নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গেডালো প্রাসাদ

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:১৩

ফ্রান্সের উত্তর দিকে থ্রেনি এলাকাটা গাছগাছালিতে ভরা। কোনো কোনো জায়গা তো একেবারে জঙ্গল বললেও ভুল হবে না। এখানকার জঙ্গলের খানিকটা ভেতরে গেলে মনে হবে যেন টাইমমেশিনে করে সোজা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে চলে এসেছেন। চারদিকে ব্যস্ততা
লোকজনের হাঁকডাক। যন্ত্রপাতির ঠুকঠাক। চলছে বিশাল এক মধ্যযুগীয় প্রাসাদ-দুর্গ বানানোর কর্মযজ্ঞ। প্রাসাদ-দুর্গগুলোতে সাধারণত দুর্গের মতো নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। আশ্চর্য হবেন, যখন শুনবেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রাসাদটা বানানো হচ্ছে সেই সময়কার প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই। ঘটনার সূত্রপাত সেই নব্বইয়ের দশকে। বিষয়টা প্রথম আসে সেন্ট-ফাজু এলাকার স্থানীয় এক দুর্গের মালিক মিশেল গিইউয়ের মাথায়। নিজের দুর্গের মেরামত করতে গিয়েই আসলে পেয়ে যান এই মধ্যযুগীয় প্রাসাদ তৈরির বুদ্ধি। ঠিক করলেন, নিজের দুর্গ থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরেই বানাবেন সেটি। সঙ্গে নিলেন ব্যবসায়ী মেরিলাইন মার্টিনকে।
বিংশ শতাব্দীতে বাস করে কিভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রাসাদ বানাবেন, সেটাই তখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময়ের নির্মাণরীতি তো আর এখন সেভাবে অনুসরণ করা হয় না। ফলে তেমন দক্ষ কারিগরই বা পাওয়া যাবে কোথায়? আলাপ চলল প্রত্নতত্ত্ববিদ, প্রকৌশলী, শিল্প গবেষকদের সঙ্গে।
অবশেষে ১৯৯৭ সালে শুরু হলো প্রাসাদ তৈরির কাজ। পুরো বিষয়টাকে খানিকটা বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য ‘গিলবার্ট’ নামে একটা কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করা হলো। ভদ্রলোক ছোটখাটো সামন্ত প্রভু। সেই সময়ে নিচু স্তরের সামন্ত প্রভু, চাইলেই নিজের জন্য প্রাসাদ বানাতে পারতেন না। তার জন্য ঊর্ধ্বতন সামন্ত প্রভুর অনুমতি লাগত। তো গিলবার্ট সেই অনুমতি পেলেও নিজের স্বল্প আয়ের মধ্যে সেই মানের একটি প্রাসাদ তৈরি করাটা চাট্টিখানি কথা না।
ফলে গিলবার্ট বড়সড় বাড়িই বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এতে দুর্গের মতো চারটি টাওয়ার সংযোজন করেন। কাজের সময়কাল হিসেবে ঠিক হয় ১২১৮ সালটিকে। আর প্রাসাদটির নাম রাখা হয় ‘গেডালো’। স্থানীয়ভাবে সবাই এই নামেই ডাকে এটিকে।

এই কর্মযজ্ঞের প্রধান প্রকৌশলী জ্যাক মুঁলা। প্রাসাদটির নকশা তাঁর হাতেই করা। ১২ শতক আর ১৩ শতকের ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের শাসনকালের (১১৭৯-১২২৩) স্থাপত্যরীতিই বিশেষভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। সেটা মাথায় রেখে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এমন কাঁচামালই ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাসাদ তৈরির মূল উপাদান কাঠ আর পাথর। এখানে স্থায়ী শ্রমিক আছে ৭০ জন। তবে প্রতিবছর ৬০০ জনের মতো মানুষ স্বেচ্ছায় এই কর্মযজ্ঞে শামিল হন। এ ধরনের কাজে যুক্ত হওয়ার মূল উদ্দেশ্য মধ্যযুগীয় প্রাসাদ তৈরি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ। শুধু তা-ই নয়, এখানে কাজ করা মানুষরা এই সময় মধ্যযুগীয় পোশাক ও খাবার খান।

১৯৯৭ সালে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত প্রাসাদের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসবের মধ্যে আছে বড় হলরুম, রান্নাঘর, স্টোররুম, প্রহরীদের থাকার ঘর, ছোট ছোট কিছু ঘর ইত্যাদি। শুধু যে প্রাসাদের বাইরের কাজের দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে তা কিন্তু নয়। ভেতরকার দেয়াল সাজানোর জন্য সেই সময়কার ম্যুরালও আঁকা হয়েছে। আর সেটা তখনকার রীতিতেই, সেই সময়ে ব্যবহার করা রং দিয়েই। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাসাদের বাকি কাজ শেষ করতে আরো এক দশক লেগে যেতে পারে। অনেকে অবাক হয়ে ভাবেন, এত সময় কেন লাগছে? গেডালো প্রাসাদ তৈরির কাজটা আসলে হাতে-কলমে ভুলে যাওয়া মধ্যযুগীয় প্রাসাদ নির্মাণের কৌশল ফিরিয়ে আনারই এক চেষ্টা। এটা করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেসব আবার নানা গবেষণার মাধ্যমে সমাধান করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।

কাজ যখন শেষ হবে, তখন এটাই হবে মধ্যযুগীয় রীতিতে বর্তমান সময়ে বানানো প্রামাণ্য কোনো প্রাসাদ। এটি নির্মাণের ওপর ২০১৪ সালে বিবিসি একটি প্রামাণ্যচিত্রও তৈরি করে। এই প্রাসাদকে কেন্দ্র করে এখানে পর্যটনশিল্পও গড়ে উঠেছে। পর্যটকদের খাওয়াদাওয়ার জন্য আছে একটি মধ্যযুগীয় রেস্তোরাঁও। এখনই প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ পর্যটক আসে গেডালো প্রাসাদ দেখতে। নির্মাণকাজ শেষ হলে যে পর্যটকের ভিড় সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই।


(উৎসঃ উইকিপিডিয়া ও নেট থেকে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.