নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিল্পীর জীবনে প্রেম

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪১

পৃথিবীর বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক শিল্পীদের জীবনেও প্রেম এসেছে। আর এই প্রেমের পরশে তাঁরা পৃথিবীতে রেখে গেছেন মহৎ শিল্পকর্মের স্বাক্ষর। নিচে তাঁদের কয়েকজনের জীবনের প্রেম বিষয়ক ঘটনা; আসুন জেনে নেই-
দান্তে আলগিয়েরিঃ

মধ্যযুগের ইউরোপের ঘোরতর তমসার মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে এলেন তিনি হচ্ছেন দান্তে। অবাক ব্যাপার, মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি তার সমবয়সী বালিকা বিয়াত্রিচের প্রেমে পড়েন। বিয়াত্রিচের প্রতি তাঁর প্রবল আবেগ থেকে রচিত হয়েছে “Vita Nuova” বা “নব জীবন”। অথচ একথা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে তিনি বিয়াত্রিচকে জীবনে মাত্র দুবার দেখেছেন। এবং এও সন্দেহজনক, বিয়াত্রিচ আদৌ তার আবেগ সম্পর্কে জেনেছেন কিনা। দান্তের এ প্রেম রক্ত মাংশের নয়, এ হচ্ছে ঐশ্বরিক। জীবনে তিনি বিয়াত্রিচকে পাননি। বিয়াত্রিচের বিয়ে হয় সাইমন নামে এক যুবকের সংগে এবং মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে বিয়াত্রিচ মারা যান। প্রেয়সীর অকাল মৃত্যুই দান্তেকে মহৎ করে তোলে। তিনি লিখলেনঃ “That truly one may never think of her without a passion of exceeding love.” ( ভিটানোভা- ২৭ )

euro03
বিয়াত্রিচকে খুঁজে বেড়ালেন জীবনের ওপারে মরণে, লিখলেন ডিভাইন কমেডি এবং স্বর্গ থেকে বিয়াত্রিচ তাকে blessed life বা পূত জীবনের সন্ধান দিলেন।

euro04
কিটসঃ

ফ্যানি ব্রাউন নামের এক তরুণীর সংগে জটিল হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক জন কিটস্ জড়িত হয়ে পড়েন। ফ্যানি যে সত্যি কিটস্ কে ভালোবাসতেন এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু কিটস্ নিজেই সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে জ্বলে পুড়ে মরেছেন। দারিদ্র, দূরাবস্থা এবং ভগ্নস্বাস্থ্য এইসব মিলে তার প্রেম একটি সুস্থ সবল গতিপথ খুঁজে পায়নি। কিটস্ এর শক্তি ও দূর্বলতার উৎস ছিলো তার প্রাণপ্রতিম ফ্যানি ব্রাউন। ফ্যানির প্রতি প্রেম থেকেই তিনি Lamia, The Nightingale, The Grecian Um ইত্যাদি বিখ্যাত কবিতা রচনা করেন। এই বিদগ্ধ কবি মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করেন। সবচাইতে মর্মাবিদারক হচ্ছে কিটস্ কে লেখা ফ্যানির শেষ চিঠি যা কিটসের মৃত্যু শয্যায় গিয়ে পৌঁছে এবং এবং এটা খোলার মতো শক্তিও তার ছিলোনা। প্রথমে চিঠিটি তিনি তার কফিনে দিতে বলেন, পরে আবার নিষেধ করেন। শেষ পর্যন্ত চিঠিটি তার মৃতদেহের সংগে কফিনে দেয়া হয়।

euro05
শেলীঃ

রোম্যান্টিক ভাবধারার এ কবির জীবনে প্রেমের বিষয়টা একটু অন্যরকম। তার প্রেম নির্দিষ্ট কোনো নারীর প্রতি সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার জীবনে এসেছে হ্যারিয়েট, মেরী, ফ্যানি ও এলিয়েন। কিন্তু তাদের কাউকে নিয়ে তিনি কখনো পরিপূর্ণ ভাবে তৃপ্ত হতে পারেননি।

euro06
পের্ত্রাকঃ

ইটালীর কবি পের্ত্রাক তার প্রেমিকা লরাকে নিয়ে লিখলেন অপূর্ব সব সনেটগুচ্ছ। পৃথিবীর সাহিত্য পেলো কাব্যের এক নতুন আঙ্গিক।

euro06
মায়াকোভস্কিঃ

রাশিয়ান বিপ্লবের কবি মায়াকোভস্কি বিপ্লবের শেষে পারি থেকে প্রেম বিষয়ে চিঠি লিখলেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তিনি নিজেকে অত্যন্ত অসহায় বোধ করতে লাগলেন এবং জীবনের অর্থহীনতা থেকে গুলি করে আত্মহত্যা করলেন।

euro07
রবীন্দ্রনাথঃ

বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কতো বড় মাপের প্রেমিক কবি ছিলেন তা আমাদের সবারই জানা। “ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে, আমার নামটি লিখো তোমার, মনেরও মন্দিরে” আবার “সখি ভালোবাসা কারে কয়” এইসব পঙক্তি উঁচু মাপের প্রেমিক মন না থাকলে লেখা যায়না। যৌবনের সূচনায় কাদম্বরী দেবীকে, যৌবনের শেষে মৃণালিনী দেবীকে হারিয়ে তিনি হয়েছেন বিচলিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন আর্জেন্টাইন মহিলা ভিকটোরিয়া ওকাম্পোর সংগে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ১৯২৪ সালে তিনি পেরুর স্বাধীনতার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ করেন এবং সেই সময় আর্জেন্টিনায় ভিকটোরিয়া ওকাম্পোর অতিথি হন। আর এ জন্যই কি তিনি লিখেছেন- “আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী”।

euro08
নজরুলঃ

বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো যার আবির্ভাব সেই নজরুলের জীবনেও বিভিন্ন সময়ে প্রেম এসেছে। নার্গিস ছিল নজরুলের জীবনের প্রথম নারী। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাসর ঘরেই তাঁদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তাই নার্গিসকে কবি কোনদিন ভুলতে পারেননি। এরপর উদ্ভ্রান্ত নজরুল তরুণী প্রমিলার প্রতি আকৃষ্ট হলেন। প্রমিলার প্রতি প্রেম থেকে তিনি “বিজয়িনী” কবিতাটি রচনা করেন। আবার দেখা যায় ১৯২৮ সালের দিকে তিনি ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা ফজিলাতুন্নেসার প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর সেই প্রণয় ব্যর্থ হয়। দুঃখ দিয়েই যার জীবন গড়া সেই দুখু মিয়া জীবনের বেশীরভাগ সময়ই দারিদ্রের মাঝে দিন কাটিয়েছেন। তবু প্রেমের মধ্যে তিনি খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন জীবনের শান্তনা।

euro09
বিদ্যাপতিঃ

এক গরীব কবি। বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিল কবি। বঙ্গদেশে তাঁর প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। কথিত আছে যে পরমপুরুষ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিত্য তাঁর রচনা গাইতে ভালবাসতেন। অনেক বাঙালী কবি এই ভাষায় কবিতা রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভানুসিংহের পদাবলীতে’ আমরা এই ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই। বাঙালীরা চর্যাগীতির ভাষা থেকে এই ব্রজবুলীকে অনেক সহজে বুঝতে পারেন। এই কারণেই বিদ্যাপতিকে বাঙালী কবিদের অন্যতম হিসেবেই গণ্য করা হয়। তাঁর পদাবলী ছন্দ, আলংকারিক নৈপুণ্য ও গভীর হৃদয়াবেগে সমৃদ্ধ। প্রেম ও ভক্তি তাঁর কবিতায় প্রধান হয়ে উঠেছে। যিনি রাজদরবারে শুধু দূর থেকে মিথিলার রাণী, লছমা দেবীকে শিকের আড়াল থেকে দেখেই তৃপ্ত হয়েছেন। আর না পাওয়ার বেদনা থেকেই তিনি লিখেছেন-
“মাহ ভাদর ভরা বাদর
শূন্য মন্দির মোর।”

euro10
চন্ডীদাসঃ

ব্রাহ্মণ চন্ডীদাস অন্তজ রাণীর মধ্যেই রাধাকে অনুভব করেছিলেন। তাঁর রাধা তো পৌরাণিক রাধা নয়। তাঁর বাঁধা হচ্ছে এক অন্যজ শ্রেণীর নারী, সামাজিক বিধি নিষেধের টানাপোড়েনে যাকে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁর রাণী রূপ পেয়েছে রাধার মধ্যে আর তাঁর পদাবলীর আবেগ হয়ে উঠেছে এত নিবিড় এতো অন্তরঙ্গ।

euro11
মোৎসার্টঃ

সুরের রাজা মোৎসার্টের কথা কে না জানে। প্রথমে তিনি আলোয়সিয়া ওয়েবারের প্রেমে পড়েন। কিন্তু এই তরুণী তাঁকে ঠকিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করেন। পরে অবশ্য তিনি আলোয়সিয়ার ছোট বোন কে ভালোবেসে বিয়ে করেন। এই মহান সুর সাধক যাঁকে মৃত্যুর অনতিপূর্বেও সুখ মরীচিকার মতো ছলনা করেছে। অভাব তাঁকে সারাটা জীবন তাড়া করেছে। মাত্র পয়ত্রিশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। প্রেয়সী কন্সটান্সের প্রতি সুগভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি “The marriage of Figaro” নামে একটি অপেরা রচনা করেন।

euro12
বেটোফেনঃ

জার্মানীর রাইনল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার বেটোফেন ছিলেন আজীবন অকৃতদার। তিনি জীবনে বহু নারীর সান্নিধ্যে এসেছেন। কিন্তু এদের কারো সংগেই তাঁর আন্তরিক ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাঁর মৃত্যুর পর টেবিলের উপর একটি প্রেমপত্র পাওয়া যায়। নারী সম্পর্কে তাঁর ধারণা অনেক উঁচু ছিলো। জীবনের শেষের দিকে বধির হয়ে যাওয়া এই অমর শিল্পী তাঁর বিখ্যাত সঙ্গীত “Leonore” –এ নারীকে মহিমামন্ডিত করে দেখেছেন।

euro13
ভ্যান গঁগঃ

বাউন্ডুলে ভবঘুরে পাগলাটে ও অস্থির চিত্ত ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঁগ তাঁর নয় বছরের শিল্পী জীবনে যা করে গেছেন তা শিল্পের ইতিহাসে অক্ষয়। এই পোষ্ট ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীর জীবনে অনেক বারই প্রেম এসেছে এবং তা সবই বিচিত্র ধরণের । প্রথম যৌবনে তিনি অন্যত্র বাগদত্তা উরসুলা নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়েন। অনেক চেষ্টা এবং অপমানিত হয়েও তিনি এখানে ব্যর্থ হন। এরপর কি নামে এক বিধবা মহিলার প্রেমে পড়েন। সেখানে তিনি তাঁর প্রেমের স্বাক্ষর সরূপ ডান হাত মোমবাতিতে পুড়িয়ে ফেলেন। তবুও বিধি বাম। এরপর ক্রিস্তিন নামের পাঁচ সন্তানের জননী যে রাস্তায় পতিতাবৃত্তি করে বেড়াতো তার প্রেমে পড়েন। কিন্তু সামাজিক বিধি নিষেধের জন্য সে প্রেমও ব্যর্থ হয়। ভ্যান গঁগ তাঁর সারাটি জীবনই চরম অর্থকষ্টে দিন কাটিয়েছেন। বউ পালবার সামর্থ তাঁর ছিলোনা। বৈচিত্রের জন্য তিনি ছুটে যেতেন নিষিদ্ধপল্লীতে। সেখানে রেসেল নামে এক তরুণী পতিতার সংগে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু ধূর্ত রেসেল শিল্পীর কোনো টাকা নেই শুনে তাঁর কান দুটোর একটা চায়। ভ্যান গঁগের কান দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। যৌবনের এই ব্যর্থ প্রেমিক একদিন সত্যিই একটি কান কেটে তাঁর প্রেমের উপহার সরূপ রেসেলকে দেয়। জীবনের এক পর্যায়ে ভ্যান গগ পুরো উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। জীবন সমুদ্রে ব্যর্থ নাবিক এই শিল্পী একদিন রিভলভার দিয়ে আত্মহত্যা করলেন। বেঁচে থাকতে এই মহান শিল্পীর মূল্যায়ন পৃথিবীবাসী করতে পারেনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.