নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনি কি কানাডা’র নতুন অভিবাসী হয়ে আসছেন? তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্যে - পর্ব ১৫

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১২



পর্ব ১৪

কানাডা’র নতুন বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদের জন্যে ধারাবাহিকভাবে লেখা ১-১৪ সিরিজটির আজকের পর্বে আমরা কানাডায় প্রফেশনাল/ ভলান্টিয়ার জব ইন্টারভিউ -এর রিয়েলটাইম বাকী প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

১. নতুন কোন চ্যালেঞ্জকে আপনি কিভাবে গ্রহণ করবেন?
সরাসরি উদাহরণ দিন। এভাবে বলুন:
আপনি এর আগে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, সেখানে পুরাতন সুপারভাইজার বদলি হয়ে নতুন সুপারভাইজার এলেন এবং নতুন অনেকগুলো কাজ আপনার ওপরে চাপিয়ে দিলেন। এতে আপনি হতাশ না হয়ে বরং নতুন উদ্যমে আরও বেশি কর্মক্ষম হয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে সেই কাজগুলো সম্পন্ন করতে লাগলেন। সুতরাং জীবনে চ্যালেঞ্জ আসবেই এবং সেই চ্যালেঞ্জকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করাই আপনার উদ্দেশ্য, ভয় পাওয়া নয়।

২. কর্মক্ষেত্রে আপনার সুপারভাইজার-এর সাথে আপনার কোন বিষয়ে দ্বিমত হলো/ মতানৈক্য হলো না/ কথা কাটাকাটি হলো অথবা আপনার সুপারভাইজার আপনাকে এমন কোন নির্দেশ দিলেন, যা নিয়ম বহির্ভূত কাজ। আপনি সেক্ষেত্রে কি করবেন?
কর্মক্ষেত্রে আমরা সবাই কমবেশি সুপারভাইজারকে ম্যানেজ করে চলি। কথায় বলে, ”বস্ ইজ অলওয়েজ রাইট”। কিন্তু সুপারভাইজার যে সবসময় সব ব্যাপারে সঠিক, তা-ও কিন্তু নয়। তার সাথে আপনার দ্বি-মত হতেই পারে। আপনি উত্তরটা এভাবে দিতে পারেন:

”বাংলাদেশে আমি শেষ যে প্রতিষ্ঠানে হিউম্যান রিসোর্সে কাজ করতাম, সেখানে একবার আমার সুপারভাইজার আমাকে বললেন যে, একজন নতুন কর্মীর রিক্রুটমেন্ট-এর সময় প্রতিষ্ঠানের নিয়ম না মেনে কোন প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই সেই কর্মীকে নিয়োগ দিতে। আমি আমার সুপারভাইজারকে বললাম যে, কাজটি নিয়মবহির্ভূত হবে। কিন্তু আমার সুপারভাইজার আমাকে জানালেন যে, উক্ত কর্মী তার খালাতো ভাই। অতএব, কোনপ্রকার পরীক্ষা ছাড়াই যেন আমি তাকে নিয়োগ দেই এবং ব্যাপারটি সিনিয়র অথরিটির কাছে গোপন রাখি। পুরো বিষয়টি ছিল আমার কাছে অস্বস্তিকর, অগ্রহণযোগ্য এবং নীতিবিরুদ্ধ।”

এমতাবস্থায় আমি আমার সুপারভাইজারের সাথে আলোচনায় বসলাম। তার সাথে আমি আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মগুলো নিয়ে পুনরায় বিস্তারিত আলোচনায় বসলাম। তাকে বোঝালাম, যে নিয়মতান্ত্রিক পরীক্ষার মাধ্যমেই আমার বিশ্বাস, আমার সুপারভাইজারের খালাতোভাই টিকে যাবেন।

আমাদের আলোচনাটি ফলপ্রসু হলো। আমার সুপারভাইজার পুরো বিষয়টি বুঝলেন এবং যথারীতি নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা নেবার নির্দেশ দিলেন আমাকে। এই ঘটনা থেকে আমি শিখলাম যে, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম বহির্ভূত কোন কাজ করাটা গ্রহণযোগ্য নয় এবং যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।”

এ তো গেলো জব ইন্টারভিউ বোর্ডের তোতাপাখির বুলি। কিন্তু সত্যিটা তো আপনিও জানেন, আমিও জানি। বস্ যদি তার খালাতো ভাইকে হায়ার করতে চান, কার বাপের সাধ্য আছে সেটা ঠেকায়? আর আপনার-আমার কি মাথা নষ্ট হয়েছে নাকি যে, বস্ কে উপরের কথাগুলো বোঝাতে যাবো? কিন্তু জব ইন্টারভিউতে আপনাকে আমার বলে দেয়া সুন্দর সুন্দর কথাগুলো গুছিয়ে বলতে হবে।

৩. কর্মক্ষেত্রে আসতে আপনার দেরি হলে কি করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরের শুরুতে কোনভাবেই স্বীকার করা যাবেনা যে কাজে আসতে আপনার লেট হয় বা হবে। বরং আপনি এভাবে বলুন:

”জবে লেট করে আসাটা আমার নিজেরও অপছন্দের। আমি আমার জীবনে খুব কম সময় লেট করেছি কর্মক্ষেত্রে। তারমধ্যে একবার আমার একটি রোড অ্যাক্সিডেন্টের কারণে এবং অপরটি ছিল খুব খারাপ আবহাওয়ার জন্যে। জবে আসতে যেন লেট না হয় সেজন্যে প্রয়োজনে আমি আমার বাসা অফিসের খুব কাছাকাছি নেব যদি এই কাজটি আমার হয়। তাছাড়া আমি প্রতিদিন ট্র্যাফিক বুঝে অনেক আগেই ঘর থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হবো। এছাড়াও গাড়ির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করাটাও আমার নিয়মিত কাজগুলোর একটি। এতসব প্রস্তুতির পরেও যদি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন কোন ঘটনা ঘটে যেটাতে জবে লেট হবে এমন সম্ভাবনা দেখা দেয়, তাহলে আমি অবশ্যই সেই নির্দিষ্ট বিষয়টি আমার সুপারভাইজারের সাথে শেয়ার করবো। তাকে আমার সমস্যার কথা জানাবো এবং এর দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবো।"


৪. আমাদের থেকে আপনার এক্সপেকটেশন কি?
এভাবে বলুন:
মানুষ মাত্রই এক্সপেকটেশন থাকবে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তারমানে এটাও নয় যে, এই প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার অনেক কিছু চাইবার আছে। আমি কাজপাগল মানুষ। নতুন কোন কাজ শেখার জন্যেও আমি উদগ্রীব। টীমওয়ার্ক আমার প্যাশন। যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা আমার অভ্যাস। নতুন নতুন কাজগুলো দ্রুততার সাথে শিখে সঠিকভাবে তা সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই আমার লক্ষ্য এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে এক্সপেকটেশন যেন আমার স্বপ্ন পূরণে আমি সবার সহযোগীতা পাই।”

৫. আপনি আপনার সুপারভাইজারকে কিভাবে দেখতে চান?
এভাবে বলুন:
”সুপারভাইজার আমার শুধু বস-ই নন, বরং তিনি আমার মেন্টর, আমার সিনিয়র কলিগ, আমার গাইড এবং সর্বোপরি আমার বন্ধু। সুতরাং তাঁর সাথে একটি সুসম্পর্ক থাকাটা জরুরী। যেকোন কাজে তিনি আমার পথপ্রদর্শক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি প্রতিটি বিষয় আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখিয়ে দেবেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, আমি একজন কুইক লারনার। সুতরাং নিজের কাজ নিজে দ্রুত বুঝে নিয়ে নিজেই সেটি সম্পন্ন করাতে আমি বিশ্বাসী।”

৬. কোন কাস্টমার আপনার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করলে কি করবেন?
আমার ধারণা কাস্টমার কেয়ারের জব পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন জবগুলোর একটি। কিন্তু জব ইন্টারভিউ বোর্ডেতো আর সেটি প্রকাশ করা যাবেনা। কাজেই এভাবে বলুন:

”কাস্টমার সার্ভিসের কাজটি আমি খুবই এনজয় করি। আমি যখন ”ম্যাকডোনাল্ডস” -এ কাস্টমার কেয়ারে কাজ করতাম, তখন একদিন এরকম একজন খারাপ ব্যবহারকারী কাস্টমার আমি হ্যাণ্ডেল করেছিলাম। আমারই এক সহকর্মী সেই কাস্টমারকে যে বার্গারটি দিয়েছিল, সেটি কাস্টমারের ভাষ্যমতে ঠাণ্ডা ছিল। কাজেই সেই কাস্টমার বেশ রাগত: স্বরে আমাদের সবার উদ্দেশ্যে খারাপ কথা বলতে শুরু করলেন।

আমি কিচেনে কাজ করছিলাম। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমি দ্রুত কিচেনের কাজটি আমার অন্য এক সহকর্মীকে করার অনুরোধ করে সামনের লবিতে গিয়ে সেই খারাপ ব্যবহারকারী কাস্টমারের সাথে কথা বললাম। আমি তাকে বললাম যে, স্যার আপনার বার্গারটি যদি ঠাণ্ডা হয়ে থাকে, তাহলে আমি এখনই আপনাকে আর একটি গরম বার্গার দেবার ব্যবস্থা করছি। সাথে থাকবে একটি ফ্রি ড্রিংকস, শুধু আপনার জন্যে।

আমার হাসিমুখের এই কথাগুলো শুনে সেই কাস্টমার একটু শান্ত হলেন। এরপর তার গরম বার্গার এবং ড্রিংক তাকে টেবিল-এ পৌঁছে দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম: Is there anything that I can do for you today Sir? কাস্টমার জানালেন যে, না, তার আর কিছুর দরকার নেই। তারপর তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি পুনরায় আমার কিচেনের কাজে ফিরে গেলাম। এই ঘটনা থেকে আমি শিখেছি যে, কিভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে হাসিমুখে রাগী কাস্টমারের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলতে হয় এবং দ্রুততার সাথে তার সমস্যার সমাধান করতে হয়।”

শুধু ইন্টারভিউ বোর্ডেই নয় বরং যে কোন কাস্টমার সার্ভিসেই আপনাকে কাস্টমারকে সার্ভিস প্রদানের পর Is there anything that I can do for you today Sir? – এই প্রশ্নটি করাটা খুবই জরুরী।

৭. আপনি কত বেতন চান?
বেতন আপনার জন্যে জরুরী? অবশ্যই হ্যাঁ, পেটের তাগিদে টাকা রোজগারের জন্যেই তো কাজ করবেন। নয় কি? কিন্তু জব ইন্টারভিউ বোর্ডে আপাতত: পেটের চিন্তা বাদ দিয়ে বলুন:

”আমি কাজ করতে এবং শিখতে আগ্রহী। সুতরাং আপনাদের প্রতিষ্ঠানের এই পদের জন্যে নির্ধারিত স্যালারি রেঞ্জেই আমি বেতন গ্রহণে রাজি।” নিজের মুখে পারতপক্ষে কোন অ্যামাউন্ট না বলাটাই ভালো।

৮. আমাদের কাছে আপনার কোন প্রশ্ন আছে কি?
প্রায় সব ইন্টারভিউ বোর্ডের শেষ প্রশ্নটি এটি। উত্তরে অবশ্যই আপনি নিচের প্রশ্নগুলোর যেকোনটি করতে পারেন:
- আপনাদের এখানে স্টাফ ডেভেলপমেন্ট/ প্রফেশনাল ডেভলেপমেন্টের সুযোগ আছে কি? (যেমন ট্রেনিং)
- এই কাজের সুযোগটি ছাড়া আমি কি আপনাদের অন্যকোন ডিপার্টমেন্ট/ প্রোগ্রামের কাজ অবজারভ করার সুযোগ পেতে পারি?

সবাইকে শুভেচ্ছা।

লক্ষ্য করুন:
*কানাডা'র ইমিগ্রেশন বিষয়ক আপনার সুনির্দিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে [email protected] -এই ইমেইল-এ প্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিন।
*কানাডা'র নতুন অভিবাসী/ ইমিগ্র্যান্ট বিষয়ক কোন প্রশ্ন থাকলে [email protected] -এই ইমেইল-এপ্রশ্নগুলো পাঠিয়ে দিন।
*ফেসবুক পেজেও আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নটি করতে পারেন: Facebook page: Click This Link
Email: [email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.