নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছেলেটি

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০১

ছেলেটি
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
- সোমা দেখ দেখ ছেলেটা প্রতিদিন কেমন হাবাগোবার চুপচাপ ক্লাসে বসে থাকে। (অহনা)
- হুম ঠিকই বলেছিস। আমিও অনেকদিন ধরে লক্ষ করছি বিষয়টা।
- অাচ্ছা ছেলেটা এমন কেন? সবসময় এমন চুপচাপ থাকে কেন?
- মনে হয় গ্রাম থেকে এসেছে, তাই।
- আবার আরেকটা বিষয় দেখেছিস?
- কি?
- ক্লাসের মধ্যে ওরই কিন্তু এক রোল।
- হুম, সেটাও লক্ষনীয় বিষয়।
- চল ছেলেটার সাথে একটু মজা করি।
- হুম মজা করা যেতেই পারে, চল।
.
টিফিনের সময়ে ছেলেটি ব্যাগপত্র রেখে কিছু সময়ের জন্য বাইরে গেছে। সেই ফাঁকে সোমা আর অহনা মিলে তার ব্যাগটা লুকিয়ে ফেললো।
ছেলেটা বাইরে থেকে এসে দেখে তার ব্যাগ নেই। আশেপাশের সিটে উকি মেরে দেখে কোথাও নেই।
.
টিফিনের সময় শেষ হলে সবাই ক্লাসে আসলে ছেলেটা তার আশেপাশের ছেলেদের বললো "ভাই আমার ব্যাগটা খুজে পাচ্ছি না। আপনারা কি কোথাও দেখেছেন?"
তার একথা শুনে প্রথমে সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হাহা করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। যেন তাদের সামনে কোন মজার খেলা দেখানো হচ্ছে।
তারা উত্তর দিলো "তোমার ব্যাগ কি আমরা দেখে রেখেছি নাকি?
তাদের কথা শুনে ছেলেটা চুপচাপ তার সিটে বসে রইলো। সে এমনিতেও চুপচাপ স্বভাবের।
আর একটা বিষয় হলো ছেলেটার সাথে তার কলেজ, ক্লাসের কেউ তেমন কথা বলেনা। এর পেছনেও একটা কারণ আছে। কারণটা হলো, সে গ্রামের ছেলে, তার পোশাক আশাক, চালচলন অন্যদের থেকে একেবারে ভিন্ন।
.
কলেজ ছুটি হলে ছেলেটি বিষন্ন মনে খালি হাতে বাসায় চলে গেলো।
অন্যদিকে সোমা আর অহনা বাসায় এসে বেশ কৌতুহল নিয়ে তার ব্যাগটা খুললো। "কি আছে এই ভারি ব্যাগে?" তাদের মনে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। ব্যাগ খুলে তারা বেশ দারুণ ভাবে হতাশ হলো। কারণ সেখানে তারা এক গাদা বই আর একটা চিঠি ছাড়া আর কিছুই পেলোনা।
.
সোমা আর অহনা বেশ আগ্রহের সাথে সেই চিঠিখানা পড়তে শুরু করলো
"কেমন আছিস বাবা?
আমরা ভালো আছি। আমাদের নিয়ে তুই কখনো চিন্তা করিস না। মন দিয়ে লেখাপড়া করিস। কোন বাজে আড্ডাতে মেতে থাকিস না। নতুন শহরে গেছিস, সেখানকার সবার সাথে ভালো ব্যবহার করিস। তোকে নিয়ে আমাদের যে স্বপ্ন, সেটা পূরণ করিস বাবা। আর তোর একটা ছবি পাঠাস। তোর মা তোকে দেখার জন্য সবসময় কান্না করে।
ভালো থাকিস বাবা।
ইতি
তোর বাবা"।
.
চিঠিটা পড়ে তারা বুঝলো ছেলেটির বাবা গ্রাম থেকে ছেলেটিকে লিখে পাঠিয়েছে। পরদিন তারা একটু দ্রুত কলেজে গিয়ে যথাস্থানে ছেলেটির ব্যাগটা রেখে দিলো। ছেলেটা কলেজে আসেও দেরি করে আবার চলেও যাই খুব তাড়াতাড়ি।
.
"এদিকে ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি। কিন্তু ছেলেটি আজ আসছে না কেন! প্রতিদিন তো এরকম সময়েই আসে।" মনে মনে ভাবছে সোমা।
কিছুক্ষণ পর ক্লাসে স্যার এলো, যথাসময়ে ক্লাস শুরু হলো। কিন্তু ছেলেটি আজ ক্লাসে এলোনা। দেখতে দেখতে ক্লাসও শেষ হয়ে গেলো, তবুও সে এলোনা।
এলোনা তো এলোইনা।
পরপর পাঁচদিন চলে গেলো তবুও ছেলেটি কলেজে এলোনা। এদিকে সোমা চিন্তায় পড়ে গেলো "ছেলেটার ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার কারণে কি সে কলেজে আসছেনা, নাকি অন্য কোন কারণে!"
- ঐ অহনা ছেলেটা আর কলেজে আসেনা কেন?
- তা আমি কি করে বলবো?
- তুই কি করে বলবি মানে? তোর জন্যই তো ও কলেজে আসছেনা।
- আমার জন্য মানে?
- তোর জন্য নয় তো কি! তোর কথা শুনে সেদিন তার ব্যাগটা না লুকালে আজ সে কলেজে আসতো।
- ধুর... বুদ্ধিটা কি আমার একার ছিলো নাকি? তুইও তো বলেছিলি।
- আচ্ছা বাদ দে, এখন তার এই ব্যাগটা তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার একটা ব্যবস্থা কর।
- হুম, টেনশন নিস না। ছেলেটা কলেজে আসলেই তাকে তার ব্যাগ ফিরিয়ে দিবো।
- কেমন করে দিবি? ছেলেটা তো প্রশ্ন করতে পারে "আমার ব্যাগ আপনাদের কাছে কি করে গেলো?"
- আরে তুই একটু বেশি বুঝস। ও ওরকম ছেলেই না যে, আমাদের কোন প্রশ্ন করবে।
.
টানা পাঁচদিন পর ছেলেটি কলেজে আসলো। তাকে আসতে দেখে অহনা সোমাকে বললো "দোস্ত দেখ ছেলেটা আজ কলেজে এসেছে।" সোমা তাকিয়ে দেখলো সত্যিই ছেলেটা আজ কলেজে এসেছে। কিন্তু ছেলেটাকে আজ এত মনমরা লাগছে কেন? আর আগের থেকে অনেক শুকিয়েেও গেছে।
.
সোমা অহনার কথা মতো ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে তার দিকে ব্যাগটি বাড়িয়ে দিলো। তার ব্যাগটা একটা মেয়ের হাতে দেখে সে বেশ অবাক হলো, কিন্তু কিছু বললো না।
এদিকে স্যার ক্লাসে এসে সবার নাম ডাকা শুরু করলো। প্রথমেই নিরবের নাম।
ও হ্যাঁ, ছেলেটার নাম নিরব।
স্যার লক্ষ করে দেখলো এই নিরব ছেলেটা আজ পাঁচদিন যাবত কলেজে আসেনা। এবার তিনি পুরো ক্লাসে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। দেখলেন নিরব এসেছে। কিন্তু সে ব্যাগে মাথা গুজে বসে আছে। তিনি কয়েকবার নিরব বলে ডাক দিলেন কিন্তু নিরব সেই ডাকে কোন সাড়া দিলোনা। স্যার এবার তার কাছে গিয়ে ডাক দিলেন
- নিরব...
এবারও কোন উত্তর নেই।
স্যার আবার ডাক দিলেন
- নিরব...
তবুও নিরবের কোন উত্তর না পেয়ে স্যার এবার একটু জোরেই ডাক দিলেন।
এবার সে ধচমচিয়ে উঠে "জ্বী.. জ্বী.. জ্বী স্যার।" বলে ব্যাগ থেকে মুখ তুললো। তার এমন ধচমচিয়ে ওঠা দেখে ক্লাসের সবাই হোহো করে হেসে উঠলো। স্যার একটা ধমক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিলেন।
.
স্যার এবার নিরবকে জিজ্ঞেস করলেন
- কি হয়েছে নিরব, তুমি কলেজে আসোনা কেন?
- স্যার একটু অসুস্থ ছিলাম।
- ও, সো স্যাড। আচ্ছা এবার ক্লাসে মনযোগ দাও।
- জ্বী স্যার।
.
অন্যদিকে সোমা আর অহনা ভেববেছিলো "ছেলেটা তার ঐ ব্যাগ হারনোর কথা বলবে না তো!"
কয়েকদিনের মধ্যে নিরব সুস্থ হলে তারা আবার ফন্দি আটলো, নিরবের সাথে নতুন করে কোন মজা করার।
প্রতিদিন তারা নিরবকে কোন না কোন বিপদে ফেলে মজা নিতো। কিন্তু সেদিনের মজাটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিলো।
ও আরেকটি কথা, সোমা এবং তার বান্ধবীরা যে, নিরবকে প্রতিদিন বিপদে ফেলতো সেটা নিরব জানতোনা। সে বুঝতেও পারতোনা যে, এটা সোমার কাজ।
.
সেদিন সোমা ভিন্নরকম মজা করেছিলো নিরবের সাথে। সে একটা প্রেমপত্র লিখলো তাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী, রাগী এবং বড়লোকের মেয়েকে। আর চিঠিটার প্রেরকের জায়গাতে নাম দিলো নিরবের।
কোন মতে কারো মাধ্যমে মেয়েটির কাছে চিঠিটা পৌছালো। চিঠি পড়া শেষে মেয়েটি বিদ্যুৎ গতিতে তার সিট থেকে উঠে এসে নিরবের গালে কষে একটা থাপ্পড় দিলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে। নিরব ছেলেটাও অবাক। সে অবাক চোখে চেয়ে আছে মেয়েটির দিকে।
"কি হলো, কি কারণে তাকে মেয়েটি চড় মারলো" সেটা তার অজানা।
.
ব্যপারটা এখানেই শেষ হলো না। মেয়েটা এবার তাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যালের কাছে বিষয়টা জানালো। কলেজের মধ্যে ছোটখাটো একটা জটলা আকারের মিটিং বসলো। এবার মেয়েটা সেই চিঠিটা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের হাতে দিলো।
চিঠিটা পড়ে স্যার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিরবকে জিজ্ঞেস করলো "এই চিঠিটা কি তুমি লিখেছো?" নিরব উত্তরে মাথা ঝাকিয়ে "না" জবাব দিলো। কিন্তু স্যার এটার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নিরবের হাতের লেখার সাথে চিঠির লেখাটা মিলিয়ে দেখলো, হাতের লেখা এক।
স্যার এবার কড়া গলায় বললো "এসব কি লিখেছো তুমি? তোমাকে দেখে তো খুব ভদ্র মনে হতো। মনে হতো কিছুই বোঝোনা তুমি।
স্যার পাশে থাকা বেতটা দিয়ে নিরবকে খুব করে পিটালো। হাবলু ছেলেটা চুপচাপ সব সয়ে গেলো।
.
সোমা ভেবেছিলো "হয়তো শুধু নিরবকে অপমান করা হবে"। কিন্তু এতো কিছু যে হবে সেটা কল্পনাতীত ছিলো। পরদিন নিরবকে টিসি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। নিরব স্যারের পা ধরে অনেক অনুরোধ করে বলে "স্যার দয়া করে আমাকে কলেজ থেকে বের করে দিবেন না"। কে শোনে কার কথা!
সব স্যার ম্যাডামেরাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখতে লাগলো। অবশেষে সে চোখ মুছতে মুছতে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো।
.
কি লেখা ছিলো সেই চিঠিতে, সেটা নিরব এখনো জানেনা।
আসলে চিঠিতে কোন প্রেমের আলাপন লেখা ছিলোনা। সেখানে লেখা ছিলো একটা খারাপ প্রস্তাবের কথা।
.
নিরবকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়াতে সোমা নিজেকে ক্ষমা করতে পারছেনা। কি দরকার ছিলো নিরীহ একটা ছেলে সাথে এমনটা করার। সোমা নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে।
এ নিয়ে সোমার বান্ধবীরা সোমাকে খুব বকাবকি করলো। তারা বললো "তুই এটা কি করলি? আমাদের প্লান তো এটা ছিলোনা।" সোমা চুপ করে আছে, সে কোন কথা বলছেনা। তার বান্ধবীরা বেশ কিছুক্ষণ তাকে বকাবকি করে চলে গেলো। কিন্তু সেটা শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো। এই ঘটনার পেছনে যে সোমার হাত ছিলো, এটা কলেজের কেউ জানলোনা।
.
ঐ ঘটনার পর থেকে সোমা আর কারো সাথ মজা করেনা। সে এখন সবকিছুতেই সিরিয়াস হয়ে গেছে। তার একটা ভুলের কারণে একটা ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেলো।
পরে সে নিরবকে অনেক খুজেছে, কিন্তু পায়নি। তার আজ একটা কথা বারবার মনে পড়ছে "বাবা মন দিয়ে লেখাপড়া করিস। তোকে নিয়ে আমাদের যে স্বপ্ন সেটা পূরণ করিস।" নিরবের বাবার দেওয়া সেই চিঠিটারর কথা।
নিরবের বুঝি আর সে স্বপ্ন পূরণ হলোনা।
.
এদিকে যে নিরব অন্য কোন কলেজে ভর্তি হবে, সেই টাকাটাও তার কাছে নেই। কয়েকটা টিউশনি করাতো সে। সেটাও হারিয়ে গেলো ঐ ঘটনার পর।
বাড়ি থেকেও টাকা নিতে পারছেনাা সে। বাড়ির অবস্থাও বেশি ভালো না। এখন সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ফিরে।
ভাগ্যে বুঝি তার এই ছিলো।
.
সেদিন কোন এক কালক্ষণ সময়ে নিরব রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছিলো। সময়টা সন্ধা সন্ধা হবে। হাঁটতে হাঁটতে দেখে রাস্তার ওপারে কে যেন শুয়ে আছে। সে বিষয়টা পুরোপুরি বুঝতে সেখানে এগিয়ে গিয়েে দেখে একজন ভদ্রলোক রাস্তার উপরে শুয়ে আছেন। তাকে দেখে ফুটপাতের ভিক্ষুক মনে হচ্ছেনা। নিশ্চয়ই কোন দূর্ঘটনায় লোকটি এখানে পড়ে আছেন।
রাস্তায় এতো মানুষজন, তবুও কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না লোকটির দিকে।
লোকটির এ অবস্থা দেখে নিরবের মনটা কেঁপে উঠলো। হায়রে মানুষ জাতি! একজন কোন কারণে রাস্তাতে পড়ে আছে আর কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কি অদ্ভুত এ দেশ, কি অদ্ভুত এ শহর, কি অদ্ভুত এ সমাজ, কি অদ্ভুত এ মানুষ!
.
নিরবের কাছে তেমন টাকা পয়সাও নেই যে লোকটিকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। আবার অন্য কোন উপায়ও দেখছেনা সে। সাতপাঁচ না ভেবে সে লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
লোকটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিরব সেখানেই রইলো। এদিকে লোকটি ট্রিটমেন্ট হচ্ছে, সেজন্য তো ডাক্তারের খরচ দিতে হবে। কোথায় পাবে সে টাকা? ডাক্তারকে সে জিজ্ঞেস করলো "ডাক্তার সাহেব উনার ট্রিটমেন্ট এর জন্য কত টাকা লাগবে?"
তার এ কথা শুনে ডাক্তার একটু মুচকি হেসে বললো "উনি তোমার কে হন?" নিরব উত্তর দিলো "কেউ না"।
- তাহলে তুমি উনাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কেন?
এবার নিরব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
- উনাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে আমার মনটা কেমন যেন করে উঠলো। দেখলাম রাস্তায় এতো মানুষজন থাকা স্বত্তেও কেউ উনার দিকে নজরই দিচ্ছে না। হঠাৎ করে আমার মনে হলো আমার বাবার কথা। আজ যদি আমার বাবা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতো তাহলে?
নিরবের কথা শুনে ডাক্তার বললো
- তোমার বাড়ি কোথায়?
নিরব উত্তর দিলো
- পাবনা।
- এই শহরে তুমি কি করো?
- পড়ালেখা করতে এসেছিলাম।
- এসেছিলাম মানে?
- এসেছিলাম, কলেজে ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু একটা দূর্ঘটনায় আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। গত পরশুদিন আমাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
- তুমি এখন থাকো কোথায়?
- যখন যেখানে রাত হয়, সেখানেই নিজের থাকার ব্যবস্থা করে নিই।
- আচ্ছা! তোমার টাকা দিতে হবেনা।
- কেন?
- আরে যাকে তুমি হাসপাতালে নিয়ে এসেছো, সে আমার বন্ধু হয়।
ডাক্তারের এ কথা শুনে নিরব কিছুটা অবাক হলো। সে ডাক্তারকে "তাহলে আমি এখন আসি" বলে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো। তখন ডাক্তার পেছন থেকে তাকে ডেকে বললো "কোথায় যাচ্ছো? বসো এখানে"।
নিরব মনে মনে একটু ভেবে দেখলো এখন বাইরে গিয়ে ফুটপাত ধরে হাটা ছাড়া আর কিছু হবেনা। তার চেয়ে বরং এখানেই বসে থাকি।
.
ডাক্তার নিরবকে বসিয়ে রেখে ভিতরে গেলেন। ভেতরে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি বাইরে এসে নিরবকে বললেন "ওহ, তোমার নামটাই তো জানা হয়নি। কি নাম তোমার?" নিরব তার নামটা বললো।
এদিকে রাতও অনেক হয়েছে। নিরবের ক্ষুধাও লেগেছে খুব, কিন্তু সংকোচের কারণে কাউকে কিছু বলতে পারছেনা। ডাক্তার নিরবের অবস্থা দেখে বুঝে গেছেন যে, তার ক্ষিধে পেয়েছে।
ডাক্তার নিরবের জন্য খাবার এনে তাকে দিয়ে বললেন "এগুলো খেয়ে নাও"।
নিরব কোনকিছু না ভেবে খাবারটা ডাক্তারের হাত থেকে এক প্রকার ছোবল মেরে কেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করলো।
.
নিরবের ঘুমানোর জন্য ডাক্তার একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়ে বাসায় চলে গেলেন। আর যাওয়ার সময় তাকে বলে গেলেন "সে যেন কোথাও না যায়"।
সকালে যে নিরবের জন্য একটা বড় চমক অপেক্ষা করছিলো সেটা সে জানতোনা।
পরদিন সকালে অসুস্থ লোকটি পুরোপুরি সুস্থ হলে ডাক্তার লোকটির সাথে নিরবের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর নিরবের বর্তমান অবস্থার কথা লোকটিকে জানালেন।
এদিকে লোকটি ছিলো নিঃসন্তান। তার কোন সন্তান ছিলোনা। তার বিশাল বাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য, টাকা পয়সা খরচ করার মতো কেউ ছিলোনা। লোকটিও অনেকবার ভেবছিলো কোন ছেলেকে সে দত্তক নিবে। কিন্তু তেমন সুযোগ তার হয়ে উঠেনি কখনো। আজ নিরবের মধ্যে যে কর্তব্যপরায়নতা লোকটি দেখেছে, তাতে নিরবকে তার বেশ ভালো লেগেছে।
লোকটি নিরবকে তার সাথে নিয়ে গেলো এবং নিরবকে তার ছেলের আসনে বসালো।
.
এতক্ষণ নিরব শুধু সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখছিলো। কোথা থেকে কি হলো সেটা তার মাথায় ঢুকছেনা। সামান্য একটা উপকারের কারণে সে এতবড় প্রতিদান পাবে, সেটা সে কল্পনাতেও ভাবেনি। সেও লোকটির কথায় সহমত প্রকাশ করলো।
.
.
.
এর মাঝে একটা বছর কেটে গেছে। তবুও সোমা নিরবকে ভুলতে পারেনি। পারেনি তার হাবলু মার্কা চেহারা আর সেদিনের সেই ঘটনা।
এই এক বছরের প্রতিটা দিনে, প্রতিটা রাতে নিরবের সেই করুণ, অসহায়ময় চেহারাটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। কিন্তু আজ আবার একটা নিরপরাধ ছেলেকে মার খেতে দেখে বেশি বেশি মনে পড়ছে নিরবকে তার।
সোমা অনেকবার ভেবেছে, যা অতীত তা ভুলে যেতে হয়। কিন্তু কি একটা কারণে যেন সে নিরবকে ভুলতে পারেনা। বারবার মনে পড়ে তার কথা।
সে নিরবকে প্রচন্ড পরিমাণে মিস করে, তাকে একটিবার দেখার জন্য তার মনটা প্রায়শই ব্যাকুল থাকে। কারণ সে যে নিরবকে ভালোবেসে ফেলেছে।
কিন্তু আজ সে নিরবের থেকে অনেক দূরে। নিরব "কোথায় আছে, কেমন আছে" সেটাও জানেনা সে।
.
যে ভদ্রলোকটি নিরবকে নিয়ে এসেছিলো সেই লোকটির ব্যবসা বাণিজ্য এখন নিরব দেখাশোনা করে। ব্যবসার পাশাপাশি সে তার পড়ালেখাটাও চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের থেকে শীর্ষে অবস্থান করছে।
.
নিরব এখন আর সেই আগের নিরব নেই। তার মধ্যে যথেষ্ট পরিবর্তন চলে এসেছে। যেই নিরবকে সবাই গ্রামের ছেলে বলে, চুপচাপ থাকতো বলে, তাকে নিয়ে উপহাস করতো। সেই নিরব আজ পুরো দেশের ধনীদের একজন।
সে তার পুরোনো ফেলে আসা দিনগুলোকে ভুলে গেছে। তার অতীতের কথা মনে পড়লে সে নিজে নিজেই হেসে ফেলে।
ঢাকাতে যখন সে নতুন এসেছিলো। তখন সে কিছু বুঝতোনা, জানতোনা বলেই চুপচাপ থাকতো। আর এখন সে যেকোন বিষয়ে পুরো সচেতন।
নিরব সব ভুলে গেছে। কিন্তু এক বছর আগের সেই দূর্ঘটনাটা সে ভুলতে পারেনি। "কি দোষ করেছিলো সে" যার জন্য তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো! "কি লেখা সেই কাগজে" যার জন্য তাকে চরম আঘাত সহ্য করতে হলো! সে জানতে চায়। তার মধ্যে এক কৌতুহল কাজ করে।
.
অনেকদিন পার হয়ে গেছে নিরব তার গ্রামে যায়না। আজ তার গ্রামের কথা বারবার মনে পড়ছে। বিশেষ তার বাবা মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
সে তার আংকেলকে বলে কিছুদিনের জন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য বের হলো এবং যাওয়ার সময় আংকেলকে বলে গেলো "আসার সময় গ্রাম থেকে তার বাবা মাকে নিয়ে আসবে।"
.
নিরব বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছে। বাস ছাড়তে এখনো ১৫ মিনিট দেরি। পাশে একটা বসার জায়গা দেখে সে বসে পড়লো সেখানে। হঠাৎ কেউ একজন তাকে পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো
- কেমন আছেন স্যার?
নিরব পেছনে ঘুরে দেখে সোহান, তার অফিসের ম্যানেজার।
- জ্বী আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন অাছো?
- জ্বী স্যার ভালো। কোথাও যাচ্ছেন?
- হ্যাঁ, গ্রামে যাচ্ছি। অনেকদিন হলো গ্রামে যাইনা। খুব মনে পড়ছে বাবা মাকে।
নিরব আর সোহানের কথা বলার মাঝখানে একটি মেয়ে সোহানকে বলে উঠলো "চলো ভাইয়া, বৃষ্টি আসতে পারে। আকাশটা খুব মেঘলা।"
মেয়েটা সোহানের বোন। সোহান তার বোনকে বললো আয় পরিচয় করিয়ে দিই।
- স্যার, এ হলো আমার বোন সোমা। আর সোমা, ইনি হলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের মালিক।
সোমা নিরবের দিকে তাকাতেই বড় ধরনের একটা শক খেলো। সে চুপচাপ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো নিরবের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু কিছু বলতে পারলোনা।
.
এদিকে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। নিরব সোহানকে বিদায় জানিয়ে বাসে উঠে পড়লো। বাস চলছে তার আপন গতিতে। আর নিরবের মন থেমে আছে সোমাকে দেখে। নিরবের মনে হচ্ছে সে কোথায় যেন মেয়েটিকে দেখেছে। কিন্তু সে মনে করতে পারছেনা। অনেক চেনা চেনা মনে হলো মেয়েটিকে তার।
সোমার কথা ভাবতে ভাবতেই নিরব তার নিজের সেই চেনা শহরে পৌছে গেলো।
.
এদিকে সোমা নিরবকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে। সে যেন অনেকদিন পর কোন বহুল অপেক্ষাকৃত কিছু ফেরত পেয়েছে।
আবার তার খুব ভয়ও হচ্ছে। ভয়ের কারণটা হলো, সেদিনের সেই ঘটনার মূলে যে সে ছিলো। এটা যদি নিরব কখনো জানতে পারে তাহলে সে তখন কিভাবে নিরবের সামনে যাবে! সোমা বেশ দুঃচিন্তায় পড়ে গেলো।
.
পরদিন সোমা কলেজে গিয়ে অহনাকে নিরবের ব্যপারে বললো। সে বললো
- অহনা গতকাল আমি নিরবকে দেখলাম।
- কোথায়?
- বাসস্ট্যান্ডে।
- কথা বলেছিস তার সাথে?
- না।
- নিরব কি সেই আগের মতোই আছে? নাকি একটু পরিবর্তন হয়েছে তার!
- হুম, নিরব আর আগের সেই নিরব নেই। সে এখন অনেক হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে।
- বলিস কি? তাহলে তো তাকে একবার দেখতে হয়!
- অহনা শোন।
- কি বল।
- আমি যে ওকে ভালোবাসিরে।
- কি?
- হুম
- তুই শেষ পর্যন্ত ঐ হাবাগোবা ছেলেটারই প্রেমে পড়লি?
- আচ্ছা সে যদি জানতে পারে যে ঐ দিনের ঘটনার পেছনে আমার হাত ছিলো তখন কি হবে?
- তুই এটা নিয়ে ভাবিস না। এটা আমার উপর ছেড়ে দে।
সোমা তবুও নিজের মনকে সংযত রাখতে পারছেনা। তাকে এক অজানা ভয় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সবকিছু জানার পর কি নিরব তাকে ক্ষমা করবে, তাকে কি ভালোবাসবে? নাকি সে তাকে ঘৃণার চোখে দেখবে।
.
রাতে সোমা তার ভাইকে নিরবের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো। নিরবের অতীত সম্পর্কে জানতে চাইলে তার ভাই তাকে বললো, সে নিরবের অতীত সম্পর্কে অবগত না।
"আচ্ছা নিরব কি তার অতীতের ঐ ঘটনা মনে রেখেছে নাকি ভুলে গেছে? নিরব তো কলেজের কারো সাথে তেমন কথা বলতোনা। তাহলে কি নিরব আমাকেও চিনেনা!" এসব নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সোমার মাথায়।
সে ঠিক করলো নিরবের সাথে সে কথা বলবে। কিন্তু কিভাবে?
.
এদিকে নিরব গ্রামে কিছুদিন থেকে তার পরিবারকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। ঢাকাতে পৌছে বাস থেকে নেমে একটা রিক্সায় উঠতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে পাশেই একটা বিকট আওয়াজ শুনে সে থমকে দাঁড়ালো। সে তাকিয়ে দেখে সেখানে অনেক মানুষের একটা ছোটখাটো ভীড় জমে গেছে। সে এগিয়ে গেলো সেখানে। দেখলো একজন লোক এ্যাক্সিডেন্ট করেছে। প্রচুর রক্ত ঝড়ছে লোকটির মাথা থেকে।
কিন্তু কেউ লোকটিকে তুলছেনা। নিরব জানে যে, কেউ তুলবেওনা। কারণ এটা একটা আজব শহর। এখানে কেউ কারো উপকারে আসেনা। আর যদিও আসে, তবে সেটা অনেক কম।
নিরব লোকটিকে তুলতেই চিনতে পারলো "লোকটি কে?" সে অতি দ্রুত লোকটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো।
প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় রক্তের প্রয়োজন পড়ে। নিরবের রক্তের সাথে লোকটির রক্তের গ্রুপের মিল থাকায় নিরবই রক্ত দিলো।
হাসপাতাল থেকে এসে নিরব তার বাবা মায়ের সাথে তার আংকেলকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
.
পরদিন সকালে নিরব লোকটিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে দেখে লোকটিকে দেখতে অনেকেই এসেছে।
কারণ সেই লোকটি আর কেউ নয়। তাকে যেই কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো, লোকটি সেই কলেজেরই প্রিন্সিপ্যাল। আর যারা উনাকে দেখতে এসেছেন তারা হলেন কলেজেরই অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা।
নিরব সেখানে যেতেই একজন বলে উঠলো "এ সেই ছেলেটা না, যাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো?"
এই কথা শোনার সাথে সাথে ঐ মেয়েটি (যাকে চিঠি লেখা হয়েছিলো) ঘুরে তাকালো নিরবের দিকে। তার চোখে আজও নিরবের জন্য ঘৃণা ভরা।
শুধু তার চোখে নয়, সবার চোখেই। সবাই নিরবকে দেখে নানান কথা বলাবলি করতে লাগলো। তাকে নিয়ে এসব কটুক্তিগুলো সোমার সহ্য হচ্ছিলো না। সে চেচিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিলো। নিরব তাকিয়ে দেখলো "এটাতো সোহানের বোন সোমা"।
এবার তার মনে হলো সেদিন কেন তাকে "চেনা চেনা মনে হয়েছিলো?"
- ওকে এতো বড় শাস্তি দিয়েও আপনাদের স্বাদ মিটেনি? সামান্য একটা কারণে ওকে শুধু কলেজ থেকেই বের করে দেননি আপনারা। সাথে ওকে প্রচুর মারপিটও করছিলেন। আর আজ আবারো ওকে সেই পুরোনো ঘটনা নিয়ে অপমান করছেন? (সোমা)
- আমরা ওকে অপমান করি আর যা ইচ্ছে করি তাতে তোর বাধে কিসে? (চিঠি গ্রহীতা মেয়েটি)
পাশ থেকে একজন বলে উঠলো, ও কি তোর বয়ফ্রেন্ড?
.
এই কথা বলেই সবাই হাসাহাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রতিমধ্যে ডাক্তার এসে সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলো। সবাই এক প্রকার ঘৃণা ভরা চোখেই বাইরে গেলো।
- ডাক্তার, এখন কেমন আছেন উনি?
- হ্যাঁ, এখন মোটামোটি সুস্থ আছে। আপনি বিকেলে এসে নিয়ে যেতে পারবেন।
.
ডাক্তার রুম থেকে বের হতেই একজন ম্যাডাম ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলো "ঐ ছেলেটি কে এবং ও এখানে কি করছে? "
ডাক্তার জবাব দিলো "ছেলেটি সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে আসলে এবং রক্ত না দিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হতোনা।"
ডাক্তারের থেকে এ কথা শুনে তাদের মন থেকে নিরবের প্রতি ঘৃণা কিছুটা কমলো।
.
বিকেলে নিরব হাসপাতালে গেলে দেখতে পেলো প্রিন্সিপাল মোটামোটি সুস্থ হয়েছে। সে স্যারকে সালাম দিয়ে স্যারের পাশে গিয়ে বসলো।
- এখন কেমন বোধ করছেন স্যার?
- এখন একটু ভালো। কিন্তু তুমি কে বাবা? তোমাকে চেনা চেনা লাগছে!
স্যারের এ প্রশ্নে নিরব কোন উত্তর দিলোনা। এরই মধ্যে ডাক্তার এসে বললেন, আপনি চাইলে এখন উনাকে নিয়ে যেতে পারেন।
নিরব স্যারকে নিয়ে বাইরে বের হতেই দেখে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা এবং স্যার ম্যাডামেরা প্রিন্সিপ্যালকে নিতে এসেছে। নিরব তাদের হাতে স্যারকে রেখে চলে যাচ্ছে, ঠিক সেসময় একজন ম্যাডাম নিরবকে ডাক দিয়ে "ধন্যবাদ" জানালো।
নিরব বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। আর চলে আসার সময় সে খেয়াল করলো, সোমা মেয়েটা তার দিকে কেমন যেন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
.
প্রিন্সিপ্যাল অসুস্থ থাকায় কিছুদিন কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা থেমে ছিলো। আর আজ আবার কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক মন্ডলীগন আবার নতুন করে শিক্ষাদানে যোগ দিলো।
এদিকে প্রিন্সিপ্যালের মনে এক অবিস্মরণীয় চেতনা বিরাজ করছে। "কে ঐ ছেলেটা? তাকে যে বড্ড চেনা চেনা লাগলো তখন! কোথায় যেন ছেলেটাকে দেখেছি" এসব ভাবনাতে তিনি মগ্ন।
তার ভাবনাতে ব্যঘাত একজন শিক্ষিকা তার রুমে ঢোকার অনুমতি চাইলো। তিনি শিক্ষিকা মহোদয়কে বসতে বললেন।
স্যারের মুখের ভাবমুর্তি দেখে শিক্ষিকা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন
- কিছু কি ভাবছেন স্যার?
- হুম।
- ঐ হাসপাতালের ছেলেটির কথা ভাবছেন?
- হুম। কিন্তু.....
- ছেলেটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো অাপনার। তাইনা?
- হুম, কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
- ছেলেটা আমাদের কলেজেই পড়তো একসময়। ছেলেটা খুব সাদাসিদে, সহজ সরল, বোকা টাইপের ছিলো। কলেজের কারো সাথে তার কোন বন্ধুত্বও ছিলোনা। চুপচাপ ক্লাসের একটা ব্রেঞ্চে বসে স্যারদের পড়া শুনতো। আবার ক্লাস শেষ হলে চুপচাপ নিঃশব্দ পায়ে কলেজ থেকে বাসায় যেতো। কিন্তু হঠাৎ এক দূর্ঘটনায় ছেলেটিকে আমরা মিথ্যে অপবাদের কারণে তার উপর চরম বেত্রাঘাত করি এবং তাকে কলেজ থেকে বের করে দিই। সেদিন ছেলেটা আমাদের পা ধরে আকুতি মিনতি করে বলেছিলো "সে কিচ্ছু করেনি"। কিন্তু সেদিন আমরা কেউ তার কথা বিশ্বাস করিনি। সেদিন আমাদের চোখে ছিলো তার প্রতি সাগর সমান ঘৃণা।
- আপনি কার কথা বলছেন? ঐ নিরব নামের দুঃচরিত্র ছেলেটির কথা!
- হ্যাঁ। কিন্তু সে দুঃচরিত্র সম্পন্ন নয়।
- মানে?
- ছেলেটা গ্রামের একটি কলেজে লেখাপড়া করতো। মেধা তালিকায় সে সবসময় অন্যদের থেকে শীর্ষে থাকতো। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে ছেলেটি এই শহরে আসে। শহরের ছেলেদের চালচলন আর তার চালচলনের মধ্যে অনেক তফাৎ ছিলো। তার চলাফেরা, কথা বলার ভঙ্গিই বলে দিতো যে, সে গ্রামের ছেলে। আর তার ঐ বোকা টাইপ চেহারা দেখে যে কেউ তার সাথে মজা করবে।
শিক্ষিকা মহোদয় খানিক সময় চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন।
ঠিক সেইরকমই একটা মজা করা হয়েছিলো তার সাথে। আমাদের কলেজের সোমা এবং তার বান্ধবীরা ছেলেটার সাথে মজা করার জন্য তাকে একের পর এক বিপদে ফেলতো। কিন্তু ঐদিন মজা করতে গিয়ে তারা ছেলেটিকে একেবারে কঠিন বিপদে ফেলে দিয়েছিলো। সোমা প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি লিখে কারো মাধ্যমে সেটা প্রাপ্তির নিকট পাঠায়। আর চিঠিটার প্রেরকের জায়গাতে নিরবের নাম লিখে দিয়েছিলো। আর এসবের পরের ঘটনা তো আপনি জানেন। এসবের মূলে যে সোমা ছিলো, সেটা সে আজ আমাকে জানালো। সোমা এ বিষয়ে আমাকে না জানালে আমরা নিরবকে সারা জীবন ঘৃণার চোখে দেখতাম।
- আপনি গিয়ে সোমা এবং তার বান্ধবীদের আমার রুমে পাঠিয়ে দিন।
- ঠিক আছে স্যার।
এদিকে সোমা তার বান্ধবীদের সাথে নিরবের বিষয়েই কথা বলছিলো। তাদের কথাবার্তার ধরণ এমন ছিলো..
- অহনা আমি বাংলা ম্যাডামকে ঐদিনের সব ঘটনা বলে দিয়েছি। (সোমা)
- কি বলিস এসব?
- তো কি করতাম বল? যদি ম্যাডামকে ঐ বিষয়ে না জানাতাম তবে নিরবকে উনারা সারাজীবন ঘৃণার চোখে দেখতেন।
- হুম, সেটাও সত্য কথা। কিন্তু এখন যদি প্রিন্সিপ্যাল জানতে পারে এসব কথা, তাহলে তো বিপদ হয়ে যাবে।
- হোক বিপদ, তবুও তো সবাই জানুক সত্যটা আসলে কি!
- প্রাপ্তিকে বলেছিস এই কথা?
- হুম।
- সে কি বললো?
- সে আমাকে কঠিন ভাষায় কিছু ভালো উপদেশ দিলো।
এরই মধ্যে বাংলা ম্যাডাম এসে সোমা ও তার বান্ধবিদের প্রিন্সিপ্যালের রুমে যেতে বললো।
- এখন কি হবে? (অহনা)
- কি আর হবে! যা হবার তা তো হয়েই গেছে। (সোমা)
- প্রিন্সিপ্যাল আমাদের ডেকেছে, তার মানে উনার কান অব্দিও এই কথা পৌছেছে। (অন্য বান্ধবি)
- প্রিন্সিপ্যাল আমাদের কি বলতে পারে, সেটা একবার অনুমান করেছিস?
- প্রিন্সিপ্যাল কি বলবে সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। এই কথাগুলো নিরব জানার পর আমাকে সে কেমন চোখে দেখবে সেটা নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত। আমি যে নিরবকে ভালোবাসি।
- নিরবের বিষয়ে পরে দেখা যাবে, আগে স্যারের কাছে চল।
.
সোমা আর তার বান্ধবীরা মাথা নিচু করে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কোন কথা বলছেনা। শুধু মাথা নিচু করে স্যারের ঝাঁঝালো কন্ঠের কথা শুনছে।
অনেক্ষণ পর যখন তারা স্যারের রুম থেকে বের হলো তখন তারা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কিন্তু সোমা একটুও স্বস্তি পাচ্ছে না। তার মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে। সে ভয়টা যে নিরবকে না পাওয়ার ভয়, তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। সোমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে তার ভাইকে তার ভালোলাগা, ভালোবাসার কথা জানাবে। তবে খুব দ্রুত।
.
অন্যদিকে নিরবও সোমার ভাইয়ের কাছে সোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিলো। সে মনঃস্থির করলো আগামীকাল অফিসে গিয়ে সোহানের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।
রাতে নিরব তার বাবা মা, আংকেলকে এই বিষয়ে জানালো। নিরবের বাবা, মা, আংকেল, উনারাও এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলেন না। বরং উনারা বেশ খুশিই হলেন।
.
পরদিন সোহান অফিসে পৌছানো মাত্রই নিরব তাকে ডেকে পাঠালো। হঠাৎ এমন করে কোন কারণ ছাড়া সোহানকে ডাকতে সে খুব ভয় পেয়ে গেলো। সে ভাবতে থাকলো, সে কি এমন করেছে যার জন্য তার স্যার অর্থ্যাৎ নিরব তাকে এতো দ্রুত তলব করলো!
অভাবনীয় সব বিষয় ভাবতে ভাবতে সোহান নিরবের রুমে প্রবেশ করলো। নানান চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাওয়াতে সে এসি চলা স্বত্তেও ঘামতে থাকলো। নিরব তাকে বসতে বললো।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নিরব সোহানকে বললো যে, সে তার বোনকে বিয়ে করতে চায়। হঠাৎ নিরবের মুখে এমন কথা শুনে সোহান হতভম্ব হয়ে গেলো। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সোহানকে চুপ থাকতে দেখে নিরব বললো
- এতে তোমার কি আপত্তি আছে?
সোহান কিছু সময় পর নিরবের কথার উত্তরে বললো
- না স্যার। কিন্তু.....
- কিন্তু কি? আপত্তি যেহেতু নেই, সেহেতু তো সম্পর্কটা করাই যায়।
- স্যার আপনি কোথায় আর আমরা কোথায়?
- এসব কথা বাদ দাও। তুমি হ্যাঁ বললে আগামীকাল আমি আমার বাবা মাকে সাথে নিয়ে তোমাদের বাসাতে যাবো।
নিরবের কথায় সোহান শুধু "হ্যাঁ" সূচক মাথা নাড়লো।
.
রাতে সোহান তার বোনকে ডেকে বললো
- সোমা তোকে একটা কথা বলবো।
- ভাইয়া আমিও তোমাকে একটা কথা বলবো।
- বল কি বলবি?
- আগে তোমার কথাটা বলো।
- শোন আগামীকাল একটু বাড়িতে থাকিস।
- কেন?
- তোকে দেখতে কিছু মেহমান আসবে।
- মানে?
- মানে তোর বিয়ের জন্য কিছু মেহমান আসবে তোকে দেখতে। তোকে দেখে তাদের পছন্দ হলেই তোর বিয়ের ব্যপারে কথা বলবো তাদের সাথে।
সোমা তার ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। মুহূর্তেই শ্রাবণের ঘনকালো মেঘের মতো তার মনটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলো।
সোহান সোমাকে জিজ্ঞেস করলো
- এবার বল, তুই কি যেন বলতে চেয়েছিলি?
- কিছু না ভাইয়া।
.
রাত অনেক গভীর হয়েছে, তবুও সোমার দু'চোখে আজ ঘুম আসছেনা। নিরবকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা তাকে আরো ভয়ান্বিত করে তুলছে। সে ভাবছে "যে করেই হোক নিরবের সাথে তার কথা বলতে হবে। তার ভালোলাগা, ভালোবাসার কথা তাকে জানাতে হবে।"
কিন্তু কিভাবে?
হঠাৎ করে তার মনে হলো তার ভাইয়ের মোবাইলে নিশ্চয়ই নিরবের নাম্বার আছে। সে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে তার ভাইয়ের রুমে নক করলো।
- কে?
- ভাইয়া আমি।
- আয় ভিতরে আয়। দরজা খোলা আছে।
- ভাইয়া..
- কিছু বলবি?
- হুম।
- বল।
- ভাইয়া তোমার কাছে তোমার স্যারের নাম্বার অাছেনা?
- হুম আছে।
- নাম্বারটা একটু দাওতো।
- কি করবি?
- দরকার আছে।
.
সোমা তার ভাইয়ের থেকে নিরবের নাম্বার নিয়ে তার রুমে এসে নিরবকে কল দিলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় অপর প্রান্ত থেকে কল রিসিভ হলোনা। সোমা কয়েকবার কল করার পরও রিসিভ হতে না দেখে একটা মেসেজ লিখলো "আগামীকাল সকালে একটু দেখা করতে পারবেন? আমি হাতিরঝিলে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। সকাল ১০ টা"।
.
পরদিন সকালে সোমা সেজেগুজে যথাস্থানে চলে গেলো। তার মনের মধ্যে অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে। সে প্রস্তুতি নিচ্ছে "কিভাবে নিরবের সাথে কথা বলা শুরু করবে, কিভাবে তাকে তার মনে কথা জানাবে!"
নানা রকম চিন্তা ভাবনার মধ্যে ডুবে আছে সোমা।
এদিকে সময় চলে যাচ্ছে তার আপন গতিতে। সোমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১১:২৫ বাজে। সে খেয়ালই করেনি যে, সে এতোটা সময় সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। ১০ টার সময় সে নিরবকে আসতে বলেছিলো আর এখন ১ ঘন্টা পার হয়ে গেছে, তবুও তার আসার কোন নামগন্ধও নেই। সে আর ধৈর্য ধরতে না পেরে নিরবকে কল করলো। কিন্তু গতরাতের মতো এখনো রিসিভ হচ্ছেনা। অনোকবার ট্রাই করলো সে, তবুও আশানুরুপ কোন ফল পেলোনা।
নিরবের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। একে তো দেখা করতে না এসে তাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আবার ফোন দিলে ফোনটাও রিসিভ করছেনা।
অপেক্ষা করতে করতে তিন ঘন্টা চলে গেছে। ধৈর্য যখন চরম পর্যায়ে তখন সোমার ফোনে একটা ফোন আসলো। সে তাড়াতাড়ি ফোন বের করে দেখে তার ভাই ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করতেই
- কিরে কোথায় তুই?
- এইতো ভাইয়া একটু বাইরে আসছি।
- গতকালের কথা মনে আছে তোর?
- হুম।
- তাড়াতাড়ি বাসায় আয়, বিকেলে ওরা তোকে দেখতে আসবে।
- আচ্ছা আসছি।
- হুম তাড়াতাড়ি আয়।
.
সোমা বিষন্ন মনে এক বুক হতাশা নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। কোন কিছুই ভালো লাগছেনা তার। চারিদিকের বেখেয়ালি শব্দগুলো তার কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে। বাসায় পৌছে সে ক্লান্তি দূর করতে একটা ঘুম দিলো।
.
বিকেলে নিরব তার বাবা, মা, আংকেলকে নিয়ে সোমাকে দেখতে তাদের বাসায় চলে গেলো।
তারা বসে আছে সোহানের বাসায়। সোহান তার বাবা মায়ের সাথে নিরব এবং তার বাবা মাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
এদিকে নিরব অধীর আগ্রহে বসে আছে সোমাকে দেখার জন্য। খানিক সময় পর সোমাকে আনা হলো তাদের সামনে। সোমাকে দেখে নিরবের বাবা মায়ের খুব পছন্দ হলো। আর পছন্দ হবেই না বা কেন? সোমাও যে বেশ সুন্দরী!
সোমা চুপচাপ বসে আছে তাদের সামনে। কিন্তু একবারের জন্যও সে মুখ তুলে দেখেনি "ছেলেটি কে, দেখতে কেমন"।
ছেলেটিকে দেখার জন্য তার মনে কোন আগ্রহই কাজ করছিলোনা। কেননা সে যে নিরবকে ভালোবাসে। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে নিরবের বাবা মা চলে গেলেন।
.
.
এদিকে দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।
আজ সোমার বিয়ে। তাদের বাড়িতে আজ কত আনন্দ, কত হৈচৈ, কত ব্যস্ততা। কিন্তু তার মনে একটুও আনন্দ নেই। সে যে তার নিরবকে হারিয়ে ফেলছে। সে যে পালিয়ে যাবে, তারও উপায় নেই। কারণ সে কার সাথে পালিয়ে যাবে?
যথাসময়ে তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।
.
বাসর ঘরে সোমা বসে বসে চাপা কান্না করছে।
"সে যে সত্যি সত্যিই তার নিরবকে হারিয়ে ফেলেছে" এটা ভেবে।
নিরব নির্দিষ্ট সময় পর বাসর ঘরে ঢুকে দেখে সোমা লাল টুকটুকে একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আর তার কান্নার আওয়াজ টা এবার স্পষ্ট থেকে ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে।
নিরব সোমার কাছে এগিয়ে গিয়ে ঘোমটা টা সরাতেই সোমা বলে উঠলো
- একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।
বলেই সে নিরবের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো। সে একবার ভাবছে "নাহ এটা কি করে সম্ভব, নাকি সে কোন স্বপ্ন দেখছে"?
- কেন? কেন আমি তোমার কাছে যেতে পারবোনা কেন?
এবার সোমা কিছুই বললো না। সে চুপচাপ চেয়ে রইলো নিরবের দিকে।
- তুমি কি আমার জায়গাতে অন্য কাউকে চেয়েছিলে? মনে তো হয় তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে চাওনি এ জায়গাতে।
সোমা অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে আছে নিরবের দিকে। তার এইভাবে তাকিয়ে থাকার মানে নিরব খুব ভালো ভাবেই বুঝে গেছে। তাই সে সোমার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো "আমি জানতাম তুমি আমাকেই ভালোবাসো"।
সোমা এবার কেঁদে দিলো। তার এ কান্না সুখের কান্না। কোন আপনজনকে কাছে পাওয়ার কান্না। নিরব সোমাকে তার বাহুডরে জড়িয়ে নিয়ে বলতে থাকলো "তুমি যে আমাকে ভালোবাসো, সে কথা তোমার বান্ধবী অহনা আমাকে জানিয়েছে।"
এ কথা শুনে সোমার মনে ভয় জাগলো। তাহলে কি নিরব ঐ দিনের ঘটনাটাও জেনে গেছে?
সে এবার নিচু স্বরে নিরবকে "সরি" বললো।
নিরব জানে সোমা কি জন্য তাকে সরি বলছে। কিন্তু সে চায়না ঐ পুরোনো ঘটনা মনে করে তাদের এই সুখের সময়টাকে নষ্ট করতে।
তাই সে বললো "আরে বোকা সরি বলছো কেন? আমি কিছু মনে করিনি তো"।
.
.
নিরবের বুকে সোমা মুখ লুকিয়ে মনে মনে বলছে
"পেয়েছি তোমারে অনেক কষ্টে, হারাতে দিবোনা আর।
হাবাগোবা সেই তুমি যে, মন চুরি করেছিলে...
সেই তুমি আজ হলে যে আমার।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.