নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোষ্টমর্টেম অফ আয়নাবাজি...

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৩


অাজ বন্ধু বাপ্পী ও স্বপনের কাছ থেকে আয়নাবাজি নিয়ে ল্যাপটপে দেখলাম ।
আয়নাবাজি নিয়ে ফেসবুকে শত শত স্ট্যাটাস, টিভিতে টক শো, আর পত্র পত্রিকায় এত এত মাতামাতি দেখে আয়নাবাজি ছবি টা না দেখা এই আমার শুধুই মনে হচ্ছিল, হায়রে কপাল...সবাই দেখে ফেললো, আমিই খালি দেখলাম না... এ জীবন রেখে কি লাভ!! ভাবি... কি আছে এ আয়নাবাজিতে? সে রহস্য কি কোনোদিনও ভেদ করিতে পারিবে না? অবশেষে সেই সারা দেশ তোলপাড় করা ছবিটা আজ দেখেই ফেললাম! আজ গরীব বলে... বাসি ছবি ল্যাপটপে বসে গিলতে হলো। ব্যাপার নাহ ! মূল ছবিতে আসা যাক...
.
ছবির শুরুতেই বেশ কয়েক সেকেন্ড একটা মৃত লাশ দেখানো হলো। খানিক বাদেই সেই লাশের দৃশ্য উধাও! পুরো ছবিতে সেই লাশের কোনো সম্পর্ক বা চিহ্ন মাত্র নেই। পরিচালক অভিতাভ রেজা এখানে অবাঞ্ছিত একটা দৃশ্য এনে কৌশলে দর্শকদের প্রথমেই একটু নড়েচড়ে বসালেন!
.
এবার একটু ছবির কাহিনীর দিকে যাই। কয়েক লাইনে বলতে গেলে, ছবির প্রধান চরিত্র আয়না (চঞ্চল) হচ্ছে একজন ভাড়াটে আসামী। যে টাকার বিনিময়ে কোনো দূর্ধর্ষ খুনি বা আসামীর হয়ে জেল খেটে দেয়। জেল খাটার সময় সে মূল আসামীর ছদ্মবেশ ধারণ সহ তার কথাবার্তা এবং আচার আচরণ ও মূল আসামীর মত বানিয়ে ফেলে। অর্থাৎ আয়না একজন ভাড়াটে আসামী সহ একজন অভিনেতা। যে যার হয়ে জেল খাটে, তার চরিত্র নিজের ভিতর নিয়ে আসে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে এই আসামী আসল আসামী নয়! এরকম ভাড়ায় জেল খাটতে খাটতে এক সময় এক আসামীর ফাঁসি হয়ে যায়। আর সেই আসামী সেজে থাকার ফলে ফাঁসির মুখোমুখি হয় ভাড়াটে আসামী হয়ে থাকা সেই আয়না। মূল আসামী সেবার আর তাকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারে না।... এই হচ্ছে ছবিটির মূল থিম। এটা যদি অসাধারণ এবং সেই লেভেলের একটা কাহিনী হয়ে থাকে, তাহলে যেভাবেই হোক মানতেই হবে এটা অসাধারণ একটি ছবিই বটে!
.
এবার একটু নায়িকার (নাবিলা) ব্যাপারে আসি। সিনেমা হলে যাওয়ার আগে এই আয়নাবাজি নিয়ে আমি ইউটিউবে বেশ কয়েকটি টিভি টক-শো দেখি। সেখানে নায়িকাকে উপস্থাপক জিজ্ঞেস করছেন, ছবিটাতে আপনার চরিত্রটি ঠিক কেমন? নায়িকা তখন দুষ্টু একটু মুচকি হেসে বললেন, ছবিতে আমি এমন একটি মেয়ে, যাকে এলাকার সব ছেলে পছন্দ করে। সবাই আমার সাথে প্রেম করতে চায়। এমন টাইপ। অথচ সেটি ছিল সম্পূর্ণ মিথে কথা! পুরো ছবিতে কোথাও তার চরিত্রটি তেমন ছিল না। ইয়াং জেনারেশন কে আকৃষ্ট করতেই এভাবে বানিয়ে বলেছিলেন তিনি। ছবিটাতে দেখা যায় হৃদি (নাবিলা) একই এলাকায় আয়নার পাশাপাশি থাকে। হৃদি আয়নাকে এক বৃষ্টির দিনে ভেজা অবস্থায় প্রথম দেখে। তখন থেকেই আয়নাকে ভালো লেগে যায় তার। পরে আরেকদিন বাজার করতে এসে দুজনের আবার দেখা হয়। হৃদিকেও আয়নার ভালো লেগে যায়! এই হচ্ছে প্রেমের শুরু। তারপর নায়িকা যখন তখন যেকোনো সময় নায়কের বাসায় নায়কের রুমে গিয়ে হাজির হয়! দুজন চা খায়, গল্প করে। নো প্রবলেম।
বাহ কি সুন্দর ভালো লাগা আর প্রেম হয়ে যাওয়া! প্রেম ভালোভাবে হতে না হতেই নায়িকা নায়ক কে সিলেটের চা বাগান দেখানোর জন্য ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলে!
.
ছবির আরেকটি চরিত্র হচ্ছে পার্থ বরুয়া। যিনি একজন ন্যায়পরায়ণ সাংবাদিক। যে সত্যকে তুলে আনতে চায়। আয়নার মুখোশ উন্মোচন করতে চায়। টেনশনে বাসায় গিয়ে রাত দিন ঢক ঢক করে মদ গিলে! এই মদ গেলা ন্যায়পরায়ণ সাংবাদিক তো আমার সাংবাদিকতার বারোটা বাজিয়ে রে ভাই..... ।.
ছবির শেষ মুহূর্তে ভাড়াটে আসামী ফাঁসির ফাঁদে পড়ে যায়। চুক্তি অনুযায়ী মূল আসামী তাকে আর জেল থেকে মুক্ত করতে আসে না। কিন্তু এভাবে তো আর ছবি শেষ হতে পারে না। বাংলা ছবি বলে কথা! হ্যাপি এন্ডিং তো দিতেই হবে! জেলখানার এক কেয়ারটেকার (বৃন্দাবন দাস) এসে আয়নার সব গোপন কথা শোনেন। তারপর খুবই ইন্টারেস্ট হয়ে বলেন, আচ্ছা এভাবে অন্যজনের চরিত্রে ঢুকতে আপনার কিরাম লাগে?? আয়না পেয়ে গেলেন পালানোর ফাঁদ! কেয়ারটেকার কে সে কথার ঘোরে ফেলে চাপা টাপা মেরে, তাকে অন্যের চরিত্র নিজের মধ্যে নেয়ার স্বাদ পাওয়াতে তার নিজের পোষাক ওই কেয়ারটেকার কে পরান, আর কেয়ারটেকারের পোষাক নিজে পরে জেল থেকে বের হন। জেলের তালা লাগিয়ে দেন। তারপর ফাঁসির আসামী আয়না কেয়ারটেকারের বেশ ধরে সবার চোখে ধুলো দিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে গেলেন! ব্যাস ছবি শেষ! এরকম হাবাগোবা আবুল টাইপ কোনো জেলখানার কেয়ারটেকার আদৌ এই পৃথিবী তে আছে কি না আমার জানা নেই। হোয়াট এ ফিনিশিং! হোয়াট এ মুভি!
.
এই ছবি মুক্তির আগে অমিতাভ রেজার প্রথম কৌশল ছিল ফেসবুকে সেই হারে প্রচার প্রচারণা শুরু করে দেয়া! সেক্ষেত্রে তাকে পুরোপুরি সার্থক বলা যায়। কারণ বেশিরভাগ মানুষই এখন ফেসবুকাসক্ত! তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, প্রচারেই প্রসার।
.
যাইহোক আয়নাবাজির অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় বরাবরের মতই অসাধারণ ছিল। নায়িকা নাবিলা প্রথম হিসেবে ভালই করেছে। যদিও ছবিটিতে তার তেমন একটা ভূমিকা নেই। তবে ইমোশনাল শট গুলো তার কাছে আরেকটু জীবন্ত আশা করেছিলাম। ক্যামেরাম্যানের কারসাজিও দারুণ লেগেছে। ঢাকা শহরকে তিনি বিদেশের ছোঁয়া দিয়েছেন। গান গুলোও খারাপ ছিল না। বাংলাদেশী সিনেমার প্রেক্ষাপটে আয়নাবাজি ছবিকে খারাপ বলা যায় না। তবে অসাধারণ বা বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ ছবি বললে একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।
.
আমি বলি কি, সিনেমা দেখে তার প্রশংসা অবশ্যই করবেন। কিন্তু তাই বলে হুজুগে বাঙালি হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রেসটিজ রক্ষায় অন্ধের মত শুধুমাত্র গুণগানই গাইবেন না। খারাপ ভালো সকল দিকই তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। নাহলে কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্র উন্নতির চেয়ে ধ্বংসের দিকেই বেশি যাবে।
অবশেষে বাপ্পি ও স্বপন কে আবারো ধন্যবাদ।

(লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.