নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ সব পারে কিন্তু একজন মানুষ সব পারেনা ।

মানুষ সব পারে কিন্তু একজন মানুষ সব পারেনা ।

সোর্বিয়ের

সেই সন্ধ্যার আলোহীন রাস্তাটা কোনোদিন জ্বলেনি কালও জ্বলেনি আজ জ্বলবে ! তুমি আসছো, তুমি আসবে ! ফেসবুক: আপেল মাহমুদ

সোর্বিয়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প: টুনটুনি টুনটুনি

০২ রা মে, ২০১৩ রাত ২:১২







সকালে দাদীর ডাকে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে ওঠে টুনটুনি। তিন বছর বয়সের এই ছোট্র জীবনে বেশ কয়েকদিনই টুনিকে এমন সকালে উঠতে হয়েছে। টুনি জানে কেন তার দাদী তাকে এই সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে। তাই চোখ কচলাতে কচলাতে দাদীর হাত থেকে খাবারের বাটিটা নিয়ে হাঁটতে শুরু করে টুনি। টুনি এটা কিছুতেই বোঝেনা যে কেন তার মা মাঝে মাঝে না খেয়েই গার্মেন্টসে চলে যায়। একটু দেরি করে গেলেই কি খুব বেশি ক্ষতি? মায়ের কাছে এই প্রশ্নটা বেশ কয়েকবার করতে চেয়েও ভুলে যাবার কারণে প্রশ্নটার উত্তর পাওয়া হয়নি এখনো। আজ ঠিক ঠিক জানতে চাইবে মায়ের কাছে। এসব ভাবতে ভাবতেই বড় রাস্তায় এসে দাঁড়ায় টুনি। ট্রাফিক পুলিশের আঙ্গুলে টোকা দেয়। টুনি জানে এই লোকটাই তাকে রাস্তা পার করে দেবে। ছোট্ট টুনির হাত ধরে রাস্তা পার করে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। এভাবে কয়েকবার বাবার হাত ধরেও পার হয়েছিল টুনি। বাবা ঢাকায় থাকেন। সাভারে বড় গার্মেন্টসে চাকরী করেন। বছরে দুই ঈদের একটিতে আসেন। তাই গত তিন বছরে টুনি তার বাবাকে দেখেছে তিনবার। এরমধ্যে একবারের কথা টুনির বেশি মনে আছে, আরেকবারের কথা অল্প মনে আছে আর প্রথমবারের কথা কিছুই মনে নেই। ভাবতে ভাবতেই মায়ের কাছে পৌছে যায় টুনি। ইয়া বড় গার্মেন্টস। টুনি সোজা ভিতরে চলে যায়। সবাই টুনিকে চেনে। মায়ের কাছে গিয়ে খাবারের বাটিটা দেয় টুনি। মা টুনির কপালে একটা চুমু দেয়। টুনি এখানে মার সাথে বেশি কথা বলেনা। একদিন কথা বলেছিল বলে তার মাকে মাষ্টার মতন একজন লোক ঝাড়ি দিয়েছিল। তাই টুনি এখানে বেশিক্ষন দেড়িও করেনা। বের হয়ে হাঁটতে থাকে বাড়ির পথে। বাড়ি পৌছে টুনি দেখে তার দাদী ছোটাছুটি করছে। ঢাকায় কোন একটা গার্মেন্টস ভেঙ্গে পড়েছে। দাদী তার বাবার বন্ধু নুরু চাচার মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলছে। টুনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেনা দাদী কান্না করছে কেন। তবে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে।



টুনি ঘটনাটা বুঝতে পারল ঠিক পরেরদিন। তার বাবাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। টুনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেনা যে এত বড় একজন মানুষ হারিয়ে যায় কিভাবে? টুনির মা গতকালকেই ঢাকা চলে গিয়েছিল। মাঝে মধ্যে দাদীর সাথে তার মায়ের কথা হচ্ছে নুরু চাচার মোবাইলে। দাদীর বিষয়টা টুনি ঠিক বুঝতে পারছেনা, এই বুড়িটা এত কান্না করছে ক্যান? এভাবে তিন দিন পার হয়ে গেল , টুনির বাবা নিখোঁজ। টুনির কাছে যদিও তার বাবা সবসময়ের জন্যই নিখোঁজ তবুও এবারের নিখোঁজ হওয়াটা যে অন্য যে কোন বারের চেয়ে ভিন্ন তা টুনি ঠিকই বুঝতে পারছে।



আজ সকালে টুনির মা বাড়িতে এসেছে। মায়ের বিভৎস চেহারা দেখে কথা বলার মত সাহস হলোনা টুনির। ভয়ে ভয়ে মায়ের কাছে গেল টুনি। মা টুনিকে জাপটে ধরে ডুকরে কাঁদতে লাগল। টুনি মাকে বাবার কথা জিজ্ঞেস করবে কিনা বুঝে উঠতে পারলনা।

তবুও সাহস করে বলল, "মা বাজান আইলোনা?"

টুনির মা ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করল।

টুনির হাতে দিয়ে বলল, "তোর বাজান তোর জন্য ২০ হাজার ট্যাকা পাঠাইছে আর কইছে কোনদিন তোরে দ্যাখতে আইবেনা।" বাবার না আসাটা যদিও টুনির জন্য বিশেষ কোন বিষয় না তবুও টুনি তার মাকে বলল, "বাজান কি ঈদের সমও আইবোনা?" নিরুত্তর মা টুনির দিকে তাকায় কাঁদতে লাগল। মাকে এভাবে কখনো কাঁদতে দেখেনি টুনি।



আজ শ্রমিক দিবস। টুনির মা গতকাল একটা লাল জামা কিনে এনেছে টুনির জন্য। লাল জামা পেয়ে খুব খুশিতে আছে টুনি। মা একটা বড় প্যাকেট দিয়েছে হাতে। প্যাকেটের মধ্যে কিছু খোড়মা আছে। টুনি সেটা নিয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছে। মসজিদে হুজুর আজ মিলাদ পড়াবে। রাস্তায় নুরু চাচার সাথে দেখা টুনির।

নুরু চাচা টুনিকে জিজ্ঞেস করে, "মা কই যাও?"

টুনি হাসিমুখে নুরু চাচাকে বলে, "কাইল বাবায় ট্যাকা পাঠাইছিল মসজিদে মিলাদ দ্যাওনের লাইগা, তাই মসজিদে যাই খুড়মা দিতে।"



টুনির কথায় নুরু চাচার চোখ বেয়ে জল নামতে থাকে। এ জলের অর্থ বোঝেনা টুনি, এগিয়ে যায় মসজিদের দিকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ১:২৯

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: ভালো লাগলো। :)

২| ২৭ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫

মামুন রশিদ বলেছেন: এই টুনিরা সারা জীবন বয়ে বেড়াবে বাবা হারানোর দুঃখ । কিন্তু তারা জানবেও না, তার বাবার মৃত্যর জন্য দায়ী ছিলো মানুষরুপী কিছু লোভার্থ পশুর হাত ।

৩| ২৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
ভাল লাগল।

৪| ২৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬

বোকামানুষ বলেছেন: বাস্তব :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.