নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৩

পাত্র বিভ্রাট
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
তোমায় নিষেধ করেছিলাম না যে, তুমি পাত্রী দেখতে যেওনা। তখন তো শুনলে না আমার কথা। এখন দেখো কেন বলেছিলাম, না যেতে।
.
অনেকদিন ধরেই নিরবের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। এ গ্রাম, ও গ্রাম সব জায়গাতেই দেখা শেষ। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো নিরবের কোন মেয়েকে দেখেই পছন্দ হয়না।
তার কথা মেয়েটা যেন পরীর মতো দেখতে হয়। হ্লা কখনো নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেনি যে, তাকে কতটা ভালো দেখা যায়!
নিজে বামন হয়ে চাঁদ ছোয়ার স্বপ্ন দেখে। তা না হলে আজ অব্দি যতগুলো মেয়ে দেখেছি প্রায় সবগুলোই আমার পছন্দ হয়েছে, কিন্তু তার একটাকেও পছন্দ হয়নি।
.
আজকে আবার একটা মেয়ে দেখতে যাবো। এবার আমি যেতে চাইনি, বউটাও আমার নিষেধ করলো যেতে। কিন্তু এই নিরইব্বার জন্য যেতে হলো। সে অনেক অনুরোধ করলো আমাকে। বললো "দোস্ত এবারই শেষ, কথা দিলাম এবার যেই মেয়েকে দেখবো সেই মেয়েকেই পছন্দ করবো। হোক না সে কালো, চোখ ট্যারা, বোবা! তবুও এবার আমার সাথে চল"।
নিরুপায় হয়ে তার সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে বাধ্য হলাম। কি আর করা, যতো হোক খালাতো ভাই তো! তার পরে আবার বন্ধুর মতো সম্পর্ক।
সে শেষ কবে আমাকে ভাই বলে ডেকেছে, সেটা আমার মনে নেই।
.
ও আরেক টা বিষয় হলো যেখানেই নিরবের জন্য পাত্রী দেখতে যাই, সেখানে শুধু আমি আর নিরবই যাই। অন্য কাউকে সাথে নিই না।
.
আমি আর নিরব বসে আছি পাত্রীর বাড়িতে। আমাদের সামনে পাত্রীর বাবা মা, দাদী, ফুফু, যত প্রকার মেয়ে মানুষ আছে, সবাই বসে আছে। আমি সবার দিকেই একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। নাহ, এদের সবার চেহারাই খুব সুন্দর। হয়তো এদের মেয়ের চেহারাও এদের মতো সুন্দরই হবে।
অনেক্ষণ ধরে বসে আছি, কিন্তু পাত্রীকে আমাদের সামনে আনার কোন নাম গন্ধও দেখছিনা।
ধৈর্যের সীমা চরম পর্যায়ে পৌছালে আমি মেয়ের বাবার উদ্দেশ্যে বললাম "আংকেল এবার তো আমরা আপনাদের মেয়েটাকে দেখতে পারি"।
আমার মুখে এ কথা শুনে সবাই কেমন করে যেন আমার দিকে তাকালো। আমি তাদের এই ভাবে তাকানোর মানে টা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
.
মেয়ের বাবা মেয়ের মাকে বললো যাও মেয়েটাকে নিয়ে এসো। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে আমাদের সামনে আনা হলো।
উরিম্মা, এ কি! এখনই দেখছি মেয়ে মাথায় ইয়া বড় একখান ঘোমটা দিয়ে রেখেছে। না জানি বিয়ের দিন আরো কত বড় ঘোমটা দেবে।
"মামনি ঘোমটা টা একটু সরাও" মেয়ের বাবার কথাতে মেয়েটি ঘোমটা সরালো। ঘোমটা টা সরানো মাত্রই আমি তো শেষ।
দেখলাম নিরব হ্লায় একভাবে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। তার চোখের পলকই পড়ছে না।
এবার তার মেয়ে পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায়?
এই মেয়েও যদি তার পছন্দের তালিকায় না পড়ে, তাহলে তার এ জন্মে আর বিয়ে হবে বলে আমার মনে হয় না।
.
আমি নিরবকে একটু ইশারায় বললাম, তার পছন্দ হয়েছে কিনা?
সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা মদন মার্কা হাসি দিলো। বুঝলাম, তার পছন্দ হয়েছে। মেয়েটিও আমাদের দিকে একটু তাকালো। তার তাকানো দেখে বুঝলাম তারও পছন্দ হয়েছে।
.
দেখাদেখি শেষে মেয়েকে ভিতরে নিয়ে গেলো তার মা। এরপর তারা আমাদের সাথে কথা বলতে লাগলো "তাদের মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে কিনা" এরুপ টাইপ।
বেশ কিছুক্ষণ পর তারা আমাদের বেশ কিছু প্রশ্ন করতে লাগলো। আমাদের বলতে আমাকে উদ্দেশ্য করে।
- বাবা তোমার নাম কি? ( মেয়ের মা)
আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় বোঝালাম, তোর নাম বল।
সে নাম বললো। কিন্তু অদ্ভুত বিষয়, মেয়ের দাদি এবার আমাকে উদ্দেশ্য তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি। এ কথা শুনে তো আমি অবাক। আমার নাম জিজ্ঞেস করবে কেন?
- জ্বী, আমার নাম শ্রাবণ।
- বাহ, বেশ সুন্দর নাম তো। কি করো তুমি? (মেয়ের মা)
- জ্বী আন্টি, আমি সোনালি ব্যাংকের ম্যানেজার।
- ও, খুব ভালো। তা, তোমরা কয় ভাইবোন?
.
.
এরকম নানান প্রশ্ন করতে থাকলো তারা আমাকে। এক পর্যায়ে আমি বুঝে গেলাম তারা নিরবকে নয় বরং আমাকে পাত্র ভেবেছে।
আমিও কম কিসে? আমি আবার মজা করতে গেলে বেশ সহজে মজার আসর ছাড়িনা।
তারা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। আর আমি শুধু উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। পাশে বসে নিরব শুধু স্রোতা হয়ে শুনছে আমাদের কথোপকথন।
.
যখন তাদের আমাকে প্রশ্ন করা শেষ হলো, তখন আমি বললাম "তাহলে বিয়ের দিনটা আজকেই ঠিক করে যাই"।
আমার এরুপ কথাতে তারা অবাক না হয়ে পারলো না। পাশে থেকে মেয়ের দাদি বলে উঠলো "ওমা সে কি কথা, যার বিয়ে সেই কিনা বলছে বিয়ের দিন তারিখের কথা"!
আমি তখন একটু কাশি দিয়ে গলাটা ঝেড়ে বললাম "আপনারা যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, পাত্র আমি নই। এ হলো পাত্র", নিরবকে দেখিয়ে বললাম।
এ কথা শুনে তারা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। বুঝতে বাকি রইলো না, যা হবার তা হয়ে গেছে। চলে আসার সময় আমি তাদের উদ্দেশ্যে বললাম "আমি বিবাহিত"।
.
.
প্রতিবার নিরবের 'মেয়ে' দেখে পছন্দ হয়না। আর এবার তাকে দেখে মেয়ে পক্ষের পছন্দ হলো না।
কি অদ্ভুত!
বাড়িতে এসে দেখি মা, খালা, মৌটুসি (আমার বউ) সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমরা বাড়িতে আসতেই মা বলে উঠলো "কিরে এবার তো মেয়ে দেখে পছন্দ হয়েছে, নাকি এবারও হয়নি?
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে মৌটুসি বলে উঠলো, দেখেন আবার এমন হয়নি তো যে, মেয়ে ঠিকই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মেয়ে পক্ষের নিরবকে নয় বরং আমার বর টাকে পছন্দ হয়েছে।
মৌটুসির কথা শুনে মনে মনে বলছি, কি মেয়েরে বাবা? কেমনে বুঝলো "এমনটাই হয়েছে"!
.
আমি খালার অর্থ্যাৎ নিরবের মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম, মৌটুসির কথায় ঠিক। তারা আমাকে পছন্দ করেছে।
এ কথা বলার সাথে সাথে মৌটুসি ঐ উপরিউক্ত কথাটা বললো
"তোমায় নিষেধ করেছিলাম না যে, তুমি পাত্রী দেখতে যেওনা। তখন তো শুনলে না আমার কথা। এখন দেখো কেন বলেছিলাম, না যেতে"।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.