![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একই দুঃসংবাদ প্রতিদিন কেন শুনতে হয়? দেশে কেন সড়ক আইনের প্রয়োগ নেই? সড়কে অবৈধ যানবাহন দাবড়ে বেড়ালেও যেন দেখার কেউ নেই। তাই প্রতিদিনই রক্তাক্ত হচ্ছে আমাদের সড়ক। যখন লিখছি (১৯ নভেম্বর সকালে), সাতজনের মৃত্যুর খবর পেলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাঁকোপাড়া এলাকায় ধানবোঝাই একটি অবৈধ ভটভটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে সাতজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও আটজন। অর্থাৎ এ অবৈধ যানটিতে গাদাগাদি করে ছিল ১৫ জন আর সঙ্গে ছিল ধানের বস্তা। কী করে তা সম্ভব? প্রশাসনের চোখের সামনে কী করে এভাবে একটি অবৈধ পরিবহন মালামাল ও যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল? প্রশাসন এ দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। প্রশ্ন জাগে, মানুষের জীবনের কি একদণ্ডও নিরাপত্তা নেই? তাই যদি থাকত তাহলে সড়কে এত লাশ কেন? হঠাৎ করে দানবীয় গতিতে দুটি যাত্রীবাহী বাস মুখোমুখি হয়। মুহূর্তে ঝরে যায় কিছু তাজা প্রাণ।
আমরা মনে করি, এসব দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ, মন্ত্রণালয় দায়ী। কারণ এ ব্যাপারে তারা উদাসীন। সরকার ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা কমছে না কেন? আইন আছে, আইনের প্রয়োগ কি আছে? সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়ছে কি? এ অপরাধ রোধে আইনি তৎপরতাও নেই। বড় ধরনের কোনো ঘটনায় কেবল সরকারের হাপিত্যেশ শুনি। হম্বিতম্বি মার্কা বক্তব্য দেন মন্ত্রী মহোদয়রা।
ছুটে যান লাশের পাশে। একসময় ভাবনায় ছিল, দেশের কোনো ভিআইপি কখনও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে হয়তো আমাদের সড়ক নিরাপদ হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সঠিক পদক্ষেপ নেবে সরকার। কিন্তু প্রয়াত মন্ত্রী সাইফুর রহমান, সরকারের ক’জন সচিব-আমলা, নাট্যব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ অনেক গুণিজন একে একে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেও দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ কোথায়? দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু গত ২১ বছরেও নিরাপদ হয়নি সড়ক।
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছে। নিহতের ৮০ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ৪৫ বছর। নিহতদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পথচারী, যাদের ২১ শতাংশের বয়স ১৬ বছরের নিচে। দুর্ঘটনায় আহত ১৫ শতাংশ লোক মারা যায় ঘটনার ১৫ মিনিটের মধ্যে। দেশে ১৬ লাখ রেজিস্টার্ড গাড়ি রয়েছে আর লাইসেন্স পাওয়া ড্রাইভার রয়েছে মাত্র ১০ লাখ। অর্থাৎ ড্রাইভারের ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং ড্রাইভিং ট্রেনিং দেয়া ও তাদের লাইসেন্সের দরকার আছে। তা না হলে এভাবে প্রতিনিয়ত অকাতরে ঝরবে প্রাণ।
সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং তাদের জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক, চালকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা এবং দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ ১০টি কারণ তুলে ধরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত অপরাধ রোধে যে আইন আছে, তাতে অপরাধীর জন্য কড়া শাস্তির বিধান থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী দেশের ট্রাফিকব্যবস্থা। দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে দক্ষ চালকের সংখ্যা বাড়ানো, সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার দেয়া, চালকদের কাজের সময় নির্ধারণ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করাসহ বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের উচ্চ আদালত অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে না চালাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তা কি মানা হচ্ছে? ফিটনেসবিহীন গাড়ি এখনও চলছে। সরকার এ ব্যাপারে শৈথিল্য দেখালে, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত না করলে সড়কে মানুষ মরবেই। উচ্চ আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ না করারও নির্দেশনা দিয়েছেন। জ্বালানি পাম্পগুলোয় সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেয়া হয়েছে- ‘ফিটনেস ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ করা হয় না’। সে নির্দেশ অনেক স্থানে অকার্যকর।
বর্তমানে দেশে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ হাইওয়ে। মোটরযানের সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, ঠেলাগাড়ি, অটোরিকশা অগণিত। সব দিক বিবেচনায় দেখা যায়, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়, নানাবিধ কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
সড়ক অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে জনগণ সোচ্চার হচ্ছে, দাবি উঠেছে নিরাপদ সড়কব্যবস্থার। কিন্তু তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে বলে মনে হয় না। দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নামেছিল। এরপর রাষ্ট্রের উচ্চপদের নেতারা অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও কোনো কাজ হয়নি। একটি সভ্য দেশে কীভাবে তা সম্ভব হতে পারে? চালক, পথচারী- সব ক্ষেত্রে আইন না মেনে চলার প্রবণতা এতটাই প্রকট যে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। বাস ও ট্রাক চালকরা তো সড়কপথে স্বেচ্ছাচারিতাকে নিজেদের অধিকার বলে ভাবেন। দেশের যানবাহন চালকের সিংহভাগ প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেয়েছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব যাদের, তাদের মধ্যে সততার সংকট থাকাই এর কারণ।
বস্তুত আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দেশে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। সে মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয়, তবে তা মেনে নেয়া আরও কঠিন। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকালমৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না, এসব দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবেলা করতে হচ্ছে, যা আমাদের কারও কাছেই কাম্য নয়।
সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক অমূল্য প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, শিশু, নববধূ-বর-বরযাত্রী, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, এমনকি সাবেক মন্ত্রীও সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিহত হওয়ার খবর আমরা পত্রিকার পাতায় পড়েছি; যার একটিও সহজভাবে মেনে নেয়া যায় না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ঘটনা যেমন আমাদের ব্যথিত করে, তেমনি এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভবও আমাদের মর্মাহত ও স্তম্ভিত করে
যুগান্তার
©somewhere in net ltd.