![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান তাসিন সেন্ট যোসেফ কলেজের ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স এর প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল, গত ১১ই ফেব্রুয়ারিতে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে বিমান বন্দর সড়কে শেওড়া বাস ষ্টেন্ডে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হবার সময়ে দুরপাল্লার দ্রুত গামী ভ্রাম্মনবাড়িয়ার বাস তাকে শিক্ষার্থীর পোশাকে দেখে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে - ইচ্ছাকৃত ভাবে চাপা দিয়ে চলে যায়, তার পিতা গত ২ বছর যাবৎ জিবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ, তথাপি তার সন্তানের জাষ্টিজ এর জন্যে সবার দ্বারে দ্বারে আহাজারি করছে কিন্তু এখনো বিষয়টি কেউ আমলেই নিচ্ছে না কারন ঘটনা টি আলোচিত হয়নি - ভাইরাল নয়, মিডিয়ায় আসেনি, তার অধ্যায়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী অভিভাবক প্রতিবাদ বা আন্দোলন করেনি, সন্তানকে কবরে শূইয়ে এসে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসী নিয়ে মানববন্ধন করেন তার পিতা, তার কলেজ সেন্ট জোসেফে তিনি অনেক কষ্ট করে নিজে গিয়েছে, সমর্থন চেয়ে পায়নি, কলেজের শিক্ষার্থীরা ২০১৯ এপ্রিল ১৩ তারিখে প্রতিবাদ করবে বলে ফেইসবুকে একটি ইভেন্ট দেয় কিন্তু সুবিধাভোগী প্রিন্সিপ্যাল ও কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাও বন্ধ করে দেয়, তিনি মেয়র মহোদয় এর সাথে ২ দিন দেখা করে, সেন্ট জোসেফ কলেজের প্রিন্সিপাল ও সে স্কুলে ১৩ বছর পড়েছে বারিধারা স্কলারস’ র প্রিন্সিপালকে তাদের সমর্থন প্রার্থনা করে, সহায়তা, সহানুভূতি পেলনা, বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার হত্যা কান্ডের বিচারের দাবিতে তিনি একাত্বতা প্রকাশ করে-অসুস্থ শরীর নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে রাজপথে নামে, আবরার এর বাবার সাথে ফোনে কথা বলে সহানুভূতি জা্নায়, তার প্রানপ্রিয় আদরের সন্তানের নির্মম হত্যার বিচারে দেশের সকল জনগন, সাংবাদিক, পেশাজীবী সহ সকলের সহযোগিতা প্রার্থনা করে ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন DU, CU, RU, IUB, CUET, BUET, KUET, RUET, DHAKA COLLEGE, TIUMIR COLLEGE, TEJGON COLLEGE, CITI COLLEGE, BUP, NSU, AIUB , GULSHAN COLLEGE, RAMIJUDDIN, DMC, CMC ইত্যাদি সহ দেশের সকল স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের সমর্থন, সহানুভূতি, সহায়তা কামনা করে, তিনি তার প্রান প্রিয় সন্তান ফিরে পাবেন না, কিন্তু তিনি এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার চান, দিয়া-করিম আন্দোলনের পর পরিবহণের ঘাতকদের মনে শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষোভ, আক্রোশ, ক্রোধের সৃষ্টি হয় - যার ফল শ্রুতিতে তারা বেছে বেছে শিক্ষার্থীদের হত্যার মিশনে নেমেছে, অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে ঢাকার উত্তর সিটি এলাকায় একের পর এক শিক্ষার্থী হত্যা করে, শিশু ফাইজা র হত্যার বিচার হলে, আদনান তাসিন কে হত্যা করতনা, আদনান তাসিনের হত্যার বিচার হলে আবরার কে হত্যা করতনা, আবরার হত্যার বিচার হলে লাবণ্যকে হত্যা করতনা, লাবণ্যর হত্যার বিচার হলে তাঞ্জিলা কে হত্যা করতনা, তাঞ্জিলার হত্যার বিচার হলে আরিফ কে হত্যা করতনা, আরিফের হত্যার বিচার হলে সাব্বির কে হত্যা করতনা, বিচারহীনতা অপরাধিদের উৎসাহিত করে,
তিনি চাইনা #ঘাতকরা তার সন্তানের মত সড়কে আর কারো প্রান কেড়ে নেয়, ঘাতকদের উৎসাহ দিলে তারা আরো বেশি খুন করবে, এমনিতেই তাদের আক্রমণের বেশিরভাগ শিকার শিক্ষার্থী, স্কুল বা কলেজ ড্রেস পরা দেখলেই মনে হয় তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, এখনও সময় আছে, ওদেরকে থামাতে হবে, তাদের পরবর্তী টার্গেট আপনি বা আপনার আপনজনো হতে পারে !
ঘাতক মুক্ত সড়ক মনপ্রাণে ধারণ এবং খুনি ঘাতক হায়নাদের বিরুদ্ধে যদি আপনি শক্ত অবস্থানে থাকেন তাহলে যুক্ত হোন এবং ছড়িয়ে দিন প্রতিবাদের বার্তা আর আওয়াজ তুলুন একই স্লোগানে: " ঘাতক মুক্ত সড়ক চাই "
সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। থেমে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে বরের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালরে ৩ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ১৬ আগস্ট রাতে ঢাকার মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির এমবিএ’র শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, জান্নাত ও আকিব নিহত হয়েছেন। এছাড়া সাদিয়ার স্বামী ইকরাম মিয়াও নিহত হয়েছেন ওই দুর্ঘটনায়। গত ২৫ জুন নিহত হয়েছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্র জিহাদুল ইসলাম। ওই মাসের ১১ তারিখ নিহত হয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ছাত্র আকিব রেজা। একই মাসের ৫ তারিখ নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির ছাত্র মো. তাওহীদুল ইসলাম। ১৬ আগস্ট কোলকাতায় বন্ধুর সঙ্গে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সড়কে নিহত হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারহানা ইসলাম তানিয়া। ৯ সেপ্টেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে সড়কে প্রাণ গেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র শান্ত হোসেনের। এর আগে ৫ মার্চ সড়কে নিহত হয়েছেন নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাকিব চৌধুরী তুর্য। ৪ ফেব্রুয়ারি নিহত হন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাকিব কাজী শেহজাদ হক সাম্য। চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরিদুলের মৃত্যু হয়েছে নামাজরত অবস্থায়। হবু বরের সঙ্গে প্রাইভেটকারে ঘুরতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী জারিন জাহরা। এছাড়া প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাজ্জাদ বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সড়কে নির্মমতার শিকার হয়েছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য। উবার মটোতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে কাভার্ডভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন তিনি। গত ২ ফেব্রুয়ারি নিহত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুসরাত। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুলহাস জীম। গত ১৯ মার্চ নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। এনিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। গত ২৩ মার্চ মাত্র ১০০ টাকার জন্য সড়কে পিষ্ট করা হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. ওয়াসিম আহনাফকে। গত ০১ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাদেকুল। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সড়কে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে নিহত জন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী মিলু রানী মণ্ডলের। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফরহাত লামিয়া নিহত হন ১৩ আগস্ট। পড়াশোনা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সানি নিহত হন গত ১১ সেপ্টেম্বর। মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর নিহত হন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাদ। সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমাইয়া। নিহতদের অনেকেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সড়ক নিরাপদ হওয়ার আগেই অনিরাপদ পৃথিবী ছেড়ে তারা না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
ঢাবিতে ভর্তির পর একদিনও ক্লাস করা হয়নি সুমাইয়ার : গত শিক্ষাবর্ষে (২০১৮-১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া আক্তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ১১মাস চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তবে তার শেষ রক্ষা হয়নি। না ফেরার দেশে চলে গেছেন সুমাইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির একদিনও ক্লাস করা হয়নি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই ছাত্রীর। ২২ নভেম্বর রাতে সুমাইয়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জানা গেছে, সুমাইয়ার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়ায়। ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে সুমাইয়া ভর্তি হন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্লাস শুরু হয় ৬ জানুয়ারি। ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে আসার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনার মারাত্মক আহত হন তিনি। বেশ কিছু হাসপাতালে চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয় সুমাইয়াকে। তবে সুস্থ অবস্থায় আর ফিরে আসেনি সুমাইয়া। শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই মারা যান তিনি।
বরের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বন্ধুসহ নিহত ৩ : বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বরের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে সড়কে পিষ্ট হয়েছেন ৩ শিক্ষার্থী। নরসিংদীর শিবপুরে বাস-প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ৩ শিক্ষার্থী। এসময় প্রাণ গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়ার স্বামীরও। গত ১৬ আগস্ট রাতে শিবপুর উপজেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ঢাকার মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির এমবিএ’র শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, জান্নাত, আকিব ও নিহত সাদিয়ার স্বামী ইকরাম মিয়া।
নরসিংদী দমকল বাহিনীর উপ সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির ওই শিক্ষার্থীরা মাজার জিয়ারত শেষে প্রাইভেটকারযোগে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। প্রাইভেটকারটি শিবপুরের কারার চর এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে ঢাকা আসা সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসটি খাদে পড়ে যায় এবং প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারে থাকা ৩ যাত্রী নিহত হন।
সড়কে পিষ্ট আকিবের স্বপ্ন : গত ১১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কাছে একটি দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন আকিব রেজা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। আকিব রেজা ঈদের ছটি শেষে দৌলতপুর থেকে নৈশ কোচে আজ ভোরে ঢাকায় পৌঁছান। নৈশকোচের ভেতর ভুলে ব্যাগ রেখে ঢাকার কল্যাণপুরে নেমে মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় পৌঁছায়। পরে বাসায় গিয়ে তার ব্যাগের কথা স্মরণ হলে মোটরসাইকেল যোগে আকিব রেজা কল্যাণপুরে যাওয়ার পথে দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। মোটরসাইকেলটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। আকিব রেজা ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
‘ঘুরে আসছি মা’ বলে লাশ হয়ে ফিরলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টবয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টবয় ছিলেন মো. তাওহীদুল ইসলাম। বাবা-মায়ের আদরের এই সন্তানটি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। একটি দুর্ঘটনা সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। মায়ের কাছে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে আসার কথা বলে তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি মায়ের কোলে ফিরে এসেছেন তবে লাশ হয়ে। ছেলেকে হারিয়ে এখন বাবা-মা পাগলপ্রায়। শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। গত ঈদের দিনে নামাজ শেষে সড়কে প্রাণ গেছে তার। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির ছাত্র ছিলেন। তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মৃধার ছেলে। তার মা বিবিচিনি স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক আলমতাজ কলি।
তাওহীদুল ইসলাম বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষে প্রথম স্থান অধিকার করার পর গত ২৯ মে পরিবারের সাথে ঈদ পালনের জন্য গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি বাজারে যান। ৫ জুন ঈদের নামাজ শেষে বাবা আব্দুস সালাম মৃধাকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দাদা-দাদীর কবর জিয়ারত করেন তিনি। কবর জিয়ারত শেষে বাসায় ফিরে বাবাকে বললেন, “আব্বু তুমি অজু কর, একটু পরই এসে দুজনে একত্রে মসজিদে যোহরের নামাজ পড়ব।” বাবার সঙ্গে এটাই ছিল তাওহীদের শেষ কথা। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে বলল, বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরে এসে তোমার কাছে আসছি মা। বাবার সঙ্গে নামাজ পড়াও হলো না তাওহীদের। মায়ের কোলে ফিরেছেন তিনি লাশ হয়ে। বাসা থেকে যাওয়ার ১০ মিনিট পরে তাওহীদ বাড়ির পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
তানিয়ার মৃত্যুটা হৃদয়বিদারক : ফারহানা ইসলাম তানিয়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে চাকরি নিয়েছিলেন ব্যাংকে। স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে পাখা মেলে ধরতে শুরু করেছিল। এর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। কোলকাতায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে না লাশ হয়ে ফিরেছেন তিনি। দুই বোনের মধ্যে ফারহানা ইসলাম তানিয়া বড়। তিনি সিটি ব্যাংক গুলশান শাখার সহকারী ভিপি ছিলেন। চার বছর আগে তিনি সিটি ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকায় মহম্মদপুরে বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসায়। এর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
গত ১৪ আগষ্ট ডাক্তার দেখাতে তানিয়া ও তার বন্ধু মইনুল ভারতে যান। কলকাতা শহরের বাইপাসের সড়কের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখ দেখিয়ে ১৬ আগষ্ট রাতের খাওয়া শেষে তারা সেক্সপিয়ার স্বরণীর চৌরাস্তার মোড়ে পুলিশ বক্সের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। এসময় একটি জাগুয়ার দ্রুত গতিতে একটি মার্সিডিজকে সজোরে ধাক্কা মেরে মইনুল আলম ও ফারহানা ইসলাম তানিয়াকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন শান্ত : বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন নিহত শান্ত হোসেন। তিনি পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধূলাউড়ি গ্রামের বাসিন্দা। ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত শান্ত ওই গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসেন শান্ত। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে তিনটি মোটর সাইকেলে পাঁচবন্ধু গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা এলাকায় চলনবিল দেখে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের বাওনবাজার এলাকায় মোটর সাইকেল ও ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হয় শান্ত-আকাশসহ মোট ৭জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহতাবস্থায় শান্তকে রাজশাহী এবং আকাশকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদের চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ সেপ্টেম্বর মারা যান শান্ত।
সেরা ছাত্রীদের তালিকায় ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির লাবণ্য : গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করতেন। স্বপ্ন দেখতেন তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্রীর স্বপ্নগুলো পিষ্ট হয়েছে সড়কে।
জানা গেছে, ফাহমিদা হক লাবণ্য ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে সেরা ছাত্রীদের তালিকায় তার নাম ছিল। এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজেও তিনি সেরা ছিলেন। তিনি ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণি থেকে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। পরে ভর্তি হন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে।
শখের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতেন তুর্য : নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাকিব চৌধুরী তুর্যর শখ ছিল ঘুরে বেড়ানো। নিজেই ড্রাইভ করে শখের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতেন। পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতেন। হাসিখুশি সেই ছেলেটির উচ্ছ্বলতা চিরজীবনের জন্য থেমে গেছে। একটি দুর্ঘটনায় তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেছে একটি সম্ভাবনাময় স্বপ্ন। গত ৫ মার্চ রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তুর্য।
বন্ধুদের মধ্যমণি ছিলেন সাম্য : বন্ধুদের মধ্যমণি ছিলেন কাজী শেহজাদ হক সাম্য। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির এই ছাত্র নিহত হয়েছেন গত ৪ ফেব্রুয়ারি। তিনি বিবিএর ছাত্র ছিলেন। ময়মনসিংহে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
মসজিদে নামাজের সময়ই প্রাণ হারিয়েছেন ফরিদুল : মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফরিদুল ইসলাম। হঠাৎ একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মসজিদে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফরিদুল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বানুর বাজার এলাকায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ফরিদুল ইসলাম চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) কোরানিক সায়েন্স বিভাগের ৫ম সেমিষ্টারের ছাত্র ছিলেন। তিনি কোরআনের হফেজ ছিলেন। তার বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ার রায়পুর এলাকায়। তিনি প্রয়াত নুর মোহাম্মদের ছেলে ছিলেন।
নিরাপদ সড়ক চেয়েছিলেন সাজ্জাদ : নিরাপদ সড়ক চেয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মো. সাজ্জাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ থেকে সম্প্রতি পাশ করে শিক্ষানবিশ আইনজীবি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিছুদিন আগেই তিনি বন্ধুদের নিয়ে সড়কে ট্রাফিক সচেতনতায় কাজ করেছেন। সেই অনিরাপদ সড়কেই প্রাণ গেছে তার। ২৯ মার্চ রাতে অটোরিকশার সঙ্গে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সাজ্জাদ। বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর : বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী জারিন জাহরার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। আর কদিন বাদেই তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসতেন। তবে ঘর বাঁধার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। হবু বরের সঙ্গে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে সড়কে প্রাণ গেছে তার। এমন দুর্ঘটনায় দুই পরিবারে এখন কেবল শোকের মাতম। থেমে গেছে বিয়ের আয়োজন। ২৪ মার্চ (রোববার) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন বোট ক্লাবের সামনে দুর্ঘটনায় নিহত হন জারিন। এসময় প্রাইভেট কারে থাকা হবু স্বামী ও তার বন্ধু আহত হন। নিহত জারিন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্সে পড়াশোনা করতেন। হবু স্বামী ইফতেখারের সঙ্গে একটি প্রাইভেট কারযোগে রোববার রাতে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যান জারিন। সেখান থেকে ফেরার সময় তাদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এটি চালাচ্ছিলেন ইফতেখারের এক বন্ধু। দুর্ঘটনায় তিনজনই আহত হন। আহত অবস্থায় জারিনকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
‘বড় ছেলে’ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের টিউশনির টাকায় চলতো সংসার : পরিবারের ‘বড় ছেলে’ সাদেকুল ইসলাম পড়াশোনা করতেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগে। বাবা নেই তাই সংসারের হাল তাকেই ধরতে হয়েছে। টিউশনির টাকায় তিনি পড়াশোনার বাইরেও পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। তবে আর তিনি টিউশনির টাকা পাঠাতে পারবেন না। একটি দুর্ঘটনায় তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সারাজীবনের কান্না হয়ে থাকবেন তিনি তার পরিবারে। হাসপাতালে ১০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে অবশেষে মারা গেছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্র। গত ০১ জুন সকাল ৬টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জানা গেছে, গত ২৩ মে সাদেকুল চট্টগ্রাম নগরীর পলেটেকনিক্যাল মোড় এলাকায় টিউশনি থেকে ফিরছিলেন। হঠাৎ পিছন থেকে একটি মাইক্রো তাকে ধাক্কা দেয়। তাকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চমেকে প্রথম দুই দিন তার শরীরের অবস্থা কিছুটা ভালো থাকলেও তৃতীয় দিন থেকে অবনতির দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে টানা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে অবশেষে শনিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যায় সাদেকুল। তার গ্রামের বাড়ী কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া গ্রামে। তিনি পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা ৫ বছর আগে মারা যান। এর পর থেকে সংসারে হাল ধরেন সাদেকুল। নিজের পড়াশোনার খরচ বহন করেও তিনি পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতেন। টিউশনি করে সংসারের খরচ চালিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর উচ্ছ্বল এই হাসি থেমে গেছে চিরকাল : ফারহাত লামিয়ার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন সবার সঙ্গেই তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন। মাত্র দুই বছর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু স্বপ্নগুলো পাখা মেলে ধরার আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) এই ছাত্রীটিও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। একই দুর্ঘটনায় তার মাও গুরুতর আহত হয়েছেন। মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন বাবা।
জানা গেছে, গত ১৩ আগষ্ট (মঙ্গলবার) ঈদের পরদিন রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন লামিয়া। নরসিংদী জেলার শিবপুরে সড়কে প্রাণ গেছে তার। এসময় তার সঙ্গে থাকা মা গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত লামিয়া পবিপ্রবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি থাকতেন কবি সুফিয়া কামাল হলে। ঈদের ছুটিতে ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কে বাস-সিনএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন লামিয়া।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আগেই সড়কে পিষ্ট চুয়েটের সানি : পড়াশোনা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্স শেষ করে তিনি বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মাঝে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে তার। রাজধানীর ডেমরায় মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন ওই মেধাবী ছাত্র। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ডেমরার রানীমহল সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় ঘটনাটি ঘটে। নিহত কামরুল হাসান সানি চুয়েটের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সানির চাচাতো ভাই ফয়সাল জানান, সানি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার কামাল্লা গ্রামের শরিফ নাসির উদ্দিনের ছেলে। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মাদানিনগর এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। সানি চুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা ও বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
গত ১১ সেপ্টেস্বর রাতে বাসা থেকে তার এক ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বের হন। ডেমরার রানীমহল সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় তাদের মোটরসাইকেলটিকে একটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে দুজন রাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত হন। সানিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়া হয়। রাত পৌনে ৯টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়ে সড়কে নিহত সাজ্জাদ : মোটরসাইকেল বহর নিয়ে মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্টের বিভাগের ছাত্র সাজ্জাদ সুফল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের বিভাগীয় উপ-সম্পাদক ছিলেন।
জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে মটর সাইকেল বহর নিয়ে স্বাগত জানাতে যান সাজ্জাদ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল নওধার জিরু পয়েন্টে এগিয়ে আসলে মটর সাইকেল থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পান সাজ্জাদ সুফল। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় সহপাঠীরা। তার অবস্থা আশংকাজনক হলে আইসিওতে ভর্তি করে। পরে সন্ধায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। সাজ্জাদ সুফল উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্বা আব্দুল মতিনের একমাত্র ছেলে।
নিয়মিত নামাজ পড়তেন আবরার : রাজধানীতে সড়কে নিহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী অত্যন্ত শান্তশিষ্ট একটি ছেলে ছিলেন। ধর্মের প্রতিও ছিল ছিলেন গভীর অনুরক্ত। নিয়মিত নামাজ পড়তেন তিনি। কারো মনে কোন কষ্ট দিতেন না আবরার। একারণে সবাই তাকে আদর করতেন। তার স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীর ডাক্তার হওয়ার। ১৯ মার্চ (মঙ্গলবার) আবরার চিরতরে শায়িত হয়েছেন বনানী কবরস্থানে। আবরারের ছোট চাচা মাসুদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আবরার ছিল সকলের আদরের পাত্র। নিয়মিত নামাজ পড়তো আবরার। ওর বই পড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল।
মাত্র ১০০ টাকার জন্য সড়কে পিষ্ট করা হয় ওয়াসিমকে : মাত্র ১০০ টাকার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ঘোরী মো. ওয়াসিম আহনাফকে নির্মমভাবে সড়কে পিষ্ট করা হয়েছে। এটি কোন দুর্ঘটনা নয় ঠান্ডা মাথায় এই ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় আটক ঘাতক বাস চালক ও হেলপার হত্যার বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। গত ২৩ মার্চ বিকালে নবীগঞ্জের টোল প্লাজা থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র উদার পরিবহনের বাসে ওঠেন। এ সময় সহকারী মাসুক মিয়া তাদের কাছে ১০০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। ওয়াসিম ও তার বন্ধুরা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ভাড়া কম রাখার কথা বলেন। এতে সহকারী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে যান। নামার সময় পেছন থেকে বাসের সহকারী তাদের গালি দেন। এ সময় ওয়াসিম বাসের সিঁড়িতে উঠে হাতলে ধরে কেন গালি দিলেন তা জিজ্ঞেস করছিলেন সহকারীকে। এ সময় চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। ঠিক তখনই সহকারী মাসুক মিয়া ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। সাথে সাথে বাসের পেছনের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ওয়াসিম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সকলের প্রিয়পাত্র ছিলেন নুসরাত : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সম্মান (২০১২-১৩ সেশন) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। তিনি মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া গ্রামের মৃত কবির হোসেন চৌধুরী মেয়ে। এক কন্যা সন্তানের জননী নুসরাত ২১ জানুয়ারি সকালে পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ভাটিয়ারি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে কোমায় চলে যান নুসরাত। অস্ত্রোপচার শেষে প্রথমে নুসরাতকে নগরের একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানেই গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
মোটরসাইকেল চালানোই ছিল তার নেশা : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে করে একাধিকবার বগুড়ায় নিজের বাড়িতে গিয়েছেন জুলহাস জীম। পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা, হৈ-চৈয়ে মেতে থাকা উচ্ছ্বল সেই ছেলেটির চঞ্চলতা থামিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘাতক পিকআপের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কামারখন্দ উপজেলার ওভারব্রিজ এলাকায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এএসএম জুলহাস জীম।
সড়কে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে নিহত শাবির সাবেক ছাত্রী : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে সবেমাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মিলু রানী মণ্ডল। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি। মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের লেকচারার ছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে সাভারের নবীনগরে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় পড়ে ঘটনাস্থলেই দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মিলুর। সেখান থেকে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
অবাধে দুর্ঘটনা নামের আড়ালে উল্লাসিত সড়ক হত্যা চলছে - কিন্তু একজন ঘাতককেও গ্রেফতার করা হয়না - মতা অংকের চাঁদা বাণিজ্য আর ভয়ে - ঘাতকদের ধরলেই তারা রাস্তায় নেমে অরাজগতা করবে মানুষের মুখে পরা মবিল লাগাবে - মা বোনদের সড়কে নাজেহাল করবে - এ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে মুমুরস রুগির মৃত্যু ঘটাবে - ঘাতকদের হাতে পরাধীন থাকতেই কি লাখ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে? সড়কের ঘাতকদের আর বলি হতে চাইনা - এখন দেখে দেশব্যপি ১১ই ফেব্রুয়ারি সড়কহত্যা দিবস পালন করুন - সড়কের ঘাতকদের বিরুদ্ধে গনসচেতনতা সৃষ্টি করুন - গনজাগরন সৃষ্টি করুন - সড়ক হত্যা বন্ধ করে - অসহায় সাধারন মানুষদের বাঁচান
©somewhere in net ltd.