নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বন্ধুত্ব

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০১

বন্ধুত্ব ও ভালবাসা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চমৎকার একটি
প্রবন্ধ লিখেছিলেন কিন্তু এটা প্রকাশিত হয়নি । পরে তা রবীন্দ্র রচনাবলীতে স্থান পায় । সেটি এরকম ছিল ...
বন্ধুত্ব ও ভালবাসায় অনেক তফাৎ আছে, কিন্তু ঝট্ করিয়া সে তফাৎ ধরা যায় না।
বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালবাসা পোষাকী। বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ে দুই এক জায়গায় ছেঁড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নীচে না পৌঁছিলেও পরিতে বারণ নাই। গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইল। কিন্তু ভালবাসার পোষাক একটু ছেঁড়া থাকিবে না, ময়লা হইবে না, পরিপাটি হইবে। বন্ধুত্ব নাড়াচাড়া, টানাছেঁড়া, তোলাপাড়া সয়, কিন্তু ভালবাসা তাহা সয় না। আমাদের ভালবাসার পাত্র হীন প্রমোদে লিপ্ত হইলে আমাদের প্রাণে বাজে, কিন্তু বন্ধুর সম্বন্ধে তাহা খাটে না,— এমন কি, আমরা যখন বিলাস প্রমোদে মত্ত হইয়াছি, তখন আমরা চাই যে, আমাদের বন্ধুও তাহাতে যোগ দিক! প্রেমের পাত্র আমাদের সৌন্দর্য্যের আদর্শ হইয়া থাক্ এই আমাদের ইচ্ছা— আর, বন্ধু আমাদেরই মত দোষে গুণে জড়িত মর্ত্ত্যের মানুষ হইয়া থাক্, এই আমাদের আবশ্যক। আমাদের ডান হাতে বাম হাতে বন্ধুত্ব! আমরা বন্ধুর নিকট হইতে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই, ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই। কিন্তু ভালবাসার স্থলে আমরা সর্ব্বপ্রথমে ভালবাসার পাত্রকেই চাই, ও তাহাকে সর্ব্বতোভাবে পাইতে চাই বলিয়াই তাহার নিকট হইতে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সঙ্গ চাই। কিছুই না পাই যদি, তবুও তাহাকে ভাল বাসি। ভালবাসায় তাহাকেই আমি চাই, বন্ধুত্বে তাহার কিয়দংশ চাই। বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগৎ। অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। আর প্রেম বলিলে দুই জন ব্যক্তি মাত্র বুঝায়, আর জগৎ নাই। দুই জনেই দুই জনের জগৎ। অতএব বন্ধুত্ব অর্থে দুই এবং তিন, প্রেম অর্থে এক এবং দুই।
অনেকে বলিয়া থাকেন বন্ধুত্ব ক্রমশঃ পরিবর্ত্তিত হইয়া ভালবাসায় উপনীত হইতে পারে, কিন্তু ভালবাসা নামিয়া অবশেষে বন্ধুত্বে আসিয়া ঠেকিতে পারে না। একবার যাহাকে ভাল বাসিয়াছি, হয় তাহাকে ভাল বাসিব, নয় ভাল বাসিব না, কিন্তু একবার যাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়াছে, ক্রমে তাহার সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হইতে আটক নাই। অর্থাৎ বন্ধুত্বের উঠিবার নামিবার স্থান আছে। কারণ সে সমস্ত স্থান আটক করিয়া থাকে না। কিন্তু ভালবাসার উন্নতি অবনতির স্থান নাই। যখন সে থাকে তখন সে সমস্ত স্থান জুড়িয়া থাকে, নয় সে থাকে না। যখন সে দেখে তাহার অধিকার হ্রাস হইয়া আসিতেছে, তখন সে বন্ধুত্বের ক্ষুদ্র স্থানটুকু অধিকার করিয়া থাকিতে চায় না। যে রাজা ছিল, সে ফকির হইতে রাজি আছে, কিন্তু করদ জায়গীরদার হইয়া থাকিবে কিরূপে? হয় রাজত্ব, নয় ফকিরী, ইহার মধ্যে তাহার দাঁড়াইবার স্থান নাই। ইহা ছাড়া আর একটা কথা আছে। প্রেম মন্দির ও বন্ধুত্ব বাসস্থান। মন্দির হইতে যখন দেবতা চলিয়া যায়, তখন সে আর বাসস্থানের কাজে লাগিতে পারে না, কিন্তু বাসস্থানে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা যায়।

আজ বিশেষ একজন কে নিয়ে লিখতে চাই । নাম টা না হয় পরেই বলি । আমি একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি । তো আমাদের ক্লাস বেশ ভালোই চলছিল । আমাদের এক স্যার ছিলেন নাম আব্দুল খালেক , আমরা তাকে খালেক সার নামে চিনতাম । তিনি ছিলেন অসাধারণ একজন রোমান্টিক মানুষ । আমাদের গণিত ক্লাস নিতেন । আমি তার ক্লাস একটু কমেই বুঝতাম । এছাড়া এস এস সি লেভেলে বিজ্ঞান বিভাগে যখন সবাই উচ্চতর গণিত ছিল না তাই একটু ভয় ও পেতাম খুব । প্রথম কয়েকদিন পর, যখন সবার সাথে তেমন কথা বলাও হয়নি সে সময় একদিন খালেক স্যার এর ক্লাসে শেষে আমি একজন কে বললাম আপনার ক্লাস খাতাটা দেন তো আমি স্যার এর ক্লাস এর অংক তুলে নিই নি । তো তিনি আমাকে বলছেন তুমি বল ! আমি বললাম আমিই তো বলতেছি আপনার খাতাটা দেন , অংক তুলে নিব । তিনি বললেন, আরে তুমি করে বলো । অামি তো পুরাই থ । বলে কি আমি তাকে তুমিকরে বলব ? যেটা আমি কখনো করিনি । আমার বয়সি কিংবা তার চেয়ে সামান্য কম বা বেশি কোনো মেয়েকে তখন পর্যন্ত তুমি করে বলা হয় নি । সবাইকে আপনি করে বলতাম । স্কুলে যখন পড়তাম তখন ও ক্লাসের সব বান্ধবীকে আপনি করে বলতাম



কেন আমার এ অভ্যাস হয়েছে তা আমি জানি না । তবে আমার মনে পড়ে না ভার্সিটিতে চান্স পা্ওয়ার আগে কোনো মেয়ে কে কোনো দিন তুমি করে বলেছি । তো এ কথা শুনে আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা ।আমি বললাম আমি আপনাকে আপনি করে বলব আর আপনি খাতা দিলে দেন না দিলে নাই । পরে তিনি বাধ্য হয়ে খাতা দিলেন । তখন থেকে তার সাথে এক ধরেনের ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠল । সেই থেকে শুরু । এরপর কত ধরনের বন্ধুত্বের ঘটনা । তবে কলেজ জীবনে আমি আড্ডাবাজ তেমন ছিলাম না । কারণ হিসেবে পড়াশুনা ছিল মুখ্য । কলেজ জীবন টা তে আমি ছিলাম অলটাইম দৌড়ের উপর ! এজন্য তাদের গ্যাংদের( মেয়েদের ঐক্যবদ্ধ গ্রুপ) সাথে তেমন মেশার সুযোগ হয়নি । এর পরেও যতটুকু সময় পেতাম আড্ডা দিতাম । আমাদের বন্ধুদের অনেকেই ছিলেন খুবই উদ্যোগী তারা যে কোনো অনুষ্ঠানের কাজে খুব আগ্রহ দেখাতো আর খুব মজার সাথে তা করত । সময়ের প্রয়োজনে সবাই যার যার অবস্থানে আছে । তবুও কিছু মানুষ থাকে যাদের কে কখনোই ভোলা যায় না বা যারা দূরে থাকলেও কাছেই আছে বলে সব সময় যাদের অনুভব করি । তাদের কথা লিখতে গেলে শুধু রবীবাবুর কথা বলতে ইচ্ছে করে ....
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই , চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর-একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়—
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়—
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়।।
কে কোথায় গেলাম সেটাই এখন ভাবি । জানি ভাবার যে খুব বেশি সময় পাই তাও না । কেননা যান্ত্রিক জীবন মানুষ কে মুক্তি দিয়েছে এসব বন্ধুত্বের বাধন থেকে । তার পর ও রবীবাবুর কথা মনে পড়ে...

তবুও তাহারা
প্রাণের নিশ্বাসবায়ু করে সুমধুর,
ভুলের শূন্যতা মাঝে ভরি দেয় সুর।
ভুলে থাকা নয় সে তো ভোলা;
বিস্মৃতির মর্মে বসি রক্তে মোর দিয়েছ যে দোলা।
নয়নসম্মুখে তুমি নাই,
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই;
আজি তাই
শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
আমার নিখিল
তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
পুনশ্চ : যে মানুষটি আমাকে তুমি করে বলতে বলেছিল আজ পর্যন্ত থাকে তুমি করে বলা হয়নি । আজ তার জন্মদিন , তাই ফোনে তাকে তুমি করে বলে জনমদিনের শুভেচ্ছা জানালাম । শুভজন্মদিন ।

২ঃ০১ঃ২০১৭, পুরোনো ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.