নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ্যবইয়ে ওড়না-বিতর্ক এবং আমাদের নারী পুরুষ বৈষম্য মানসিকতা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৫

বন্দুক আবিস্কারের প্রথম ৬শত বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, পুরুষ তার পুরানো শিকারি মানসিকতা ভুলে যায় নি যে শিকারকে ভিত্তি করে সে নারীর উপর আধিপত্য লাভ করেছিল। বন্দুক ব্যবহারের বাসনা যে কোনো পুরুষের অব্যাক্ত এক আকাংখা, শিকারি মানসিকতার অদম্য চাওয়া। নারী যোনিতে শুক্রাণু ছোঁড়ার আনন্দকেই স্মরণ করিয়ে দেয় বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার আনন্দ। তাই সুযোগ পেলেই পুরুষ এটা করতে চায়।

যুদ্ধে অস্ত্র তথা বন্দুকের ব্যবহার এ আনন্দ উপভোগেরই চেষ্টা। বলা হয়, যুদ্ধ হচ্ছে বন্য রাগের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু যে তরুণেরা সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে গুলি ছোড়ে তারা তো প্রতিপক্ষের সৈন্যটিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনে না। তাই ব্যক্তিগত রাগ থাকার প্রশ্নও উঠে না। হ্যাঁ, যুদ্ধের পরিকল্পকরা ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে বটে তবে তারা সংখ্যায় নগণ্য। যুদ্ধ ময়দানের পুরুষরা শিকারি মানসিকতারই শিকার, বন্ধুকে, দেশকে সাহায্য করার নামে সে মানসিকতায়ই চালিত হয় তারা।

এ মানসিকতা আদিম যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এটা কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার দুর্নিবার আকর্ষনকে ধারণ করে, অন্যের জীবন নিয়ে খেলার লুকানো ইচ্ছেকে জাগিয়ে তুলে। প্রাচীন যুগ ও মধ্য যুগেই নারীরা বেশি নিগৃহীত হয়েছে। নারীদের অপদস্ত করার ঘটনা তখন অনেক বেশি ঘটেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা তখন কিছু নারীকে সম্মানের আসনে বসাতো। উদাহরণ হিসেবে যীশুর জন্মদাত্রী মেরীর কথা বলা যায়।

ক্রিশ্চিয়ানিটি কখনো যীশুর চেয়ে মেরীকে বেশি গুরত্ব দেয় নি। যেহেতু তিনি ছিলেন নারী। তারা পুরুষ যীশুকে প্রাধান্য দিয়েছে। এরপরও কিছু দেশে মেরীর পূঁজা হতো এবং তার মূর্তি নিয়ে মিছিল বের হতো, এখনো হয়। সে মূর্তির গা স্পর্শ করে আশীর্বাদ নেয় ভক্তরা। তবে এগুলি ছিল ব্যতিক্রম, পাপী মনে উথলে উঠা শাস্তির ভয় থেকে করা কাজ।

নারীকে ফাঁদে ফেলে রাখার আনন্দ পেতে পুরুষতন্ত্র সব যুগে সবকিছু করেছে। গ্রীক দেবী ডায়না দেবী হিসেবে যৌন সঙ্গমে সম্মত ছিলেন না। কিন্তু পুরুষরা তাকেও দেবীর চেয়ে নারী হিসেবে বেশি কল্পনা করেছে। তাই তারা ষাঁড়ের অন্ডকোষ এনে তার গায়ে জুড়ে দেয় যাতে ঐ অন্ডকোষের শুক্রানু দেবীর দেহে প্রবেশ করে তাকে গর্ভবতী করতে পারে।
নারীদের ‘যৌনবস্তু’ হিসেবে গন্য করা যেখানে নারী-পুরুষ বৈষম্যের প্রধান উপাদান বলে বিবেচিত সেখানে শুধু সাধারণ কিছু নারী নয়, অনেক নারীবাদীও পুরুষের বিনোদনের জন্য তৈরী বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রকল্পে নারীদেহের বানিজ্যিক উপস্থাপনার অবাধ অধিকার দাবী করেন। এ দ্বিচারিতা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজকে কঠিনতর করে তুলেছে। নারীদেরকে তাই সমানাধিকারের বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝতে হবে।

যারা নারীকে শুধু নারী হিসেবে দেখতে চায় তাদের বড় সমর্থক পুঁজিবাদ। পুঁজি সবসময়ই তার বিনিয়োগকৃত অর্থ হতে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের সুযোগ খোঁজে। এক্ষেত্রে যৌনতা অন্যতম অস্ত্র। নারীকে ভুল-ভালিয়ে ও পুরুষকে অবদমিত কামনা পূরণের লোভ দেখিয়ে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে পুঁজিবাদ সর্বাধিক মুনাফার মালিক হয়। তাই সে ঐ নারীবাদীদেরকেও সেবক হিসেবে কাজে লাগায়।

বিবিধ লৈঙ্গিক অপবিন্যাসের ম্যাধ্যমে পুঁজিবাদ প্রতিনিয়ত কামাই করে নিচ্ছে আশাতীত মুনাফা আর পুরুষতন্ত্র পাচ্ছে নারীকে ‘যৌনবস্তু’ ভাবার সুখ। এ কৌশল এতই কার্যকর যে, স্বয়ং নারীদের একটি অংশ মুনাফালোভী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আয়োজিত প্রতিযোগিতায় দর্শনীয় ‘বস্তু’ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সর্বস্ব বাজি ধরে, নিজের মানবীয় পরিচয়কে ছোট করে।

এখন আসি কেন এতো কথা বললাম । বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর কোটি টাকা খরচ করে প্রথম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরনের এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করে । শুরু থেকেই সরকারেরই একটি মহল এই বিষয়টিকে বির্তর্কিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে । এর ফলে যেটা হয়েছে প্রতি বছর এই বইগুলো নিয়ে নতুন নতুন বিতর্কে র জন্ম হচ্ছে । তো এবার যেটা হয়েছে

প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘ও’ বর্ণ দিয়ে চেনানো হচ্ছে ‘ওড়না’, ‘ঔ’ দিয়ে ‘ঔষধ’এ বছর প্রথম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে অক্ষরজ্ঞান সূচিতে নিয়ে আসা হয়েছে ওড়না। বইটির পাঠ ১২-তে ‘ও’ অক্ষর চেনানোর উপকরণ হিসেবে ‘ওড়না’কে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অভিভাবক মহলে আপত্তি উঠেছে।

শুনি ও বলি পাঠে ‘ও’ অক্ষর চেনাতে ওড়না পরা একটি কন্যাশিশুর ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে- ‘ওড়না চাই’। আর ‘ঔ’ চেনাতে ব্যবহার করা হয়েছে ওষুধের বোতল ও ট্যাবলেটের ছবি। লেখা হয়েছে ‘ঔষধ খাই’।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছড়ার মাধ্যমে অক্ষর চেনানো নতুন কিছু নয়। যেমন, অ –তে ঐ অজগর আসছে তেড়ে, আ –তে আমটি আমি খাবো পেড়ে। এনিয়ে কোনও কথা না উঠলেও ও-তে ‘ওড়না চাই’ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এ বিষয়ে অভিভাবকদের মতে ‘প্রথম শ্রেণির শিশুকে ‘ও’ অক্ষর চেনাতে আর কিছু না পেয়ে সংকীর্ণ চিন্তা থেকে ওড়না ব্যবহার করা হয়েছে। নারীর নির্দিষ্ট এই পোশাক ব্যবহার করে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে।’ এ্কটি জাতীয় দৈনিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবকও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। ‘সাম্প্রদায়িক মানসিকতা’ থেকে এটি করা হয়েছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

অভিভাবকদের আপত্তির বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা সেই দৈনিককে বলেন, ‘কোনও ভুল পাওয়া গেলে যাচাই করা হবে। সমালোচনা হলেও কমিটিতে বিষয়টি উত্থাপন করব। কোনও সুপারিশ থাকলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রয়োজন হলে আগামী বছর এটা সংশোধন করা হবে বলেও জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।

অনেক অভিভাবকের মতো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদও এ বিষয়ে আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য এটা ঠিক হয়নি। শিশুরা যখন জানতে চাইবে ওড়না কেন ব্যবহার করা হয়, তখন কী উত্তর দেবেন শিক্ষকরা? শিশুদের অক্ষর শেখানোর জন্য এটা ঠিক হয়নি।’


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরীও এ ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক হয়নি। ক্লাস ওয়ানের শিশু ওড়না দিয়ে কিভাবে ‘ও’ অক্ষর সহজে চিনবে। এটা ঠিক নয়। ছোট শিশুদের মনে এখনই নারী-পুরুষ বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ‘ওড়না’ ব্যবহার না করে ‘ওলকপি’ ব্যবহার করা যেত।’

প্রথম শ্রেণির বাংলা বই নাটোর পিটিআইয়ের সহকারী সুপারিনটেন্ডেন্ট আহমাদ সবিহা আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওলকপি, ওজন, ওলি, ওজু, ওরাং-ওটাংসহ নানা শব্দ রয়েছে। একটি পরিচিত বা সহজে পরিচয় করানো যায় এমন শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হতো। তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠত না।’ শিশুদের কাছে ওড়না পরিচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।

এদিকে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ‘ঔ’ অক্ষর চেনাতে গিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে ঔষধ। এটি আগেও ব্যবহার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে সচেতন অভিভাবকদের মতামত, ‘ঔ’ চেনাতে গিয়ে সাধু রীতির শব্দ ‘ঔষধ’ পড়ানো হচ্ছে শিশুদের। পরে ব্যাকরণ পড়ানোর সময় ওষুধ শব্দটি এলে বিভ্রান্ত হতে পারে তারা।

এ বিষয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওষুধ না শিখিয়ে ঔষধ শেখানো হচ্ছে শিশুদের। কিন্তু পরে ব্যাকরণ পড়ার সময় তাদের শেখাতে হবে কোনটা সাধু আর কোনটা চলিত। যেকোনও একটি শেখানো উচিত।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাথমিকে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার জন্য বাক্যানুক্রমিক পদ্ধতিতে পাঠদান দেওয়া হয়। এতে প্রথমে শেখানো হয় বাক্য, এরপর শব্দ এবং সবশেষে অক্ষর। উপকরণ ব্যবহার করার কথা তিন ধাপেই। ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রথম শ্রেণির প্রথম পাঠে সে অনুযায়ী প্রথম ধাপে ‘আমি বই পড়ি’ বা ‘বই পড়ি’ এবং দ্বিতীয় ধাপে ‘আমি’, ‘বই’ ও ‘পড়া’ শব্দ তিনটিকে আলাদা করে শেখানো হচ্ছে।
এখন আমার কথা হচ্ছে যারা আমাদের পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করেন তারা যদি নারী পুরুষ হীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারেন তো সেই বই পড়ে একজন শিক্ষার্থী কিভাবে এই গন্ডি থেকে বের হয়ে আসবেন । আম গাছ লাগিয়ে তো আমরা আপেল আশা করতে পারি না ।
কে বুঝাবে জাতির পাঠ্যসূচি প্রণেতাদের ???
হায় সেলুকাস ! ! !

(লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা , ০৪,০১,১৭, পুরোনো ঢাকা )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.