে খুব মায়াবী সুরে আফসোস করে….."আহারে…!! আম্নেরা পোলাডারে কননা….আল্লা আইতেছে।" আরেকটু কাছে এসে…."বাবা, তুঁই কাইন্দোনা, আল্লা অহনই চইলা আইবো…আহারে!" বৃদ্ধার কথাগুলো ওপেল-এর কানে যাওয়ার সাথে সাথে ওপেল নিজেই খিক্ কইরা হেসে দিল এবং চোখ খুলে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে হাসতে লাগল। আমি কইলাম, "হালার ভাই, দাঁড়া..আল্লা না আইস্যা আজরাইলরে পাঠাইছে…পথে আছে..কিছুক্ষণের মধ্যে চইল্যা আইবো, দোয়া কলমা পইড়া ল'।



নৌকো হাতিয়ার ঘাটে ভিড়ল। লম্বা ও সরু কাঠের তক্তা বেয়ে নৌকা থেকে সাবই নামছে। আমি সবার পরে নামবো। এই ফাঁকে অন্যরা কিভাবে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল তক্তা বেয়ে নামতেছে তা ভাল করে দেখে রপ্ত করে নিতে বললাম বন্ধুকে। অন্য সবার নামা শেষ। ওপেলকে জিগাইলাম, "পারবিতো?" ওপেল কনফিডেন্টলি ওপর নীচ মাথা নেড়ে আল্লার নামে আমার পেছনে পেছনে তক্তায় উঠে পড়ল। পাড়ে উঠে ঘাড় ঘোরাতেই দেখি ওপেল নেই! নৌকায় তাকালাম, নেই। পাড়ের নীচে তাকালাম, ওপেল কাদা থেকে মাথা বের করার চেষ্টা করছে….সম্ভবত ফিল্মি স্টাইলে ডাইভ দিতে গিয়ে মাথা নীচে পা উপরে। ওপেল কয়েক সেকেন্ড সময় নিল মাথা বের করতে। ওপেল-এর এই সফলতায় খুশী হয়ে সবাই হাত তালি দিতে থাকল। মনে মনে বললাম তাও ভাল যে, মাথা কাদায় ঢুকায় মুখ বন্ধ ছিল, নচেৎ… "আল্লারে, তুই কইরে…। হাদারাম।”



এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ…হাতিয়ার এপিঠ-ওপিঠ সব দেখা শেষ করল ওপেল। অনেক খুশী। কিন্তু চোখ কপালে উঠিয়ে ফেলে যখনই ভাবে ফেরতে হবে। “ওরে বাপ, আবার সেই মেঘনা???” অনেক দিন তারে নিয়ে নদীতে গোসল করলাম, যদি তার ভয়টা ভাংগে! কিন্তু না, ওপেল বাড়ীতে পত্র লিখেছে…..বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে হাতিয়ায় থাকবে। উভয় সংকটে পড়লাম। কুমিল্লায় এতদিনে আমার টিউশনিগুলো টিকে আছে কিনা, আল্লাহ মালুম!



এলাকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আখতার-এর সাথে চুপিচুপি শলাপরামর্শ করে একদিন রাতে গেলাম আখতার-দের বাড়ীতে দাওয়াত খেতে। সংগে হুজুরও নিলাম একজন। কাজের মেয়ে ডাইনিংয়ে খাবার এনে দিচ্ছে। এক ফাঁকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওপেল-কে বললাম, "মেয়েটাকে ভাল করে দেখে নে। এ পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী (!) মেয়ে।" ওপেল হাসছে। খাওয়া শেষ। বাইরে বিড়ি টানতে গিয়ে ওপেলকে সিরিয়াসলি বললাম, "দেখ্, মেয়েটা কিন্তু দেখতে শুনতে খারাপ না, শিক্ষিতা। তাছাড়া তোরে মেয়ের গার্জিয়ানদের খুব পছন্দ হয়েছে। তারা যেকোন মূল্যে তোর কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চায়। আমার মনে হয় তোর রাজী হয়ে যাওয়াই শ্রেয়। হুজুরও বর্তমান।" ওপেল নিমরাজী, তবে একটু ভাবার জন্য শুধু রাত্রটি সময় চায়।



এ অবস্থায় বাড়ীতে গিয়ে শুইলাম দুই বন্ধু। সকাল বেলা ওঠে ওপেলের চিরকুট……"দোস্ত, গেলাম। প্রয়োজনে মেঘনায় ডুবে মরব……।" তাড়াতাড়ি নদীর ঘাটে গেলাম, ব্যাগ গুছিয়ে। ওপেল নৌকার মাঝখানে লম্বা হয়ে সারা রাতের না ঘুমানো ঘুম ঘুমিয়ে নিচ্ছে নিশ্চিন্তে…….

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.