নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ুন আজাদের নারী ও আমার ভাবনা

২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪১

অনেক আগেই নারী বইটি হুমায়ুন আজাদের নারী বইটি পড়েছিলাম । বলতে গেলে একেবারে ৮ম শ্রেণীর শেষের দিকে ।এই বইটি হুমায়ুন আজাদকে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত ও সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত করেছে।
১৯৯২ এ নারী প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ২০ দিনের ভেতরে এর সব কপি বিক্রি হয়ে যায়।
১৯ নভেম্বর ১৯৯৫ এ বইটি উচ্চ বিচারালয়ের রায়ের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে হুমায়ুন আজাদ লড়াই করেন এবং সাড়ে চার বছর পর আবার বইটি নিষিদ্ধকরন মুক্ত হয়।
এখন কথা হল বইটিতে এমন কি ছিল যা একে নিষিদ্ধ করায়?ধর্মীয় কটাক্ষ?
না আসলে তা না।
বইটিতে নারীদের নিয়ে,তাদের অধিকার,তাদের দৈহিক গঠন,বিভিন্ন দেশে নারী,সাহিত্যে নারী,কিশোরী,নারী তার লিঙ্গ ও শরীর,বিয়ে সংসার,প্রেম ও কাম,ধর্ষন,পুরুষতন্ত্র,নারীবাদি সাহিত্যতত্ত্ব ও সমালোচনা,নারীর ভবিষ্যৎ,নারীবাদী মহান নেতা ও নেতৃবৃন্দ,নারী সম্পর্কে রুশো,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,জন স্টুয়ার্ট মিল আর রাসকিনের ভাবনা ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে।
এটি একটি বিশাল বই।কেউ যদি উত্তেজক একটি বই ভেবে থাকেন এবং সমগ্র বইয়ে নারী শরীরের রসাত্নক বর্ণনা পাবেন ভেবে থাকেন তবে ভুল ভাববেন।বইয়ের মুল বিষয়বস্তু মোটেও নারী শরীর নয়।
নারীদের যে একটা শরীর আছে আর সেটা কেমন তার কথা বইটিতে বলা আছে।নারী আর পুরুষের মধ্যে পুরুষকে নারীজাতি হতে শ্রেষ্ঠ বানিয়ে রেখেছে একটি শিশ্ন।এটাই বিভিন্ন মনস্তত্ত্ববিদরা দাবী করেছেন।পুরুষরাই সর্বময় কর্তা।এটাই নারীজাতির কাছে একান্ত কাম্য ও পুজনীয় বস্তু এটাই পুরুষতন্ত্রের আইন ও বিধিবিধানে সুষ্পষ্টভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
মানবসভ্যতায় দুটি লিঙ্গ।নারী ও পুরুষ এই দুটি লিঙ্গের অবস্থান প্রায় সম পর্যায়েই।প্রতিটা জাতিতেই আছে, প্রতিটি জীবের মধ্যেই আছে।শুধু দৈহিক দিক দিয়েই পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।কিন্তু সবাই মানুষ।কিন্তু এই দৈহিক অমিলটার জন্যই নারীজাতি পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত।তাদের কে অভিশাপ রুপে আগে দেখা হত এবং অত্যন্ত নিচ বলে গন্য করা হত।তাদের একমাত্র কর্ম হল গৃহে শান্তি শৃঙখলা বজায় রাখা ও পুরুষ সঙ্গীর সার্বক্ষনিক সেবা করা।নারীদের গৃহে আবদ্ধ রাখার জন্য পুরুষরা নানাবিধ আইন কানুন তৈরী করেছে।নারীদের শিক্ষার অধিকারটাও ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ভালভাবে বা পুর্নভাবে পায় নি।
বিভিন্ন ধর্মেও নারীদের পাপী ও দুষিত এবং স্রষ্টার সৃষ্টির বিকৃত রুপ হিসেবে উপ্পস্থাপন করেছেন।বিশেষত হিন্দুধর্মে নারীদের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হতে হয়েছে।
নারীবাদিদের মধ্যে অগ্নিশিখা রুপে এসেছেন মেরী ওলস্টোনক্র্যাফট।নারীবাদির অগ্নিশিখা,এসেছেন বেগম রোকেয়া।পুরুষদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাসকিন,রাজা রামমোহন রায়,উইলিয়াম গডউইন।
হুমায়ুন আজাদ এদের নিয়ে আলাপ করেছেন।আবার দেখিয়েছেন রবিবাবু,রুশো এদের নারীবাদি মনোভাব।এরা নারীদের গৃহে আবদ্ধ জীব হিসেবেই ভেবেছেন।নারীদের প্রাপ্য সম্মানের কথা ভাবেন নি।যদিও রবিবাবু ৭৫ বছর বয়সে নারীদের মাধ্যমেই এই ভুল ভাবনা থেকে কেটে উঠেছেন।
নারীবাদি কাঠামোতে বিশ্লেষন করা হয়েছে নারীদের অবস্থান ও অবস্থা এই বইয়ে।বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীবাদি গ্রন্থ।
ফ্রয়েডের ভিত্তিহীন তথ্যগুলোর ভুল নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক।নারীদের সাহিত্য, তাদের মনস্তত্ত্ব,অবস্থা।জাগরনের উপায়,ভবিষ্যতে করনীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন নিপুনভাবে।
তবে বইটি বিশাল আয়তনের এবং সবার কাছে সুখপাঠ্য নয়।

আমার প্রতিক্রিয়া:

বিশাল বই।ধীরে সুস্থে না পড়লে বুঝাও যাবেনা।বইটা প্রথমদিকে একঘেয়ে লাগবে।কারন নারীর অবহেলাটাকে নিয়েই লেখক লিখেছেন আর তাদের নির্যাতনের কথাই বেশি বলতে চেয়েছেন।এটাই ছিল বইটার লক্ষ্য।কিন্তু আস্তে আস্তে বিশ্লেষনাত্ত্বক অংশে আসলে বইটা সম্পর্কে ভাল ধারনা জাগবে।বিশেষত আপনি নিজে একজন নারী হলে বইটায় দেয়া বিশ্লেষনে বেশি মুগ্ধ হবেন।বিভিন্ন দেশে নারীদের ওপর করা নির্যাতনের বিভীষিকা আপনাকেও হেলিয়ে দেবে।বইটা পড়ে আমার অনুভুতি অসাধার।হুমায়ুন আজাদ এর একটা অনন্য মাস্টারপীস এটি।অসাধারন।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.