নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আজাদের "একটি খুনের স্বপ্ন , ও আমাদের পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৪১

আগামী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত"একটি খুনের স্বপ্ন" হুমায়ূন আজাদেরএকটি কাব্যধর্মী প্রেমের উপন্যাস।
বইটি যখন আমার হাতে আসে তখন খুব সম্ভবত আমারে এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষা চলছিল । তারপরেও সবকিছু মিরিয়ে বইটি আগ্রহ নিয়েই শেষ করেছি আদ্যাপান্ত ।
আমার অতি প্রেমাস্পদ বইপাগল হামিদ ভাইয়ের উচ্ছ্বসিত মনোবৃত্তি এবং তারই কনভিন্সে বইটা আমি কিনি এবং পড়ি।বইটা পড়া শেষ করে আমার মাথায় ছোট্ট একটা বানী আসে-এভাবেই লিখতে হয়।বইটিতে যৌনতা আছে,বেশ ভালোভাবেই,কিন্তু হামিদ ভাই আমাকে যেটা বলেনি সেটা হলো,এই যৌনতার ব্যাপারটেই বইটার টুইস্ট।বইটাতে একই সমান্তরালে বেশকিছু যৌনতা আছে এবং লেখক খুব সূক্ষভাবে প্রতিটি যৌনতার আলাদা আলাদা স্বরুপ ও প্রেক্ষাপট উন্মোচিত করেছেন ।দেখাতে চেয়েছেন,যৌনতা ব্যাপারটা কখন বৈধ,কখন অবৈধ,তার মত করে।

যৌনতাকে উপস্থাপন করার ব্যাপারটা খুব একটা সহজ নয়।বিশেষত যখন আপনি প্রচলিত ধারনার বাইরে গিয়ে সেটাকে একটা ভিন্নরুপ দেবার চেষ্টা করবেন।স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যাপারটার উপস্থাপনা হতে হবে শৈল্পিকভাবে,যাতে পাঠক সৌন্দর্যবোধে মোহিত হয়,বাক্য ও শব্দের দিকে যেন তার মূল আকর্ষন থাকে,যৌনতা ব্যাপারটা যেন তার ভেতরে মাথাচারা না দিয়ে ওঠে।তবে এটা সম্ভব কি না,আমি জানিনা।
যেভাবেই উপস্থাপন করাহোক,সেসব লেখা আমাদের মাথায়,আমাদের কল্পনায় কবিতার চিত্রকল্পের মতই দৃশ্যমান হয়ে থাকে।আর লেখক সেই দৃশ্যটির যৌক্তিকতা বয়ান করেন।
বইটিতে হুমায়ূন আজাদ যে ভাষা বা রচনাশৈলীটি ব্যবহার করেছেন,সেটি তার স্বাভাবিক রচনাশৈলীরই একটু অতিকাব্যিক রুপ।আজাদের রচনা কাব্যিক,তার ভেতরের কবির ছায়া তার গদ্য ও প্রবন্ধ উভয়েই দেখা যায়।এই বইটিতে যে রচনাশৈলীটি ব্যবহার করেছেন তিনি,সেটি বইয়ের বিষয়বস্তুকে পাঠকের কাছে সহজপাচ্য করতেই প্রয়োজন ছিল।
গদ্যে যৌনতা যতটা অস্বাভাবিক লাগে আমাদের কাছে,কবিতায় কি ততটা লাগে?লাগেনা কিন্তু।কারন গদ্য বা উপন্যাসে আমাদের জগতটাকেই বয়ান করাহয়,সেখানকার পরিবেশ ও চরিত্রগুলি সাধারন ,সেখানে একটি কাহিনী থাকে,আমাদের পৃথিবীর মত একটি পৃথিবী থাকে।
আমাদের পৃথিবীতে যেহেতু আমরা অবৈধ যৌনতাকে স্বীকৃতি দেইনা।,তাই ওখানেও দিতে পারিনা।কিন্তু কবিতার জগতটাই তো ভিন্ন।সেখানকার পৃথিবী,আলোবাতাস,সবটা ভিন্ন।শব্দ,উপমা আর চিত্রকল্পে সে এক অত্যাশ্চার্য রঙিন পৃথিবী,যেখানে প্রতিটি শব্দ শৈল্পিক,প্রতিটি দৃশ্যই সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত।
তাই কবিতার যৌনতাকে আমাদের তেমন খারাপ মনে হয়না,মনেহয় কবির মত,কবির যৌনতাও মহান ব্যাপার।সেটা আর পাঁচজনের যৌনতা থেকে আলাদা।
একই টেকনিক এই বইটিতেও ব্যবহৃত হয়েছে।বইটি আগাগোড়া কাব্যধর্মী,উপন্যাসের নিয়ম এতে রক্ষিত হয়নি।ঘটনাও এমন কিছু না,ষাটের দশকের এক যুবকের প্রেমোপাখ্যান,সাথে সেই সময়কার রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ,লেখকের নিজস্ব ধ্যান ধারনা থেকে।এই নিয়ে এত দীর্ঘ উপন্যাস লেখা যায়?যায়।
ধরুন নায়ক নায়িকার অপেক্ষায় বসে আছে,শুরুহবে কল্পনা এবং তার কাব্যিক বর্ননা।আমি এর নাম দিয়েছি কল্পকাব্য।এই কল্পকাব্যেই তিন চার পৃষ্ঠা পার।পুরো লেখাটাতেই এই কাব্যিক শৈলী ব্যবহার করে তিনি নায়কের যৌনতামূলক ব্যাপারটাকে শেষ পর্যন্ত একটা শৈল্পিক,মানবিক এবং সৌন্দর্য ও আকাংখায় রুপ দিতে চেয়েছেন।অথচ এই বইয়ে আরও কিছু লোকের যৌনতার দৃশ্য আছে,সেগুলোতে আবার তিনি যৌনতাকে পাশবিকতায় রুপ দিতে চেয়েছেন।
এই যে যৌনতার দুরকম রুপ তিনি এঁকেছেন,এটা সচেতনভাবেই।তিনি বোঝাতে চেয়েছেন,প্রগতিশীলদের যৌনতা কাব্যিক,শৈল্পিক।আর রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে যারা তার বিরোধী,তাদের যৌনতা পশুবৃত্তি ছাড়া কিছুনা।
যাহোক,বইটির কাব্যিক এই বর্ননার জন্য বইয়ের যৌনতা দিকটা কিছুটা শৈল্পিকমাত্রা পেলেও,শেষপর্যন্ত বইটির শুরু থেকে শেষপর্যন্ত পাঠক যৌনতা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনা।
উপরন্তু,ভয়াবহ ব্যাপারটা হলো,যৌনতার,নরনারীর দৈহিক আকাংখার যে শৈল্পিক বর্ননা তিনি দিয়েছেন তা ভয়াবহভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে পাঠকের চোখে,তার মস্তিষ্কে যৌন আকাংখা ব্যাপারটা তীব্রতর সুন্দর হয়ে ফুটে ওঠে,ফলে সে যৌনভাবনাকে তার সৌন্দর্যবোধের সাথে মিশিয়ে ফেলে এবং এতে বাস্তবজীবনে তার এ ব্যাপারে বিপথগামী হবার সম্ভাবনা থেকে যায়!যারা প্রেম করে,তাদের জন্যে তো ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ।
যাক,বইটা ভয়াবহ সুন্দর।যৌনতার আশ্চর্য জ্বলজ্বলে সর্বগ্রাসী এক সৌন্দর্যকে এখানে তুলে ধরাহয়েছে।একইসাথে লেখকের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে ধর্ম এবং ধার্মিকদের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে,যেহেতু ধর্ম যৌনতাকে লেখকের মত এতটা খোলামেলা স্বীকৃতি দেয়না।বইটি সুন্দর,পড়ার সময় অস্বাভাবিক চাপ লাগে,যৌনতার সৌন্দর্যে অনেকেই স্বাভাবিক থাকতে পারে না,।আর আমি আমার তীব্রভাবে যৌনতাবিমুখ।কেন এর কোন লজিক্যাল ব্যাখ্যা নেই।
তাই পাতায় পাতায় যখন সেই দৃশ্যগুলি আমার মাথায় শো করেছে,আমার ভয়াবহ অস্বস্তি লেগেছে।একদিকে আগুনের মত গনগনে সৌন্দর্য,অপরদিকে আমার বোধ ,বিশ্বাস ও যৌনতার ব্যাপারে ব্যক্তিগত দর্শন এ দুয়ের চাপে পড়ে খুব ক্লান্তি নিয়ে বইটা পড়েছি।
বইটার ভাষা ও রচনাশৈলী অসাধারণ।
সাহিত্যের পাঠকদের জন্য,তাদের ভাষাগত সমৃদ্ধি ও লেখার সৌন্দর্যসৃষ্টির কৌশল দেখতে বইটি অবশ্যপাঠ্য।যদিও বইটিতে উপস্থাপিত বিভিন্ন মনস্তাত্বিক ও দার্শনিক বিষয় এবং চিন্তা চেতনা ব্যাপক পর্যালোচনা ও সমালোচনার দাবী রাখে।

আমার প্রতিক্রিয়া : যেহেতু যৌণতা একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার , কেউ চাইলে যেমন এটাকে এড়াতে পারে না ,তেমনি এটাকে যত্রতত্র আলোচনা কিংবা এর যে শৈল্পিক সৌন্দর্য কে উন্মুক্ত না করে বরং ওপেন সিক্রেট রাখাই শিল্পরে প্রকাশ । তাই মনে করি সব কিছু প্রকাশ না করেও এক ধরনের সব কিছুকে প্রকাশ করাটাও শিল্প । শিল্পের বিকাশের প্রয়োজনে আমাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার । এটা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে , যৌনতাও এক ধরনের শিল্প যদি সেটাকে সেভাবে প্রকাশ করা যায় ।

(২৩.১০.১৬, ১১:৪০পিএম, পুরানঢাকা )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৩৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম । লিখা ভাল লাগল । প্রায় ৯ টি পোস্ট দিয়েছেন, মন্ব্যত করেছেন একটি , অবশ্য এটা একান্ত নিজস্ব ব্যপার । নীজেদের মধ্যে একে অপরের লিখা পাঠে মতামত জানালে সকলেরই লিখার মান উন্নয়নে সহায়ক হয় । আপনার মুল্যবান মন্তব্য অনেক লিখককে করতে পারে উৎসাহিত ।
ধন্যবাদ শুভেচ্ছা রইল ।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:০৬

সত্যের সারথি সাদেক বলেছেন: ডাঃ ভাইকেও সু-স্বাগতম , গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.