![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকল প্রশংসা এক আল্লাহর যিনি আমাকে লেখার তৌফিক দান করেছেন । অসংখ্য দুরুদ ও সালাম নবী মোহাম্মদ সা: এর উপর ।
নারীকে কীভাবে ভোগ্য-পণ্যের বস্তুতে পরিণত করেছে তা আমরা আমাদের চারদিকে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই । পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, দাম্পত্য-কলহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিবাহ-বিচ্ছেদ, নারী-নির্যাতন ইত্যাদি সবকিছুর পেছনেই একটি প্রধান কারণ হলো পর্দাহীনতা এবং নর-নারীর অবাধ মেলা-মেশা ।
যদিও ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে না বুঝার কারণে কেউ কেউ একে পশ্চাৎপদতা, সেকেলে, নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের পন্থা, উন্নয়নের অন্তরায় এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি বৈষম্য সৃষ্টির প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করে থাকেন ।
বেপর্দা আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা সমাজে কেমন বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এবং মূলতঃ এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য মুসলিম বিশ্বের কতিপয় এলাকায় ইসলামের সত্যিকার শিক্ষার অপপ্রয়োগ আর পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকাই দায়ী ।
আগে আসুন আমরা দেখি, তথাকথিত প্রগতি, নারী-স্বাধীনতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সমাজকে বা নারীকে কী দান করেছে ।
নারী-নির্যাতন, শিশুহত্যা, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, লিভিংটুগেদার, মাদকাসক্তি, কুমারী-মাতৃত্ব বা single mother, ইত্যাদি সমস্যা আজ পাশ্চাত্য-সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ।
১) গর্ভপাতঃ ১৯৬৮ সালে ইংল্যাণ্ডে গর্ভপাতকে বৈধতা প্রদান করার পর সেখানে কেবল রেজিস্টার্ড গর্ভপাতের ঘটনাই বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ । এর মধ্যে মাত্র শতকরা একভাগ (১%) স্বাস্থ্যগত কারণে আর বাকী ৯৯%-ই অবৈধ গর্ভধারণের কারণে ঘটেছে । ১৯৬৮ সালে যেখানে ২২,০০০ রেজিস্টার্ড গর্ভপাত ঘটানো হয় সেখানে ১৯৯১ সালে এক লক্ষ আশি হাজার আর ১৯৯৩ সালে তা দাঁড়ায় আট লক্ষ উনিশ হাজারে । এর মধ্যে পনের বছরের কম বয়সী মেয়ের সংখ্যা তিন হাজার ।
রেজিস্টার্ড পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবলমাত্র ১৯৯৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে দশ লক্ষ গর্ভপাত ঘটানো হয় । এক্ষেত্রে কানাডার পরিস্থিতি কিছুটা 'ভালো' । অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক । তবে জাপানের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুন । তথাকথিত সভ্য-জগতে 'ইচ্ছার স্বাধীনতার জন্য বিগত ২৫ বছরে এক বিলিয়ন অর্থাৎ দশ কোটিরও অধিক ভ্রুণকে হত্যা করা হয় ।
২) ধর্ষণঃ ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা জানা সহজ নয় । অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী এ বিষয়ে রিপোর্ট করে না । The London Rape Crisis Center -এর মতে বৃটেনে প্রতিবছর অন্তত পাঁচ থেকে ছয় হাজার ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড হয়ে থাকে, আর প্রকৃত সংখ্যা তার চাইতেও বেশি । উক্ত সংস্থার মতে "If we accept the highest figures, we may say that, on average, one rape occurs every hour in England." মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি সবচাইতে ভয়াবহ । এখানে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে । সে সংখ্যা জার্মানীর সংখ্যার চাইতে চারগুণ, বৃটেনের চাইতে ১৮ গুণ আর জাপানের চাইতে প্রায় বিশগুণ বেশি । National Council for Civil Liberties নামক সংস্থার মতে ৩৮% ক্ষেত্রে পুরুষ তাঁর অফিসিয়াল ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে নারীকে ধর্ষণ করে থাকে । আর ৮৮% মহিলা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন
৩) বিবাহ-বিচ্ছেদঃ ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যে যেখানে এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে, ১৯৯৪ সালে তার সংখ্যা দাঁড়ায় এক লক্ষ পয়ষট্টি হাজারে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল সাত লক্ষ আট হাজার, আর ১৯৯০ সালে তা দাঁড়ায় এগার লক্ষ পঁচাত্তর হাজারে । পক্ষান্তরে, বিবাহের হারে তেমন কোনো উল্ল্যেখযোগ্য-সংখ্যক পরিবর্তন হয়নি ।
৪) কুমারী-মাতৃত্ব ও একক-মাতৃত্বঃ বৃটেনে এক জরিপে দেখা যায় যে, ১৯৮২ সালে যেখানে কুমারী-মাতার সংখ্যা ছিল নব্বই হাজার, ১৯৯২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই লক্ষ পনের হাজারে । ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের ৩১% ছিল অবিবাহিতা মাতার সন্তান । এই অবিবাহিতা বা কুমারী-মাতাদের মধ্যে আড়াই হাজারের বয়স ১৫ (পনের) বছরের নীচে । বৈধ বিবাহের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর তুলনায় অবৈধ শিশুর জন্মের হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৫) মদ্যপান ও ধুমপানঃ The Sunday Times - এর এক রিপোর্টে দেখা যায় যে, নারীরা "নির্দ্ধারিত মাত্রার" চাইতে অধিক পরিমাণে মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে । আর ধুমপানের ক্ষেত্রে এর সংখ্যা এবং পরিমাণ পুরুষের সমান সমান ।
৬) বিজ্ঞাপনে ও পর্নোগ্রাফীতে: তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার নামে নারীকে আজ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন-সামগ্রী এবং পর্নোগ্রাফীতে ।
"আমেরিকার মেয়েরা যৌন-আবেদনময়ী হওয়ার পরিবেশেই বড় হচ্ছে । তাঁদের সামনে যেসব পণ্য ও ছবি তুলে ধরা হচ্ছে তাতে তাঁরা যৌনতার দিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে । মার্কিন সংস্কৃতি, বিশেষ করে প্রধাণ প্রধাণ প্রচার-মাধ্যমে মহিলা ও তরুনীদের যৌন-ভোগ্য-পণ্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে ।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (এপিএ) টাষ্ক ফোর্স অন দ্যা সেক্সুয়ালাইজেশন অব গার্লস-এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে একথা বলা হয় । রিপোর্টের প্রণেতাগণ বলেন, টিভি-শো থেকে ম্যাগাজিন এবং মিউজিক-ভিডিও থেকে ইণ্টারনেট পর্যন্ত প্রতিটি প্রচার-মাধ্যমেই এই চিত্রই দেখা যায় ।
..প্রণেতাদের মতে, যৌনরূপদান তরুনী ও মহিলাদের তিনটি অতি সাধারণ মানসিকস্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । এগুলো হলো পেটের গোলযোগ, আত্মসম্মান হানিবোধ এবং মনমরা ভাব ।
লিজ গুয়া নামের একজন মহিলা বলেন, তিনি তাঁর ৮ (আট) বছরের মেয়ে তানিয়ার উপযোগী পোশাক খুঁজে পেতে অসুবিধায় রয়েছেন । প্রায়ই সেগুলো খুবই আঁটসাঁট, নয়তো খুবই খাটো । যৌন-আবেদন ফুটিয়ে তোলার জন্যই এ ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়"(দৈনিক জনকন্ঠ, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০০৭)
এ সবই হলো বেপর্দা আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কুফল ।
নারীর চেয়ে দুনিয়ার আর কোন নিকৃষ্ট বস্তু নেই, এই ছিল খ্যাতমান দার্শনিক সক্রেটিসসের বক্তব্য ।
গ্রীক দার্শনিকদের মতে সাপে দংশন করলে কিংবা আগুনে পুড়ালে চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু নারীর অনিষ্টের চিকিৎসা সম্ভব নয় ।
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ, নবী বিশ্ব নবী মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নারীদের অধিকার ও মর্যদা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন,
‘‘তামাম পৃথিবীর সমস্ত জিনিস হল সম্পদ, আর পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল নেককারী নারী”
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন যে,
‘‘যে নারী ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসে রোজা রাখে স্বামীর আনুগত্য করবে, সতীত্বের হেফাজ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর জান্নাতের যে রাস্তা দিয়ে খুশি সে ঐ রাস্তা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে”
জার্মান দার্শনিক নীট. শে বলেছেন, ‘‘নারীকে পুরুষের সাথে মেলা মেশার অবাধ সুযোগ দিলে নারীদের প্রজনন শক্তি শীঘ্রই নিস্তেজ হয়ে যাবে ।
ফলে এমন একদিন আসবে যেই দিন পৃথিবী হতে মানব বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ।
নারী পুরুষের অবৈধ যৌন মিলনে যে, যিনা হয় তা’ নয় বরং কামভাব ও উত্তেজনার সাথে নর-নারী পরস্পর একে অন্যকে স্পর্শ করলে, কিংবা কুমতলবের সাথে একে অন্যের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে ইসলাম অতি সর্তকতার সাথে একে যেনার সাথে তুলনা করেছেন । কেননা এগুলো অবৈধ কাজের উদ্ভাবক ।
এছাড়া মনো বিজ্ঞানের দৃষ্টি ভঙ্গিকে বলা হয় সাধারণ অবৈধ নারী দর্শনে এবং স্পর্শে অচেতন মনের উপর যে অদৃশ্য কুচিন্তা ও কুভাবনার চাপ পড়ে, পরিনামে তাহা মারাত্মক ব্যধিতে রূপান্তর হয় । এ সকল কু-ধারণা মানব দেহের সুক্ষ কোষগুলিকে বিকৃত ও বিষাক্ত করিয়া নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির সৃষ্টি করে, মেধা শক্তি লোপ করে ।
আমেরিকার অন্যতম মানসিক রোগের চিকিৎসক ডঃ এড ওয়ার্ড বগলার বলেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের মনের আড়ালে একটি আত্ম ধ্বংসকারী উপাদান অতি সংগোপনে অবস্থান করছে, ইহার অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয় । অনেক সময় ইহার প্রভাবে মানুষ অজানা কারণে মানবিক অসস্তি ও অহেতুক নানা প্রকার শারিরীক ও মানসিক ব্যাধিতে ভুগিয়া থাকেন । এবং এই মারাত্বক উপাদানই স্নায়ুবিক বিকৃতি ও দুর্বলতার মূল কারণ । কুচিন্তা ও কুভাবনা এই উপাদানকে আরো শক্তিশালী করিয়া তোলে ।
এক মাত্র কুচিন্তা ও কুভাবনা পরিহারই এই ক্রিয়াকে নিষক্রিয় ও দমন করতে পারে ।
বলা বাহুল্য যে, এই কুচিন্তা ও কুভাবনার আত্মঘাতী বিষ ক্রিয়া হতে মানুষকে রক্ষা করার জন্য নারী জাতিকে পর্দার আড়ালে অবস্থানের জন্য ইসলাম কঠোরভাবে নির্দেশ দেয় ।
পবিত্র কোরআনের ভাষায় অর্থাৎ “হে নারীগণ ! তোমরা তোমাদের স্ব স্ব ঘরের মধ্যে অবস্থান কর । প্রাথমিক বর্বর যুগের নারীরা যেমন সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য সুসজ্জিত হইয়া যথেচ্ছা বিচরণ করিত তোমরা তেমনি হইওনা” (সূরা আহযাব: আয়াত ৩৩)
বিজ্ঞানের দৃষ্টি ভঙ্গিতে বলা হয় নারী দেহ অশ্লীয় ও চুম্বক ধর্মী এবং পুরুষের দেহ ক্ষারীয় ও বিদ্যুৎ ধর্মী ।
সাধারণত অম্লের সহিত ক্ষারের একটি স্বাভাবিক আকর্ষণ বা টান আছে । বিজ্ঞানের ভাষায় ইহাকে এফিনিটি বলা হয় । এই আকর্ষণ এত তীব্র ও কার্যকর যে ইহা রোধ করা কিছুতেই সম্ভব নয় । তাই কেউ অপরকে অম্ল বা টক খেতে দেখলে অনায়াসে অজ্ঞাত কারণে মুখ থেকে ক্ষার ধর্মীয় লালা বের হয়ে আসে । সুতারাং ইহা ধ্রুব সত্য যে ক্ষার ধর্মী দেহ ও অম্ল ধর্মী দেহের মধ্যে চুম্বকের মতো দুদর্মনীয় একটি প্রাকৃতিক আকর্ষণ আছে ।
ক্ষারের একট সাধারণ স্বভাব বা গুন আছে, ইহা অম্লের সংস্পর্শে আসলে অম্লের কার্যকরী গুন নষ্ট করে দেয় । যাকে রসায়ন শাস্ত্রের পরিভাষায় নিউটিলাইজেশন বা নিরপেক্ষী করণ বলা হয় ।
তাই অনাবৃত অম্ল ও চুম্বকধর্মী নারী দেহের উপর ক্ষার ও বিদ্যুৎ ধর্মী পুরুষের দেহের প্রতিফলন ক্রিয়া ঘন ঘন প্রতিফলিত হতে থাকলে নারী দেহের চুম্বকত্ব ও অম্লত্ব নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অজ্ঞাত সারে নারীত্বের গুনাবলী লোপ পেতে থাকে ।
নানা জাতীয় পুরুষ দেহের ঘন ঘন প্রতিপলন নারী দেহের সুক্ষ কোষ গুলির উপর যে সংঘাত নিক্ষেপ করে, তাহা শরীরের প্রত্যেকটি কোষ এমনকী ডিম্ব কোষকে পর্যন্ত সুক্ষ আনবিক ক্রিয়া দ্বারা বিধস্ত করে ফেলে ।
ফলে নারী দেহের অম্লত্ব ও চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে নারী তার গন্ধ, কোমলতা, ও রূপ লাবন্যতা হারিয়ে ফেলে ।
এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জীবন-নির্ধারণের সঠিক ও পূর্ণ অনুসরণ ।
পর্দাপ্রথা এবং নারী-পুরুষের পৃথকীরণের ইসলামী ধারণাকে বুঝতে হলে তা বুঝতে হবে নারীদের সতীত্বের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং সমাজে নারীদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে গৃহীত ব্যবস্থাদির প্রেক্ষাপটে, যার মাধ্যমে ঐসব উদ্দেশ্য লঙ্ঘনের আশঙ্কা তিরোহিত হয় ।
ইসলাম মনে করে "Prevention is better than the cure"
অর্থাৎ, দুর্ঘটনা ঘটার আগে তার পথগুলো বন্ধ করাই শ্রেয়তর ।
পর্দা একটি ইবাদত, সালাত যেমন ইবাদত । এটি আল্লাহর নির্দেশ । বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী ।
আল্লাহ তাআলা পিতা আদম ও হওয়া আ.-এর প্রতি পর্দার নেয়ামতকে বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-
তোমার জন্য এ-ই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না (সূরা ত্বহা আয়াত ১১৮)
পোশাক যে অনেক বড় নেয়ামত তা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-হে আদমের সন্তান ! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ । বস্ত্তত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই উত্তম । এসব আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম । এর উদ্দেশ্য মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করে (সূরা আ’রাফ আয়াত ২৬)
পবিত্র কোরআন বলছে- আপন পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন (আল মুদ্দাস্সির আয়াত ৪, ৫)
তিনি (সাঃ) বলেন তোমরা সাদা কাপড় পড় । কারণ এটা অধিকতর পরিষ্কার এবং অধিক মনোরম । আর তোমারা এই সাদা কাপড় দিয়েই তোমাদের মৃত ব্যক্তিকে কাফন দাও (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী, মেশকাত ৩৭৪ পৃঃ)
আমরা কখনোই বলতে পারিনা যে পর্দা কেবলি নারীর বা পূরুষের একার । মহান আল্লাহ বলেন- "তারা (নারীরা) তোমাদের (পূরুষদের) পোষাক স্বরুপ এবং তোমারা (পূরুষেরা) তাদের (নারীদের) পোষাক স্বরুপ" (বাকারাহ আয়াত ১৮৭)
পোশাকের কিছু মৌলিক নীতিমালাঃ-এখানে ১-৬ পর্যন্ত নারী পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য এবং ৭ ও ৮ নং কিছুটা ব্যতক্রম ।
১. পোশাক এমন আঁটসাঁট ও ছোট মাপের হতে পারবে না, যা পরলে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে এবং দৈহিক গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে ।
আবু ইয়াযীদ মুযানী রাহ. বলেন, হযরত ওমর রা. মহিলাদেরকে কাবাতী (মিসরে প্রস্ত্ততকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন । লোকেরা বলল, এই কাপড়ে তো ত্বক দেখা যায় না । তিনি বললেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ২৫২৮৮)
২. পোশাক এমন পাতলা ও মিহি হতে পারবে না যাতে শরীর দেখা যায় এবং সতর প্রকাশ পেয়ে যায় ।
হযরত আলকামা ইবনে আবু আলকামা তার মা থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার হাফসা বিনতে আবদুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকটে এল । তখন তার পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না । উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন (মুয়াত্তা মালেক ২/৯১৩, হাদীস: ৬)
৩. পোশাকের ক্ষেত্রে বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না ।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য”
এরশাদ হচ্ছে, “যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি ? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল”(সুরা হাদীদ আয়াত ১৬)
ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন । ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন । অর্থাৎ অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা যাবে না”(ইবনে কাসির ৪: ৪৮৪)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ‘উসফুর’ (ছোট ধরনের লাল বর্ণের ফুল গাছ) দ্বারা রাঙানো দুটি কাপড় পরতে দেখে বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে কাফিরদের পোশাক । অতএব তুমি তা পরিধান করো না’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২০৭৭; নাসায়ী, হাদীস: ৫৩১৬)
তাছাড়া অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০২৭)
৪. পোশাকের মাধ্যমে অহংকার ও লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ উদ্দেশ্য হওয়া যাবে না ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সুখ্যাতি ও প্রদর্শনীর পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ৬২৪৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০২৫)
৫. পুরুষদের জন্য মেয়েলী পোশাক এবং নারীদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা এবং একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা নিষেধ ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব পুরুষের উপর লানত করেছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (তাদের মতো আকৃতি, তাদের পোশাক ও তাদের চাল-চলন গ্রহণ করে) ।আর সেই সব নারীর উপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৮৮৫)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারিনী নারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০৯২; বুখারী, ফাতহুল বারি: ১০: ৩৩২; মেশকাত ৩৮৩ পৃঃ)
নবী (সাঃ) বলেন আমার উম্মতের নারীদের জন্য রেশমের পোষাক পরা হালাল । কিন্তু পুরুষের জন্য তা হারাম (তিরমিযী, নাসায়ী, মেশকাত ৩৭৫ পৃঃ)
৬. পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় করা, বিলাসিতা করার জন্য বা শখের বশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক ক্রয় করা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উচ্চমূল্যের পোশাক ক্রয় করা নিষেধ ।
হযরত আমর ইবনে শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা খাও, পান কর, অন্যদের দান কর এবং কাপড় পরিধান কর যে পর্যন্ত অপচয় ও অহংকার করা না হয় (সুনানে নাসায়ী, হাদীস: ২৫৫৯; ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩১০৫)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, যা মনে চায় খাও, যা মনে চায় পরিধান কর যে পর্যন্ত দুটি বিষয় না থাকে: অপচয় ও অহংকার (সহীহ বুখারী ১০/১৫২)
৭. গায়রে মাহরাম ও পর পুরুষের সামনে অলংকার ও পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না, যাতে তারা সেদিকে আকৃষ্ট হয় ।তারা যেন নিজেদের ভূষণ প্রকাশ না করে ।
ইমাম যাহাবী রাহ. বলেন, যে সব কর্ম নারীর উপর লানত করে তা হল অলংকার ও আকর্ষণীয় পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা । ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার ...(আলকাবায়ের পৃ. ১০২)
নিজ গৃহে অবস্থান কর সাজ-সজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না । যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত ।
প্রাচীন জাহেলী যুগে নারীরা নির্লজ্জ সাজ-সজ্জার সাথে নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াত । আজকের নব্য জাহেলিয়াতের অশ্লীলতা এতটাই উগ্র যে, তার সামনে প্রাচীন জাহেলিয়াত ম্লান হয়ে গেছে ।
৮.ব্যাপ্তিঃ-যা পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন নাভীর নীচে থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত অঙ্গটি পুরুষের গুপ্তাঙ্গ (দারা কুতনী ১ম খন্ড ২৩০ পৃঃ); তবে নামাযের জন্য হাঁটু এবং কাঁধ ঢাকতে হবে (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৭২ পৃঃ)
নবী (সাঃ) বলেন একজন ঈমানদার ব্যক্তির পরনের কাপড় তার হাঁটু ও পায়ের মাঝ বরাবর থাকবে । ঐ নলার মাঝ খান থেকে পায়ের গিরা পর্যন্ত নামলে আপত্তি নেই । কিন্তু গিরা বা গিটের নীচে নামলে তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে । এ কথা তিনি (সাঃ) তিনবার বলেন । অতঃপর তিনি বলেন যে ব্যক্তি গর্ব ভরে তার পরনের কাপড় গিরার নিচে ঝুলিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে রাহমাতের নযরে তাকাবেন না (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মেশকাত ৩৭৪ পৃঃ)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাপড়ের যে অংশ টাখনুর নীচে যাবে তা (টাখনুর নীচের অংশ) জাহান্নামে জ্বলবে (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৭৮৭)
হযরত আবু হুবাইব ইবনে মুগাফফাল গিফারী রা. মুহাম্মাদ কুরাশীকে লুঙ্গি টেনে চলতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন-আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
‘যে অহংকারবশত পায়ের নীচে কাপড় ফেলে চলবে সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবে চলবে’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৫৫৪২)
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি টাকনুর নীচে ইযার পরবে সে জাহান্নামে যাবে (বুখারী হাঃ ৫৩৬২)
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে একদা নবী (সাঃ) বললেন, তিন প্রকার মানুষ আছে, যাদের সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহ্মতের দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পাক-সাফ করবেন না । আর তাদের জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক আযাব নির্ধারিত রয়েছে । আবু যার (রাযিঃ) এ কথা শুনার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, তাদের জন্য তো অধঃপতন ও ধ্বংস- হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! তারা কারা ? রাসুল (সাঃ) বললেন- ১) যে ব্যক্তি পরিধেয় বস্ত্র পায়ের গিঁটের নীচে পৌঁছায়, ২) যে ব্যক্তি উপকারের খোঁটা দেয়, ৩) আর যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম দ্বারা নিজের মাল চালু করার চেষ্টা করে (মুসলিম, মেশকাত হাঃ ২৬৭৩)
নারীদের গুপ্তাঙ্গ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেন, নারীই গুপ্তাঙ্গ (তিরমিযী, মেশকাত ২৬৯ পৃঃ)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না । তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল কীভাবে রাখবে ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে । উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয় (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২)
পুরুষদের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে মাজীদে এরশাদ করেন,
মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে । এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র । নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত (সূরা নূর আয়াত ৩০)
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চক্ষু দুটিও যেনা করে, আর চক্ষুদ্বয়ের যেনা হল দৃষ্টিপাত করা ।
নবীজী পরিশেষে বলেন: যেনার সকল স্তর পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করত: সর্বশেষে গুপ্তাঙ্গ যেনার অতিক্রান্ত স্তরসমূহকে সত্যায়ন করে । অর্থাৎ, যৌন মিলনের মাধ্যেমে যেনার পরিসমাপ্তি ঘটে । অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, অর্থাৎ- গুপ্তাঙ্গের যেনা সংঘটিত হয় না ।
এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ [স:] বলেছেন-“প্রথম দৃষ্টির অনুমতি আছে, দ্বিতী্য দৃষ্টি নিষিদ্ধ” হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে করণীয় কী-জিজ্ঞাসা করেছিলাম ।তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২১৫৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না” (মুসানদে আহমাদ)
যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গুনাহগার হবে ।
পুরুষের বংশ সম্পর্কিত মাহরাম নারীগণ হলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, ভাগ্নী...(সূরা নিসা আয়াত ২৩)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা ... দুধ-মা, দুধ বোন। ... (সূরা নিসা: আয়াত ২৩)
বিখ্যাত মুফাসসির আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রাহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-একজন নারী যদি কোনো শিশুকে দুধ পান করায় তাহলে সে দুগ্ধ পানকারীর জন্য হারাম হয়ে যায় । কারণ সে তার মা । তেমনি দুধমার মেয়ে, বোন হওয়ার কারণে; দুধমার বোন, খালা হওয়ার কারণে; দুধমার মা, নানী হওয়ার কারণে; দুধমার স্বামীর অন্য পক্ষের কন্যা, বোন হওয়ার কারণে; স্বামীর বোন, ফুফু হওয়ার কারণে; স্বামীর মা, দাদী হওয়ার কারণে ঐ শিশুর জন্য হারাম হয়ে যায় । তেমনি দুধমার ছেলে-মেয়ের সন্তানাদিও হারাম হয়ে যায় । কারণ তারা তার ভাই-বোনের সন্তানাদি (তাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আবুল কুয়াইসের ভাই আফলাহ (যিনি আয়েশা রা.-এর দুধ চাচা) একবার আমার নিকট আসার অনুমতি চাইলেন । আমি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম । এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে আসার পর তাঁকে ঘটনাটি জানালাম । তিনি আমাকে অনুমতি প্রদানের আদেশ করলেন । মুসলিমের রেওয়ায়েত অনুযায়ী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তার সাথে পর্দা করো না । কেননা, বংশীয় সম্পর্কের দ্বারা যা হারাম হয়, দুধ সম্পর্ক দ্বারাও তা হারাম হয় (সহীহ বুখারী ৮/৩৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৪৪; জামে তিরমিযী, হাদীস: ১১৪৭; সুনানে নাসায়ী ৬/৯৯)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, ... শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সাথে সংগত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে...(সূরা নিসা আয়াত ২৩)
ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ কুরতুবী রাহ. বলেন-বিবাহ সম্পর্কীয় মাহরাম নারী চার প্রকার: ১. স্ত্রীর মা (শাশুড়ি) ২. স্ত্রীর কন্যা ৩. পিতার স্ত্রী (সহোদর মা, সৎ মা) ও ৪. পুত্রবধু (তাফসীরে কুরতুবী ২/৭৪)
উল্লেখ্য, শাশুড়ি বলতে স্ত্রীর মা, দাদী-নানী এভাবে উপরের দিকের সকলকে বোঝাবে ।তবে স্ত্রীর খালা, ফুফু অর্থাৎ খালা শাশুড়ি, ফুফু-শাশুড়ি মাহরাম নয় । এঁদের সাথে পর্দা আছে । একই কথা নারীর ক্ষেত্রে । স্বামীর পিতা, দাদা ও নানার সাথে পর্দা নেই । তবে স্বামীর চাচা, মামা অর্থাৎ চাচা-শ্বশুর, মামা-শ্বশুরের সাথে পর্দা আছে ।
নারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন,
আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে । আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না । তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে । আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে । আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে । হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার (সূরা নূর আয়াত ৩১)
এক নববধুকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আনা হল, যার পরনে ছিল রঙ্গিন কিবতী চাদর । তখন উম্মুল মুমিনীন রা. বললেন, ‘যে নারী এ রকম পোশাক পরিধান করে তার তো সূরা নূরের প্রতি ঈমান নেই’(তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৪৪)
"হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয় । তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে । ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না । আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়"(সূরা আহযাব আয়াত ৫৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মত নও । যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয় । আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে (সূরা আহযাব: আয়াত ৩২)
এই আয়াতে কোমল কন্ঠে কথা বলতে বারন করা হয়েছে; যে সব নারী টিভি বা বিভিন্ন মজলিসে অভিনয়, নাচ-গান করেন তারা কত বড় গুনাহর কাজে লিপ্ত !!
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না । আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর । হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে (সূরা আহযাব: আয়াত ৩৩)
মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা তাদের (নবী পত্নীগণের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে, এটা তোমাদের (নারী) ও তাদের (পুরুষ) অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ” (সূরা আহযাব: আয়াত ৫৩)
বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে । তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম । আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ (সূরা আন-নূর আয়াত ৬০)
আল্লাহ তাআলা বলেন, নবীর স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভাইদের, তাদের ভাইয়ের ছেলেদের, তাদের বোনের ছেলেদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের বেলায় (হিজাব না করায়) কোন অপরাধ নেই । আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর । নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী (সুরা আহযাব আয়াত ৫৫)
উপরের আয়াত গুলো নারীদের জন্যে পর পুরুষের সমীপে পর্দার অপরিহার্যতা সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে এবং পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে, এবং আল্লাহ রাব্বুল আলমীন ইংগিত দিচ্ছেন যে, নগ্নতা ও পর্দাহীনতা হচ্ছে নোংরামী ও অপবিত্রতা । আর পর্দার অন্তরালে থাকা হচ্ছে প্রশান্তি ও পবিত্রতা ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লাস) বলেন: “যখন তোমাদের (নারীদের) কারো কাছে মুক্তির জন্যে চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ থাকে । তাহলে সে নারী কৃতদাসের সামনে পর্দা করবে” (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ। ইমাম তিরমিজি একে সহীহ বলেছেন)
লজ্জাবোধ ।
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: প্রত্যেক দ্বীনেরই একটি নৈতিক স্বভাব ও আখলাক রয়েছে । আর ইসলামের সেই আখলাক বা নৈতিক চরিত্রটি হচ্ছে লজ্জাশীলতা” (আল-হাদীস)
তিনি আরো বলেন, লজ্জাশীলতা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ আর ঈমান (এর ঠিকানা হচ্ছে) জান্নাত ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, “লজ্জাবোধ ও ঈমান হচ্ছে এক সাথে মিলিত ভ্রুস্বরূপ । (একটির অবর্তমানে অপরটির বিয়োগ অনিবার্য)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন (আবু দাউদ, হাদীস: ৪০১২, ৪০১৩; সুনানে নাসাঈ ১/২০০; মুসনাদে আহমদ ৪/২২৪)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন-"তাঁর স্বামী আল্লাহর রাসূল হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পিতা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর পবিত্র রওজা মোবারকে তিনি প্রায়শঃ বিনা আব্রুতে যেতেন । কিন্তু যখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও সেখানে দাফন করা হল তখন হতে তিনি পর্দা ও আব্রু করা ছাড়া সেখানে যেতেন না ।"
হে নারী তোমরা ভেবে দেখ মৃতু ব্যক্তির কবরে বিনা পর্দায় যেতেও লজ্জা পেত আর তোমরা জীবিত মানুষের সামনে কিভাবে আস !!!
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম । উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা. ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন । এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন । এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও । আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ ? তোমরা কি তাকে দেখছ না ? (সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস: ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস: ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮)
অন্ধ ব্যাক্তির সামনে এই বিধান হলে যারা অন্ধ নয় তাদের সামনে কি হতে পারে !!!
হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী । সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল ।এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল । কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল । সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি । অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি (সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস: ৩১৭৯)
তামীম গোত্রের কয়েকজন নারী উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আগমন করল, যাদের পরনে ছিল পাতলা কাপড় । উম্মুল মুমিনীন তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তোমরা যদি মুমিন নারী হও তাহলে এ তো মুমিন নারীর পোশাক নয় । আর যদি মুমিন না হও তাহলে তা ব্যবহার করতে পার’(মাআলিমুস সুনান ৪/৩৭৬)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও আমি দেখিনি । (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে । (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায় । এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে (মুসলিম ২/২০৫, হাদীস: ২১২৮)
অতি প্রয়োজনে ঘর হতে বের হওয়া জায়েয । তবে কিছু আদাব ও নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে ।
১. স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি গ্রহণ করবে ।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যে নারী স্বামীর ঘর হতে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বের হয়ে যায় সে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত অথবা স্বামী সন্তুষ্ট হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার উপর অসন্তুষ্ট থাকেন (কানযুল উম্মাল)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না । (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস হবে) যথা: ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল । খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল ।গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল” (হাকেম, সহিহ আল-জামে: ৩০৫৮)
২.সুগন্ধি ব্যবহার করবে না ।
হযরত আবু মুসা আশআরী রা. হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মহিলা সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয় এবং লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার খুশবু গ্রহণ করে, তবে সে ব্যভিচারিণী (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৯৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীস: ২৭৮৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪১৭৪-৭৫)
“যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে নারী ব্যভিচারিণী” (আহমদ, সহিহ আল-জামে: ২৭০১)
৩. দূরের সফর হলে একা যাবে না; বরং কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে যাবে ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণে বলতে শুনেছি, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া নির্জনে অবস্থান করবে না । এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩০২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৩৪১)
হাত কব্জী পর্যন্ত ও মুখমন্ডল খোলা রাখা যাবে কি ?
(১) উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলের সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম । তারা আমাদেরকে অতিক্রস করে চলে গেলে আমরা মুখমন্ডল খুলে দিতাম । (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে । (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস: ১৮৩৮)
এই হাদিসদ্বয় শুধু হজ্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তথাপি “চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম” আয়েশা (রাঃ) এই কথা দ্বারা বলা যায় পর পুরুষের সামনে মুখ ঢাকতে হবে ।
(২) ইমাম আবু-দাউদ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনানে আবু-দাউদ-এ উম্মত জননী আয়েশা (রা.) এর বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, একদা আবু-বকর (রা.) তনয়া আসমা রা: পাতলা কাপড় পরিধান করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমীপে উপস্থিত হলে নবীজী চেহারা মুবারক অপর দিকে ফিরিয়ে হাত ও মুখমন্ডলের প্রতি ইংগিত করে আসমাকে বললেন, হে আসমা ! মেয়ে মানুষের প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তার মুখমন্ডল ও হাত ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অংশই দৃষ্টি গোচর হওয়া উচিত নয় ।
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ-আসমা সম্পর্কিত ঘটনাটি পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই ঘটেছে । আর পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়ে পূর্বের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছে । কাজেই পরবর্তী বিধান তথা পর্দার অপরিহার্যতার বিধান অগ্রগণ্য ও পালনীয় হবে ।
(৩) বুখারি শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, বিদায় হজের সময় তার ভ্রাতা ফজল বিন আব্বাস রা: রাসূলের সাথে সওয়ারীর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন, ইতিমধ্যে খুসআম গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলের সমীপে উপস্থিত হলে ফজল মহিলার প্রতি তাকাচ্ছিলেন এবং মহিলাও ফজলের প্রতি দৃষ্টি প্রদান করছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজল ইবনে আব্বাসের চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন । এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মহিলাটির মূখমন্ডল খোলা ছিল ।
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ মহিলাটি এহরাম অবস্থায় ছিলেন, আর এহরামরত নারীর প্রতি ইসলামের বিধান হল পরপুরুষের দৃষ্টির আওতায় না থাকলে চেহারা খোলা রাখা ওয়াজিব ।
হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী (র সহীহ বুখারীর শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এই হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন, এই হাদীস দ্বারা এটাও জানা হল যে, পরনারীর দর্শন ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ এবং এমতাবস্থায় দৃষ্টি নত রাখা ওয়াজিব ।
(৪) সহীহ বুখারি ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক লোকদের নিয়ে ঈদের নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজ শেষ করে লোকদেরকে আখেরাত সংক্রান্ত উপদেশ প্রদান করে বললেন,
মহিলাদের কাছে গিয়ে হৃদয়গ্রাহী কিছু উপদেশ পেশ করেন আর বলেন: হে নারী সম্প্রদায় ! তোমরা আল্লাহর পথে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দান-দক্ষিণা কর, কেননা তোমরা অধিক হারে জাহান্নামের জ্বালানী হবে । তখন তাদের কালো বর্ণের চেহারা বিশিষ্ট জনৈকা মহিলা দাঁড়িয়ে বললেন,.....( আল হাদিস)
এতে বুঝা গেল, মহিলাটির চেহারা খোলা ছিল, আবৃত ছিল না । নতুবা জাবের রা. কিভাবে জানতে পারলেন যে, মহিলাটির চেহারা কালো বর্ণের ছিল ।
মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ হয়ত কালো বর্ণের মুখমন্ডল বিশিষ্ট মহিলাটি সেসব বৃদ্ধ নারীদের অন্তভুর্ক্ত ছিলেন (বাধ্যর্কের কারণে) যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনের আশা করা যায় না । এমন নারীদের চেহারা খোলা রাখা জায়েয ।
হয়ত এই ঘটনাটি পর্দার আয়াত অবতরণের পূর্বেকার ঘটনা । কেননা,পর্দার বিধানাবলী বর্ণিত সূরা আল-আহযাব ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ হিজরী সনে অবতীর্ণ হয়েছে । আর ঈদের নামাজ প্রবর্তিত ২য় হিজরী সনে ।
হক্বপন্থী উলামায়ে কেরাম পর্দা বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করেন যে, ফেতনার কারণে বর্তমানে পর্দালম্বন করা ওয়াজিব । সাধারণ অবস্থায় সুন্নত এবং উম্মতজননী রাসূল পত্নীগণের পছন্দনীয় কর্ম । তারা আরো বলেন, উত্তম হল চোহারা আবৃত করা ।
এমনকি বর্তমান বিশ্বে সুপরিচিত ইসলামি ব্যক্তিত্ব, সাউদী আরবের প্রধান মুফতি, মহামান্য শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. ও মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ চেহারা আবৃত করা অতি উত্তম ।
(http://www.islamhouse.com/ কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পর্দা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. সম্পাদনা: ইকবাল হোসাইন মাছুম)
পর্দার বিধান পালন করা প্রত্যেক নারী পুরুষের অপরিহার্য কর্তব্যঃ-
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাদের প্রতি তার আনুগত্যকে আবশ্যিক ও বাঞ্চনীয় করে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনুগত্যের অপরিহার্যতা ঘোষণা করে বলেন:
“আর আল্লাহ ও তার রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্যে নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে”(সূরা আহযাব: আয়াত ৩৬)
মহান আল্লাহ আরও বলেন, “তোমার সৃষ্টিকর্তার সপথ, তারা কিছুতেই মমিন হতে পারে না যতক্ষণ না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ কলহে তোমাকে বিচারক রূপে মেনে নেয় । অত:পর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে তারা নিজেদের মনে কিছু মাত্র কুন্ঠাবোধ করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে” (সূরা নিসা: আয়াত ৬৫)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মন আমার উপস্থাপিত আদর্শের বশ্যতা ও অধীনতা স্বীকার করে নেবে (আল হাদীস)
আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব তুমি একনিষ্ট হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ । আল্লাহর প্রকৃতি যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন । আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই । এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না” (সূরা রুম: আয়াত ৩০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “প্রত্যেক নবজাত শিশু ফিতরাত তথা ইসলাম বা স্রষ্টাকে চেনার ও তাকে মেনে চলার যোগ্যতার উপরই ভূমিষ্ট হয়, কিন্তু তার পিতা মাতা (বা ইসলাম বিরোধী পরিবেশ) তাকে ইহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজকে পরিণত করে” (আল-হাদীস)
এই হাদিসের মর্ম আমাদের অভিভাবকদের গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত তাদের অজ্ঞতা বা সঠিক দিক নির্দেশনা না করার কারনে আজ আমরা অনেকে ইসলামের বিধি বিধান তথা পর্দা থেকে কিভাবে বিমুখ হয়ে আছি!!!
এ সম্পর্কে কবি ড. আল্লামা ইকবাল বলেছেন, “কি বুঝবে যার রগে ঠান্ডা রক্ত প্রবাহিত ? অর্থাৎ যার অনুভূতি নেই । যেখানে পর্দা নেই সেখানে প্রকৃত শিক্ষাও নেই, নতুন কি পুরাতন, নারীর মর্যাদার ও সংরক্ষক একমাত্র পুরুষই হতে পারে, যে জাতি এ বাস্তব সত্য না বুঝতে পারে তার সৌভাগ্যের সূর্য অবশ্যই অস্তমিত হবে”
মহান আল্লাহ বলেনঃ- পুরুষেরা নারীদের রক্ষক ও ব্যবস্থাপক কেননা আল্লাহ একজনকে অধিক মর্যাদা দান করেছেন অপরজন থেকে এবং তারা (নারীরা) তাদের (পুরুষদের) সম্পদ ব্যয় করে (সুরা নিসা আয়াত ৩৪)
হে মুসলিম জাতী ! আল্লাহ কর্তৃক শিষ্টাচারে শিষ্টাচারী হও, আল্লাহর বিধানের অনুকরণ কর এবং তোমাদের নারীদেরকে পর্দার অন্তরালে থাকতে বাধ্য কর । এটিই হচ্ছে পবিত্রতা, প্রশান্তি ও পরিত্রাণের উপায় ।
সুতারাং আমরা, নিসন্দেহে বলতে পারি ইসলামই নারীকে যথাযথ সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:১৫
মো কবির বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে। আমি আপনার লেখাটা পুনরায় শেয়ার করলাম।