ছোটগল্পঃ ওজনদার ভালোবাসা !

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৮

পার্কের এদিকটায় লোকজন খুব একটা আসেনা ।মাংকি ক্যাপ পড়া বন্ধুবত্‍সল ছিনতাইকারীদের ভয়ে ।মিষ্টি হাসি বিনিময় করতে করতে কখন যে চার ইঞ্চি ব্লেডের ফলা ঠেসে ধরবে ভুড়িঁতে ঠিক নেই ।ঠিক এই কারনেই আমার এতো প্রিয় জনবিরল জায়গাটুকু ।ভুড়িঁর সাথে লেগে যাওয়া টিশার্ট আর ট্রাউজার গোজাঁ কেডস পড়ে দৌড়াতে আসি এখানে ।ট্রাউজারের দুই পকেট কুত্তার জিহ্বার মত বের করে রাখি ।কেউ কেউ ভ্রু কোচঁকালেও মামুরা (!) ঠিকই বুঝে আমি নির্মাল থুক্কু মালহীন ।মানে টাকা পয়সা নিয়ে আসিনি তাদের আপ্যায়ন করতে ।অনেকগুলা গ্যাং এই পার্কে বিচ্ছিন্নভাবে ছিনতাই করে ।তাদের ছিনতাইয়ের স্টাইলও পিকুলিয়ার ।কেউ বিশেষ মসলা দেয়া পান সাধে,কেউ চোখে মলম ডলে দেয়,কেউ ছোট টোকাই বাচ্চাদের বলে পথচারীদের পা আকড়েঁ ধরতে ।এই ফাকেঁ ছিনতাই করে তারা পথচারীটিকে ঘিরে ধরে ।বাচ্চাটাকে বিশ টাকা দিলেই হয় ।কেউবা ক্লোরোফর্ম শোকাঁয় ।আমি নিশ্চিন্ত মনে পকেট উদোম করে আসি ।ঘুরি ।বাতাস খাই ।এক্সারসাইজ করি । ঘর্মাক্ত দেহে বাসায় ফিরি ।আজকেও নির্ধারিত বেঞ্চে বসে আছি ।পাখিদের কিচিরমিচির শুনতে শুনতে তন্দ্রা মত লেগে আসছিলো ।হঠাত্‍ গলা খাকাঁরির সাথে সালাম দিল একজন ।সালামের জবাব দিয়ে আবার চোখ মুদলাম ।পাশের লোকটা পেপার পড়ছে শব্দ পাচ্ছি ।মিনিটখানেক পর চোখ মেলে দেখি সে নেই ।আমার পায়ের নিচে একটা পাচঁ টাকা দামের চটের ব্যাগ ।একটা গানের কলি ভাজঁতে ভাজঁতে ব্যাগটা নিয়ে বাড়ির পথ ধরি আমি । ও হ্যা!পাশে বসা লোকটা আমার পরিচিত ।মন্তাজ ।এই পার্কের সবচে বড় ছিনতাইকারী গ্যাংয়ের নেতা ।লোকজনকে ফাদেঁ ফেলার আইডিয়া বের করায় লোকটা একটা অঘোষিত জিনিয়াস । আমার রাইট হ্যান্ড ।সাপ্তাহিক ছিনতাই করা মালগুলোর ষাট পার্সেন্ট দিতে এসেছিলো ।আরে! আপনারা তো জানেনই না ।এই পার্কসহ গোটা এলাকার সিংহভাগ ছিনতাই আমার তত্ত্বাবধানেই হয় ।হাতের ব্যাগটা ভারী লাগছে ।কমসেকম পচিঁশটা মোবাইল আর চল্লিশটা পেটমোটা মানিব্যাগ তো হবেই ।আহা! কতজনের প্রিয়মানুষের দেয়া গিফট হতে পারে ব্যাগের এইসব মোবাইল,মানিব্যাগ ।কত ভালোবাসা জড়িয়ে আছে এতে ।ব্যাগ ভর্তি ভালোবাসা নিয়ে হাটঁতে কষ্ট হচ্ছে আমার ।ভালোবাসা এতো ভারী হয়???

০ টি +০/-০