নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অবাধে দুর্ঘটনা নামের আড়ালে উল্লাসিত সড়ক হত্যা চলছে - কিন্তু একজন ঘাতককেও গ্রেফতার করা হয়না -মোটাঅংকের চাঁদা বাণিজ্য আর ভয়ে - ঘাতকদের ধরলেই তারা রাস্তায় নেমে অরাজগতা করবে মানুষের মুখে পরা মবিল লাগাবে - মা বোনদের সড়কে নাজেহাল করবে

সড়কযোদ্ধা

সড়কে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সন্তানদের পিতা

সড়কযোদ্ধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সড়ক পরিবহন আইন ও প্রয়োগ-শেষ কোথায়?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪২

সড়কে নৈরাজ্য নতুন নয়। পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে অনেকগুলো পাতায় সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবহন-পরিবহনে সংঘর্ষ, যাত্রী মৃত্যু, পথচারী, এমনকি পুলিশ নিহত হওয়া, এসব প্রতিদিনের ব্যাপার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশ রিসার্স ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা যায়, দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ৩,৫০০ আহত হয়।

সম্প্রতি পত্রিকার পাতায় দুঃসংবাদ বা খারাপ খবরই বেশী। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা কমন অর্থাৎ থাকবেই। প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের আহাজারি ও কান্নার ছবি প্রকাশিত হয়। কিছুতেই যেন থামছে না। এটি একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার বলেই সবাই মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়। আর না মেনেই বা কি হবে! প্রতিকার বা বিচার বলতে খুব কিছুতো হচ্ছে না। ঘর থেকে বেরুলে জীবনটা যেন ভাগ্য বা প্রকৃতির উপরই ছেড়ে দিতে হবে। ফুটপাত, রাজপথ, গাড়ী -কোনটাই নিরাপদ নয়। গাড়ীতে গাড়ীতে সংঘর্ষে গাড়ীতো বিনষ্ট হচ্ছেই, ভেতরে থাকা নিরীহ যাত্রীদেরও জীবন দিতে হয় অথবা পংগু হতে হয়। ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রেই তাই। যে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করবেন কখনো কখনো তার উপর দিয়েই চলে যায় গাড়ী। ট্রাক-বাস, বাস-মাইক্রো, বাস-মোটর সাইকেল সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা-সবই হচ্ছে। কেন হচ্ছে এইসব, কারা দায়ী- এসবের উত্তরে অনেক কিছুই এসে যায়, অনেক পক্ষই দায়ী। তবে প্রথম যে কারণটি তা হল চালকদের অতিরিক্ত গতি বা স্পিড, অদক্ষতা, উদাসীনতা, খেয়াল-খুশী বা স্বৈরাচারিতা। রাস্তাটা তো যেন তাদেরই মালিকানায়। তারা যেমন খুশী তেমন চলবে বা চালাবে। ওদিকে যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন, শাসন করবেন তারা যেন কিছুই করছেন না বা করতে পারছেন না। সরকারের মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, অন্যান্য সংস্থা এবং পুলিশ সবাই সবকিছুই করছেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আইন-কানুন, ট্রাফিক নিয়ম কেউ মানছেনা। অনিয়ম-দুর্ঘটনা যেন থামছেই না। ফলে বাংলাদেশের সড়কে (রেলপথও বাদ নয়) এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সড়কের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, প্রচলিত আইন ও বিধি-নিষেধ প্রয়োগেও কড়াকড়ির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বার বার মালিক-শ্রমিক সমিতিগুলো ধর্মঘট-হরতালের মাধ্যমে প্রতিরোধ করে থামিয়ে দেয়। এই সমিতিগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে কিছু কিছু নেতা জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে উন্নীত হয়েছেন, পার্টির নেতা-সাংসদ-মন্ত্রীও হয়েছেন। তাদেরকে পদায়ন করে সরকার স্বস্তিতে থাকার প্রয়াস পেয়েছে। কিন্তু সড়কের নৈরাজ্য থামেনি। যখনই কোন সংবেদনশীল দুর্ঘটনা ঘটেছে- ছাত্র, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা নেতা-নেত্রী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে তখন রাজপথ উত্তাল হয়েছে। ফলশ্রুতিতে কিছু কড়াকড়ি আরোপিত হয়েছে। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাইতে ফুটপাতের নিরাপদ স্থান গাড়ীর জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় চালকের সহকারী কর্তৃক চালিত ১টি বাস শহীদ রমিজউদ্দীন স্কুল ও কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব-দিয়া’কে গাড়ী চাপা দিয়ে হত্যা করে। প্রতিবাদে, আন্দোলনে ও বিচারের দাবিতে রাজপথ অচল হয়ে যায়। ছাত্রদের এই আন্দোলনে সমর্থন দেয় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যার সমর্থনে দেশবাসী সোচ্চার ছিল। ছাত্র জনরোধ থামানোর জন্য তড়িগড়ি করে কঠোর শাস্তির বিধান সম্মলিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ (Road Transport Act 2018) সংসদে পাশ হয় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। আন্দোলন থেমে যায়।

এই আইন প্রয়োগ করতে বা কার্যকর করতে আরো এক বছর লেগে যায়। অবশেষে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর করার ঘোষণা দেয় সরকার। এরই মধ্যে ফোঁস করে উঠে বাস-ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক এবং মালিক সমিতি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী সাধারণ, মালপত্র পরিবহন। আবার সেই নৈরাজ্য। আইনের ৯টি বিধির বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন শুরু করে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমলেও সর্বোচ্চ শাস্তিসহ পরিবহন আইন করা হয়েছিল, কিন্তু পরে আন্দোলনের মুখে তা শিথিল করা হয়েছিল। প্রসংগক্রমে উল্লেখ্য, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বাংলাদেশে প্রথমে শুরু করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ১৯৯৩ সালে একাই। ঐ বছরই তাঁর স্ত্রী এক মর্মন্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ২০১৮ সালের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত একাই তিনি দীর্ঘ আড়াই দশকেরও বেশী দিন ধরে এই আন্দোলনকে জনআন্দোলনে রূপ দেয়ার জন্য লড়েন। তিনি অনেক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিলেন। ওদিকে রাজীব-দিয়া নিহত হওয়ায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও পুলিশ ও ‘হেলমেট বাহিনী’র আক্রমণ হয়েছিল, আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার জের দীর্ঘ দেড় বছর পরও টানতে হচ্ছে ২৫ জন শিক্ষার্থী আসামীর যাদেরকে প্রতি মাসে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। সড়ক পরিবহন আইন পাশ হওয়ার পর এটিরও সুরাহা হওয়া সমীচীন ছিল। আজ তার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এজন্য জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ইতোমধ্যে একুশে পদকও প্রাপ্ত হন। তাই নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে তার স্বীকৃতি মিলেছে। ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

কি হচ্ছে এই সড়ক পরিবহন আইনে... যা মানতে শ্রমিক-মালিকরা নারাজ। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর মাধ্যমে মূলতঃ তিন যুগ আগের মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-কে বাতিল করা হল যা আধুনিক পরিবন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ ছিল। বর্তমান আইনটি প্রনয়ণ করা হলেও এর বিধিমালা ও নির্দেশনা বা ব্যখ্যাসমুহ তৈরী এখনো করা হয়নি। ফলে বিআরটিএ এবং পুলিশ এর সঠিক প্রয়োগে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছে। গত ১ নভেম্বর আইনটি প্রয়োগের ঘোষণা দেয়ার পর মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল প্রয়োগের ব্যাপারে। ইতোমধ্যে সরকারের সাথে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাস-ট্রাক পরিবহন শ্রমিক সমিতি ও মালিক সমিতির সাথে আলোচনা হয়। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। নেতারা ঘোষণা দিলেও শ্রমিক-চালকরা তা সম্পূর্ণ মেনে নেয়নি। এর মধ্যে নেতাদের মৌন সমর্থন আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে একটা লুকোচুরি ও কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে বলেও মত প্রকাশিত হয়েছে। নূতন আইনে রাস্তায় অনিয়ম ও দুর্ঘটনার জন্য ন্যূনতম জরিমানা ৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ যা আগে ছিল যথাক্রমে ১০০ ও ৫,০০০ টাকা। আগের আইনে ট্রাফিক আইন ভংগের জন্য সর্বনিন্ম শাস্তি ছিল এক মাস জেল এবং সর্বোচ্চ ২ বছর। বর্তমানে তা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত করা হয়েছে (উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হত্যা করার জন্য)। গাড়ী চালকদের সড়কে আইন ভংগ ও দুর্ঘটনা ঘটানো এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য বিধি না মানার জন্য বিস্তারিতভাবে এই আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নূতন আইনে ৪১টি ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে- গাড়ী চালিয়ে হত্যা করা, বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালানোর জন্য (২৫,০০০ টাকা জরিমানা), নিবন্ধন ছাড়া গাড়ী চালানোর জন্য (৬ মাস থেকে ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা), ফিটনেস বিহীন গাড়ী চালানো, ট্রাফিক সংকেত না মানা, সঠিক স্থানে পার্কিং না করা, গাড়ী চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৮ম শ্রেণী পাশ হওয়া, চালকের নূন্যতম বয়স ১৮ বছর, হেলমেট পরে মোটর সাইকেল চালানো ইত্যাদি।

এই আইনের জরিমানা, শাস্তি ও অন্যান্য শর্তের জন্য এর বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকর সভাপতি ও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, এমপি। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের বলেছেন, কোন চাপেই সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ থেকে সরে আসবে না সরকার। আবার পরে শিথিলতার কথাও বলেছেন। মজার ব্যাপার হল, যখন এই আইন সংসদে পাশ হয় তখন ফেডারেশন সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী সংসদে ছিলেন এবং তখন তারা এর বিরোধিতা করেন নি।

অবশেষে আলোচনার পর মালিক-শ্রমিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার নমনীয় হয় এবং কঠোর শাস্তি ও জরিমানার ধারাগুলি সংশোধনের আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নূতন সড়ক আইনের ৯টি ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল। এছাড়া, চালকদের লাইসেন্স সংক্রান্ত ও যানবাহনের আকৃতি পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তিও জুন পর্যন্ত কার্যকর হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়। অনুরূপ দাবী শ্রমিক ফেডারেশনেরও। ১৮ নভেম্বর থেকে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত নতুন আইন প্রয়োগ শুরু করে তবে শিথিলভাবে। একইভাবে পুলিশ ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণও নতুন আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতার কারণে শিথিলতা প্রদর্শন করে। আপত্তি করা ধারাগুলো সংশোধন পর্যন্ত এই শিথিলতা বজায় থাকবে। আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও সংশোধনের আশ্বাস বা সিদ্ধান্ত সরকারের বারবার পিছু হটার নামান্তর। আইন কার্যকর করার আগেই সংশোধন এই ধারারই প্রতিফলন। শ্রমিক-মালিক সমিতির কাছে সরকার ও জনগণ জিম্মিই রয়ে গেল। এই আইনের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। টিভি টক-শো, পত্রিকার কলাম, ফেসবুকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং এর প্রয়োগের উপর রসাত্মক মন্তব্যও এসেছে। সাধারণভাবে জনগণ এই আইনে খুশী হয়েছিল। কিন্তু এর প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় তারা হতাশ। তড়িঘড়ি করে জুলাই-আগস্ট ২০১৮-তে ছাত্র-তরুণদের সড়ক আন্দোলনকে শান্ত করার জন্য একমাসের মধ্যেই আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে তখনই বলা হয়েছিল এর প্রয়োগ ধীরে-সুস্থে করা হবে। তাই করা হয়েছে। কিন্তু এর সংশ্লিষ্ট বিধিমালা ও গাইড লাইন তৈরী সম্পন্ন করা হয় নি। শাস্তির মাত্রায় যে কখনো কখনো অস্বাভাবিকতা রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। একজন চালকের পক্ষে ২৫,০০০, ৫০,০০০ বা ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দেয়া কঠিন এতে সন্দেহ নেই। অবশ্য অপরাধের মাত্রার উপরই তা নির্ভর করছে, তা বলা হয়।

শুরুতে সড়ক পরিবহনে নৈরাজ্যের কথা বলেছিলাম। তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা দরকার। বাংলাদেশে রেজিস্ট্রিকৃত যানবাহন আছে ৩৮ লাখ এবং চালক ২০ লাখ ( ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ জাতীয় সংসদে দেয়া এক সদস্যের বিবৃত্তি )। তাহলে বাকী ১৮ লাখ গাড়ী কারা চালাচ্ছে! তারাও চালক, তবে ৩৮ লাখ রেজিস্ট্রিকৃত গাড়ীর মধ্যে (বিআরটিএ’র তথ্য অনুসারে) ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫টির ফিটনেস হালনাগাদ করা হয়নি। এছাড়া রেজিস্ট্রির বাইরেও লক্ষ লক্ষ গাড়ী রয়েছে শহরতলী ও মফঃস্বলে। বিশ্বের আর কোন দেশে, এমন কি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বা রাজ্যেও এই নজির নেই। চালকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ তাও বাতিল করতে হবে, হালকা ও মাঝারি গাড়ী চালনার লাইসেন্স দিয়ে ভারী গাড়ী চালাতে দিতে হবে (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটিও স্থগিত থাকবে), সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে, জেল জরিমানা নূন্যতম করতে হবে, অর্থাৎ সবকিছু মাফ করে দিতে হবে, এই হল মালিক-শ্রমিক এবং তাদের নেতাদের দাবী। আবার এই নেতারাই সরকারী দলের মন্ত্রী-সাংসদ। কেমন জানি একটা জটিলতা বা সমঝোতা। ওদিকে বিআরটিএ এবং পুলিশ বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশের বিরূদ্ধেও দুর্নীতি এবং ঘুষের অভিযোগ রয়েছে। দুষ্ট লোকেরা বলে নতুন আইনে পুলিশ-বিআরটিএ’র পোয়া বারো, তাদের আয় বাড়ার সুযোগ হল। কথাগুলোকে একেবারেই ফেলা যায় না? আবার বিআরটিএ’র সক্ষমতা নিয়েও কথা উঠেছে। তাদের জনবল কম, কারিগরি যন্ত্রপাতি যথেষ্ট নয়। তাই কার্যকরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে পারছে না। যদিও ডজন ডজন ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে। ওদিকে আন্দোলন, বাধা এবং কর্তৃপক্ষের শিথিলতা, বিধিমালা ও ব্যখ্যা তৈরী সম্পন্ন না হলেও পুলিশ নিজেই প্রয়োগ বিধি করে চালিয়ে যাচ্ছে। একটা জোড়াতালি ও লেজেগোবরে অবস্থা। এর কি সমাধান নেই?

এই পরিস্থিতির একটা শেষ বা সুষ্ঠু সমাধান তো হওয়া একান্তই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু কে বা কারা তা করবে? সরকার আইন করবে, মালিক-শ্রমিকরা তা প্রতিরোধ করবে, এ তো গ্রহণযোগ্য নয়। আইন হবে মানুষের জন্য, জনগণের জন্য, সবার জন্য; সবাইকেই তা মানা দরকার। এটা একটা সাধারণ স্বীকৃত রীতি। দাবীর মুখে আইন তৈরী হয়েছে, আবার পাল্টা দাবীর মুখে তা স্থগিত হবে, শিথিল হবে, সংশোধন হবে, এটি অনাকাঙিক্ষত। তবে সব পক্ষ থেকেই একটা সমঝোতা, গ্রহণযোগ্যতা ও বাস্তবমুখিতার মনোভাব থাকতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপনের জন্য সরকার দায়বদ্ধ এবং জনগণের সহযোগিতা কাম্য। তাহলে কেন এই পক্ষা পক্ষ এবং নৈরাজ্য? সড়ক পরিবহন আইনের যে ধারা বা বিধিগুলো মালিক-শ্রমিকদের পক্ষে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ বলে প্রতীয়মান হয় সেগুলোকে কিছুটা সংশোধন বা শিথিল করা যেতে পারে যেমনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীগণ ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে মালিক-শ্রমিকের আইন বাতিল করা, সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা, চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধ্য-বাধকতা না রাখা- এসব অবৈধ ও অন্যায় দাবী। অপরাধ করলে আইনানুগ শাস্তি হবে না, এই আধুনিক ডিজিটাল যুগে শিক্ষা থাকবে না, যে গাড়ী চালাবে সেই গাড়ীর লাইসেন্স থাকবেনা-এসব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সড়কের দুর্ঘটনা এবং নৈরাজ্য ক্রমাগত বাড়ছেই। সময় এসেছে এই অবস্থা থেকে মুক্তির। সরকার জনগণের দাবী ও সহযোগিতা নিয়ে শক্ত হাতে এবার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে এটাই সময়ের দাবী। এবার ব্যর্থ হলে সড়ক আরো বেসামাল হয়ে যাবে। আর এই ব্যাপারে দৃঢ় ও কঠোর ভূমিকা নিতে পারেন লৌহ মানবী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আমাদের এই প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আশা করি এবার সড়ক নৈরাজ্যের একটা সফল সমাপ্তি ঘটবে।

লে. কর্ণেল মো. রুহুল আমীন (অব) লেখক : অধ্যক্ষ ও কলাম লেখক

অভিযাত্রা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.