নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখ বিসর্জন

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১২

সুখ বিসর্জন
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
-দোস্ত আজকে আমার একটা ইন্টারভিউ আছে, দোয়া করিস চাকরিটা যেন পেয়ে যাই। (শ্রাবণ)
-ওকে দোস্ত দোয়া কইরা দিলাম চাকরিটা পেয়ে যাবি।
-সত্যি বলছিস?
-নিজের ওপর আস্থা রাখ।
.
বিকেলবেলা বেরিয়ে পড়লো শ্রাবণ ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য।
পৌছে দেখে সেখানে অনেক লম্বা একটা লাইন। এই লাইনের কথা ভেবেই সে বিকেলে আসছে যাতে এতো ভীড় না থাকে। তবুও এত মানুষের সমাগম, কোথথেকে যে আসে এরা?
কিছু সময় নিরবতার সহিত সে ভাবছে "আচ্ছা এখানকার সবারই কি তার মতো "চাকরিটা" খুবই দরকার? যদি খুবই দরকার না হয়, তাহলে এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কি আছে!"
নিরুপায় হয়ে সেও তাদের মতো দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তাকে ডাকে।
অপেক্ষারত হয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সে মনে মনে বলতে লাগলো
"এই দিয়ে দশটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। এই দশ নাম্বার চাকরিটাও যদি না হয় তবে এবার আর বাড়ি ফেরা হবেনা।"
অনেক্ষণ পর, সময়টা ঠিক মনে নেই, তাকে ভেতরে ডাক দিলো।
সে ভিতরে গিয়ে স্যারকে সালাম দিতে গিয়েই অপ্রত্যাশিত বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেলো। যিনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, তিনি স্যার নন একজন ম্যাডাম। শুধু ম্যাডাম হলে প্রবলেম ছিলোনা, এই ম্যাডামটাই হলো তার একসময়ের "সে" অর্থ্যাৎ তার ফারাহ।
চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সে, হয়তো ফারাহ তাকে এখনো দেখেনি, আবার হয়তোবা দেখেছে।
-বসুন..
-জ্বী।
ফারাহ এবার মুখ তুলে শ্রাবণের দিকে চোখ ফিরিয়েই চমকে গেলো যেন সে ভুত দেখেছে।
তার এই চমকানো চেহারাটা দেখতে মন্দ লাগছেনা শ্রাবণের।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে তার নিজের থেকেও বেশি অবাক হয়েছে।

-শ্রাবণ তুমি?
শ্রাবণ ছোট্ট করে "হুম" বলে চুপ করে বসে রইলো।
-কেমন আছো শ্রাবণ?
-হুম ভালো।
- আন্টি কেমন আছেন?
- ভালো।
- শ্রাবণ...
- জ্বী বলুন।
- আপনি করে বলছো কেন?
- বস্ দের আপনি করেই বলতে হয়।
- আমাকে মাফ করে দিও।
- হুম।
- আমি তোমার উপর অনেক অবিচার করেছি, জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নই। তবুও বলছি, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
- হুম।
- এভাবে কথা বলছো কেন?
- কিভাবে?
- এইযে শুধু হ্যাঁ, হু করছো।
- তো কি বলবো?
- আজকে একটু সময় দিতে পারবে আমাকে।
- না।
- কেন?
শ্রাবণ কোন উত্তর না দিয়ে চলে এলো সেখান থেকে। ফারাহ এখন অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী। আর অন্যের স্ত্রীকে কেন সে সময় দিবে, কেন তার সাথে ঘুরতে বের হবে?
.
ছয় মাস বছর আগেও ফারাহ শ্রাবণের ছিলো। কিন্তু কোন এক কারণে আজ সে অন্য কারো।

সেদিন শ্রাবণ নিরুপায় ছিলো। তার হাতে সেদিন কোন বিকল্প রাস্তা ছিলো না। ফারাহার বিয়ের দুই দিন আগে ফারাহ শ্রাবণকে দেখা করতে বলেছিলো।
- শ্রাবণ, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
- তো?
- আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।
- কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসিনা।
- কি বলছো এসব তুমি, তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
- হ্যাঁ, আমার মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে।
- শ্রাবণ ফাজলামি করোনা, এখন ফাজলামো করার সময় না। চলো আমরা পালিয়ে যাই।
- সম্ভব না।
- কেন সম্ভব না?
- বলছিনা তোমাকে আমি ভালোবাসিনা, আর তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা। তাহলে এখানে পালিয়ে যাওয়া কথা আসছে কেন?
- শ্রাবণ তুমি কি সত্যিই সিরিয়াস?
- কি মনে হচ্ছে তোমার?
- যদি আমাকে ভালো নাই বাসবে তাহলে এতদিন আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছিলে কেন? আমাকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে কেন? বলো শ্রাবণ, বলো...
কান্না জড়িত রাগি কন্ঠে কথাগুলো বললো ফারাহ। প্রত্তুত্তরে শ্রাবণ কোন প্রকার জবাব দিলোনা, সে চুপ করে মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো দাড়িয়ে রইলো। কারণ শ্রাবণের এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।
শ্রাবণকে চুপ থাকতে দেখে ফারাহ আর কিছু না বলে কান্না করতে করতে চলে গেলো তার সামনে থেকে। সে কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি শ্রাবণ তার সাথে এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারে।
.
ফারাহ চলে গেলে শ্রাবণ আর তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। তার চোখ দিয়েও অঝোর ধারায় বৃষ্টির ফোটার মতো পানি পড়তে থাকলো। কারণ সেও যে ফারাহকে অসম্ভব পরিমাণ ভালোবাসে। তার কথাতে ফারাহ যতটা কষ্ট পেয়েছে, তার থেকে শতগুন কষ্ট বেশি পেয়েছে সে নিজে।
.
তার সাথে যে ফারাহার সম্পর্ক অাছে সেটা ফারাহার বাবা খুব ভালো করেই জানতো। আর সেই কারণে একদিন তিনি শ্রাবণকে ডেকে পাঠালেন।
- বাবা তোমাকে এখন যে কথাগুলো বলবো, হয়তো তোমার সেটা ভালো লাগবেনা। তবুও যে আমাকে বলতেই হবে।
- জ্বী আংকেল বলুন।
- আসলে কিভাবে বলবো....
- আংকেল আপনি নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন, আমি কিছু মনে করবোনা।
- আসলে... তুমি তো জানো ফারাহ আমার একটি মাত্র মেয়ে। আর আমি জানি তুমি আমার মেয়েটাকে অনেক সুখে রাখবে।
- জ্বী আংকেল।
- কিন্তু বাবা...
- জ্বী!
- আমার বন্ধু মারা যাওয়ার সময়ে আমাকে বলে গিয়েছিল, আমি যেন তার ছেলের সাথে ফারাহার বিয়েটা দিই। তাকে যে আমি কথা দিয়েছিলাম। এখন তুমি যদি...
এ কথা শুনে শ্রাবণ কিছু সময়ের জন্য পাথর হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজের কষ্টটাকে চেপে রেখে সে বললো
- ঠিক আছে আংকেল।
.
এই ঘটনার জন্যই শ্রাবণ ফারাহকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলো। সে চায়নি তার বাবার দেওয়া কথাটার বরখেলাপ হোক।
পরে ফারাহ ব্যপারটা ঠিকই জেনছিলো, কিন্তু তখন যে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।
.
.
শ্রাবণ ফারাহার অফিস থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে তার বাসার পাশের চায়ের দোকানটার কাছে চলে এসেছে সেটা সে খেয়ালই করেনি।
- কিরে, কেমন হলো ইন্টারভিউ? এবার কি চাকরিটা হবে?
আকাশের কথাতে সে চোখ মুছে দেখলো, সে তার বাসার কাছে চলে এসেছে। পুরোনো কথা মনে পড়াতে চোখের কোণে হালকা জল জমেছে। সে আকাশের প্রশ্নের উত্তরে বললো "কালকে জয়েন করতে বলেছে, কিন্তু.....
- কিন্তু কি?
- কিন্তু চাকরিটা আমার কাছে ভালো লাগলো না।
- ধুর হ্লা, তাইলে চলবি কিভাবে?
- দেখি আগামীকাল আরেক টা ইন্টারভিউ আছে। সেটাতে কি হয়!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.