নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেশনজটের যাঁতাকলে জবি শিক্ষার্থীর: সাড়েঁ পাঁচ বছরেও শেষ হয় না অনার্স

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ রকমের সেশন জটের শিকার হচ্ছেন। ফলে বেশকিছু বিভাগে ৪ বছরের অনার্স ডিগ্রি সমাপ্ত করতে লাগছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ বছর। এতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে স্পষ্ট বলা আছে, সেমিস্টার শুরু হলেই শিক্ষকরা ক্লাস রুটিন অনুসারে ক্লাস নেবেন। প্রতি সেমিস্টারে প্রতি ক্রেডিটের জন্য ১৫ ঘণ্টা ক্লাস নেবেন। মিডটার্ম পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট জমা, এমনকি প্রেজেন্টেশন নেওয়ার পরবর্তী ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই তার ফলাফল প্রকাশ করবেন। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়ম-নীতিতে এমন নিয়মের কথা বলা থাকলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেশির ভাগ বিভাগের শিক্ষকরা এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষকরা তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাদের আচরণ দেখে মনে হয়, তারা অনেকটা করুণা করে আমাদের ক্লাস নেন বা দায় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তারা এটাও বলেন, কোনো কোনো শিক্ষক ঠিকঠাক নিয়ম মানলেও অনিয়ম করা শিক্ষকদের প্রভাবটাই বেশি পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়মে বলা হয়েছে, যেহেতু এক বছরে দুটি সেমিস্টার, সেহেতু জুলাই থেকে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই সেমিস্টার মিলিয়ে একটি সেশন শেষ হবে। এক সেমিস্টারের মেয়াদ ছয় মাস হওয়ায় পাঁচ মাসের মধ্যেই সমস্ত ক্লাস-অ্যাসাইমেন্ট-মিডটার্ম এবং প্রেজেন্টেশন শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীদের অন্তত সাত দিন সময় দেবেন শিক্ষকরা এবং ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার সময়কাল থাকবে দুই সপ্তাহ। কিন্তু কোনো কোনো বিভাগে এক সেমিস্টার শেষ করতে সাত/আট মাস সময় লাগিয়ে দেন শিক্ষকরা’। কিছুদিন আগেও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ৬০ দিনে সেমিস্টার ফাইনাল শেষ করেছে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ক্লাস নেওয়ার কথা ৪৪টি সেখানে শেষ সময়ে এসে ১০-১২টি ক্লাসে সব শেষ করে দেন। এমনকি পরীক্ষা চলাকালীন বন্ধের সময়ে ক্লাস নিয়ে তড়িঘড়ি করে সিলেবাস শেষ করেন। বিভিন্ন বিভাগে এমনও হয় যে ফাইনাল পরীক্ষার পর মিডটার্ম নেওয়া হয় অথবা পরীক্ষা না নিয়ে এভারেজ মার্ক বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে যারা তার পরিচিত তারা বেশি মার্ক পান।

সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে পরবর্তী ৮ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন বলেও একাডেমিক নিয়ম-নীতিতে বলা আছে। অনার্স এবং মাস্টার্স ফাইনাল বর্ষে গবেষণা প্রবন্ধ থাকার কারণে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তাদের ফলাফল প্রকাশ করার নিয়ম রয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২৪ থেকে ৩২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকরা ফলাফল ঘোষণা করেন না বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে হামেশাই সেশনজটের কবলে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকরা অজুহাত দেখান, এক্সটার্নাল শিক্ষকরা খাতা সময়মতো জমা দেন না। অথচ এক্সটার্নাল শিক্ষকরা খাতা সময়মতো জমা না দিলেও তার জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সবাই মিলে উৎসব করে আমাদের সেশনজটে ফেলছেন যার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, আমাদের এডাডেমিক এবং প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে। এতে আমরা চাকরি বাজারেও প্রতিযোগিতায় আসতে পারছি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিসংখ্যান ৭ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ব্যাচের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা যখন চাকরির আবেদন করছে তখনো আমার এক সেমিস্টার বাকি। সেশনজটের কারণ হিসেবে শিক্ষক সংকট এবং ক্লাসরুমের সংকটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করান শিক্ষকরা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিটি বিভাগের জন্যই গড়ে দুই থেকে তিনটি ক্লাসরুম বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু কোনও বিভাগের একমাসও সেশনজট নেই, অপরদিকে কোনো কোনো বিভাগের এক থেকে দুই বছরের বেশি সময় সেশনজট রয়েছে। আবার শিক্ষক সঙ্কট নেই বলেও শিক্ষকদের এই অজুহাত খারিজ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ৩৬টি বিভাগে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এবং প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। অর্ধশতাধিক শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে থাকলেও বর্তমানে যত শিক্ষক রয়েছেন, তা দিয়ে ঠিকঠাক মতোই বিভাগ পরিচালনা করা যায়।

বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভাগের শিক্ষকরা নামেমাত্র একটি রুটিন তৈরি করেন। ওই রুটিন অনুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাস নেন না। ক্লাসের আগের দিন রাতে ফেসবুকে অথবা ফোনে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভের মাধ্যমে জানতে হয়, পরের দিন ক্লাস হবে কি হবে না। আবার অনেক সময় আধা ঘণ্টা পর পর তাদের মতের পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্লাস টাইম পরিবর্তন করেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এমনও হয়, ক্লাস শুরু নির্ধারিত তারিখ থেকে আরো প্রায় দুই মাস পরে গিয়ে কেউ কেউ ক্লাস শুরু করেন। যখনই দেখেন কোর্স শেষ করতে পারছেন না, তখন তারা না পড়িয়েই বাড়তি অ্যাসাইনমেন্ট আমাদের ওপর চাপিয়ে দেন যা পড়াননি, যা বুঝিয়ে দেননি, তা আমাদের পক্ষে বুঝতেও অনেক কঠিন হয়ে যায়। ফলে, আমরা পরীক্ষাতেও ভালো মার্কস পাই না। তিনি বলেন, এদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না হলে তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই অনেক সময় শিক্ষকদের কাছে পরীক্ষা আরো কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করি। কিন্তু তারা সে আবেদনও রাখেন না। তারা যদি প্রথম থেকেই সময় মতো ক্লাস নিতেন, তাহলে আমরা পরীক্ষা পেছানোর জন্য আবেদন করতে যেতাম না। এমনকি সেশন জটেও আমরা পড়তাম না।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজেদের অবস্থানের তুলনা করে ইংরেজি বিভাগের মার্স্টাস ১ম সেমিস্টারের দুই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রায় ১ বছর পিছিয়ে আছি, যখন আমাদের অন্য বন্ধুরা চাকরি করে তখনো আমাদের পড়াশুনা শেষ হয় না। এখন প্রতিযোগিতার সময়। চাকরির বাজারে আমাদের টিকে থাকতে হবে।

অন্যদিকে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে আমাদের ফলাফল এতই খারাপ যে, আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, ইংরেজি বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি, রসায়ন, ফার্মেসি ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিভাগে ভয়াবহ রকমের সেশন জটের কবলে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের ব্যাপার উদাসীন থাকছেন।

অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকদের এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের চোখ রাঙানি দেখতে হয়। তারা আমাদের মার্কস কম দেওয়ারও ইঙ্গিত দেন। তাই, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ তুলতেও ভয় পাই।

অনিয়মকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরাই যে তাদের রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় থাকে তা নয়, কোনও শিক্ষক যদি অনিয়মকারী অন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, তাহলে তাকেও পড়তে হয় সমালোচনায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, গতবছর শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া এবং নানা অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে একটি বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ায় ওই শিক্ষককে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে চলেন না, শিক্ষকদের প্রধান দায়িত্ব হল ক্লাস, পরীক্ষা এবং রেজাল্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তবে আমাদের অনেক সহকর্মী এটা নিয়মিত করছেন না, ফলে সেশন জটে পড়ছে ছাত্ররা।

তিনি আরো বলেন, আমরা শিক্ষকরা যদি নিয়মিত রুটিন মাফিক ক্লাস নিই এবং শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকে, তাহলে সেশন জটের মতো ভয়াবহ সমস্যার প্রায় সবটাই সমাধান হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, আমরা বারবার শিক্ষকদের তাগিদ দেই একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে চলার জন্য। আমি মনে করি যদি আমাদের শিক্ষকরা তা মেনে চলেন তবে কোনো বিভাগে সেশনজট থাকার কথা না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, যারা এরকম করে তাদের সংখ্যা খুবই কম, আমরা তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বলেছি, তাতে খুব একটা ফল হয়নি। শিক্ষকরা যখন নিজ কর্তব্য ভুলে যায় তখন কি আর করার থাকে। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কেউ হয়ত সেই নিয়ম মানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেশন জট অনেকটাই কম।


লেখকঃ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক , জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.