নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অবাধে দুর্ঘটনা নামের আড়ালে উল্লাসিত সড়ক হত্যা চলছে - কিন্তু একজন ঘাতককেও গ্রেফতার করা হয়না -মোটাঅংকের চাঁদা বাণিজ্য আর ভয়ে - ঘাতকদের ধরলেই তারা রাস্তায় নেমে অরাজগতা করবে মানুষের মুখে পরা মবিল লাগাবে - মা বোনদের সড়কে নাজেহাল করবে

সড়কযোদ্ধা

সড়কে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সন্তানদের পিতা

সড়কযোদ্ধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আওঁ সাঁ সু চি ও রোহিঙ্গা মুসলিম ও শরণার্থীদের সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:০৭

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, সকালে অং সান সু চি এবং অন্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করার পর তারা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

বিতর্কিত একটি নির্বাচন নিয়ে বেসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার পর এই অভ্যুত্থান ঘটলো।

গ্রেফতারের পর মিলিটারি টিভি নিশ্চিত করে যে, দেশটিতে এক বছরের জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে।

গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে।



অং সান সু চি কে?

অং সান সু চি - আওঁ সাঁ সু চি; ( জন্ম ১৯ জুন ১৯৪৫) একজন বর্মী রাজনীতিক, কূটনীতিক, এবং লেখিকা যিনি মায়ানমারের প্রথম ও বর্তমান রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী। মায়ানমারের ডি ফ্যাক্টো তথা অনানুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবেই তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত।এছাড়াও প্রথম নারী হিসেবে তিনি মায়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মন্ত্রী, বিদ্যুৎশক্তি ও ক্ষমতা বিষয়ক মন্ত্রী, এবং শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট টিন চাঅয়ের কেবিনেটে কাজ করেন; আর ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মায়ানমারের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস তথা নিম্নকক্ষে কৌমু টাউনশিপের এমপি ছিলেন।

আধুনিক মায়ানমারের জাতির জনক অং সান এবং খিন চির কন্যা সু চির জন্ম হয় ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে। ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৬৮-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করার পর তিনি জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৭২ সালে মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই ছেলে হয়। ১৯৮৮-র গণআন্দোলনের সময় সু চি সবার নজর কাড়েন এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সাধারণ সম্পাদক হন; সেসময় সদ্যগঠিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামরিক জান্তার বিরোধী অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সু চিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়; ততদিনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেছেন।

সু চির দল ২০১০ সালের নির্বাচন বয়কট করে, যা সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় এনে দেয়। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অব দি ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে; যদিও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকটোরাল কলেজে তাদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের জন্য ৬৭% সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট ছিল। সু চির প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান। গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত।

রোহিঙ্গা মুসলিম ও শরণার্থীদের সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া


কিছু অ্যাকটিভিস্ট ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রসঙ্গে অং সান সু চির নীরবতার সমালোচনা করেন (২০১৫ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের ক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে), এবং মায়ানমারের নিপীড়িত সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পলায়নও সু চি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেন। ২০১২ সালে তিনি রিপোর্টারদের বলেন যে রোহিঙ্গাদেরকে বার্মার নাগরিক বলে ভাবা যাবে কি না তা তিনি জানেন না।২০১৩ সালে বিবিসির মিশাল হুসাইনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সু চি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করেননি এবং মায়ানমারে মুসলিমদের জাতিগত নির্মূল হতে থাকার কথা অস্বীকার করেন, বরং জোর দিয়ে বলেন যে "বৈশ্বিক মুসলিম শক্তি অনেক গ্রেট - এই বিশ্বব্যাপী কল্পিত ধারণা"র কারণে সৃষ্ট "আতঙ্কের আবহে"ই সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সাক্ষাৎকারে "যেকোনো ধরনের ঘৃণা"রই নিন্দা করেন।পিটার পপহ্যামের মতে, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী মুসলমান ছিলেন বলে সাক্ষাৎকারের পরে সু চি রাগ প্রকাশ করেন।সু চি দাবি করেছিলেন যে দুপক্ষেই সহিংসতা হচ্ছে, তখন হুসাইন তাকে চ্যালেঞ্জ করেন যে সহিংসতার প্রায় সব প্রভাব কেন শুধু রোহিঙ্গাদের ওপরই পড়ছে। পিটার পপহ্যাম সু চির এরূপ অবস্থানকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দ্ব্যর্থবোধক অবস্থান বলে মন্তব্য করেন। ২০১৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাথে আলাপকালে তিনি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি হিসেবে অভিহিত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে যা ২০১৯ সালে ডেভিড ক্যামেরনের ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বিভিন্ন ঘটনা ও স্মৃতি নিয়ে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন।

যাইহোক, সু চি বলেন যে তিনি সমঝোতার জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক এবং তিনি কোনো পক্ষে যাবেন না, কারণ দুপক্ষই সহিংসতায় জড়িত। দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকার মতানুসারে, তার "রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পক্ষে তিনি স্পষ্ট অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার জ্যোতির্ময় মহিমা বিদেশি মানবাধিকার লবিস্টদের সামনে পদস্খলিত হয়েছে।" অবশ্য সু চি "বাংলাদেশী সীমান্তের নিকটে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে দুইয়ের বেশি সন্তান নেয়া নিষিদ্ধ করার" বিরোধিতা করেছেন।

২০১৫ সালে একটি বিবিসি নিউজ আর্টিকেলে রিপোর্টার জোনাহ ফিশার তার ধারণা উপস্থাপন করেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চির নীরবতা আসলে আসন্ন ২০১৫ সালের জতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগুরু বামারদের সমর্থন পাবার আশায়। ২০১৫ সালের মে মাসে চতুর্দশ দালাই লামা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য সু চির প্রতি আহ্বান জানান এবং দাবি করেন যে তিনি এর আগে দুবার ব্যক্তিগত সাক্ষাতে সু চিকে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ভাবার জন্য বললেও সু চি তা কানে তোলেননি।২০১৬র মে মাসে সু চি মায়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্সিয়েলকে বলেন যে রোহিঙ্গাদের "রোহিঙ্গা" নামে উল্লেখ করা যাবে না, তারা 'মুসলিম সংখ্যালঘু'। বামাররা তখন মার্সিয়েলের "রোহিঙ্গা" শব্দ ব্যবহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে।

২০১৬-১৭ সালের নির্যাতনের সময় রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা করতে ব্যর্থতা হওয়ায় সু চি অভিযুক্ত হন। লন্ডনের কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট ক্রাইম এক্সপার্টরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, সু চি মায়ানমারের "গণহত্যাকে আইনসম্মত" হিসেবে দেখাচ্ছেন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চলতে থাকলেও, "সেনাবাহিনীর সুপ্রমাণিত ধর্ষণ, খুন ও রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা তো দূরের কথা, সু চি সেসব স্বীকারই করছেন না।" ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মায়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংঘি লী রাখাইনের "বাস্তবিকই মারাত্মক" পরিস্থিতি নিয়ে সু চির প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেন; তিনি বলেন: "আইনের আওতায় সবাইকে সুরক্ষা দিতে এই ডি ফ্যাক্টো নেত্রীর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন - যেটা আমরা যেকোনো সরকারের কাছেই আশা করি।"বিবিসি রিপোর্ট করেছে যে "তার মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জাতিসংঘের হিসাবে ৮৭০০০-এ পৌঁছেছে", এছাড়াও, "তার সেন্টিমেন্ট প্রতিধ্বনিত হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের কণ্ঠে, তিনি বলেছেন যে তিনি মিস সু চির মুখ খোলার অপেক্ষায় আছেন যিনি কিনা এই সংকট সৃস্টির পর কোনো মন্তব্য করেননি।" পরদিন জর্জ মনবিও দ্যা গার্ডিয়ানে তার লেখায় সু চির নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চেঞ্জ ডট অর্গে একটি পিটিশনে সই করতে পাঠকদেরকে আহবান জানান এবং বলেন যে, "পক্ষপাতিত্বই হোক বা ভয়েই হোক, সু চি অন্যদের স্বাধীনতার অধিকার অস্বীকার করছেন, যে স্বাধীনতা তিনি একসময় নিজের জন্যে চেয়েছিলেন। তার সরকার বাধা দিচ্ছে এবং কখনোবা নীরব থাকছে সেই অ্যাকটিভিস্টদের ব্যাপারে যারা তার নিজের অধিকার আদায় করতে সাহায্য করেছিলেন।শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুও সু চির নীরবতার সমালোচনা করেছেন; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে তিনি বলেন: "হে আমার বোন, মায়ানমারের রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোই যদি তোমার নীরবতার কারণ হয়ে থাকে, তার জন্য সত্যিই বড় বেশি দাম দিতে হচ্ছে ... ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক হয়ে ওঠা একজনের জন্য এমন একটি দেশের নেতৃত্ব দেওয়া বেমানান।" ১৩ই সেপ্টেম্বর জানা যায় যে, পরের সপ্তাহে এই মানবিক সংকট নিয়ে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিতর্কে অং সান সু চি অংশ নেবেন না; মায়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র বলেন "হতে পারে তার আরো জরুরি কোনো কাজ আছে।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.