নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্ব্‌প্নবাজ তরুণ

ভালবাসা শুরু হওয়ার জন্য হাজার বছরের প্রয়োজন নেই এক মুহূর্তই যথেষ্ঠ..... সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় আছি...........

স্ব্‌প্নবাজ তরুণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে জলে আগুন জলে : হেলাল হাফিজের কিছু ভালোলাগা কবিতা।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৪

হেলাল হাফিজের কিছু কবিতা শেয়ার করলাম ।এগুলো আমার খুব প্রিয় ।আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন ।







১- আমার সকল আয়োজন



আমাকে দুঃখের শ্লোক কে শোনাবে?

কে দেখাবে আমাকে দুঃখের চিহ্ন কী এমন,

দুঃখ তো আমার সেই জন্ম থেকে জীবনের

একমাত্র মৌলিক কাহিনী।

আমার শৈশব বলে কিছু নেই

আমার কৈশোর বলে কিছু নেই,

আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার।

দুঃখ তো আমার হাত–হাতের আঙুন–আঙুলের নখ

দুঃখের নিখুঁত চিত্র এ কবির আপাদমস্তক।

আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,

দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।

আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,

অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,

পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনে

সাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্টি-ম্যাচের মতো বুকে।





২-দুঃখের আরেক নাম



আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।

অলৌকিক কিছু নয়,

নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি

তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।

আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,

পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।

নারী তুমি আমার ভিতরে হও প্রবাহিত দুর্বিনীত নদীর মতন,

মিলেমিশে একাকার হয়ে এসো বাঁচি

নিদারুণ দুঃসময়ে বড়ো বেশি অসহায় একা পড়ে আছি।

তুমুল ফাল্গুন যায়, ডাকে না কোকিল কোনো ডালে,

আকস্মিক দু’একটা কুহু কুহু আর্তনাদ

পৃথিবীকে উপহাস করে।

একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা

আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে

পাখিদের নীলাকাশ বিষাক্ত হয়ে গেছে সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে।

এখন তুমিই বলো নারী

তোমার উদ্যান ছাড়া আমি আর কোথায় দাঁড়াবো।

আমাকে দাঁড়াতে দাও বিশুদ্ধ পরিপূর্ণতায়,

ব্যাকুল শুশ্রুষা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো

নারী তুমি শৈল্পিক তাবিজ,

এতোদিন নারী ও রমনীহীন ছিলাম বলেই ছিলো

দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।





৩-ইচ্ছে ছিলো



ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো

ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে

শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো

সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা

পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে

রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,

জন্মাবধি আমার শীতল চোখ

তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো

তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,

আজ দেখি রাজ্য আছে

রাজা আছে

ইচ্ছে আছে,

শুধু তুমি অন্য ঘরে।





৪-ফেরীঅলা



কষ্ট নেবে কষ্ট

হরেক রকম কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট !

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট

পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,

আলোর মাঝে কালোর কষ্ট

‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট

দাড়ির কষ্ট

চোখের বুকের নখের কষ্ট,

একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট

অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,

ভুল রমণী ভালোবাসার

ভুল নেতাদের জনসভার

হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট

পথের এবং পায়ের কষ্ট

অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

আর কে দেবে আমি ছাড়া

আসল শোভন কষ্ট,

কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন

আমার মত ক’জনের আর

সব হয়েছে নষ্ট,

আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।









৫-হিরণবালা



হিরণবালা তোমার কাছে দারুন ঋণী সারা জীবন

যেমন ঋণী আব্বা এবং মায়ের কাছে।

ফুলের কাছে মৌমাছিরা

বায়ুর কাছে নদীর বুকে জলের খেলা যেমন ঋণী

খোদার কসম হিরণবালা

তোমার কাছে আমিও ঠিক তেমনি ঋণী।

তোমার বুকে বুক রেখেছি বলেই আমি পবিত্র আজ

তোমার জলে স্নান করেছি বলেই আমি বিশুদ্ধ আজ

যৌবনে এই তৃষ্ণা কাতর লকলকে জিভ

এক নিশীথে কুসুম গরম তোমার মুখে

কিছু সময় ছিলো বলেই সভ্য হলো

মোহান্ধ মন এবং জীবন মুক্তি পেলো।

আঙুল দিয়ে তোমার আঙুল ছুঁয়েছিলাম বলেই আমার

আঙুলে আজ সুর এসেছে,

নারী-খেলার অভিজ্ঞতার প্রথম এবং পবিত্র ঋণ

তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখে সত্যি কি আর শোধ হয়েছে?







৬-যাতায়াত



কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না

রাত কাটে তো ভোর দেখি না

কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।

নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম

পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক

দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,

কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো

যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি

মাথার কসম আবার এসো

জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো

শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,

চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি

বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।

লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।

ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়

আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।

কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।







৭-যেভাবে সে এলো



অসম্ভব ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছিলো,

সামনে যা পেলো খেলো,

যেন মন্বন্তরে কেটে যাওয়া রজতজয়ন্তী শেষে

এসেছে সে, সবকিছু উপাদেয় মুখে।

গাভিন ক্ষেতের সব ঘ্রাণ টেনে নিলো,

করুণ কার্নিশ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা লকলকে লতাটিও খেলো,

দুধাল গাভীটি খেলো

খেলো সব জলের কলস।

শানে বাধা ঘাট খেলো

সবুজের বনভূমি খেলো

উদাস আকাশ খেলো

কবিতার পান্ডুলিপি খেলো।

দু’পায়া পথের বুক, বিদ্যালয়

উপাসনালয় আর কারখানার চিমনি খেলো

মতিঝিলে স্টেটব্যাংক খেলো।

রাখালের অনুপম বাঁশিটিকে খেলো,

মগড়ার তীরে বসে চাল ধোয়া হাতটিকে খেলো

স্বাধীনতা সব খেলো, মানুষের দুঃখ খেলো না।





৮-উৎসর্গ



আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো

আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।

কবিতা কি কেবল শব্দের মেলা, সংগীতের লীলা?

কবিতা কি ছেলেখেলা, অবহেলা রঙিন বেলুন?

কবিতা কি নোটবই, টু-ইন-ওয়ান, অভিজাত মহিলা -সেলুন?

কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো

চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,

তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।

কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে

খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে

কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।

মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,

সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,

তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।

কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,

নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,–

পথিক এ পথে নয়

‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।

আমার কবিতা আমি দিয়ে যাবো

আপনাকে, তোমাকে ও তোকে।









৯-শামুক



‘অদ্ভুত, অদ্ভুত’ বলে

সমস্বরে চিৎকার করে উঠলেন কিছু লোক।

আমি নগরের জ্যেষ্ঠ শামুক

একবার একটু নড়েই নতুন ভঙ্গিতে ঠিক গুটিয়ে গেলাম,

জলে দ্রাঘিমা জুড়ে

যে রকম গুটানো ছিলাম,

ছিমছাম একা একা ভেতরে ছিলাম,

মানুষের কাছে এসে

নতুন মুদ্রায় আমি নির্জন হলাম,

একাই ছিলাম আমি পুনরায় একলা হলাম।











































মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:০১

শহিদুল ইসলাম বলেছেন: দারুন !

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:০০

অক্টোপাস পল বলেছেন: ্প্রিয়তে নিলাম

৩| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮

অপ্র্রকাশিত বলেছেন: পিলাচ+প্রিয়তে..

৪| ১০ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

পুতুল আলতাব বলেছেন: অসাধানণ।

৫| ১০ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৩

পুতুল আলতাব বলেছেন: অসাধারণ!

৬| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭

শ্যামল সোম বলেছেন: আমার প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ এর জলে জ্বলছে আগুন
আমাকে অনুপ্রাণিত করে এবং লিখতে বাধ্য করে।

সেদিন ছিল একাত্তরের একুশের ফেব্রুয়ারি

আমার সাংবাদিক জীবনের প্রারম্ভে যৌবনের উন্মাদনা, কর্মজীবনে বিশাল সাফল্যের আশায় গত মাস থেকে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে প্রাণ হাতে করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের রসদ যা পরবর্তীতে গ্রন্থ লিখতে সাহায্য করবে।
বর্তমানের খবর সংগ্রহ করতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সচক্ষে, বা মুক্তি যুদ্ধকালীন, সাধারণ বাংলাদেশের গণচেতনা, অভিজ্ঞতা, পাকবাহিনীর সামরিক শাসনের শোষণ, নির্যাতন, ধর্ষণের শিকার প্রায় এক লক্ষ, তিন লক্ষ মানুষের হত্যা, বুদ্ধিজীবী, কবি, নেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, শিক্ষক, প্রফেসর, সাহিত্যিক, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নির্মম ভাবে গুপ্ত হত্যা যদিও এই ঘটনা ঘটার বহু পূর্বেই আমি এক বিচিত্র রোমাঞ্চকর, লোমহর্ষক, বুক ও রক্ত হিম শীতল করার অভিজ্ঞতা লিখতে আজ বহুবছর পরে আমার এই আত্ম কথন।

লেখার শিরোনাম-- " একাত্তরের দুই বছর বাংলা "

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.