নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !
আজ মাঘ মাসের শুক্লাপক্ষের শ্রী পঞ্চমী। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। শাস্ত্রমতে, সরস্বতী হলেন জ্ঞান, বিদ্যা, সংস্কৃতি ও শুদ্ধতার দেবী। সৌম্যাবয়ব, শুভ্র বসন, হংস-সম্বলিত, পুস্তক ও বীণা ধারিণী এই দেবী বাঙালির মানসলোকে এমন এক প্রতিমূর্তিতে বিরাজিত, যেখানে কোনো অন্ধকার নেই, নেই অজ্ঞানতা বা সংস্কারের কালো ছায়া
প্রতি বছরের ন্যায় ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হচ্ছে দেবী সরস্বতীর পূজা। মঙ্গলবার রাতে প্রতিমা স্থাপন করে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সূচনা হয়। চলবে আজ (১ ফেব্রুয়ারী) রাত অবধি। পূজা উপলক্ষে প্রতিটি বিভাগ থেকে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিমা। প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে অংশ গ্রহণ করছে এ পূজায়।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এবার বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে প্রধানত তিনটি সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও গত কয়েক বছরের পুজোয় প্রতিটি বিভাগের আয়োজনে একটি করে সাউন্ড সিস্টেম থাকতো। তবে এবার নিরাপত্তা জনিত কারণে কেন্দ্রীয় ভাবে তিনিটি সাউন্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জবি শিক্ষক সমিতি ও পূজা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল বলেন, ‘পূজায় সার্বজনিন একটা বিষয় থাকে। এখানে অনেকগুলো সাউন্ড এক সাথে চললে অনেক শব্দদূষণ হবে। এতে পূজার ব্যাপারটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আর যেহেতু আমাদের অনেক ছোট জায়গা তাই আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে তিনটি সাউন্ড সিস্টেম রাখছি।’
ক্যাম্পাসে পূজা আয়োজনের অন্যতম সংগঠক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদার বলেন, “গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও আমরা ক্যাম্পাসে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলও শান্তিপূর্ন ভাবে স্বরস্বতী পূজার আয়োজন করেছি। আমরা মনে করি, এই পূজা আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বিদ্যাদেবীকে সন্তুষ্ট করে শিক্ষা অর্জন এর পথ সুগম করতে পারব। এই পূজা এখন শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এটা এখন একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সহকর্মীরা ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে আমাদের সনাতন ধর্মী ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও অন্য ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক বেশি উৎসাহ নিয়ে আমাদের সহযোগিতা করছেন। আমাদের মূল লক্ষ হলো বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তাই এই পূজা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ।’
পূজায় আসা ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বর্ণ সুবহান জানালেন, “আমাদের ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে পারস্পারিক সৌহাদ্যপূর্ণ আচরণ এর জন্য মূলত আসা।বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমাদের মাঝে কোনো ধরনের ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকা উচিত না।”
পাশেই থাকা আইন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র নাহিদ বলেন,“বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্বজনীন স্থান। এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক।” কেহ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ না করার শিক্ষাই এ পূজা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।পুজা আয়োজনের বিষয়ে জানাতে হৃদয় পাল জানান, ‘আমরা পূজার আয়োজন করেছি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকে। এই পূজার মাধ্যমে ছাত্র- ছাত্রীরা জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
অভিধান থেকে জানা যায়, সংস্কৃত ‘সরস’ হলো পূর্ণতাপ্রদাত্রী বা জ্যোতির্ময়ী অথবা ঐশর্যময়ী। আবার ‘সরস’ অর্থ জল বা জীবনের প্রশান্তি। উভয় অর্থেই (সরস+বতী) সরস্বতী আলোকিত জীবনময়তার প্রতীক। সরস্বতীকে পদ্মাসীনা দেখিয়ে দেহস্থ প্রাণবায়ুকে উত্তোলন করার কৌশল নির্দেশ করা হয়েছে।]
হিন্দু শাস্ত্র হতে জানা যায় সরস্বতী দেবীর ধ্যান, প্রণামমন্ত্র ও স্তবমালা থেকে সামগ্রিক রূপটি হলো ‘এই দেবী সরস্বতী শুভ্রবর্ণা শ্বেত পদ্মাসনা, শ্রী হস্ত লেখনী, পুস্তক ও বীণা। তিনি শুভ্রবস্ত্রাবৃতা হংসরূপ বাহনে উপবিষ্ট বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্তদি বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।’ সরস্বতী দেবীকে হিন্দুরা পুজো করলেও সে কারণেই সব বাঙালির কাছে ‘বিদ্যা’ নামক অব্যাখ্যাত শব্দটির প্রতীক এই সরস্বতী। শাস্ত্রে দেখা যায়, চতুর্ভুজা ব্রহ্মার মুখ হতে আবির্ভূতা শুভ্রবর্ণা বীনাধারিণী চন্দ্রের শোভাযুক্তা দেবীই হলেন সরস্বতী।
তিনি শুভ্রবর্ণা। তার এই শুভ্রবর্ণ শুচিতা, শুভ্রতা, শুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক; যা আমাদের মনকে শুচি, শুভ্র ও শুদ্ধ রাখার নির্দেশ দিচ্ছে। কারণ মন শুদ্ধি না হলে চিত্ত শুদ্ধি হয় না আর চিত্ত শুদ্ধি ছাড়া জ্ঞান লাভ করা যায় না। সরস্বতী দেবী হংসবাহনা। হংসের একটি বিচিত্রতা আছে। হংসকে দুধ ও জলের মিশ্রণ খেতে দিলে সে অনায়াসে জল রেখে সারবস্তু দুধ গ্রহণ করে। সার ও অসার মিশ্রিত এই জগৎ সংসারে মানুষ যেন সারবস্তু গ্রহণ করে এ নির্দেশই হংসবাহনতায় প্রকাশিত। দেবীর হাতের পুস্তক জ্ঞানর্চ্চার প্রতীক। জ্ঞানের মতো পবিত্র এ জগতে আর কিছুই নেই। এই জ্ঞান সব যোগের পরিপক্ব ফল। সরস্বতী মায়ের হাতের বীণা সঙ্গীতবিদ্যার প্রতীক। মনের ভাব প্রকাশ হয় ভাষায় আর প্রাণের ভাব প্রকাশ পায় সুরে। সুর মানুষকে বিমোহিত করে।
সম্প্রদায়গত ধর্মীয় পুজো-অনুষ্ঠানের বাইরে সরস্বতী পুজোর বিশেষ সামাজিক গুরুত্ব আছে। দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পুজো হয়ে আসছে।সরস্বতী পুজো শুধুই বিশুদ্ধ পুজো নয়। পুজোর শাস্ত্রীয় কাজটুকুর বাইরে এর রয়েছে সম্প্রদায়-উত্তীর্ণ সার্বজনীন আবেদন। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক কর্ম বা অনুষ্ঠান যখন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তখন শ্রীপঞ্চমীর ওই দিবসটি এক মহামিলনের দিন হিসেবেই উঠে আসে।
এ পূজায় আপনারা কি প্রত্যাশা করেন জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়াম্যান ও পূজা কমিটিরসাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.অরুণকুমার গোস্বামীবলেন,‘আমরা মনে করি এই পূজার মাধ্যেমে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে কোনো ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষ থাকতে পারে না।এই পূজার মাধ্যমে অমরা ছাত্রদের কাছ থেকে বিদ্যাদেবীর যে আদর্শ তাই আশা করি যাতে তারা বিদ্যা অর্জনে দেবী স্বরস্বতীর আদর্শকে অনুসরণ করেন।
(জাহিদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়, ঢাকা, ০২.০২.১৭ , পুরোনো ঢাকা ) ]
©somewhere in net ltd.