নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রতিক গ্রামের কার্যক্রম

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৯

সময়ের বিবর্তন
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
ঐ মিয়া কই যান? এইটা কি দিলেন! এসব এখানে চলেনা। কোন দেশে থাকেন মিয়া, এখনো পুরোনো রেশ ধরেই অাছেন?
.
পাঁচ বছর আগে আমি ঢাকা এসেছিলাম পড়ালেখার সুবাদে। মাঝখানে মনে হয় হাতে গোনা এক কি দুইবার গ্রামে গিয়েছি, অর্থ্যাৎ আমার বাড়িতে গিয়েছি।
পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটখাটো একটা জব করি। সেটা দিয়ে দিব্যি চলে যায় আমার। আবার প্রতিমাসে কিছু টাকা করে বাড়িতেও পাঠাই।
এইভাবেই দিন চলে যায় আমার।
মাঝে মাঝে মৌটুসির সাথে ঘুরতে বের হলে যত খরচ হয় সব মৌটুসিই বহন করে। আমার সৌভাগ্য যে, কপাল গুনে এমন একটা মেয়ে পেয়েছি আমার জীবনে। আজকে যখন তাকে বললাম "আগামীকাল তো বাড়ি যাচ্ছি, তোমাকে কতদিন আর দেখতে পাবোনা"। তখন তার সে কি কান্না। আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কেঁদেছে সে। কাঁদতে কাঁদতে আমাার শার্ট টা পুরো ভিজিয়ে ফেলেছে। কান্না জড়িত কন্ঠে সে আমাকে বললো "আমাকেও তোমার সাথে তোমার গ্রামে নিয়ে যাও"।
আমি তাকে বললাম "আরে পাগলী কিছুদিনের জন্যই তো যাচ্ছি, একেবারের জন্য তো নয়।"
.
বাবা মা- কে অনেকদিন দেখিনা, খুব মনে পড়ছে তাদেরকে আজ। তাই কোন কিছু না ভেবে সকাল ১০ টার গাড়িতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আসার সময় মৌটুসির সাথে একবার দেখা করে এসেছি। তখন সে শুধু আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে ছিলো, কোন কথা বলেনি সে।
গাড়িতে উঠতেই মৌটুসি কল দিয়ে বললো, দেখেশুনে যেও। আর বাড়িতে পৌছিয়ে একটা কল দিও।
.
বাসের মধ্যে বসে বসে গ্রামের কথা ভাবছি, সাথে বাবা মায়ের কথা। গ্রামটা বোধ এখন আগের মতো সেই মন ভোলানো গ্রাম নেই। অাচ্ছা রাস্তার ধারের সেই আম গাছ টা কি এখনো আছে নাকি কেউ কেটে ফেলেছে? করিম চাচার সেই টঙ দোকান টা কি সেই আগের মতোই আছে নাকি একটু উন্নত হয়েছে?
গ্রামের আঁকাবাকা মেঠোপথটা কি এখনো মেঠোপথই আছে নাকি পাকা রাস্তাতে পরিণত হয়েছে? আরো অনেক অনেক কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আমার।
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে গ্রামের পরিবেশ টাকে, গ্রামের সেই খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে। আর সবচেয়ে বেশি দেখতে ইচ্ছে করছে বাবা মাকে।
.
আজ এই গাড়িটার আবার কি হলো! এতো ধীরে ধীরে যাচ্ছে কেন? গাড়ির কন্ট্রাক্টটারকে বললাম "মামা গাড়ি এতো ধীরে যাচ্ছে কেন, একটু জোড়ে চালাতে বলেন"। আমার কথা শুনে মামা একটা ফোকলা হাসি দিয়ে বললো "মামা গাড়ি তো অনেক জোরেই যাচ্ছে"।
তার কথা শুনে ভাবলাম, হয়তো আমার তাড়া টা একটু বেশিই। সেজন্য হয়তো এমন মনে হচ্ছে।
কিছুদুর যেতেই গাড়িটা হঠাৎ ব্রেক কষলো। "কি হয়েছে" জানতে চাওয়াতে একজন বললো সামনে ঝামেলা হচ্ছে। পাবনার কোন গাড়িকেই যেতে দিচ্ছে না। এ কথা শুনে আমার মনে গ্রামকে নিয়ে যত কল্পনারা বাসা বেধেছিলো, সব কল্পনাগুলো পানিতে ভেসে গেলো।
আমি উঠে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম "মামা গাড়ি কখন ছাড়বেন"? উত্তরে তিনি বললেন "কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো ঝামেলা টা চুকে যাবে। আর ঝামেলাটা শেষ হলেই আমরা আবার যাত্রা শুরু করবো।"
.
চুপচাপ বসে আছি গাড়ির মধ্যে। একটুও ভালো লাগছেনা আমার। সময়টা কেমন যেন থেমে আছে।
হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ফিরিয়ে দেখলাম ঠিক তাই। আমার সোজাসোজি অপর লাইনে বসা একটা মেয়ে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বেশ সুন্দর। তার এমন করে আমার দিকে তাকানোটা কেমন যেন বিব্রতিকর লাগছে আমার কাছে।
আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম "কিছু বলবেন?" সে মাথা নেড়ে "হ্যাঁ" বললো। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার দিকে কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বললো "এগুলো একটু নোট টাকা করে দিতে পারবেন"? আমি খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটির হাতে অনেকগুলো কয়েন টাকা। যেমন এক টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকার অনেকগুলো কয়েন। আমি জিজ্ঞেস করলাম নোট টাকা দিয়ে কি করবেন? সে বললো "আসলে এই কয়েনগুলো হারিয়ে যেতে পারে সেজন্য......
তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি তার থেকে টাকাগুলো নিয়ে তাকে নোট টাকা দিলাম। দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় মুচকি হাসি দিলো। তার এমন হাসির মানেটা ঠিক বুঝলাম না।
.
.
"মামা কিছু লাগলে বাইরে থেকে নিয়ে আসেন, কিছুক্ষণ পরেই আমরা গাড়ি ছাড়বো" বাসের কন্ট্রাক্টর বললো কথাটি।
আমার তেমন কিছুই লাগবেনা, শুধু একটু পানি হলেই চলবে, যা আমি আগে থেকেই নিয়ে এসেছি। বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন বাস ছাড়বে?
তবে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলোনা।
.
এদিকে বাস চলছে তার আপন গতিতে। আর অন্যদিকে আমার প্রচুর পরিমানে ঘুম পাচ্ছে। চোখ দুটোকে ইচ্ছা করলেও আর ধরে রাখা যাচ্ছেনা।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি, ঠিক মনে নেই। পাশে থেকে কেউ একজন বললো "ভাইয়া নামবেন না"?
আমি জেগে দেখি ঐ সুন্দরী মেয়েটা আমাকে ডাকছে। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি বাস শহরে এসে থেমেে আছে। সবাই যার যার মতো করে নেমে যাচ্ছে। আমি মেয়েটির কথায় "হুম" বলে বাস থেকে নেমে পড়লাম।
.
চারিদিকে তাকিয়ে দেখি রাত হয়ে গেছে। রাতের বেলা এই চেনা শহরটা আজ কেমন যেন অচেনা লাগছে। শহরেরও বেশ উন্নতি হয়েছে। আগের থেকে লোকজন বেড়েছে শহরে। আগে রাত ৭ কিংবা ৮ টা বাজলেই শহরে আর মানুষ দেখা যেতোনা। আর এখন ১১টা বেজে গেছে তবুও শহরে লোকজনে ভরপুর। সবই সময়ের বিবর্তনে হয়েছে।
.
একটা অটো ধরে বাড়িতে চলে এলাম। বাড়িতে ঢুকতে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে একটা পরিচিত কন্ঠ বলে উঠলো "কে নিরব বাবা না? এতদিন পর তোর বুঝি আমাদের কথা মনে হলো?"
পেছনে তাকিয়ে দেখি করিম চাচা। আমি চাচাকে সালাম দিলাম। তারপর বললাম "কেমন আছেন চাচা, আর এতরাতে বাইরে কি করছিলেন"? চাচা আমার কথায় একটা হাসি দিয়ে বললো দোকান টা বন্ধ করলাম কেবল।
.
করিম চাচার সাথে একটু কথা বলে বাড়িতে ঢুকলাম। ঢুকে "মা" বলে ডাক দিতেই মা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে, সাথে বাবাও। আমাকে দেখে মায়ের দুচোখ পানিতে ভরে গেলো। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আমিও মাকে কাছে পেয়ে বেশ সুখ অনুভব করলাম। কতদিন দেখিনি মাকে।
বাবার চোখেও পানি চিকচিক করছে।
আমি বাবা মাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে গেলাম। তাদের জন্য আনা জিনিস তাদেরকে দিলাম।
ব্যাগপত্র সব রেখে বাইরে এসে মৌটুসিকে কল দিয়ে বললাম "আমি বাড়িতে পৌছে গেছি।"
.
.
পরদিন সকাল বেলা অামার চাচাতো ছোট ভাইটাকে সাথে নিয়ে একটু বাজারের দিকে গেলাম কিছু বাজার করবো বলে।
সবকিছু কেনা শেষ। টাকা দেওয়ার সময় নোট টাকার পাশাপাশি সেই কয়েন টাকাগুলোও দিলাম। হিসেব চুকিয়ে চলে আসবো ঠিক তখন দোকানদার বলে উঠলো ঐ উপরের কথাটি
"ঐ মিয়া কই যান? এইটা কি দিলেন! এসব এখানে চলেনা। কোন দেশে থাকেন মিয়া, এখনো পুরোনো রেশ ধরেই অাছেন?"
তার কথা শুনে তো আমি অবাক। কি চলেনা এখানে? আমি চাচাতো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি পিচ্চিটা দাঁত বের করে হোহো করে হাসছে।
দোকানদার আবার বলে উঠলো "নোট টাকা দেন মিয়া, এসব পয়সা ময়সার দিন শেষ।"
একথা শুনে পিচ্চিটা আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো। তার হাসি দেখে আমার ঐ বাসের মেয়েটির কথা মনে পড়লো। কেন তখন মেয়েটি হেসেছিলো তা এখন আমার খুব ভালোভাবে বুঝে আসছে।
.
সবই সময়ের বিবর্তন। দিন যাচ্ছে দেশটা আরো উন্নত হচ্ছে।
হায়রে দেশ, হায়রে মানুষ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.